এ সরকার জনপ্রত্যাশার কী করবে?
- তারেক ফজল
- ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১০
ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’ দেশ চালাচ্ছেন, ৮ আগস্ট থেকে। বিদ্যমান সংবিধান সংরক্ষণের শপথ করেছেন তারা। এই শপথের মাধ্যমে তারা একটি ‘সাংবিধানিক ঘেরাটোপ বা বেড়াজালে’ আটকেছেন বলে দাবি করেন কেউ কেউ। পঞ্চদশ সংশোধনীর সূত্রে এই দলিলে জটিল ও গুরুতর সব বিধান যুক্ত হয়েছে। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করলে সেসব বিধান সঙ্কট ও জটিলতার কারণ হতে পারে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ১ জুলাই ২০২৪ তারিখে চাকরির কোটায় ‘ন্যায্য সংস্কারের’ দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। সরকার শুরুতে এ দাবিকে অস্বীকার করে, নাকচ করে। এ দাবি জনসমর্থন পেলে কোটার বিষয়টি ‘আদালতের বিষয়’ বলে সবাইকে ‘হাইকোর্ট দেখানোর’ কৌশল নেন, এমনকি মি. আনিসুল হক নামের আইনজীবী মন্ত্রীও। হাইকোর্ট ও আপিল কোর্ট নির্দিষ্টভাবেই ‘কোটার পরিমাণ নির্ধারণ’ নির্বাহী বিভাগের এখতিয়ার বলে জানায়। মি. ওবায়দুল কাদেরের ‘ছাত্রলীগ থ্যারাপি’ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ ভাষ্য ছাত্রদের ‘আন্দোলন’কে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ দেয়। কোটার দাবি বদলে যায়, হয় ‘স্বৈরাচারেরের পদত্যাগের একদফা’। আবু সাঈদদের বুক চিতিয়ে, গুলি খেয়ে জীবন দান ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানকে ‘ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে’ পরিণত করে। ছাত্র-জনতার বুকে পুলিশ-র্যাব-বিজিবি অসংখ্য গুলি চালায়, খুন করে। সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা এ কাজে বেঁকে বসে, গুলি চালাতে অস্বীকার করে। তাই এটি হয়ে ওঠে ‘ছাত্র-জনতা-সেনা গণ-অভ্যুত্থান’। শাসক শেখ হাসিনা পিছু হটেন, জীবন বাঁচাতে দেশ ছাড়েন, ৫ আগস্ট ২০২৪। সফল হয় গণ-অভ্যুত্থান।
আমি বলেছি, ‘ন্যায্য কোটার আন্দোলনকারীরা’ ‘কোনো বিপ্লব করতে চায়নি। ওরা একটি দাবি আদায়ের ‘আন্দোলন’ করছিলে, মাত্র, স্পষ্টতই। সেই ‘আন্দোলনটি’ ‘গণ-অভ্যুত্থান’ হয়ে ওঠে এবং দ্রুতই তা ‘সফল ছাত্র-জনতা-সেনা গণঅ-ভ্যুত্থানে পরিণত’ হয়। এর ‘কৃতিত্ব’ বহুলাংশে শাসক শেখ হাসিনার। ছাত্র-জনতা-সেনার তাতে ‘কৃতিত্ব নেই’, তা বলছি না। তাদের কৃতিত্ব ‘বহুলাংশের অবশিষ্টটুকু’।
ছাত্ররা কোনো বিপ্লব করতে চায়নি, বলেছি। তাই তাদের অর্জনের নাম বিপ্লব হওয়া সঙ্গত নয়, উচিতও নয়। গণ-অভ্যুত্থানটি সফল হয়েছে। তা এখনো জনসমর্থন নিয়ে টিকে আছে। এটি এখন কী করবে, কী করতে পারবে?
