ভোট নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার শঙ্কা, দায়িত্বশীলতার বহিঃপ্রকাশ

দীর্ঘ দেড় দশক ধরে বাংলাদেশের নাগরিকরা ভোটাধিকারবিহীন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে তিনতিনটি নির্বাচনে দেশবাসী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। এ সময়ে কখনো একতরফা, কখনো আগের রাতে বাক্স ভরে রাখা, কখনো পাতানো নির্বাচন করা হয়েছে। ফলে দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। অনিবার্য পরিণতিতে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে।

শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনা নিজের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে ভিন্নমতের ব্যক্তিদের গুম-খুন, নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে দমিয়ে রাখেন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করেন। এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতি থেকে দেশের মানুষ মুক্তির পথ খুঁজছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে অবলম্বন করে ছাত্র-জনতা গড়ে তোলেন বৈষম্যবিরোধী দুর্বার আন্দোলন। এ আন্দোলনের তোড়ে গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হয়। জীবন বাঁচাতে তিনি পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এমন প্রেক্ষাপটে চব্বিশের ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। সেই থেকে দেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন একটি সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধাহীনভাবে নিজেদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দেবেন। সাথে সাথে তারা এটিও চান যে, শাসনব্যবস্থায় সংস্কার এনে বাংলাদেশ যেন একটি বৈষম্যহীন মানবিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়।

রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে দেশের ইতিহাসে ‘সেরা নির্বাচন’ আয়োজন করবেন বলে একাধিকবার আশ্বস্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ইতোমধ্যে সরকার জানিয়েছে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। তবে এখনো তফসিল ঘোষণা হয়নি। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে ততই অনৈক্য দেখা যাচ্ছে। এতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হবে কি না তা নিয়ে অনেকে সংশয় প্রকাশ করছেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘নির্বাচন বানচালের জন্য ভেতর থেকে, বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাটো নয়, বড় শক্তি নিয়ে বানচালের চেষ্টা করবে। হঠাৎ করে আক্রমণ চলে আসতে পারে। এ নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। যত ঝড়ঝঞ্ঝাই আসুক না কেন, আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবে।’

নির্বাচন সামনে রেখে গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে যমুনায় অনুষ্ঠিত প্রথম সমন্বয় সভায় এমন শঙ্কার কথা জানান তিনি। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আক্রমণ বলতে শুধু শারীরিক আক্রমণ নয়; বরং সাইবার অ্যাটাক বা সোস্যাল মিডিয়ায় ডিজ-ইনফরমেশন (অপতথ্য) ছড়ানোকেও বোঝানো হচ্ছে। পতিত স্বৈরাচার ও তার দোসররা দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, তা চায় না। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার শঙ্কা প্রকাশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেকে বলেছেন, সরকারের দায়িত্ব ভোটারদের মধ্যে আস্থা তৈরি করা। তা না করে শঙ্কার কথা বলা সুবিবেচনাপ্রসূত নয়; এটি দায়িত্বশীল আচরণের পরিপস্থী। আমরা মনে করি, প্রধান উপদেষ্টা যে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তা অবিবেচনাপ্রসূত নয়। তিনি লুকোছাপা না করে সততার সাথে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার বার্তা দিয়েছেন। এটিই দায়িত্বশীলতা।