১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার কীভাবে

- প্রতীকী ছবি

আজকাল অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার গঠন সম্পর্কে কিছু কথাবার্তা হচ্ছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার জাতীয় ঐক্য সৃষ্টিতে সহায়ক হতে পারে এবং জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পারে। কারণ অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকারে দেশের অতি ক্ষুদ্র দলগুলোও দেশ পরিচালনায় অংশীদার হয়। সুতরাং জাতীয় সরকারের সব অংশীদার রাজনৈতিক দলগুলোর সামষ্টিক লক্ষ্যবস্তু হয় জাতির উন্নয়ন এবং সে জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে চেষ্টা করে।

এর বিপরীতে যেখানে একটি জোট বা একটি দল সরকার গঠন করে সেখানে জাতীয় উন্নয়নে নানা ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। একটি বিশেষ দল বা জোট ক্ষমতায় থাকলে ক্ষমতাসীনদের বাইরের দল বা জোটগুলো পরবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা করে। পরবর্তী নির্বাচনে বিজয় লাভের জন্য তারা দেখাতে চেষ্টা করে যে, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল জাতীয় উন্নয়নে ব্যর্থ হয়েছে, সুতরাং আগামী নির্বাচনে তাদেরকে নির্বাচিত করা উচিত। এভাবে ক্ষমতার বাইরের দলগুলো বর্তমান ক্ষমতাসীন দলকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করতে থাকে। কারণ ক্ষমতাসীন দলকে জনগণের সামনে ব্যর্থ প্রমাণিত করতে পারলেই ভবিষ্যতে তাদের বিজয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সুতরাং তাদের একান্ত চেষ্টা থাকে যেন বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ব্যর্থ হয়, তাদের উন্নয়নের প্রকল্পগুলো সার্থক না হয়, দলে দলে মারামারি কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়, হরতাল হয়, ধর্মঘট হয়, সর্বোপরি সব দিকে গণ্ডগোল, ঝামেলা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকারে এ ধরনের বাধা সৃষ্টি হয় না। সেখানে এমন কোনো দল থাকে না যারা সরকারকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করবে; বরং জাতীয় সরকারের সাফল্যকে তারা নিজের সাফল্য মনে করে। তাদের প্রত্যেকে জাতীয় সরকারের সাফল্যে অংশীদার হয় এবং প্রত্যেকেই নিজেদের সফল মনে করে।

নির্বাচন পদ্ধতির যথাযথ সংস্কার হলে এমন অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার গঠন সম্ভব। নির্বাচন পদ্ধতির এমন সংস্কারই আমার আলোচ্য বিষয়। এই পদ্ধতির নির্বাচনে সবচেয়ে ছোট্ট দলটিও তার জনসমর্থনের অনুপাতে নির্বাচিত হয়ে আসতে পারে। প্রস্তাবিত নির্বাচনী সংস্কার হলো দলীয় আদর্শভিত্তিক নির্বাচন, যা দলীয় প্রার্থীভিত্তিক নির্বাচন থেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা।

মানুষ কোনো প্রার্থীকে ভোট দেবে না; বরং দলীয় আদর্শকে ভোট দেবে, অর্থাৎ মানুষ তার পছন্দের দলের মার্কায় ভোট দেবে। মনে করুন, বাংলাদেশে কোনো একটি ছোট রাজনৈতিক দলের শুধু ১ শতাংশ মানুষের সমর্থন আছে। প্রস্তাবিত নির্বাচনী সংস্কার হলে জাতীয় সংসদে এ ছোট দলটিরও তিনজন সদস্য নিশ্চিতভাবে নির্বাচিত হবে, অথচ বর্তমান পদ্ধতির নির্বাচনে এ দলটি থেকে একজন সদস্য নির্বাচিত হওয়ারও সম্ভাবনা নেই।

ওপরে উল্লিখিত ছোট দল, যার প্রতি জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশের সমর্থন আছে, সে দল কোনো নির্বাচনী এলাকায় কোনো নির্দিষ্ট প্রার্থী দিলে সে প্রার্থী অন্যান্য বড় দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করে বিজয়ী হতে পারবে না। কারণ হয়তো সে দলের ১ শতাংশ সমর্থক গোটা বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তারা এক নির্বাচনী এলাকায় এসে ভোট দিতে পারবে না এবং পুরো দেশে তাদের একজন প্রার্থীও বিজয়ী হবে না। এই প্রার্থীভিত্তিক নির্বাচনী পদ্ধতির পরিবর্তে যদি এই দলের ১ শতাংশ মানুষ দলটির আদর্শকে সমর্থন করে এবং দলীয় ভিত্তিতে তাদের আদর্শকে ভোট দেয়, তাহলে নির্বাচন শেষে দেখা যাবে, দেশের মোট ১ শতাংশ মানুষ এই দলের পক্ষে ভোট দিয়েছে। ৩০০ আসনের এই বাংলাদেশে ১ শতাংশ ভোটের অনুপাত অনুযায়ী জাতীয় সংসদে তিনটি সদস্যপদ পাওয়া যায়। সুতরাং বর্তমানে প্রচলিত প্রার্থীভিত্তিক নির্বাচনের পরিবর্তে দলীয়ভিত্তিক নির্বাচনে এই ছোট্ট দলটিও নিশ্চিতভাবে জাতীয় সংসদের তিনটি আসন পেয়ে যায়।

এরপর জাতীয় সরকার গঠনের ব্যাপারে এ নীতি গ্রহণ করা হবে যে প্রত্যেকটি দল জাতীয় সংসদে তাদের সদস্যপদের অনুপাত অনুযায়ী সরকারে অংশগ্রহণ করবে। সরকার গঠনের এই নীতি অনুযায়ী দেশে বিদ্যমান প্রতিটি রাজনৈতিক দল জাতীয় সরকারে অংশগ্রহণ করতে পারবে। গঠিত হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার। এই নির্বাচন পদ্ধতি এবং সরকার গঠন পদ্ধতি ছাড়া সার্বিক অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার গঠনের বিকল্প নেই।

দলভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তে প্রার্থীভিত্তিক নির্বাচন হলে কোনো বড় দলের পক্ষেও সরকারে অংশগ্রহণ অসম্ভব হয়ে যেতে পারে। মনে করুন, দু’টি রাজনৈতিক দলের প্রায় সমান সমর্থক আছে এবং তারা প্রত্যেকে কোনো একটি নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী দিয়েছে। বলা বাহুল্য, প্রার্থীরা শুধু দলীয় আদর্শের জন্য নির্বাচনে কাজ করে না; বরং তারা নিজ ব্যক্তিস্বার্থে অতি উৎসাহী হয়ে পেশিশক্তি ব্যবহার করে, যা দলীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো না। এভাবে তুলনামূলক কোনো প্রার্থীর দলীয় সমর্থক কম হওয়া সত্ত্বেও পেশিশক্তির মাধ্যমে বিজয়ী হয় এবং সমান অথবা বেশি সমর্থক থাকা সত্ত্বেও অন্য দলের প্রার্থী পরাজিত হয়। গোটা দেশেই অহরহ এ ধরনের দেখা যায়। এভাবে প্রায় সমান সমর্থক থাকা সত্ত্বেও একটি রাজনৈতিক দল সামগ্রিকভাবে পরাজিত হয় এবং অন্য দল বিজয়ী হয়। বিজয়ী দল সরকার গঠন করে, আর পরাজিত দল থাকে বিরোধী দলে। বিরোধী দল চেষ্টা করে কিভাবে ক্ষমতাসীন দলকে ব্যর্থ প্রমাণ করা যায়।

সুতরাং অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার হওয়া দরকার।

সার কথা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিদ্যমান দলাদলি, দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত, কাদা ছোড়াছুড়ি ও মারামারি থেকে জাতিকে রক্ষা করার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার প্রয়োজন। এটি কোনো অভিনব প্রস্তাব নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দলীয় আদর্শভিত্তিক নির্বাচনের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠিত হয়েছে এবং তারা এর সুফল ভোগ করছে। ইতালি, স্পেন ও নিউজিল্যান্ড এ অভিজ্ঞতার বাস্তব উদাহরণ।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চ্যান্সেলর, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি


আরো সংবাদ



premium cement
অব্যাহতিপ্রাপ্ত ভিসি মোজাম্মেল হককে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা ইসলামী ব্যাংকের সাথে ফরেন করেসপনডেন্ট ব্যাংকগুলোর মতবিনিময় সহকর্মীদের তোপের মুখে শিল্পকলা ছাড়লেন জ্যোতি বগুড়ায় আমরা বিএনপি পরিবারের সহায়তা পেল ৩ শহীদ পরিবার শিক্ষাভবনে দুই গ্রুপের উত্তেজনা ও হাতাহাতি কাঁচপুরে ছয় হাজার স্কয়ার ফুটের ক্যালিগ্রাফিতে ঐক্যের ডাক ‘মহানবী সা: জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করে গেছেন : আল্লামা আবদুল হাই নদভী এনআইডি কার্যক্রম স্থানান্তরে ভোটার তালিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে ডিআরইউর সাবেক সভাপতি আজমল খাদেমের ইন্তেকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আহ্বান সময়োপযোগী : জাতীয় আইনজীবী সমিতি ১৫ বছর আমার কণ্ঠ রোধ করে রাখা হয়েছিল : মনির খান

সকল