জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নতুন কমিটির শপথ গ্রহণ ও ৯ দফা দাবি ঘোষণা
আমরা অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি চাই : মুহিব খান- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:৩০
জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। সেইসাথে রাষ্ট্র ও দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের প্রতি দেশের জাতীয় সংস্কৃতির সুরক্ষা ও উন্নয়নের স্বার্থে নয় দফা দাবি ঘোষণা করা হয়েছে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে ওই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি কবি মুহিব খান।
তিনি মুখ্য আলোচক হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করান এবং নয় দফা দাবি পেশ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রায় দুই শ’ বছরের ব্রিটিশ শাসন এবং দেশবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অপশক্তির আগ্রাসনের কবলে পড়ে আমাদের বিশ্বাস ও জাতীয় চেতনাবোধ-সমৃদ্ধ সংস্কৃতি আজ বিকৃত ও বিলুপ্তির পথে। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে দেশ জাতি ও নতুন প্রজন্মের জন্য একটি পরিশুদ্ধ সুস্থ এবং সুন্দর সংস্কৃতি বিনির্মাণের লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে। অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি রশিদ আহমদ ফেরদৌস, সহ-সভাপতি এম কামরুজ্জামান, ড. কুতুব উদ্দিন বখতিয়ার, সাধারণ সম্পাদক কাওসার আহমাদ সুহায়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মাদ বদরুজ্জামান প্রমুখ।
সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ইবরাহীম কোব্বাদী, আহমাদ আবু জাফর ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক রায়হান কবিরের সঞ্চালনায় পরিচালিত ওই অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি ইখতিয়ার হোসাইন, মুহিব ইমতিয়াজ, খন্দকার হুসাইন আহমাদ, হাসিব আর রাহমান, আফজাল হুসাইন, রাশেদুর রহমান, ওবায়দুল্লাহ সায়েম, সাদ মাশফিক খান, জামাল মাসরুর, আব্দুল হান্নানসহ আরো অনেকে।
সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নয় দফা :
১. বাংলা নববর্ষ উদযাপনসহ দেশের সকল সার্বজনীন জাতীয় উৎসব-আয়োজনে দেশীয় সংস্কৃতিতে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ, বিশেষ সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন ও যাবতীয় কুসংস্কার চর্চা বন্ধ করতে হবে এবং দেশীয় সংস্কৃতি সংগ্রহ, গবেষণা ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২. নাগরিকের ধর্মীয় অনুভূতি, সামাজিক মূল্যবোধ এবং শান্তি সম্প্রীতি ও নৈতিকতাবান্ধব সকল ব্যক্তিগত অধিকার সুরক্ষায় কঠোর আইন ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নাটক, চলচ্চিত্র ও মঞ্চের খলচরিত্রে ধর্মীয় অবয়ব ও পোশাকের অবমাননাকর ও উদ্দেশ্যমূলক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
৩. দেশের নাটক, চলচ্চিত্র, ওয়েব সিরিজ, ফ্যাশন, বিজ্ঞাপন, সাহিত্য, মঞ্চ ও প্রকাশ্য লোকালয়ে অশ্লীল অসামাজিক কুরুচিপূর্ণ কথা কাজ ভাষা অঙ্গভঙ্গি ও পোশাক প্রদর্শন বা প্রকাশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং এসব কর্মকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৪. জাতীয় চরিত্রবিধ্বংসী অশ্লীল অসামাজিক কুরুচিপূর্ণ ওয়েবসাইট, বিদেশী সিরিয়াল এবং ইউটিউব, ফেসবুক কনটেন্ট সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং এসব প্রতিরোধের জন্য কঠোর আইনী ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫. দেশের সর্বত্র থেকে অশ্লীল অরুচিকর ভাস্কর্য, বিজ্ঞাপন ও চিত্রকলা অপসারণ করতে হবে। পতিতাদের সম্মানজনক বিকল্প পেশায় পুনর্বাসন করতে হবে এবং অবাধ যৌনতা ও ট্রান্সজেন্ডার ধারণার সমর্থন, প্রচার ও প্রচারণাকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ও শাস্তিবিধান করতে হবে।
৬. অসাধু ব্যক্তি গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে ও বাণিজ্যিক স্বার্থে পণ্যরূপে নারীর অবমাননাকর ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। গ্ল্যামার জগতে প্রতিভা অন্বেষণের আড়ালে অথবা সুন্দরী প্রতিযোগিতার মোড়কে নগ্নতা ও নির্লজ্জতার বিস্তার রোধ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক কনসার্টের নামে দেশের মাটিতে বিদেশী সংস্কৃতিকর্মী ও কলাকুশলীদের অশ্লীল আপত্তিকর পারফরম্যান্স নিষিদ্ধ করতে হবে।
৭. রাষ্ট্রীয় প্রচারণা, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, গোয়েন্দা তৎপরতা ও কঠোরতর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের সর্বত্র সকল প্রকার মাদকদ্রব্য আমদানি-রফতানি উৎপাদন সংগ্রহ ও সেবন কঠোরভাবে রোধ করতে হবে এবং শিক্ষাঙ্গন হাসপাতাল অফিস-আদালত বিমানবন্দর স্টেশন টার্মিনাল যানবাহন মার্কেট শপিং মলসহ সকল পাবলিক প্লেসকে ময়লা-আবর্জনা ও ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করতে হবে।
৮. শিক্ষাঙ্গনে ধর্ম, সমাজ ও আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের সাথে সুসামঞ্জস্য ও ভারসাম্যপূর্ণ জাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম এবং পাঠ্যসূচি চালু করতে হবে এবং সততা সৌন্দর্য পরিচ্ছন্নতা ও রুচিবোধ-সম্পন্ন স্বপ্রণোদিত সভ্য নাগরিক শ্রেণি গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে কার্যকর মাধ্যম হিসেবে ব্যাপকভাবে কাজে লাগাতে হবে।
৯. রাজনৈতিক বিবেচনা কিংবা বিশেষ মতাদর্শিক পক্ষপাতিত্ব ও বৈষম্যের ঊর্ধ্বে থেকে দেশের শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে সুস্থ চিন্তা, সত্যচেতনা, সৃজনশীল নির্মাণ ও শৈল্পিক প্রকাশ ক্ষমতার অধিকারী প্রকৃত যোগ্য এবং জননন্দিত ব্যক্তিত্বদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং জাতীয় পদক-পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত করতে হবে। রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে তাদের বর্ণাঢ্য কর্ম ও অবদান সংরক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। -প্রেস বিজ্ঞপ্তি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা