ঢাবিতে প্রশ্নপত্র ফাঁসে গভীর উদ্ধেগ জানিয়েছে ছাত্রশিবির
- বিজ্ঞপ্তি
- ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:৫৫
ঢাবিতে আবারো ভর্তি পরিক্ষার এ প্রশ্নপত্র ফাঁসে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত ও সেক্রেটারি জেনারেল মোবারক হোসাইন বলেন, দু:খজনকভাবে জাতিকে অযোগ্য সরকারের আরেকটি নিকৃষ্ট নজির দেখতে হলো। জাতির গর্বের স্থান প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। যা ঢাবি ভর্তি পরিক্ষা নিয়ে একটি জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রতিবাদে অনশন করতে গিয়ে ইতোমধ্যে একজন ছাত্র অসুস্থ হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা চরম উৎকন্ঠা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। আর সব কিছুর জন্য দায়ী সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বহীন নিরবতা ও বিচারহীনতা।
এর আগেও শিক্ষার প্রায় প্রতিটি স্তরে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। আর প্রতিটি প্রশ্নপত্র ফাঁসের ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাসহ সরকার দলীয় লোকজন জড়িত তা বার বার প্রমাণ হয়েছে। প্রশ্নফাঁস নয়, টাকার বিনিময়ে অনৈতিক প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ করে দিচ্ছে ছাত্রলীগ।
সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দূর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক তারেক আহমেদ খান শান্ত কর্তৃক আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে এক শিক্ষার্থী অনৈতিক পন্থায় ভর্তি করিয়ে দেয়ার চুক্তির অডিও কল রেকর্ড বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। আগে থেকেই এই প্রক্রিয়ায় বহু ছাত্র ভর্তি হয়েছে বলে কল রেকর্ডে উল্লেখ রয়েছে।
কিন্তু এমন জাতি বিনাশী অপতৎপরতার পরও অপরাধিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়নি। একই সাথে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কোন কার্যকর পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়নি। প্রশ্নফাঁস রোধে ছাত্রসমাজের দাবীকে বরাবরই উপেক্ষা করা হয়েছে। প্রশ্নফাঁস বন্ধ ও অপরাধিদের শাস্তির দাবীতে ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে সারাদেশে মানববন্ধন, পোষ্টারিং ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। কারা এসবের সাথে জড়িত তা প্রশাসনের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ছাত্রশিবির। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। উল্টো এই জাতি বিনাশী অপতৎপরতা রোধে প্রতিবারই শিক্ষামন্ত্রী চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন এবং নানা চাতুরতার মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়েছেন। ফলে আবারো এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো।
এ লজ্জাজনক ঘটনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব ও অতিহ্যের মুখে কালিমা লেপন করে দিয়েছে। মূলত সরকারের মদদে প্রশ্নপত্র ফাঁস, বেশি নাম্বার দেয়ার অনৈতিক প্রক্রিয়া, ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস ও পরিকল্পিত অস্থিরতা সৃষ্টির কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌছে গেছে। এটা এখন স্পষ্ট যে, গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জাতিকে পঙ্গু করে দিতে চাইছে একটি মহল আর সেই ষড়ন্ত্রের অন্যতম হাতিয়ার করা হয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁসকে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজির বিহীন। এসব গুরুতর বিষয়ে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এড়িয়ে যাওয়ার মনোভাব এবং শিক্ষামন্ত্রীর রহস্যজনক আচরণে জাতি আজ দারুন ভাবে হতাশ হয়ে পড়েছে। মেধাবীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এভাবে মেধার অবমূল্যায়ন অব্যাহত থাকলে জাতি ধ্বংসে বেশি সময় লাগবে না।
নেতৃবৃন্দ বলেন, গণমাধ্যমের কল্যাণে জনগণ জানতে পেরেছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতরা সবাই সরকার দলীয় লোক। আর দলীয় পরিচয়ের কারণেই তাদের এখন পর্যন্ত কোন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়নি এবং তা রোধে কার্যকরী পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়নি।
সুতরাং এর পেছনে আগামী প্রজন্মকে ধ্বংস করার সুগভীর ষড়যন্ত্র আছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমরা অবিলম্বে এই ধ্বংসাত্বক খেলা বন্ধ করার দাবী জানাচ্ছি। অবশ্যই অপরাধের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করার মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। জাতির সামনে প্রশ্নফাঁসকারীদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। চূড়ান্তভাবে প্রশ্নফাঁস ও ডিজিটাল জালিয়াতী রোধে শিক্ষা মন্ত্রনালয় এবং প্রশাসন কর্তৃক সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের জোড় দাবী জানাচ্ছি। অন্যথায় জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে এই অনৈতিক তামাশার পরিণাম শুভ হবেনা। জাতি তাদের সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট হওয়ার এই প্রক্রিয়া মেনে নেবে না।