নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বেড়েছে
দাবি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১০ মে ২০১৯, ১৬:০৮, আপডেট: ১০ মে ২০১৯, ১৭:৩৬
নির্বাচনোত্তর গত চার মাস ধরে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা।
আজ শুক্রবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে সংগঠনটির এক বর্ধিত সভায় এ অভিযোগ করা হয়। সভায় আগামী বছরে ১১ ও ১২ ডিসেম্বর ঐক্য পরিষদের একাদশ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত কর্তৃক উত্থাপিত প্রতিবেদনের উপরে প্রায় ৬৪টি সাংগঠনিক জেলার নেতৃবৃন্দসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদনে রাণা দাশগুপ্ত জানান, ‘নির্বাচনোত্তর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভাঙাগড়ার এ পর্যায়ে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, নির্যাতন, জায়গা-জমি দখল, মন্দির উপাসনালয়ে বিগ্রহ ভাংচুর সারা দেশে আবার বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। পঞ্চগড় জেলে আটকাবস্থায় আইনজীবী পলাশ কুমার রায়ের শরীর আগুনে ঝলসে দিয়ে তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। সংগঠনের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার পৈতৃক বাড়ি জ¦ালিয়ে দেয়া হয়েছে। সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের সন্ধানে তার ফরিদপুরের বাড়ীতে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে। ধর্মান্তরকরণের মাত্রা বেড়েছে বেশ কয়েকগুণ।’
সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে সাংগঠনিক কমিটিসহ ভুক্তভোগীদের রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে যারা সাম্প্রদায়িক কর্মকান্ড চালিয়েছে বা চালাচ্ছে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানোর জন্যে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক।
সভায় আরো অভিমত ব্যক্ত করা হয় যে, সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে এক শ্রেণীর নেতা ও কর্মী পুনরায় এসব অপকান্ডে লিপ্ত থেকে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। অবিলম্বে এদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে সরকারি দল ও আইন শৃংখলা কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে, এহেন নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধ করা না গেলে সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব অধিকতর হুমকির মুখে পড়বে।
এ ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে ধর্মীয়-জাতিগত সকল সংখ্যালঘু সংগঠনকে জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে সমন্বিত করে আগামী ২৫ মে শনিবার সকাল ১০টায় সারাদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয়া হয়েছে।
সভায় দেশের তিন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকার কর্মী অ্যাড. সুলতানা কামাল, শাহরিয়ার কবীর ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের প্রাণনাশে জঙ্গীবাদীদের হুমকির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এসব হুমকিদাতা ও তাদের মদদদাতাদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে।
সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তে বলা হয়, বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যমে সাম্প্রদায়িক মহলবিশেষ তীব্র ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ উক্তি এমনকি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ‘বিধর্মী’ উল্লেখে তাদের হত্যা করারও অব্যাহত প্রচার-প্ররোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সভায় তা অবিলম্বে বন্ধ করে সাম্প্রায়িক শক্তির মদদদাতাদের তথ্য প্রযুক্তি আইন বা বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় এনে তাদের বিচারে কঠোর শাস্তির দাবি জানানো হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজিত অস্থির পরিস্থিতিতে সভায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয় যে, এহেন অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করে এবং তাকে এগিয়ে নিয়ে মহলবিশেষ পার্বত্যবাসীর মূল ধারাকে নিঃশেষ করার এবং শান্তি প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার দূরভিসন্ধিমূলক পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এ পরিস্থিতির আশু অবসানে সরকারকে দৃঢ় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সর্বশ্রী কাজল দেবনাথ, নির্মল রোজারিও, জে. এল. ভৌমিক, মঞ্জু ধর, মিলন কান্তি দত্ত, বাসুদেব ধর, মনীন্দ্র কুমার নাথ, অ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল, নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, অ্যাড. কিশোর মন্ডল, পদ্মাবতী দেবী, অ্যাড. দিপংকর ঘোষ, অধ্যাপক অরুণ গোস্বামী, রাহুল বড়–য়া, ব্যারিস্টার তাপস কুমার বল প্রমুখ।