মো: কামরুজ্জামান
‘সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখার সুপারিশ করেছে। সুপারিশে বিদ্যমান ধারাটি হুবহু বহাল রাখার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের বিষয়টি ছিল না। জাতীয় পার্টির শাসনামলে ১৯৮৮ সালের ৭ জুন অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম প্রবর্তন করা হয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখা হয়।
ইসলাম ধর্ম হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এ ধর্মে রাষ্ট্রব্যবস্থা থাকাই স্বাভাবিক এবং আছেও। হজরত মুহাম্মদ সা: মক্কা থেকে মদিনায় আগমনের দেড় বছরের মধ্যে মদিনায় বসবাসরত ইহুদি, পৌত্তলিক ও মুসলমানদের সমর্থনে মদিনা সনদের মাধ্যমে মদিনাভিত্তিক নবগঠিত রাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হন। হজরত মুহাম্মদ সা: ইন্তেকালের আগে রাষ্ট্রক্ষমতায় বংশ উত্তরাধিকার দূরের কথা, কোনো উত্তরাধিকার মনোনীত করে যাননি। এ সময় সারা বিশ্বে এ রকম প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রে রাজতন্ত্রব্যবস্থা চালু ছিল, কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছিল না।
কুরআনে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি রাসূলের অনুসরণ করে সে তো আল্লাহর আনুগত্য করল।’ (সূরা নিসা, আয়াত-৮০) অর্থাৎ ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি হচ্ছে হজরত মুহাম্মদ সা:-এর মদিনাভিত্তিক রাষ্ট্রের ব্যাপারে অনুসৃত নীতি এবং কুরআন ও হাদিসের এতদসংক্রান্ত নির্দেশনা অর্থাৎ শরিয়াহ আইন। এর আলোকে ইসলামের চার খলিফার কেউ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কোনো চেষ্টা করেননি; কোনো রাজনৈতিক দল করেননি। রাজনৈতিক দল ছাড়া জনগণের সরাসরি সমর্থনে তারা খলিফা অর্থাৎ রাষ্ট্রপ্রধান নিযুক্ত হন। তারা মদিনা সনদের মর্মানুযায়ী এবং মুসলমানদের জন্য শরিয়াহ আইন মোতাবেক দেশ পরিচালনা করেন।
ইসলামের চার খলিফা যেভাবে জনগণের সরাসরি সমর্থনে বিনা চেষ্টায় নির্বাচিত হয়েছেন তাকে ইসলামী গণতান্ত্রিক নির্বাচন বলা যায়। অর্থাৎ ইসলামী গণতন্ত্রে স্বেচ্ছায় প্রার্থী হওয়া যায় না, প্রার্থী মনোনীত হলে জনগণের সমর্থন পাওয়ার জন্য কোনো চেষ্টা করা যায় না। তাই এ ব্যবস্থায় কোনো রাজনৈতিক দল নেই এবং নির্দলীয়ভাবে নির্বাচন হয়।
রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের অর্থ হচ্ছে রাষ্ট্র ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী চলা। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী রাষ্ট্র চলা বলতে বোঝায়, রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে জনগণের সরাসরি ভোটে হওয়া এবং প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীদের অধিকার অক্ষুণ্ণ রেখে মুসলমানদের জন্য সরকার শরিয়াহ আইন মোতাবেক চলা, যা এ পর্যন্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায়। এ রাষ্ট্রকে ইসলামী রাষ্ট্রও বলা হয়।
অথচ সংবিধান সংস্কার কমিশন অতীতের রাজনৈতিক দলগুলোর সরকারের মতো এটিকে নিছক লোকদেখানোর পর্যায়ে রেখে এর সম্পূর্ণ বিপরীতে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলীয় প্রধানমন্ত্রী শাসনব্যবস্থা অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এর দোহাই দিয়ে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যমান পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে লোকদেখানোভাবে রেখেছে।
উল্লেখ্য, মদিনা সনদে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বা ইসলামী রাষ্ট্রের উল্লেখ ছিল না। ইতিহাসবিদরা এ রাষ্ট্রকে ইসলামী রাষ্ট্র বলে অভিহিত করেছেন। হজরত মুহাম্মদ সা: ও ইসলামের চার খলিফার শাসনকাল মদিনাভিত্তিক রাষ্ট্র হচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্র।
বর্তমান অবস্থায় সত্যিকার রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তথা ইসলামী রাষ্ট্র করা হচ্ছে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন। তাই এ ব্যাপারে গণভোট করা সমীচীন। এ পরিস্থিতিতে ইসলামী গণতন্ত্র তথা ইসলামী রাষ্ট্রের সমর্থকদের প্রধান উপদেষ্টা যেন ইসলামী গণতন্ত্র, বুর্জোয়া গণতন্ত্র ও কমিউনিস্ট গণতন্ত্রের ওপর গণভোট করে তার জন্য সোচ্চার হওয়া সমীচীন।
লেখক : প্রকৌশলী ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা



