একজন জিয়াউর রহমানের সন্ধানে
- এহসানুল কবির
- ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৮
গৃহযুদ্ধময় পরিস্থিতির মধ্যে জাতীয় পুনর্গঠনের দায়িত্ব পড়েছিল ইতিহাসের দু’জন প্রেসিডেন্টের ওপর। এক্ষেত্রে আমেরিকার ষষ্ঠদশ প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের সাথে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মিল আছে।
দৃঢ়তা ও সততায় তাদের যে সাযুজ্য তা দু’জনকেই নিজ নিজ সমাজ ও কালের পরিবেশে অনন্য করে তোলে। অতি সাধারণ অবস্থা ও অবস্থান থেকে ইতিহাস নির্মাণের দায়িত্ব পড়েছিল এ দু’জন মানুষের ওপর। শিল্পায়িত উত্তরের সাথে দাসপ্রথা পীড়িত কৃষিপ্রধান দক্ষিণের গৃহযুদ্ধের মধ্যে দাঁড়িয়ে ইতিহাসের ভবিষ্যৎ করণীয় গ্যাটিসবার্গ ভাষণে তুলে ধরেছিলেন লিঙ্কন। তেমনি পঁচাত্তরের চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অটল বলিষ্ঠতা নিয়ে আবির্ভাব ঘটে জিয়াউর রহমানের।
আমেরিকার জনগণ তাদের জাতীয় সঙ্কট ও রাষ্ট্রীয় বিপন্নতার মুহূর্তে শ’দুয়েক বছর পরও স্মরণ করতে চেষ্টা করে লিঙ্কন কেমন করে দিশারী নেতৃত্ব দিতেন জাতিকে। জিয়ার ক্ষেত্রেও তার দল ও উত্তরাধিকারের সীমানা ছাড়িয়ে সাধারণ মানুষ আজো তেমনি ঘোর সঙ্কটকালে জিয়াকে ভাবতে অভ্যস্ত।
জনগণকে প্রতারিত করেননি তাদের কেউ। জনগণকে রক্ষা, তাদের হৃত গৌরব ও অধিকার প্রত্যার্পণ, তাদের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য একটা গতিশীল রাষ্ট্র-সমাজ-অর্থনীতি সৃষ্টিই জিয়ার একমাত্র কীর্তি নয়। ব্যক্তিগত সততার দৃষ্টান্তে জনগণের জন্য এক প্রভাময় ভয়শূন্য জীবন ক্ষেত্রই কেবল নির্মাণ করেননি তিনি। তিনিই এ জাতির মর্মে এনেছিলেন মহাকাল জয়ের জাদুকর্মের স্পৃহা। তার দুর্জয় প্রাণশক্তির পরশে কর্মস্পৃহায় জেগে উঠেছিল এ জাতির নিস্তরঙ্গ জীবন।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্টরা সাধারণত ১১ জন মন্ত্রী নিয়ে তাদের ক্যাবিনেট গঠন করেন। লিঙ্কন গ্রহণ করেছিলেন ১০ জন। তার দুর্দিনের এক নিকট বন্ধু এই ব্যতিক্রম সম্পর্কে ওজর তুলেছিলেন সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের কাছে। এর প্রত্যাশা ছিল মন্ত্রী হওয়ার। লিঙ্কন তার স্মিত বেদনার্ত হাসিতে বন্ধুর প্রত্যাশাকে নিরুৎসাহিত করতে চেয়েছিলেন এই বলে, ১০-এর সাথে শূন্য যোগ করলে ১০০ হয়, তাই করতে বলো তুমি! বন্ধুকে চিনতেন লিঙ্কন। তবু একবার তাকে মন্ত্রী করে দিয়ে কিছুদিন পর তার বাড়ি পরিদর্শনে গিয়ে দেখলেন, বিত্ত-বৈভবের সমাগমে আমূল বদলে গেছে বন্ধুটির জীবন। একদম অচেনা। বললেন, কী করে করলে এসব! আত্মকেন্দ্রিক মানুষের সামাজিক অপরাধবোধ সামান্য। মন্ত্রী বললেন, আপনার বিখ্যাত ভাষণটির অনুরণিত অমর বাক্য একটুখানি ঘুরিয়ে নিয়েছি। Government of the people, by the people, for the people-কে একটু ঘুরিয়ে from the people করে এটুকু হাতিয়ে নিয়েছি জনগণের