চালকদের কাছ থেকে দিনের হিসাব দিনেই বুঝে নিবে বাস মালিকরা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৮ আগস্ট ২০১৮, ২১:৪৫
সড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার চেষ্টায় বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে রাজধানীতে আর চালকদের সঙ্গে দৈনিক চুক্তি বা জমার ভিত্তিতে বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালিকপক্ষ।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেছেন, চালকরা বাস চালিয়ে সারাদিনের আয় মালিকের হাতে তুলে দেবেন। আর মালিক তার বাসের চালক-শ্রমিকদের নির্ধারিত হারে মজুরি দেবেন।
বৃহস্পতিবার থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে জানিয়ে বুধবার মতিঝিলে মালিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘কালকের পর কেউ চুক্তিতে গাড়ি চালালে আমরা তাদের নিবন্ধন বাতিলের জন্য সুপারিশ করব। আর সে মালিক যদি আমাদের সদস্য হয়, তাহলে ওই মালিককে আমাদের সমিতি থেকে বহিষ্কার করা হবে।’
অনেক মালিক এতদিন অটোরিকশার মত দৈনিক চুক্তির ভিত্তিতে চালকের হাতে বাস দিয়ে আসছিলেন। চালক সারা দিন বাস চালিয়ে মালিকের হাতে নির্দিষ্ট অংকের জমার টাকা তুলে দিতেন। বাকি টাকায় তার এবং তার হেলপার কনডাকটরের পেট চলত।
এ ব্যবস্থায় মালিকের ক্ষতির কোনো ঝুঁকি না থাকলেও ট্রিপ কম হলে চালক-শ্রমিকদের ভাগে টান পড়ত। ফলে বেশি ট্রিপ দেওয়ার চেষ্টায় চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আর বেপরোয়া চালনার প্রবণতা বাড়ত।
এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘চুক্তিতে গাড়ি চললে চালকরা পাল্টাপাল্টি করে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়। চালক, শ্রমিকরা কাল থেকে মজুরির ভিত্তিতে বাস চালাবে।’
কোনো বাস চালক চুক্তিতে বাস চালাচ্ছে কি না সেটা কীভাবে জানা যাবে- এই প্রশ্নে মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রতিটি রাস্তায় কোম্পানির চেকার থাকবে। তাছাড়া মালিক সমিতি ‘কৌশল’ ব্যবহার করবে।
গুলিস্তান এলাকায় কয়েকটি বাসের চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিছু পরিবহন মজুরির ভিত্তিতে বাস চালালেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দৈনিক জমার পদ্ধতি চলে আসছিল এতদিন।
ওয়েলকাম পরিবহনের চালক বাদল জানান, তাদের পরিবহনের বাস মজুরির ভিত্তিতে চলে। প্রতি ট্রিপের জন্য তিনি পান সাড়ে তিনশ টাকা।
আবার মোহাম্মদপুর-মতিঝিল রুটের ফাতাহ ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের বাসচালক সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি গাড়ি চালান চুক্তিতে। মালিককে দৈনিক তার আড়াই হাজার টাকা জমা দিতে হয়।
মালিক সমিতির সিদ্ধান্তের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘নতুন নিয়মের কথা শুনলাম। দেখি মালিক ক্যামনে চালায়। অন্যরা যেইভাবে চলে আমার তো সেইভাবে চলতে হবে।’
গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হলে ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। রাজধানী থেকে তাদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে এই আন্দোলনের মধ্যে শিক্ষার্থীরা রাজপথে পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে চালকের লাইসেন্স ও যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করা শুরু করে। সেখানে দেখা যায়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ও আইন প্রণেতারাও অনেক ক্ষেত্রে আইন মানছেন না।
ঢাকাজুড়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অবরোধের মধ্যে ১ অগাস্ট মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে আন্দোলনকারীদের দাবি পূরণে আশ্বাস দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, লাইসেন্সবিহীন, ফিটনেসবিহীন, পারমিটবিহীনি যানবাহন আর রাস্তায় চলতে দেব না। এসব বিষয় নিশ্চিত করতে টার্মিনালগুলোতে স্টার্টিং পয়েন্ট করবে সরকার।
‘এ সমস্ত জিনিসগুলো মালিক সমিতি, শ্রমিক সমিতি পরীক্ষা করবে। প্রয়োজনে প্রশাসনের লোক থাকবে। গাড়ি যখন বের হবে তারা চেক করবে। ফিটনেস, ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ঠিকমত আছে কি না। চেক করার পর ফিট হলে গাড়িটা টার্মিনাল থেকে বের হতে পারবে, নইলে বের হতে পারবে না। নিরাপত্তা বাহিনী রাস্তায় থাকবে, চ্যালেঞ্জ করবে, এসব না দিতে পারলে সেখানেই তার ব্যবস্থা হবে।’
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে আসার আগে বৈঠক করে চুক্তিতে বাস না চালানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা।
এনায়েত উল্লাহ বলেন, রাজধানীতে বাস চলাচলে আবার ‘কাউন্টার সার্ভিস’ চালু করা হবে। কাউন্টারের জায়গা চেয়ে সিটি করপোরেশনে চিঠি পাঠানো হবে।
‘কাল থেকে রাজধানীর সড়কে কোনো ফিটনেসবিহীন বাস চলতে দেওয়া হবে না। এজন্য সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। টার্মিনাল থেকে বাস ছেড়ে যাওয়ার আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।’
সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রতিটি টার্মিনালে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটি বাস ছাড়ার আগের চালকের লাইসেন্স, গাড়ির কাগজপত্র এবং গাড়িটি চলাচলের উপযোগী কিনা তা দেখবে।
‘কোনো ব্যত্যয় থাকলে ওই গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না। এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।রংচটা, লক্কড়ঝক্কড় মার্কা বাস মেরামত করার জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।’
এছাড়া প্রতিটি কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে চালকদের নিয়মিত বৈঠক করার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে জানিয়ে এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘এতে চালকদের সচেতনতা বাড়বে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ার প্রতি ঢাকার বাস মালিকদের সমর্থন আছে। তবে কিছু ধারার ব্যাপারে তাদের আপত্তি আছে।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির অন্য নেতারাও এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।