‘আগামী নির্বাচন খুব সহজ সরলভাবে হবে না’
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২২ নভেম্বর ২০১৮, ১৮:৩২
আগামী নির্বাচন খুব ‘সহজ-সরলভাবে’ হবে না মন্তব্য করে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যারা মনে করছেন, এটি বকুল বিছানো পথে হবে, তা কিন্তু হবে না।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় সিরডাপ মিলনায়তনে ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ আয়োজিত আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভার এক বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এবারের নির্বাচন হবে গোলাপ বিছানো পথে, যে গোলাপের মধ্যে অসংখ্য কাঁটা আছে। যেই কাঁটাগুলোকে দেখা যায় না, কিন্তু হাত দিলে হাতে রক্ত ঝরে। পা ফেললে পায়ে রক্ত ঝরে। আমাদের সাবধানী ও সতর্ক হতে হবে।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব ডা. মামুন আল মাহতাবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ, সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, নারী প্রগতি সংঘের রোকেয়া কবীর, পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা চিত্তরঞ্জন দাস, খ্রিস্টান ধর্মীয় নেতা প্রলয় সমাদ্দার প্রমুখ বক্তব্য দেন। মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোহাম্মদ আলী শিকদার।
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের অবর্তমানে বিএনপি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগায়নি বলে মনে করছেন জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, খালেদা-তারেকের অবর্তমানে বিএনপির জন্য একটা পরিবর্তনের সুযোগ ছিল। কিন্তু যখন তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে তখন বোঝা যায়, তাদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন হয়নি। নেতৃত্ব শূন্যতা পূরণে বিএনপি ও তাদের জোটসঙ্গীরা কামাল হোসেনসহ কিছু রাজনীতিককে ‘ভাড়া করে’ নিজেদের দলে ভিড়িয়েছেন। বক্তাদের অনেকেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ‘সাম্প্রদায়িক জোট’ আখ্যায়িত করে তাদের ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া তাদের অপরাধের জন্য দন্ডিত হয়ে একজন কারাগারে আছে এবং একজন পলাতক আছে। সেই অবস্থায় বিএনপি-জামায়াত কিন্তু ভাড়া করে নিয়ে এসেছে ড. কামাল হোসেনকে এবং আরো কিছু রাজনীতিককে। এই অবস্থা কিন্তু হয়েছে বাংলাদেশে। ওই জোটের নেতারা মুখে বঙ্গবন্ধুর কথা বলে ‘প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছেন’।
অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, জনগণকে সতর্ক করার প্রয়োজন আছে, কারা আজকে বঙ্গবন্ধুর কথা বলে, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বরোধী শক্তির সাথে মিলিত হয়েছে। আমাদের প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি ও সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দেব না। আজকে যারা মুখে বঙ্গবন্ধুর কথা বলে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন, একই প্রতীকে নির্বাচন করার কথা বলছেন। তাদের উদ্দেশ্য বোঝা যায়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উল্টে দেওয়া হয়েছিল। এখনো বিশ্বাসঘাতক রয়ে গেছে। তাদের বোঝা যাবে না। নানা প্রতারণার মাঝ দিয়ে তারা চেষ্টা করছে। সেদিকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে এসে যখন আমাদের সম্প্রীতির কথা বলতে হচ্ছে, তখন আমাদের দুঃখ হয়, বেদনা হয়, লজ্জা হয়। যে মুক্তিযুদ্ধে মুসলমানের রক্ত, হিন্দুর রক্ত, বৌদ্ধের রক্ত, খ্রিস্টানের রক্ত, আদিবাসীদের রক্ত এক স্রোতে প্রবাহিত হয়েছে। তারপরে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা থাকার কথা না এখানে।
গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যারা সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আঁতাত করেছেন তাদের চিহ্নিত করে বর্জন করতে হবে। যারা ঐক্যফ্রন্ট করেছেন এবং যারা নিবন্ধন বাতিলকৃত দলের সঙ্গে গোপনে ঐক্য করছেন, আসন দিচ্ছেন- তাদের মুখে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা যায় না। তারা কীভাবে মুখে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেন? অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ যারা ধরে রাখতে চান, তাদেরকে এখন ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ২০০৪ সালে শেখ হাসিনার উপরে গ্রেনেড দিয়ে হামলা চালানো হয়েছিল। গ্রেনেড কিন্তু যুদ্ধাস্ত্র। সেই গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে এ কারণে যাতে শেখ হাসিনার মৃত্যু ঘটে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার একটি চুলও ছিঁড়েছেন? বিরোধী দলের কাউকে কিছু করা হয়েছে? এমনকি খুনি মোশতাকেরও স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল। কারণ বাঙালি সংস্কৃতিতে যারা বিশ্বাসী তারা সন্ত্রাস করে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বিএনপিও সেইফ। আর বিএনপি ক্ষমতায় আসলে কেবল আওয়ামী লীগ না সংখ্যালঘুসহ সব ধরনের লোক সেইফ থাকবে না।
একেক আসনে বেশ কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়ার কথা উল্লেখ করে সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, আওয়ামী লীগ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তাহলে তাকে কেউ হারাতে পারবে না। কারণ আওয়ামী লীগকে আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ হারাতে পারবে না। আওয়ামী লীগকে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। একই সঙ্গে প্রশাসন নির্দলীয় করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সচিবালয়ে বিএনপির পক্ষের লোক খুব আছে। আশুগঞ্জে প্রশাসন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বিজয় মেলা হবে না। ডিসেম্বর মাসে যদি বিজয় মেলা না হতে পারে আওয়ামী লীগের আমলে, তাহলে ভোট দেবে কোথায় গিয়ে?
রোকেয়া কবীর বলেন, আজকে আমরা দেখছি, যারা গণতন্ত্রের কথা বলছেন, তারা আবার নির্বাচন কমিশনে গিয়ে ধমক দিচ্ছেন, এই দেশেইতো থাকবেন নির্বাচনের পরে। বাংলাদেশেইতো থাকতে হবে। আমরা দেখে নেব। তারা কিন্তু ৫০ শতাংশ নারীর বিষয়ে কিছু বলছেন না। নারীরা নির্বাচনে দাঁড়ালে পোশাকসহ নানা বিষয়ে কথা উঠে। অথচ নারীর সমানাধিকারের বিপক্ষে কোনো পরিবেশ এখানে থাকবে না, এমন কথাই আমাদের সংবিধানে ছিল।
গত ১০ বছর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার থাকার কারণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে দাবি করে মূলপ্রবন্ধে নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর একটি বড় অংশ নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে উগ্রবাদ ত্যাগ করে চিরন্তন শান্তির পথে ফিরে আসতে শুরু করেছে। নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রতিজ্ঞা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন, আমরা ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির কবল থেকৈ বাংলাদেশকে স্থায়ীভাবে মুক্ত করার জন্য আমাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করি। বাঙালি সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী এবং সাম্প্রদায়িক পক্ষ ও ব্যক্তিকে আমরা কেউ ভোট দেব না, এই প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ হই।