এর প্রথম দায়িত্ব গণ-অভ্যুত্থানকে সংহত করা, ঝুঁকিমুক্ত করা। ডক্টর ইউনূসের নেতৃত্বের ‘সরকারটি’ ইতোমধ্যে কয়েকটি ত্বরিত উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগে-পরের কিছু উদ্যোগ তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছে। জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া হয়েছে। পুরো আপিল বিভাগ বদলানো হয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগের বেশ ক’জন বিচারককে সরানো দরকার। প্রেসিডেন্টকে সরানোর দাবি গুরুত্বপূর্ণ। সশস্ত্রবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, বিজিবির বেশ কিছু রদ-বদল-বহিষ্কার অবিলম্বে নিশ্চিত করা দরকার। এগুলো হলো অফিস-আদালতবিষয়ক কাজ।
দ্রুতই করা দরকার জনস্বার্থবিষয়ক কিছু কাজ। পলাতক সব চাঁদাবাজের স্থান যেনো অন্যরা ‘পূরণ’ না করে, তা নিশ্চিত করা দরকার। এটি বিপুল জনগোষ্ঠীকে ব্যাপক ভোগান্তি থেকে রেহাই দেবে। তারা প্রায় সব নিত্যপণ্য ন্যায্যমূল্যে পাওয়ার আনন্দ পাবে। এর বাইরে সিএনজি অটোরিকশা ও গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে, তা অব্যাহত থাকা নিশ্চিত করতে হবে।
সাধারণ মানুষের প্রাপ্তব্য নানান সেবার খাত, অফিসাদিতে ‘বাড়তি খরচ’ বা ঘুষ বন্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ-প্রক্রিয়া চালাতে হবে। আয়োজন এমন করতে হবে যাতে ‘কম পড়াশোনা করা’ সেবাপ্রার্থীরাও কোনো জটিলতায় না পড়ে ন্যায্য সেবা-সুবিধা পায়।
এগুলোকে আমরা স্বল্পমেয়াদি দায়িত্ব বলতে পারি।
মধ্যমেয়াদি দায়িত্ব হলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত জনবল ও নীতিমালা নিশ্চিত করার কাজ।
এ দুই পর্যায়ের কাজ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করতে পারে, সংশ্লিষ্টদের সাথে পরামর্শ করে।
জাতির জন্য দীর্ঘমেয়াদি কিছু কাজ আছে।
তেমন মূল্যবান ও তাৎপর্যপূণ কাজ হলো জাতি গঠনের কাজ।
জাতি গঠনের অর্থ হওয়ার কথা একটি জাতির দীর্ঘমেয়াদি সব লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত করা। সেই তালিকা নির্দিষ্ট কাঠামোয় উপস্থাপনকে আমরা জাতির ‘গঠনতন্ত্র’ (কনস্টিটিউশন বা সংবিধানও বলি) বলতে পারি। তাতে আরো বেশ কিছু প্রসঙ্গের একটি হবে জাতি কিভাবে তার রাজনৈতিক পরিচালক/খাদেমদের বাছাই করবে।
সাধারণভাবে তা ‘জাতীয় নির্বাচনব্যবস্থা’ হিসেবে পরিচিত। সেই নির্বাচনব্যবস্থা কী হবে, দলভিত্তিক নির্বাচন হবে না ‘এবসলিউট মেজরিটি’ নিশ্চিতের ব্যবস্থা থাকবে, তা নির্ধারণ করার মতো তাৎপর্যপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদি নীতিনির্ধারণের কাজে ‘জাতীয় অনুমোদন’ অনিবার্য হওয়া দরকার। তা নিতে হয় গণভোটের মাধ্যমে।
তার মানে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজ অধিকারে ‘জাতি গঠনের’ কাজ করতে চাওয়া ন্যায্য হবে না। এ জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নাম গণপরিষদ বা কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলি। সেই গণপরিষদ জাতির গঠনতন্ত্র তৈরি করে তার জন্য গণরায় নিতে গণভোটে যেতে হবে।
তার মানে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রথমে সংবিধান সভা গঠনের জন্য একটি নির্বাচন করতে হবে। সেই সংবিধান সভা বিভিন্ন জাতীয় নীতিনির্ধারণ ও একটি ‘জাতীয় গঠনতন্ত্র’ বা সংবিধান বানাবে। সেই সংবিধানের জন্য একটি গণভোটের আয়োজন করতে হবে। তা সম্পন্ন হলে সংবিধান সভা ভেঙে দিয়ে জাতীয় সংসদ বা আইন সভা গঠনের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
তা-ও এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই করতে হবে। আইনসভা গঠিত হলে তার সূত্রে গঠিত হবে নতুন নির্বাহী বিভাগ। সেই নির্বাহী বিভাগের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে ডক্টর ইউনূসের এই ‘সরকার’ বিদায় নেবে।
আশা করি বাংলাদেশ একটি নতুন আলোকিত রাজনৈতিক ধারায় এগিয়ে যাবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা