১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

‘দেশপ্রেম শব্দটিকে নিছক একটি পণ্যে পরিণত করেছিল আ’লীগ’

শিক্ষা অধিকার সংসদ আয়োজিত প্রস্তাবনা শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভা - ছবি : নয়া দিগন্ত

আওয়ামী লীগ ‘দেশপ্রেম’ শব্দটিকে নিছক একটি পণ্যে পরিণত করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান। তিনি বলেন, সেটা শুরু হয়েছিল তথাকথিত এবং বিতর্কিত কারিকুলামের মাধ্যমে।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েমে) মিলনায়তনে পাঠ্যপুস্তকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বীরত্বগাথার অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে শিক্ষা অধিকার সংসদ আয়োজিত প্রস্তাবনা শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান সব মানুষকে এক কাতারে নিয়ে এসেছে। সব শিক্ষার্থী ও সব পেশার মানুষকে একত্রিত করেছে। জীবন বাঁচানো ও পরিবর্তিত ভিন্ন একটি দেশ দেখার আশা জাগিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ইতিহাস লিখব, সেভাবেই লিখতে হবে। শিশুদের জন্য লিখতে গেলে শিশুর মনস্তত্ত্ব বুঝে তারপরেই তাদের নিয়ে লিখতে হবে। আমাদের ইতিহাস কেন বায়ান্ন আর একাত্তরে পড়ে থাকবে? তার আগের ইতিহাসও পাঠ্যবইয়ে থাকা জরুরি।

তিনি আরো বলেন, ‘পতিত আওয়ামী লীগ কী করেছে, সেটা চিন্তা না করে বরং কোন আকাঙ্ক্ষায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে, সেটা বুঝতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের ব্যয় সবচেয়ে কম। এমনকি আমাদের শিক্ষা বাজেট আফগানিস্তানের চেয়েও কম। আমাদের এখানেও জোর দিতে হবে। নতুন বাংলাদেশ গঠনে জোর দিতে হবে। বৈচিত্রকে ধারণ করতে হবে। সেই ভাবনা থেকে শিক্ষা নিয়েও কাজ করতে হবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমি ছাত্রনেতা নই, শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবেই আমরা আন্দোলন শুরু করি। এত দিন বিশেষ করে গত ১৫ বছরে মিডিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় যে বন্দনা ছিল তার পরিবর্তন দরকার। শিক্ষার সূত্রেই আমি কারিকুলামসহ বিভিন্ন বিষয় পড়েছি। নিজেও শিক্ষাদানের সাথে যুক্ত আছি। আমার উপলব্দি হলো বুদ্ধিজীবীদের সংঘবদ্ধ একটি গোষ্ঠী ইতিহাসকে ব্র্যাকেটবন্দি করেছেন। দীর্ঘ ১৫ বছর আমরা দমবন্ধকর এক পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছি। ২০২৪ এর গণঅভুত্থানকে আংশিক ইতিহাস হিসেবে যেভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে, এটা বন্ধ করা দরকার। বরং একাত্তরের মতো ২০২৪ আন্দোলনকে পুরো ইতিহাসের অংশ হিসেবে দেখতে হবে।’

শিক্ষা গবেষক রাখাল রাহা বলেন, ‘গত ১৫ বছরে শিক্ষায় যে অধঃপতন হয়েছে তা আগে কখনো হয়নি। প্রশ্নফাঁসের আন্দোলনে আমি গুম হই। পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত করার ক্ষেত্রে আবেগ আক্রান্ত হওয়া যাবে না। পাঠ্যপুস্তকে ২০০৮ চরমভাবে ইন্টারফেয়ার করা হয়েছে। ইতিহাসের অতিকথন হয়েছে। ইতিহাস বিকৃতি করে পাঠ্যবইয়ে কোটালিপাড়াকে রাজধানী বলা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি জুলাই গণঅভ্যুাত্থানের ইতিহাস পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করতে। আশা করছি, এটা সম্ভব হবে।

ন্যাশনাল কারিকুলাম কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্য অধ্যাপক সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বগাথা নিশ্চয়ই পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত হবে। আগামী বছর মূল টার্গেট করতে হবে। আমাদের কারিকুলামে কী রাখা হবে চিন্তা করেই রাখা দরকার।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা অধিকার সংসদের আহ্বায়ক ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রফেসরিয়াল ফেলো অধ্যাপক ড. এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ।

এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম।

অন্য অতিথিদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন ইনকিলাব মঞ্চের শরিফ ওসমান হাদী, অ্যাডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ইরাব) সহ-সভাপতি শাহেদ মতিউর রহমান, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে শহীদ আনাসের মা-বাবা, শহীদ সাজিদের বোন, আহত শিক্ষার্থী জসিম উদ্দিন প্রমুখ।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের সদস্য সচিব এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মো: শাহনেওয়াজ খান চন্দন।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল