১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধের রাজনীতি

-

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনারা জনগণের ওপর যে বর্বরোচিত গণহত্যা চালিয়েছিল তাতে পুরো জাতি ছিল দিশেহারা। চরম উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে মেজর জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধের আহ্বান জানান। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেও দেশ মুক্ত হওয়ার পর তার নাম আর আলোচিত হয়নি। তবে তিনি তার সৈনিক জীবনের পেশাগত যোগ্যতায় সেনাবাহিনী প্রধান হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সামরিক অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা নিহত হয়। নভেম্বর মাসে আরেকটি অভ্যুত্থানের চেষ্টা চলে। কাউন্টার ক্যুর নায়করা জিয়াউর রহমানকে বন্দী করলে তিনি আবার আলোচনায় আসেন। তিনি ভারতবিরোধী দেশপ্রেমিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হন। তিনি নিজে অভ্যুত্থানের সংগঠক ছিলেন না, কিন্তু তার পদ ও ইমেজ তাকে অভ্যুত্থানের মধ্যমণিতে পরিণত করে। তিনি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বা প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ দখল করেননি। জেনারেল জিয়া ও সংশ্লিষ্ট সামরিক কর্মকর্তারা বিচারপতি এ এস এম সায়েমকে রাষ্ট্রপতি পদে বসিয়ে তাকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব দেন। আর তিন বাহিনীর তিন প্রধানকে দেয়া হয় উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব। জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে তাদেরই একজন হন। অবশ্য নিজ যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্ব এবং সেনাবাহিনী প্রধানের পদের বদৌলতে তিনি সরকারে প্রধান সিদ্ধান্তগ্রহণকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।

রাষ্ট্রীয় মূলনীতির সংশোধনী : ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর পর দেশে দ্রুত রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক পটপরিবর্তন হতে থাকে এবং শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সাংবিধানিক নীতি ও বিধির সংশোধন ও পরিবর্তন অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে। জাতীয় সংসদ গঠিত হওয়ার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত প্রণীত সব সামরিক আইন বিধি, সামরিক আইন আদেশ, রাষ্ট্রপতির আদেশ ও অধ্যাদেশ এবং অন্যান্য সব আইন ও আদেশের মাধ্যমে সংবিধানের যেসব সংশোধন, পরিবর্তন, প্রতিযোজন ও বিলোপ সাধন করা হয়, সেগুলো সংবিধানে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ও পাস হয়।

বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আনয়নের ক্ষেত্রে জেনারেল জিয়ার যে পদক্ষেপটি সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ তা ছিল সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে যেসব অনাকাক্সিক্ষত ও অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল পঞ্চম সংশোধনীর দ্বারা তার অধিকাংশেরই প্রতিবিধান করা হয়। এ ছাড়া রাষ্ট্রের মূলনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :

সংবিধানের প্রস্তাবনার প্রারম্ভে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজন।

রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি হিসেবে- ৮(১) অনুচ্ছেদে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস প্রতিফলন। (১ক) অনুচ্ছেদে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসই হইবে যাবতীয় কার্যাবলির ভিত্তি’ সংশোধন।

৮(১) অনুচ্ছেদের আরেক রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ‘সমাজতন্ত্র’ এর পরিবর্তে ‘সমাজতন্ত্র অর্থাৎ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার’ প্রতিস্থাপন।

২৫(২) অনুচ্ছেদে ‘রাষ্ট্র ইসলামী সংহতির ভিত্তিতে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক সংহত, সংরক্ষণ এবং জোরদার করিতে সচেষ্ট হইবেন’- মর্মে নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজন।

ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠনের ওপর সাংবিধানিক বাধা অপসারণ। একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা বাতিল।
সুপ্রিম কোর্টের মৌলিক এখতিয়ার পুনঃবলবৎকরণ।

সংসদে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ১৫ থেকে ৩০ বৃদ্ধিকরণ।

উল্লিখিত সংশোধনীগুলোর তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, সংবিধান তথা রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলামী চেতনার প্রাধান্য এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে, শেখ মুজিব ও তার দল আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জনগণের চিন্তা ও বিশ্বাসের যে গুরুত্বপূর্ণ দিককে উপেক্ষা করেছিল, জিয়াউর রহমান ঠিক সে দুটোকেই সঠিক মূল্যায়ন করে তাকে যথাস্থানে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অর্থাৎ জেনারেল জিয়া জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও চেতনা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে দৃঢ়ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করেন। কেউ কেউ দাবি করেন, জিয়াউর রহমান সৌদি আরবের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য এবং মুসলিম বিশে^র সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ইসলামী মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন : শেখ মুজিব চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল প্রবর্তন করায় বহুদলীয় ব্যবস্থার অবসান ঘটেছিল। জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনেন। তার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছিল আওয়ামী লীগ। বাকশাল গঠনের মধ্য দিয়ে বিলুপ্ত হওয়া আওয়ামী লীগ পুনরুজীবিত হয়। তিনি একই সাথে শেখ মুজিবের আমলে নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামী দলগুলোর ওপর থেকেও নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন।

সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ মুজিব সংসদীয় গণতন্ত্রের পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন। জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনলেও সরকারপদ্ধতি হিসেবে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা বহাল রাখেন।

বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ : ১৯৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র সন্নিবেশিত হয়। এ ছাড়া দেশের নাগরিকদের ‘বাঙালি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়া শুধু ভাষাভিত্তিক ‘বাঙালি’ জাতীয়তাবাদের বিপরীতে ‘বাংলাদেশী’ জাতীয়তাবাদের কথা বলেন। জিয়াউর রহমান তার জাতীয়তাবাদী দর্শনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা ধর্মে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এটি সত্য। আমরা ভাষা ও কৃষ্টির ব্যাপক অর্থেও বাঙালি সে কথাও সত্য; কিন্তু ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনীতি, ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা সংগ্রাম, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের চূড়ান্তভাবে একটি বিশিষ্ট জাতিত্বের স্বীকৃতি দিয়েছে। সীমান্তের বাইরে যারা ভাষা সংগ্রাম করেনি, মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দেয়নি, তাদের কেমন করে আত্মত্যাগের অংশীদার করব? তাদের কেমন করে আমাদের পতাকার এবং মানচিত্রের অংশীদার করব? এই হলো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মূল কথা। ভাষা যদি একটি ফুল হয়, ধর্ম আরেকটি ফুল। ভাষা-ধর্মের কোনো ফুলকে অস্বীকার করব না, কিন্তু ধর্ম, ভাষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনীতি, ভাষা বিদ্রোহ এবং স্বাধীনতাযুদ্ধের বিভিন্ন ফুল নিয়ে যে তোড়া বেঁধেছি- এতে সব ফুল আছে- এটিই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। বাঙালি জাতীয়তাবাদের সাথে এর কোনো বিরোধ নেই; কিন্তু এটি শুধু আংশিক সংজ্ঞা। তাই আমরা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের পুরো সংজ্ঞায় পরিচিত হতে চাই, একটি ফুল নয়, এবার একটি ফুলের তোড়া চাই।’ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মতাদর্শ ছড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন ধারার সূচনা করেন।

জিয়াউর রহমানের ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’-এর দর্শন ছিল একটি যুগান্তকারী ধারণা। কারণ শেখ মুজিবের ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ দর্শনের বিরুদ্ধে এটিকে দাঁড় করানো হয়। যে শেখ মুজিবকে তার অনুসারীরা শুধু ‘জাতির পিতা’ই নয় বরং ‘সুপারম্যান’ মনে করেছিল। সুতরাং তার প্রবর্তিত ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ দর্শনের বিপরীতে ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’-এর দর্শন ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। সূচনা থেকেই আওয়ামী লীগের অনুসারীরা এটি মেনে নিতে পারেনি এবং বিষয়টিকে একটি বড় রাজনৈতিক বিতর্কে পরিণত করা হয়।

বস্তুত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের তাত্ত্বিক ভিত্তিটি প্রস্তুত করেছিলেন আবুল মনসুর আহমদ ও খন্দকার আবদুল হামিদ। জিয়াউর রহমান সেই প্রত্যয়টিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথম ব্যবহার করেন। খন্দকার আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘এ জাতির রয়েছে গৌরবময় আত্মপরিচায়, নাম-নিশানা, ওয়ারিসি-উত্তরাধিকার, ঐতিহ্য-ইতিহাস, ঈমান-আমান, জবান-লিসান, শিল্প-সাহিত্য-স্থাপত্য, সঙ্গীত সব কিছু। বাংলাদেশী জাতির আছে নিজস্ব জীবনবোধ, জীবনধারা, মনস্তাত্ত্বিক গড়ন-গঠন, ভাবধারা। আছে সমষ্টিগত বিশেষ মনোভঙ্গি, আবেগ-আকাক্সক্ষা ও হৃদয়ানুভূতির বন্ধন। এদের হৃদয়তন্ত্রীতে বাজে একই সুখ-দুঃখের সুর, একই আবেগ-অনুভূতির ঝঙ্কার। এদের জীবনে ও মনোজগতে রয়েছে এমন অসংখ্য বৈশিষ্ট্য, যা সারা পৃথিবী থেকে এদের স্বাতন্ত্র্য দান করেছে- এমনকি অন্যান্য দেশের বা অঞ্চলের বাংলাভাষী ও ইসলাম অনুসরীদের থেকেও। ইসলামের কথা বললাম এ জন্য যে, এ দেশের ৮৫ শতাংশ লোকই মুসলিম। এই বৈশিষ্ট্যগুলোই ‘বাংলাদেশী জাতীয়তার’ উপাদান। এগুলো বাকল নয়, আসল সারাংশ। আর এই সারাংশই আমাদের বাংলাদেশী জাতীয়তার আসল শক্তি, ভিত্তি ও বুনিয়াদ।’ (খন্দকার আবদুল হামিদ, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, আহমদ মুসা সম্পাদিত, ঢাকা, ২০০১)

ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে ইসলামী মূল্যবোধ : জিয়াউর রহমান সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে ‘আল্লাহর ওপর অবিচল বিশ^াস ও আস্থা’ সন্নিবেশিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূল চেতনার একটি বিকল্প উপস্থাপন করেন। তিনি আবার এ সংশোধনীর ওপর গণভোট করে জনগণের সম্মতি গ্রহণ করেন। দেশের ইসলামী ও মুসলিম জাতীয়তাবাদী দলগুলো জিয়াউর রহমানের কাছে বহুলভাবে ঋণী। তিনি পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রের ইসলামী চরিত্র না দিলে রাজনৈতিক ময়দানে ইসলামপন্থীদের পুনরাবির্ভাব কঠিন ও সময়সাপেক্ষ হতো। এসব দল কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনীর ব্যাপারে গণভোটের আয়োজন করলে ইসলামী দেশগুলো একযোগে তাকে সমর্থন ও সহযোগিতা করে।

‘সামাজিক সুবিচার অর্থে সমাজতন্ত্র’ : জিয়াউর রহমান অন্যতম রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে ‘সমাজতন্ত্র’কে একটু পরিবর্তন করে ‘সামাজিক সুবিচার অর্থে সমাজতন্ত্র’ বহাল রাখেন। বস্তুতপক্ষে, সমাজতন্ত্র নিছক একটি শব্দ নয়, এটি একটি পরিভাষা। অভিধানে সমাজতন্ত্রের যে অর্থ করা হয়েছে তার সাথে আমাদের সংবিধানের ভাষ্যের সামঞ্জস্য নেই। সম্পদের রাষ্ট্রীর মালিকানার তত্ত্বটাই সমাজতন্ত্রের প্রধান কথা। রাষ্ট্র তার নিয়ন্ত্রিত সম্পদের সমবণ্টন করবে এটি হচ্ছে তার ফল। অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার কথাটির তাৎপর্য ব্যাপক। একে সমাজতন্ত্র শব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। ভাবগত অর্থে এটি শুদ্ধও নয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্ভবত রাজনীতির কৌশল হিসেবে এরূপ করেছিলেন। অবশ্য জিয়াউর রহমান সমাজতন্ত্রকে পরিচর্যা করেননি; বরং বেসরকারি খাত ও ব্যক্তি মালিকানা তার আমলেই বিকশিত হতে শুরু করে। মুক্তবাজার অর্থনীতির অনুসারী বিএনপিতে যেসব বামপন্থী রয়েছেন তাদের নীতি বিসর্জনের এ বিষয়টিকে যথার্থ মূল্যায়ন করতে হলে এটিই বলা সঙ্গত যে, সমাজতন্ত্রের পতনের সাথে বামপন্থী রাজনীতিকদের বিশ্বাস ও নীতির পতন ঘটেছিল।

মুসলিম বিশ্বের সাথে সুসম্পর্ক : প্রেসিডেন্ট জিয়া পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ‘রাষ্ট্র ইসলামী সংহতির ভিত্তিতে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক সংহত, সংরক্ষণ এবং জোরদার করতে সচেষ্ট হবে’- মর্মে একটি নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজন করেন।

সংবিধানের ষষ্ঠ সংশোধনী : প্রেসিডেন্ট জিয়ার নিহত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে বিএনপি থেকে প্রার্থী হন বিচারপতি আবদুস সাত্তার; তখন তিনি সংসদ সদস্য ছিলেন। রাষ্ট্রপতি পদে নিযুক্ত হওয়ার পর তার সদস্য পদ যাতে বাতিল হয় সে জন্য সংবিধানের ষষ্ঠ সংশোধনী আনা হয়েছিল। এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ১৯৮১ সালের ১০ এপ্রিল সংবিধানের ষষ্ঠ সংশোধনী বিলের মাধ্যমে (১) সংবিধানের ৫১ (৪) উপ-অনুচ্ছেদ সংশোধন করে প্রতিস্থাপন করা হয় যে, ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে, তিনি যে তারিখে প্রেসিডেন্টের কার্যভার গ্রহণ করবেন, সে তারিখে তার পদ শূন্য হয়েছে বলে গণ্য হবে।

লেখক : একজন গবেষক ও বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব
ayubmiah@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement