ভারতীয় সুতার সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না দেশীয় সুতা। অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে দেশের সুতাকলের উৎপাদিত সুতা। লোকসানের মুখে আংশিক অথবা পুরো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক সুতাকল।
নয়া দিগন্তে গতকাল প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়, ভারত থেকে সুতা আমদানি সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে। কারণ, ভারতীয় সুতার দাম তুলনামূলকভাবে কম। তাই পোশাক প্রস্তুতকারকরা ভারতীয় সুতা আমদানি করছেন। এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বস্ত্রশিল্পে। তৈরি হয়েছে নতুন সঙ্কট। অনেক কারখানায় উৎপাদন কমেছে। কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। একই সাথে গুদামে জমছে অবিক্রীত সুতার স্তূপ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য, ২০২৪ সালে ভারত থেকে সুতা আমদানি বেড়েছে ৪১ শতাংশ। বিটিএমএ বলছে, ২০২৫ সালে এটি আরো বাড়ছে। তবে সে চূড়ান্ত পরিসংখ্যান এখনো প্রকাশ হয়নি।
প্রশ্ন হলো, ভারত কম দামে সুতা রফতানি করতে পারলে বাংলাদেশের সুতার দাম বেশি কেন। এর কারণ হলো- ভারত গত তিন বছর ধরে বস্ত্রশিল্পে ধারাবাহিকভাবে নগদ প্রণোদনা, করছাড়, স্বল্পসুদে ঋণ ও বিদ্যুৎ-গ্যাসে ভর্তুকি দিচ্ছে। এটি তারা করছে রফতানি বাড়ানোর লক্ষ্যে এবং এ কৌশল ফলপ্রসূ হয়েছে। এমন অবস্থায় টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশ যা করেছে তা হতশাজনক। বিটিএমএ জানায়, বাংলাদেশে গত দুই বছরে নগদ প্রণোদনা ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। ব্যাংকঋণ সুলভ নয়, করছাড় নেই, বিদ্যুৎ-গ্যাসের সরবরাহ অপ্রতুল। ফলে দেশীয় মিলের উৎপাদন ব্যয় বেশি হচ্ছে। টেক্সটাইল মিলগুলো রফতানি বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। অভ্যন্তরীণ বাজারেও ভারতীয় সুতার কাছে মার খাচ্ছে।
কিন্তু স্থানীয় শিল্পকে জয়ী করতে হলে যেখানে প্রণোদনা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার সেখানে তা কমিয়ে দেয়ার কারণ কী? রাজনীতির মতো এখানেও কি কেউ ভারতের স্বার্থরক্ষায় কাজ করছে? এটি স্পষ্ট, সামান্য ক্ষমতার লোভে পতিত সরকার ভারতের কাছে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েছে দীর্ঘকাল ধরে। দেশের গোটা অর্থনীতিকে ভারতের সম্পূরক অর্থনীতিতে পরিণত করার সব রকম চেষ্টা করেছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের সময় পরিস্থিতির ভিন্নতা আশা করেছিল দেশবাসী। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি; বরং ক্ষেত্রবিশেষে উল্টোটাই দেখা যাচ্ছে।
আমরা আশা করব, বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
দেশের শীর্ষ রফতানি পণ্য এখনো তৈরী পোশাক। এ খাতের ধস মানে পুরো অর্থনীতির ধস। স্থানীয় সুতাকল বন্ধ হয়ে গেলে ভারতীয় সুতা আর সস্তায় পাওয়া যাবে না, তা নিশ্চিত। বাংলাদেশে কোনো পণ্যের অভাব দেখা দিলে ভারত সেই পণ্যের দাম বাড়িয়েছে বা রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে- এমন দৃষ্টান্ত অনেক।
বস্ত্রশিল্পের আরো সমস্যা আছে যেগুলো দূর করা দরকার। এর মধ্যে দক্ষ জনবলের অভাব, আর্থিক অব্যবস্থাপনা, প্রায়শ শ্রমিক অসন্তোষ, আইনি ও নীতিগত দুর্বলতা এবং কাস্টমস ও প্রশাসনিক জটিলতা অন্যতম। দেশের স্বার্থেই শিল্প রক্ষা করতে হবে।



