দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সুজনের সংশয়
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ২১:৫০
দলীয় সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিয়ে সংশয় রয়েছে, তাই নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে পরামর্শ দিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার।
লিখিত বক্তব্যে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, নির্বাচন হচ্ছে দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়। সাম্প্রতিককালে অনুষ্ঠিত কিছু নির্বাচনে প্রশাসন তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ায় প্রশাসন তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রভাবিত হওয়ার ঝুঁকি আরও বেড়ে গিয়েছে। তাই এই ব্যাপারে কমিশনকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে মনে রাখতে হবে, আগামী নির্বাচন হচ্ছে সংসদ বহাল রেখে। এই নির্বাচনে কোনও কোনও প্রার্থী মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যের অবস্থান থেকে ভোট চাইবেন। আবার কেউ কেউ ভোট চাইবেন সাধারণ প্রার্থীর অবস্থান থেকে। তাই সতর্ক থাকতে হবে মন্ত্রী বা সাংসদেরা যেন নির্বাচনি আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলেন এবং তারা যেন পদের প্রভাব দেখাতে না পারেন।
তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার মূল দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তাই সতর্ক থাকতে হবে সাম্প্রতিক কয়েকটি নির্বাচনের মতো নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। ইসিকে আইনি ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে নৈতিকতা ও সাহসিকতার সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা দৃষ্টিগোচর হলে, অভিযোগ দায়েরের অপেক্ষা না করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি কোনও অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ত থাকার সুযোগ নেই।
সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে বলা যায় রোল মডেল। নির্বাচন কমিশনের হাত লম্বা। তারা চাইলে করতে পারে। তারা সাংবিধানিক পদে নিয়োজিত, সুষ্ঠু নির্বাচন করা তাদের দায়িত্ব। এই নির্বাচন আগের মতই দলীয় সরকারের অধীনে হচ্ছে। সরকার মানে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দলীয় সরকারের অধীনে যেসব নির্বাচন হয়েছে, তখন দেখা গেছে যে সরকার ক্ষমতায় ছিল তারাই আবার ক্ষমতায় ফিরে এসেছে। সেসব নির্বাচনগুলো প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। সংশয়ের বিষয় হলো এই নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হচ্ছে, তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে শক্ত ভূমিকা পালন করতে হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সুজন সম্পাদক বলেন, আমরা সবাই চাই একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। সংশয় যেন অমূলক হয় সেজন্যই আমরা নির্বাচন কমিশনকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান করছি। আশা করবো, নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে, কঠোরভাবে পালন করবে। নির্বাচন কমিশনের হাত অনেক লম্বা। তারা চাইলে আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে প্রায় ১২ হাজারের মতো মনোনয়ন প্রত্যাশী স্ব স্ব দল থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এবার যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাবে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. বদিউল বলেন, অবশ্যই। প্রার্থীর সংখ্যা যতো বেশি হবে, ততোই যোগ্য প্রার্থী পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। আমরা নিশ্চিত ১২ হাজারের মধ্য থেকে ৩০০ আসনে হাজারখানেক যোগ্য প্রার্থী পাবো। তবে দলগুলোর প্রতি আহ্বান, যারা অবাঞ্ছিত তারা যেন মনোনয়ন না পান।
এই নির্বাচনটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া অত্যন্ত জরুরি। যদি বিতর্কিত নির্বাচন হয়, তাহলে তরুণরা আশাহত হতে পারেন, বিপথগামী হতে পারেন এবং গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাহীন হয়ে যেতে পারেন। সেজন্যই এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
সুজন সম্পাদক আরও বলেন, অতীতের রেকর্ড দেখলে প্রতীয়মান হবে যে দলীয় সরকারের অধীনে যখনই কোনো নির্বাচন হয়েছে, তাতে ক্ষমতাসীনরাই আবার বিজয়ী হয়েছেন। যেহেতু সংসদ বহাল আছে, তাছাড়া অনেক সংসদ সদস্যই স্থানীয়ভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই তারা যেন ভোটের ফলাফল অযাচিতভাবে প্রভাবিত না করতে পারেন, সেজন্য ইসিকে সঠিক ভূমিকা রাখতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ইসিকে উদ্দেশ্য করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীর হলফনামা ও আয়কর বিবরণী প্রকাশ এবং তা ওয়েবসাইটে দিতে হবে। নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে কোনো সংসদ সদস্য যাতে বিশেষ কোনো সুবিধা না পায় সে দিকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানায় সুজন।
ইসিকে আহ্বান জানিয়ে সুজন জানায়, নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। তারা কোনো কারসাজীর সঙ্গে জড়িত থাকলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থাও করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকে উদ্দেশ করে সুজন জানায়, গণমাধ্যম হলো ইসির সহায়ক শক্তি। গণমাধ্যমের ওপর বিধি-নিষেধ তুলে দিয়ে তাদেরকে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে নির্বাচন সুষ্ঠ, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমুলক করতে সরকার, রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও ভোটারের প্রতি বিশেষ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয় সুজনের পক্ষ থেকে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সুজন মহানগর ইউনিটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যামেলিয়া চৌধুরী, সুজনের মিডিয়া সমন্বয়কারী শামীমা মুক্তা প্রমুখ।