১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩১ ভাদ্র ১৪৩১, ১১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

স্বৈরাচারের ষড়যন্ত্র কি থামবে না

স্বৈরাচারের ষড়যন্ত্র কি থামবে না - প্রতীকী ছবি

ব্যক্তিগত প্রয়োজনে গত ২৫ আগস্ট বাংলাদেশ সচিবালয়ে যাওয়ার দরকার ছিল। দুপুরের দিকে বহু কষ্টে সচিবালয়ের গেটে পৌঁছে দেখি সব গেট ভেতর থেকে বন্ধ। আনসার বাহিনীর সদস্যরা পুরো সড়ক দখল করে আছে। ভিজিটরস গেটের সামনে অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়ে, কখন গেট খুলবে। কিন্তু গেট আর খোলে না। অপেক্ষারত অবস্থায় দেখি আরেক দল লোক মিছিল নিয়ে সেখানে হাজির। তারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দফতরি/নৈশপ্রহরী। এই দু’দল লোক তখন স্লোগানে কাঁপিয়ে তুলছিল সচিবালয় এলাকা। তারা চাকরি জাতীয়করণের দাবি জানাচ্ছিল। অনুমান করলাম, সচিবালয়ের গেট খুলতে অনেক দেরি হবে। তাই বিফল মনোরথে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।

সচিবালয়ের সামনের আইল্যান্ডে কাঁটাতারের বেড়া। বেড়া বেশ উঁচু। দু’-তিনজন তরুণ আমার দু’হাত ধরে কাঁটাতারের বেড়া পার করে দিলো। কিন্তু সেখানেও আরেক বিস্ময়! সেখানে দাঁড়িয়ে আরেকদল মানুষ দাবি জানাচ্ছে। এরা ইনডেক্সধারী শিক্ষক (?)। মনে হলো, সচিবালয় তার প্রশাসনিক চরিত্র বদলে এখন দাবি পূরণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। উপস্থিত সবার দাবি একটাই- চাকরি জাতীয়করণ করতে হবে এবং তা এখনই। আমি ওখানে পৌঁছার পর নিজের অলসতাকে গালি দিচ্ছিলাম এই বলে যে, আরেকটু আগে এলেই সচিবালয়ে ঢুকতে পারতাম। কিন্তু রাতে টেলিভিশনের খবরে দেখলাম যারা সচিবালয়ে ঢুকেছিলেন, তারা রাত ১২টা পর্যন্ত আন্দোলনকারী আনসারদের কারণে অবরুদ্ধ ছিলেন। দেখে শোকর-গুজার করলাম আল্লাহর দরবারে; তিনি যা করেন, মঙ্গলের জন্যই করেন।

একটি বিষয় খুব বিস্ময়কর লাগছে, সবাই কেন সচিবালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি শুরু করল? কিছু দিন সচিবালয়ে কাজ করেছি। এর মধ্যে ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠা নিয়ে মানুষ হত্যার সেই বীভৎস দিনটিও ছিল। আগে-পরে আরো অনেক আন্দোলন দেখেছি, কিন্তু সচিবালয় ঘেরাওয়ের মতো ঘটনা আগে দেখিনি। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, এই পথটা দেখাল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করে স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করা ছাত্রদের নাম ধারণ করেই। নাম ধারণ করে বলছি এ কারণে যে, গত ১৯ আগস্ট, যারা সচিবালয় দখল করে মাত্র এক ঘণ্টার নোটিশে এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল ও অটোপাসের সিদ্ধান্ত নিয়ে গেল, তাদেরকে কেউ চেনে না বা তারাও দেশের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের চেনে না। তা ছাড়া, দেশের শীর্ষস্থানীয় সব কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা এখনো পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক বলে খবরে দেখলাম। তাদের পরীক্ষা দেয়ার আগ্রহের কারণটা পরিষ্কার। কারণ প্রকৃত ছাত্ররা জানে জীবনে সফলতা অর্জনের জন্য এই পরীক্ষার গুরুত্ব কতখানি! সে যাই হোক, তাদের হাত দিয়ে যে প্যান্ডোরার বাক্সটা খুলে গেল, সে বাক্স থেকে যে বহু অশ্রুতপূর্ব ঘটনার জন্ম হবে তা নিশ্চিত।

এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে প্রশ্ন সবার মনে হাজির হচ্ছে তা হলো, অন্তর্বর্তী সরকারের তিন সপ্তাহও পার হয়নি, এর মধ্যে আনসার বাহিনীর সদস্যরা কেন এত বড় কুকর্ম করতে গেল? তাদের মূল উদ্দেশ্যটা আসলে কী ছিল? সেদিন তারা দু’বার উপদেষ্টার সাথে বৈঠক করল। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে আলোচনা করে একটি কমিশন গঠনের মাধ্যমে সুপারিশ প্রণয়ন ও তার ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে ঐকমত্য হওয়ার পরও কেন আনসাররা তাদের অবস্থান তুলে নিলো না? এ বিষয়ে নানাজন নানা কথা বলছেন।

আনসার বাহিনীর জন্ম হয় ১৯৪৮ সালে। তারপর থেকে একই পদ্ধতিতে আনসাররা কাজ করে আসছেন, যদিও বেতন-ভাতা সময়ে সময়ে বেড়েছে। কিন্তু তারা কখনোই সারা বছর কর্মরত থাকতেন না। তারা নির্দিষ্ট একটা সময় কাজ করার পর একটা নির্দিষ্ট সময় রেস্টে থাকতেন। তখন তারা অন্যান্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এই শর্ত মেনেই তারা গত ৭৫ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন। দেশে মোট আনসারের সংখ্যা প্রায় ৬১ লাখ। এর মধ্যে অঙ্গীভূত আনসার ৯৫ হাজারের মতো। এই অঙ্গীভূত আনসাররাই চাকরি জাতীয়করণের দাবি নিয়ে সচিবালয় ঘেরাও করে। আনসারদের যে দাবি মানার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তাতে এই ৯৫ হাজার অঙ্গীভূত আনসারের জন্য সরকারের ব্যয় দ্বিগুণ হবে জেনেও সরকার সেটি মানার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু চাকরি জাতীয়করণের বিষয়টি পুরাপুরি ভিন্ন। তার জন্য দীর্ঘ সময় ও প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যোগ্যতা নির্ধারণ ও তার ভিত্তিতে বেতন-ভাতা নির্ধারণ করতে হয়। নইলে দেশে চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টির আশঙ্কা থেকে যায়।

অনেকে বলছেন, গত ১৫ বছরে অঙ্গীভূত আনসারের সংখ্যা ৪২ হাজার জন বাড়ানো হয়েছে, যার মধ্যে ২৯ হাজার জনকেই (৬৯ শতাংশ) নিয়োগ দেয়া হয়েছে গোপালগঞ্জ জেলা থেকে (সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি), যে জেলাটি ঐতিহাসিকভাবেই আওয়ামী লীগের প্রভাবিত অঞ্চল। অনেকে বলছেন, নিয়োগের আগে এই আনসাররা ছাত্রলীগ, যুবলীগের সদস্য ছিল বা আওয়ামী পরিবার থেকে এসেছে। সে কারণে তারা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে একটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই সচিবালয় ঘেরাওয়ের এই হঠকারি সিদ্ধান্ত নেয়।

বাংলাদেশ পুলিশের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তখন দেশে পুলিশ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় সোয়া লাখের মতো। গত ১৫ বছরে দেশকে একটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় দুই লাখে নিয়ে গেছে। যদিও এ বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই, তবে অনুমান করা ভুল হবে না যে, এদের বেশির ভাগই এসেছে বৃহত্তর ফরিদপুর থেকে এবং যতটা সম্ভব, একটি বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায় থেকে। কিছু দিন আগে দেখা গেছে, ঢাকা মহানগরীর ৫৬টি থানায় ‘অফিসার ইনচার্জ’ ছিলেন একটি বিশেষ ধর্মাবলম্বী। আর সে কারণেই কি না জানি না, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ভূমিকা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ।

আবার ২৫ আগস্টের ঘটনায় ফেরত আসি। আমি যখন সচিবালয়ের গেটে, তখন সেখানে প্রায় শ’খানেক পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ করেছি; সেনা সদস্যদেরও ৮-১০ জন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে রাত হলেও কেন তারা এই হাজারখানেক আনসার সদস্যকে ওখান থেকে সরিয়ে দিতে পারলেন না, সেটি বড় প্রশ্ন। আর তারা সচিবালয়ে থাকা চার-পাঁচজন ছাত্র-সমন্বয়কের ওপর হামলা করার পরও কেন নিশ্চুপ থাকলেন, সেটি আরো বড় প্রশ্ন। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, এই ছাত্রদের ও সচিবালয়ে আটক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুক্ত করতে কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র-জনতাকে সচিবালয়ে যেতে হলো এবং আনসারদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে হলো? এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়ে হাসপাতালে এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন!

এরপর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি লক্ষ করলাম ২৭ আগস্ট সচিবালয় গেটে গিয়ে। এদিন পুলিশকে বেশ তৎপর দেখলাম। সচিবালয়ের সামনের রাস্তায় রিকশাসহ অবাঞ্ছিত মানুষজন দেখলাম না।

নতুন সরকারের এখন আইনশৃঙ্খলার উন্নতির দিকে নজরদারি জোরদার করতে হবে। প্রয়োজনে ঢাকা মহানগর পুলিশের সব কনস্টেবল, এসআই, এএসআই ও ইন্সপেক্টর পর্যায়ের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের ঢাকার বাইরে বদলি করে বিভিন্ন জেলা থেকে পুলিশ সদস্যদের ঢাকায় আনতে হবে। প্রয়োজনে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও মাঠে থাকতে হবে। এরপর দীর্ঘমেয়াদে গোপালি পুলিশদেরকে বাহিনী থেকে অন্যত্র সরিয়ে দিতে হবে। দলকানা পুলিশ দিয়ে সরকারের সুরক্ষা আশা করাটা বোকামি হবে এবং মানুষ যে আশা নিয়ে এই আন্দোলনে বিপুল রক্ত দিয়েছে, তাও বিফলে যাবে।

সচিবালয়সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে এখনো আওয়ামী সমর্থক কর্মকর্তারা অধিষ্ঠিত। তারা এখনো কোনো এক অলৌকিক ঘটনার আশায় বসে আছেন। এই নির্লজ্জ লোকগুলোকে ধীরে ধীরে সরিয়ে দেয়া দরকার। কয়দিন আগে শোনা যাচ্ছিল পল্লী বিদ্যুতের কর্মচারীরা গণকর্মবিরতিতে যাচ্ছেন। পরে অবশ্য তারা সেই কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন। একটি কথা মনে রাখতে হবে, কেউ অপরিহার্য নন এবং এ দেশের অসংখ্য বেকার যুবকদের মধ্য থেকে তাদের পরিপূরক কর্মচারী পাওয়া কোনো সমস্যা নয়।

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সরকার পতনের ফলে আওয়ামী লীগের উপর কাঠামোটা ধ্বংস হয়েছে মাত্র। দু’-একটা ব্যতিক্রম ছাড়া মধ্যম ও নিম্ন সারিটা কিন্তু এখনো অক্ষত। গত ১৫ বছরের লুটপাটের বিপুল অর্থ তাদের হাতে, যা তারা স্বৈরাচারকে ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যয় করছে। এ ছাড়া পতিত স্বৈরাচার ভারতে বসে (তাদের আনুকূল্যে) অবিরাম ষড়যন্ত্র করে চলেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যাতে প্রয়োজনীয় সংস্কারে ব্যর্থ হয়ে কোনোরকম একটা নির্বাচন করে চলে যায়, সেটাই তাদের লক্ষ্য। গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর ওপর হামলা, গাড়ি পোড়ানো বা আনসার আন্দোলনকে সহিংসতার পথে চালিত করা তাদেরই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। সেনাবাহিনীর গাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার পর দোষী ব্যক্তিরা শাস্তি পেয়েছে। উচ্ছৃঙ্খলতা সৃষ্টিকারী প্রায় ৪০০ আনসার সদস্য জেলহাজতে। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, তাদের চাকরিচ্যুতি ঘটবে। তাহলে ষড়যন্ত্রের অংশ হয়ে তাদের ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ হচ্ছে না। এই বার্তাটি সারা দেশে পৌঁছে দিতে পারলে ভবিষ্যতে এ ধরনের হঠকারিতায় কেউ শামিল হওয়ার আগে দু’বার ভাববে।

বিচারবিভাগীয় অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার মাধ্যমে শুরু হওয়া সরকারকে দুর্বল করার মিশন আজ আনসার বিদ্রোহে এসে দাঁড়িয়েছে। এমন মনে করার কারণ নেই যে, এটিই শেষ। ষড়যন্ত্র আরো হবে। সে ক্ষেত্রে সরকারকে তার নিজস্ব রিসোর্স দিয়েই এর মোকাবেলা করতে হবে। ছাত্ররা দীর্ঘদিন রাস্তায় থেকেছে আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য। এখন সরকারের দৈনন্দিন প্রয়োজনে তারা কেন বারবার রাস্তায় নামবে? ছাত্ররা তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে। ভবিষ্যতে দেশের বৃহত্তর প্রয়োজনে তারা আবারো মাঠে নামবে। কিন্তু সবসময় তারা রাজপথে থাকবে, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাদের এখন পড়ার টেবিলে বসতে হবে। তারা আন্দোলন শুরু করেছিল কোটামুক্ত সরকারি চাকরির জন্য। এখন সরকারি চাকরি কোটামুক্ত। কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে এই চাকরি পেতে হলে তাদের মেধা শাণিত করতে হবে, কঠোর অধ্যবসায় শুরু করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শর্ট-কাট রাস্তা নেই।

আর যারা চাকরিক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়েছেন গত ১৫ বছরে, তারাই বা কেন এখন এক দিনও ধৈর্য ধরতে চাচ্ছেন না? এত অধৈর্য হয়ে পড়লে কিন্তু স্বৈরাচারের ফিরে আসার পথ ধীরে ধীরে উন্মুক্ত হতে শুরু করবে। তখন আপনাদের দাবি পূরণ হবে কিভাবে?

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, কারো কোনো অভিযোগ থাকলে তা লিখিত আকারে জমা দিতে। তারা যাচাই-বাছাই করে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন। আমরা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব তাদের উপর দিয়েছি, তাদের কথায় আস্থা রাখতে হবে।

এই সরকারের মূল অ্যাজেন্ডা তো সবার বায়না পূরণ করা নয়। তাদের মিশন হলো, দেশে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর পুনর্নির্মাণ। স্বৈরাচারী সংস্কৃতি যাতে আর কোনো দিন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করা। তাদের সেই কাজে মনোযোগ দেয়ার জন্য সময় দিতে হবে।

লেখক : সাবেক সরকারি কর্মচারী, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক


আরো সংবাদ



premium cement