কাছ থেকে। জনগণের জন্য ধ্বনি দিয়ে, জনগণকে হাতড়ে ও আপন সৌভাগ্য আহরণের রাজনৈতিক কালচার বাংলাদেশের রাজনীতিকে আদ্যোপান্ত যখন অসার ও বিভীষিকাপূর্ণ করে তুলেছিল, তখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাজনীতিক জিয়ার আবির্ভাব। তৃতীয় বিশে^র দেশে দেশে দুর্নীতি যখন ক্যান্সারের কর্কটগ্রাস নিয়ে আবির্ভূত, তখন জিয়া দেখিয়েছিলেন এবং প্রমাণ করেছিলেন শীর্ষস্থানীয় রাষ্ট্র নেতৃত্ব যদি দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, আয়েশ, লালসা ও লোভের ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে, তাহলে প্রশাসনের নিস্তরে দুর্নীতির করাল স্রোত হ্রাস পায়।
রাষ্ট্র জীবনে নিঃসঙ্গ দুঃসাহসী অভিযাত্রীর মতো আবির্ভূত জিয়া উপরে আল্লাহ, নিচে জনগণের ওপর অবিচল আস্থা নিয়ে সৎ ও নির্ভীক শাসনের এক সক্রিয় কর্মকাঠামো ও কর্মজাগরণ সৃষ্টি করেছিলেন। এতে তার জন্য ব্যক্তিগত দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির লেশমাত্র ছিল না বলেই সমাজের বিশাল দিগন্ত থেকে সৃজনশীল জনগণ সাহসের সাথে প্রবল প্রাণোচ্ছ্বাসে এগিয়ে এসে অবস্থান নিয়েছিল তার পাশে। এমন জাগরণ রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসে কেউ আনতে পারেননি। এর জাদু ও ভিত্তিটা ছিল সংশয়হীন বিশ্বাস। তার শাসনামলে কেউ শোনেনি, কেউ জানত না- তার বাকি দুই সহোদর কে কোথায় কী অবস্থায় আছেন। জনগণ জানতেন, দেশ ও জনগণই হচ্ছে জিয়ার কাছে প্রথম ও শেষ কথা।
জিয়া তার প্রিয় জনগণ ও জাতিকে দু’টি কালজয়ী পাথেয় ও নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তার একটি হলো কর্মময় জাগরণের ডাক। দ্বিতীয়টি শত বিতর্কেও অমলিন, অমর কীর্তির মতো সমুন্নত-জাতির আধুনিকতম পরিচয়, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। এ পরিচয় সর্বজনীন, ভবিষ্যৎ পিয়াসী, রাষ্ট্রীয়। আমাদের দুর্বার শক্তিতে কাজ করে যেতে হবে। ভিক্ষুকের হাতকে পরিণত করতে হবে কর্মীর হাতে। এ আহ্বান নিয়ে এক গতিশীল জাগরণ সৃষ্টির আন্দোলনে জিয়া ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন জনতার মধ্যে। কর্মমুখর বিশ্বের মধ্যে দারিদ্র্য, হতাশা, অনাস্থায় বিমুখ, সুপ্ত নিদ্রামগ্ন, লক্ষ্যহীন জাতির জনজীবনে, দ্বারে দ্বারে এ আহ্বান নিয়ে চারণের মতো পৌঁছেছিলেন এই নায়ক। প্রতিটি সমাবেশে জনতার সমুদ্রে তিনি উচ্ছ্বাস ও অঙ্গীকার তুলতেন। সমাবেশে এবং মাইলের পর মাইল হাঁটতে পথের পাশের মানুষদের তিনি বলতেন, ‘কথা দিন, আজ ফিরে গিয়ে উৎপাদন, শিক্ষা, জীবিকা, উন্নতির জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু একটা করবেন আপনি। একটি গাছ, একটি হাঁস, একটি গরু-বাছুর, কিছু না কিছু রোপণ, লালন ও পরিচর্যার মধ্য দিয়ে নামবেন সক্রিয় কর্মজীবনে।’ প্রকৃতি, অদৃষ্ট, শাসক, সরকার, বিদেশী শক্তি, সাহায্যদাতার ওপর নির্ভরশীলতায় হাজার বছর ধরে আত্মবিশ্বাসলুপ্ত সামাজিক মানুষকে কর্মের জাদুস্পর্শে আত্মনির্মাণে আত্মবিশ্বাসী করে তোলার এ ছিল মহাজাগরণের আহ্বান। জিয়ার সময়ে বিনিয়োগ, শিল্প-বাণিজ্য, কৃষ্টি, সেচ, খালখনন, রাস্তা নির্মাণ, বনায়ন, আত্মকর্মসংস্থান ধারা-বহুধারায় বিস্তার লাভ করেছিল এ কারণে। প্রচণ্ড খরায় যখন পুরো দেশ ও প্রকৃতি শুকিয়ে গেছে, তখন দুর্ভিক্ষ রোধের পাশাপাশি খরারোধের বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করেন জিয়া। তার খালকাটা কর্মসূচি নিয়ে আজ যতই সমালোচনা হোক, জনগণের আত্মবিশ^াসী হাতে কাটা খাল বিশাল খালে নতুন পানির স্ফটিক জোয়ার দেখে বিস্মিত ও সংযত হয়েছিলেন ম্যাকনামরা। তখন তিনি বিশ^ব্যাংকের কর্ণধার। এ জাতির মূল সম্পদ পানি, জমি, জনতাকে পরস্পরের সংস্পর্শে প্রাণবন্ত করে তুলে দেশের মাটি, শ্রম ও পানি থেকে অফুরান সম্পদ সৃষ্টি আসলে চিরন্তন পরাভব ও বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে থাকা জনতাকে মুক্তির মহাউপকূলের সন্ধানদানের মতোই বিরাট কাজ। প্রশান্ত মহাসাগরে তীরবর্তী দ্বীপলিময় ঐশ্বর্যের দেশমালা জাপান, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, তাইওয়ানের দিকে তাকিয়ে আপন জাতির পশ্চাৎপদতা হেতু ও গভীরতা অনুধাবনে ভুল করেননি জিয়া। কোটি কোটি মানুষের সকর্ম সংগ্রাম ছাড়া এ পশ্চাৎপদতা দূর করার পথ নেই। এ পদ্ধতি খুঁজে পেতে জিয়াকে উন্নয়নতত্ত্বের ব্যবসায়ী গবেষকদের বুলিবচন হাওলাত করতে হয়নি; বরং বুদ্ধিবৃত্তির জড়তা ও মেধার কাপুরুষতাকে তিনি শিক্ষা দিয়েছিলেন এই উদাহরণ দেখিয়ে সঠিক নেতৃত্ব যোগ্যতায় গতিশীল হলে উন্নয়নের জন্য বৈয়াকরণবিদের মতো কোনো তত্ত্বকারের প্রয়োজন হয় না।
জিয়ার এ কর্মবাদী জাগরণ যদি অব্যাহত থাকত তাহলে দক্ষিণ এশিয়ার নিশ্চল, জড়িভূত, দরিদ্র বিবর থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পেতো গত দশকের মাঝামাঝি। আর ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ এক বিস্ময় সৃষ্টি নজির হিসেবে সমাদৃত হতো। যে জাদুর বলে আমাদের চেয়ে ক্ষুদ্র ও সম্পদহীন দেশ জাপান বিশ্বের অর্থনৈতিক মহাশক্তির শিরোপা অর্জন করেছে, সেই কর্ম সাধনার জাদুস্পর্শে আপন জাতিকে প্রথমবারের মতো জাগিয়েছিলেন জিয়া। কর্মের প্রতি স্পৃহা মানুষকে সাহসী, সক্ষম, বলিষ্ঠ করে তোলে।
এ যেন জাতির নৃতাত্ত্বিক অস্তিত্বের মূলে বিদ্যমান জড় চরিত্রে আঘাত। দ্রাবিড় ও আস্ট্রালয়েড নৃপংক্তিভুক্ত এদেশের জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে বিশ্বমনীষার পর্যবেক্ষণ হলো, একটি আদর্শবাদিতার আবহে এরা দোল খায়। সঙ্গীতপ্রিয়তা এদের মধ্যে আছে। ১২০০ সালের সামাজিক ইতিহাস হতে একালের কমরুদ্দিনের সোশ্যাল হিস্ট্রি পর্যন্ত একই অনুকরণ পাশাখেলা, আড্ডাবাজি, পরনিন্দা ও নারীকেন্দ্রিক জীবন বিলাসের ইন্দ্রীয় পরায়ণতার হলাহলের মধ্যে দুর্জয় কর্মপন্থা, কর্মের স্পৃহা কোনোভাবেই মাথা তুলতে পারবে না। এ সমাজ ও জাতিকে নিয়ে এখনকার একুশের মেলা অবধি সেই রমরমা রস বিহারের হীনতা প্রশ্রয় পাচ্ছে তথাকথিত বুদ্ধিবৃত্তিক মনীষাদের কর্মে। ব্যক্তিগত জীবনে এরা যেমন কর্ম থেকে পলাতক, ভীরু, ফাঁকিবাজি- তেমনি তাদের আদর্শবাদেও আছে ভয়াবহ বুদ্ধিবৃত্তিক খাদ। জীবনের রূঢ় বাস্তবতার নিষ্ঠুর জীবন ভূমিতে মাথাকুটে মরে যে সাধারণ মানুষ, তার কর্মে আছে অদৃষ্টজাত নিপীড়নভোগের মানুষিক ভঙ্গি। কিন্তু জিয়া দু’হাতে এই মর্মগত, কর্মগত ও সাংস্কৃতিক যাজকবৃত্তির আগ্রাসন ছিন্ন করে জনগণকে সরাসরি কর্মময় জীবনের সৃজনশীল জাগরণের মধ্য দিয়ে বিশ্বজয়ী সংহতি নির্মাণের ডাক দিয়েছিলেন। আসলে নিষ্কর্ম, পরচর্চা এবং ইন্দ্রিয় পরায়ণতার অধোগতি মানসিকতা নিয়ে কালচারের বড়াই বড়ই বেদনাদায়ক। এ সত্যই কেবল উপলব্ধি করেননি জিয়া। মুক্তিযুদ্ধ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার যুদ্ধে তিনি বুঝেছিলেন কর্মহীন জড় জীবনের লঘু সংস্কৃতি বিজাতীয় শক্তির হাতে জাতীয় পরাভব ডেকে আনে। বিশ্বের সভ্যতার ইতিহাসে নিরীহ কবিতা ও কাব্য প্রেমের চেয়ে শৌর্যময় কর্মবাদী জাগরণ অনেক স্থায়ী সভ্যতার জন্ম দিয়েছে।
জিয়াউর রহমান আপন সমাজের মধ্যে ভবিষ্যৎ পিয়াসী কর্মময় জীবন সংস্কৃতি চাপিয়ে দিতে গিয়ে তন্দ্রালস কবিতা আওড়ানোর আত্মপ্রতারণাকে অন্তত সাময়িককালের জন্য বিসর্জন দিতে চেয়েছিলেন। তদানীন্তন উপরাষ্ট্রপতি ভবন সুগন্ধায় একটি ছাত্র তার বক্তৃতায় কবিতার চরণ আওড়ে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করলে জিয়া বলেছিলেন, কবিতার পঙ্ক্তি মুখস্থ করার মধ্যে মহত্ত আছে, তার চাইতে বড় মহত্ত হবে জাতিকে ভিখিরিরূপে না দেখার সঙ্কল্পে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের সংগ্রামে বিজয় ছিনিয়ে আনলে। পাশাখেলা, স্তোক ও আত্মমুখীন ইন্দ্রিয় পরায়ণতার সংস্কৃতি যতই নবতর আবরণে উপস্থাপন করা হোক, এটাই হয়ে উঠবে অর্থনৈতিক দৈন্য ও বিশ্ববিমুখ জীবনের সঙ্গীত। শুধু কর্মময় আহ্বানের মৌখিক উচ্চারণেই জিয়া আপন কর্তব্য সমাধা করেননি। তিনি ইসলামকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদীদের সাথে সামনে এগিয়ে এনে বর্ণপ্রথার সহস্র কুলবিভক্তির বৈদিক সঙ্কীর্ণতার বিরুদ্ধে মানুষের মমতার এক দর্শন হাজির করেছিলেন। সেই সাথে এ জাতির ভবিষ্যৎ বিকাশে বহুজাতির প্রতিভার অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন, আমেরিকার মতো। হংকং ও সিঙ্গাপুরে বাস করে কত দেশের মানুষ।
অস্ট্রেলিয়ায় নাগরিকত্ব নিয়ে বহু ভারতীয় আজ অস্ট্রেলিয়ান। তেমনি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে কোনো ভিনদেশী মানুষ যদি এসে কর্মময় জীবন ও অন্তিম দিন এখানে কাটাতে চান তাকে কি বাঙালি বলব আমরা? বিমান দুর্ঘটনায় ভিনদেশে নিহত ভারত ও বাংলাদেশের দু’জন বাংলা ভাষীর মৃত্যু সংবাদে বাঙালি উল্লেখে নাগরিকত্বের কি পরিচয় মিলবে? নিশ্চয় নয়। কূপমণ্ডূকতার মধ্যে, জন্মগত সামাজিক পরিচয়ের মধ্যে, আধুনিক জাতি ও রাষ্ট্রকে বাঁধতে চাননি তিনি। আপন জনগণ, তাদের ইতিহাস এবং জন্মগত পরিচয়ের ওপর রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পরিচয় সন্নিবেশন করেছিলেন জিয়া।
