সুপ্রিম কোর্টে সংবর্ধনায় ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, শেখ হাসিনা আমাকে গ্রেফতার করার অনুমতি দিয়েছেন, আইসিটির অধীনে। কিছুই আমি জানতাম না। সুতরাং এটা আল্লাহর মেহেরবানি। পাঁচ বছর পুলিশ আমাকে অত্যন্ত জ্বালাতন করেছে। ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর পুলিশ আমার বাসায় গিয়েছে। কিন্তু বিদেশে চলে গেলাম। ফিরতে ১১ বছর লেগেছে। ১১ বছর আমি ইংল্যান্ডে থেকে প্র্যাকটিস করেছি।

সোমবার (৬ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘১১ বছর কেন আমি বাইরে থাকলাম? ২০১৩ সালে আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি হলো। দেশের অবস্থা বেশি খারাপ ছিল। আমাদেরকে বেশি ঘরের বাইরে থাকতে হয়েছে। চিন্তা করলাম মাত্র দু’ সপ্তাহের জন্য লন্ডন যাব। আমি লন্ডনে গিয়ে জানতে পারলাম আমার নামে মামলা হয়েছে। আমি নাকি ঢাকার রাস্তায় ছিলাম। পুলিশের ওপর বোম মেরেছি। এর কিছু দিন পরে আমি জানতে পারলাম, এক দেশের কূটনৈতিক সোর্স থেকে।’

তিনি বলেন, ‘একটা জিনিস যদি রক্ষা করতে পারতাম, জুডিশিয়ারি। অনেক লিডারকে দেশ ছাড়তে হতো না। অনেকের জেলে যেতে হতো না। ১৯৩৫ সালের ব্রিটিশ সরকার থেকে গত সরকার পর্যন্ত আমরা অলমোস্ট আমাদের জুডিশিয়ারি স্বাধীন ছিল, প্রেস স্বাধীন ছিল। মানুষের স্বাধীনতা ছিল। কিন্তু এ স্বাধীনতাকে গত সরকার হরণ করেছিল। সুতরাং জডিশিয়ারিকে যদি আমরা বাঁচাতে পারতাম, পারতাম কিনা আমি জানি না, তাহলেও এ জাতি অনেক আগে এই ডিক্টেটরশিপের হাত থেকে রক্ষা পেতো। আজকে বার বেঞ্চ, আপামর জনসাধারণ সবার একটা লক্ষ্য হওয়া উচিত, আমরা আমাদের জুডিশিয়ারিকে কোনো সময়ই পরাধীন হতে দিব না। সাথে সাথে আমরা একটা স্বাধীন বার গড়ে তুলবো।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যদি সত্যিকার অর্থে এই বাংলাদেশকে তার নিজের জায়গায় নিয়ে যেতে চাই সব ধরনের ইন্টারেস্ট থেকে বারকে মুক্ত করতে হবে। আমরা স্বাধীন বার চাই। আমরা স্বাধীন জুডিশিয়ারি চাই। যদি এগুলো নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারি তাহলে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে। মানুষের ঋণ শোধ করতে পারব।’

সভাপতির বক্তব্যে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘এখানে যারা আইনজীবী আছেন তারা প্রশাসনে যাবেন। আপনারা যদি শক্তশালী হয়ে থাকেন আজ হোক কাল হোক দেশ ভালো হতে বাধ্য।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সমাজকে দিয়ে যাব, কি দিয়ে যাব। আমরা যদি আমাদের সন্তানদের জ্ঞান দিয়ে যেতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশরা আমাদের শাসন-শোষণ করেছে কিন্তু তারাও আইনকে সম্মান করতো। কিন্তু একজন রাজনীতিক রাস্তা দিয়ে যাবে আর তাকে উধাও করে দেয়া হবে। এমন উধাও করে দেয়াটা অতীতে ছিল না।’

অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ১১ বছর পরে দেশে ফিরে এসেছেন, এজন্য আমি আনন্দিত। একইসাথে আমি মনে করি, আগামীর বৈষম্যহীন আইনজীবী হিসেবে তিনি ভূমিকা রাখবেন।’ অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আইনজীবী তার মক্কেলের পক্ষে কথা বললে, আইনী সহায়তা করলে, সেই আইনজীবীকে বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করতে হয় ১১ বছর, সেটা ব্যারিস্টার রাজ্জাককে দেখলে বোঝা যায়। আমি মনে করি, ব্যারিস্টার রাজ্জাকই একটি প্রতিষ্ঠান, তিনি যে ক্ষনজন্ম পুরুষ সেটা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার মনের অজান্তে প্রমাণ করে গেছে।’

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সম্পার্কে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আইনের ধারালো অস্ত্র ধরে রাখতেন বলে স্বৈরাচার সরকার চিন্তা করে তাকে দেশে থাকতে দেয়া যাবে না। আল্লাহ তাকে আবার ফিরিয়ে দিয়েছেন।’

জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক খুবই অসুস্থ ছিলেন। মহান আল্লাহ তাকে আবারো আমাদের মাঝে ফিরিয়ে এনেছেন। আমরা আশা করব, তিনি আবারো আইন পেশায় ফিরে আসবেন। বিগত দিনে তিনি জ্ঞানের আলো দান করেছেন। তাকে আমরা আবার ফিরে পাব।’

মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ১১ বছর আগে চলে যাওয়া আবার ফিরে আসা আমার কাছে অলৌকিক মনে হয়।’ তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে কেউ মনে করেনি শেখ হাসিনার মতো দুর্দান্ত প্রতাপশালী শাসক এভাবে পালিয়ে যাবেন। বাংলাদেশের মানুষের জীবনে এর চেয়ে বড় অর্জন আর কিছু হতে পারে না। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া এ দিন তিনি মানুষকে দেখিয়েছেন।’ 

এ সময় জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার, প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান, মোহাম্মদ হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন প্রমুখ।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক অ্যাসোসিয়েটস এ সংবর্ধনার আয়োজন করে।