মুসলিম বিশ্বের বেদনার্ত পরিবেশের মধ্যে মালয়েশিয়ার আজিকার উত্থানের সপ্রশংস দৃষ্টিতে গ্রহণ করছে বিশ্ব। মুসলিম জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে রাষ্ট্র প্রশাসন-অর্থনীতি পরিচালনায় তারা অযোগ্য নয়- এ বিশ্বাস মালয়েশিয়ার আগে ব্যক্ত করেছিল জিয়ার বাংলাদেশ। আমাদের গৌরবগাঁথা লিখে আমাদের বুদ্ধিজীবীরা শেষ করতে পারেননি। কিন্তু কেউ এ জাতিকে বলছেন না, দূরপ্রাচ্য হতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্যাম উপসাগরের তীর অবধি একজন তরুণের বিয়ে করার যোগ্যতা অর্জনের মাপকাঠি হচ্ছে- কী অপরিমেয় কাজ সে করতে পারে। তাইওয়ান, হংকং, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, থাইল্যান্ড এমনকি আজকের ভিয়েতনামের বিস্ময়কর উত্থানের মূল কারণ শ্রমনিষ্ঠা। এসব দেশে জনগণ, প্রতিটি নারী-পুরুষ কর্মকে গ্রহণ করে ইবাদতের মতো।
১৯৬২ সালে যেসব দেশ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আজকের বাংলাদেশের চেয়ে ছিল পশ্চাৎপদ, তারা এই শ্রমসাধনায় অতুলনীয় দক্ষতা ও অনুপম সৃষ্টি ক্ষমতা অর্জন করে দেশ, সমাজ ও ব্যক্তিজীবনকে গড়ে তুলেছে গ্লানিমুক্ত সভ্যতার ধারকরূপে। বাংলাদেশের একজন শ্রমিক ’৬২ থেকে ’৯২-র কালপথ অতিক্রম করার পরও যখন এক বছরের শ্রমে গড়ে ৭৭৪ ডলার মূল্যমানের সম্পদ সৃষ্টি করে, তখন ভারত আমাদের চৈতন্যপন্থীদের মানসভূমিতে শ্রমিকের উৎপাদন ৭২৮, পাকিস্তান এক হাজার ২০০ ডলার। অথচ পাকপ্রণালী পার হলে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আবহে চালিত শ্রীলঙ্কায় উৎপাদনশীলতার হাত পাঁচ হাজার ২৭৭ ডলার, থাইল্যান্ড ১৬ হাজার, সিঙ্গাপুরে ১৩ হাজার ৩৭২। থাইল্যান্ডের একজন শ্রমিক বাংলাদেশের শ্রমিকের তুলনায় ২১ গুণ, সিঙ্গাপুরের একজন শ্রমিক বাংলাদেশের তুলনায় ১৮ গুণ বেশি দক্ষ বলেই সেসব দেশের জীবনে, সমাজে ও রাষ্ট্রে ঐশ^র্য ও তৃপ্তির সোনালি আবির ছড়িয়ে পড়েছে। এ ব্যবধান ঘুঁচিয়ে নেয়ার জন্য রাজনৈতিক বাগাড়ম্বরের মঞ্চ থেকে জনগণের বিশ^াসে নাড়া দেয়ার সামাজিক কর্মের জীবনে নেমেছিলেন জিয়া।
জিয়াউর রহমান আজকের দিনে ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। সেই বিএনপি আছে জিয়া নেই। আজ থেকে ৪৩ বছর আগে হারিয়ে গেছে আমাদের মাঝখান থেকে সেই অকম্পিত প্রদীপশিখার অনন্য প্রভা। বছরের পর বছর, দশকের পর দশক এদেশের মানুষ ঘুরেফিরে বেড়াবে একজন জিয়াউর রহমানের সন্ধানে এই সবুজ বাংলার পথে-প্রান্তরে।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও রাজনীতিক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা