১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১, ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

গণতন্ত্র ও আওয়ামী লীগ একসাথে বেমানান

গণতন্ত্র ও আওয়ামী লীগ একসাথে বেমানান - ফাইল ছবি

১৯ আগস্ট ২০২৪ তারিখে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে নির্বিচারে হত্যার দায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন মানবাধিকার সংগঠন সারডা সোসাইটির পক্ষে নির্বাহী পরিচালক আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া। ২৭ আগস্ট হাইকোর্ট বেঞ্চে ওই রিটের শুনানিতে অন্তর্বর্তী সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান রিটটির জরিমানাসহ খারিজ চেয়ে বলেছেন, ‘দল নিষিদ্ধের সুযোগ নেই, সেই ইচ্ছাও নেই সরকারের। যদি না কোনো জঙ্গিবাদী কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় তারা লিপ্ত থাকে।’ যা হোক, রিটকারীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১ সেপ্টেম্বর শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।

পরের দিন ২৮ আগস্ট সচিবালয়ে নিজ দফতরে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেলের মত সমর্থন করে বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে না।’ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ আসে মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন নিতান্ত রাজনৈতিক কারণে ১ আগস্ট ২০২৪ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার কর্তৃক জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারির মধ্য দিয়ে যা অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৮ আগস্ট বাতিল করে। প্রসঙ্গত, আওয়ামী আমলে হাইকোর্ট ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ বলে রায় দেন এবং সরকার ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে দলটির নিবন্ধন বাতিল করে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতিবাচক অবস্থান সত্ত্বেও আমরা মনে করি আওয়ামী লীগের বাংলাদেশের মাটিতে নিষিদ্ধ হওয়ার পক্ষে অত্যন্ত জোরালো যুক্তি রয়েছে, যা আমরা উপস্থাপন করছি।

আওয়ামী লীগ একটি চরম সন্ত্রাসী দল যারা ভয়াবহ খুন, গুম, ধ্বংসযজ্ঞ, নির্যাতন, নিপীড়নের একটি জলজ্যান্ত প্রমাণ রেখেছে গত ১৫ বছর ধরে। সর্বশেষ কোটা আন্দোলনে এর নৃশংসতার চূড়ান্ত প্রমাণ দিয়েছে। এপিসি, অ্যাটাক হেলিকপ্টার, হেভি ও সাব মেশিনগান, স্নাইপার, শুট-টু-কিল, ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট, ইত্যাদি ব্যবহারে মনে হয়েছে আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে দেশ। এর আগে পিলখানা ও শাপলাচত্বরেও একই রকম নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। এসব তারা মুজিব আমলে রক্ষীবাহিনী দিয়ে করিয়েছে, গত ১৫ বছরে পুলিশ-র্যাবকেই রক্ষীবাহিনীর ভূমিকায় নিয়ে গেছে, বরং তার চেয়ে নিকৃষ্ট গুম, অপহরণ, খুনের পেটোয়া বাহিনী বানিয়েছে। সাথে ডিজিএফআই ও এনএসআইকে ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী ‘র’-এর অনুগত বাহিনীতে পরিণত করেছে। বিরোধী দল ও গণমানুষের যাবতীয় বিরোধিতা দমনে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে মুজিব ও হাসিনা উভয় আমলেই।

হাসিনা এবারে এসে মুজিবের আমলে বাকশালের অনুসরণে বাকস্বাধীনতা হরণ করেছে, যদিও গণতন্ত্রের মুখোশ পরে। এবারে বাকশালে নাম পরিবর্তন না করেই আরও নিকৃষ্ট, নৃশংস উপায়ে বাকস্বাধীনতার টুঁটি চেপে ধরেছে। কিছু বললেই রাজাকার, জামায়াত-শিবির ট্যাগ দিয়েছে, ডিজিটাল আইনে মানুষকে গণহারে জেলে পুরেছে। বাকস্বাধীনতা ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থা বলতে কিছু রাখেনি।

মুজিব বাকশাল করে নিজেকে আজীবন প্রেসিডেন্ট হিসাবে আইন করেছিল, এই আওয়ামী লীগ বিনা-ভোট, নৈশ-ভোট ও ডামি-ভোট করে হাসিনাকে আমৃত্যু ক্ষমতায় রাখার ব্যবস্থা করেছে। মানুষের ভোটাধিকারবিহীন নিকৃষ্ট, নৃশংস স্বৈরাচারী রাষ্ট্রে বাংলাদেশকে পরিণত করেছিল হাসিনা। এই দলটি এমনই যে, রক্তাক্ত অভ্যুত্থান ছাড়া ক্ষমতা ত্যাগ করে না, সেটা ১৯৭৫ সালে হয়েছিল এবং ২০২৪ এও হয়েছে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪- পরপর তিনটি নির্বাচনে তারা নিশ্চিত ক্ষমতা হারানোর আভাস পেয়ে সম্ভব সবরকম জুলুমকে হাতিয়ার করে নির্বাচনকে পাশ কাটিয়ে ক্ষমতায় আঁকড়ে থেকেছে।

মুজিব আমলে ইন্ডেন্টিং ব্যবসায় নেমেছিল আওয়ামী বাকশালীরা, হাসিনা আমলে রেন্টাল পাওয়ারকে ক্রমাগত আইনগত বৈধতা দিয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লোপাট করা হয়েছে। এই লুটের টাকা দিয়ে সামিট গ্রুপের আজিজ খান আজ সিঙ্গাপুরে সেরা ধনীদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে, পাপুয়া নিউগিনির শীর্ষ ধনীর স্থান নিয়েছে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক এমপি এম এ ওয়াহেদ। দেশের মানুষ জানে যে, আজিজ খান হাসিনার এক ক্যাশিয়ার ও পার্টনার। মুজিবের ছেলে কামাল অস্ত্র নিয়ে ব্যাংক ডাকাতি করেছিল, আর হাসিনা বুদ্ধিমানের মতো দেশের প্রায় সব ব্যাংককেই নিজের নামে লিখে নিয়ে টাকা সব বিদেশে পাঠিয়েছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। সব ইসলামী ধারার ব্যাংক এস আলমের মালিকানায় গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ জানে এগুলো হাসিনার, এখানে এস আলম বেনামে হাসিনার ক্যাশিয়ার ও পার্টনার। এজন্যই এস আলম, বাচ্চুদের কোনো বিচার হয় না!

লুটের পরিমাণ এতই যে, হাসিনার পিয়নও ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়, আইজিপি বেনজীর চাইলে একাই ১০টি নতুন ব্যাংক খুলে ফেলতে পারে! মন্ত্রী-এমপিদের সবচেয়ে গরিব যারা তাদেরও সম্পদ হাজার কোটির কম না! মুজিব আমলে লুটের জন্য ৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। এবারও গত এক বছরেই জিনিসপত্র, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, মানুষের দারিদ্র্য দুর্ভিক্ষের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছেছে। ব্যাংকে, বাজারে ডলার নাই, দেশের রিজার্ভ প্রায় শূন্য এবং ১৮ লাখ কোটি টাকা ঋণ রেখে পালিয়েছে হাসিনা। দেশের অর্থনীতি অচিরেই এক ভয়াবহ খাদে পড়তে যাচ্ছে, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট বাজেটের ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ।

হাসিনার সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো ভারতের পদলেহিতা। এই জায়গায় মুজিবের কিছু আত্মসম্মানবোধ ও দেশপ্রেম ছিল, কিন্তু হাসিনা তার পুরো সরকার ও দলকে ভারতের কাছে বেচে দিয়েছে। বদলে দেশের জন্য কিছুই আনতে পারেনি। মুজিব ভারতের আপত্তি উপেক্ষা করে ওআইসি-তে যোগ দিয়েছিল, কিন্তু হাসিনা চায়না যাওয়ার আগে ভারতের অনাপত্তি নিয়ে তবেই সফরে গেছে। সর্বশেষ ভারতকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে দর্শনা হয়ে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি দিয়ে ট্রেন-ট্রানজিট ও সার্বভৌমত্ব একসাথে দিয়ে এসেছে। দেশে ক্ষমতায় কে বা কোন দল আসবে, সেটাও আজ ভারতের দয়ায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

বাকশালীরা রাজাকারের ট্যাগ দিয়ে ইসলামবিদ্বেষ কায়েম করেছিল। আলেম-উলামাদের দিয়ে বিনা বিচারে জেলখানাগুলো ভরে রেখেছিল। নিত্যনতুন জঙ্গি নাটক সাজিয়ে ইসলামকে হেয় করার, কটাক্ষ করার হেন কোনো ষড়যন্ত্র বাদ রাখেনি হাসিনার সরকার। আওয়ামী সরকার আগাগোড়া ইসলামবিদ্বেষী এমনকি হিন্দুত্ববাদী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছে, সেখানে ইসলাম শিক্ষা বইয়ে ‘আল্লাহর নামে’ এর পরিবর্তে ‘আল্লাহ ও দেবদেবীর নামে’ জবাইকৃত প্রাণী হালাল উল্লেখ করেছে, মোদির হিন্দুত্ববাদকে নানান অপকৌশলে কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করেছে। মুজিব দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রথম গণটোকাটুকির প্রচলন করেছিল। হাসিনা এখন পরীক্ষাই বাদ দিয়েছে, সেখানে ঘৃণ্য নাটক শেখানো হয়, শরিফ-শরিফার মতো সমকামী গল্প পড়ানো হয়। ইন্ডিয়ার বশংবদ ক্রীতদাসী হাসিনা ইন্ডিয়ানদের বাংলাদেশের চাকরিতে উঁচুপদগুলো নিশ্চিত করার জন্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ক্রমাগত ধ্বংস করে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম অবস্থায় নিয়ে এসেছে। আজ বাংলাদেশে বিপুল ইন্ডিয়ান চাকরি করে, সব উঁচুপদে এবং হাজার হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স নিয়ে যায়। দেশের বেকারত্ব ক্রমাগত বাড়ছে, শিক্ষার মান কমছে- এটাই যেন হাসিনার মোদির দেয়া অন্যতম মিশন ছিল যা সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। মুজিব নিজের ইমেজ বিক্রি করে ফ্যাসিবাদ, একনায়কতন্ত্র চালিয়েছিল, আর হাসিনা সারা দেশে মুজিবের মূর্তি ও ম্যুরাল দিয়ে ভরে ফেলেছে, আগস্ট মাস এলেই অফিস, আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মূর্তিপূজার মচ্ছব করে, মুজিববর্ষ করে কোটি কোটি টাকা মেরে খেয়েছে, প্রতিটি সরকারি চিঠিতে মুজিবের ছবি এঁকে দিয়েছে, মুজিব কর্নার, মুজিববাদ শিখিয়ে কাল্টের প্রচলন ঘটিয়েছে।

যে দলটি ক্ষমতা পেলেই রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে গুম-খুন-নির্যাতনের হাতিয়ার বানায়, যারা ক্ষমতা পেলেই ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে ক্ষমতা স্থায়ীভাবে নিয়ে নেয়, যে দলটি রক্তাক্ত অভ্যুত্থান ছাড়া ক্ষমতা ত্যাগ করে না, যে দলটি ক্ষমতাকে প্রতিবার নৃশংস স্বৈরশাসনে পরিণত করে, যে দলটি ক্ষমতা পেলেই ফ্যাসিবাদ কায়েম করে, যে দলটি ক্ষমতা পেলেই বাকস্বাধীনতা হরণ করে, যে দলটি ক্ষমতা পেলেই দেশের সম্পদ লুট ও পাচার করে, যে দলটি ক্ষমতা পেলেই ইন্ডিয়ার কাছে দেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেয়, যে দলটি ক্ষমতা পেলেই দুর্ভিক্ষ ডেকে আনে, যে দলটি ক্ষমতা পেলেই দেশের মানুষকে দলাদলিতে ভাগ করে শোষণ-নির্যাতন চালায়, যে দলটি ক্ষমতা পেলেই দেশে বিভাজনের রাজনীতি করে দেশের মানুষকে ভাগ করে ফেলে, যে দলটি ক্ষমতা পেলেই ইসলাম কোপায়, সেই দলটির বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই।

এটি আওয়ামী রক্তের দোষ, এর কোনো সংশোধন অসম্ভব! এটি কোনো রাজনৈতিক দলের সংজ্ঞায় পড়ে না, এটি একটি দেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ববিরোধী এবং একই সাথে ইসলামবিরোধী এই দূষিত রক্তের দল গণতন্ত্রের চিন্তার সাথে যায় না। কিভাবে দলটিকে দেশের রাজনৈতিক পরিসরে এডাপ্ট করতে হবে তা নিয়ে সবার সম্মিলিত মতামত দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement
বগুড়ায় ফোকাসের কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে অর্জিত বিজয় নস্যাতের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে : আব্দুস সবুর আ’লীগ ছাড়া নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হবে না : ড. বদিউল আলম তারুণ্য নির্ভর ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে : মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন সব পোশাক কারখানা খুলছে রোববার বিআইআইটির শিক্ষাসংস্কার প্রসঙ্গে ‘কেমন গ্রাজুয়েট চাই’ সেমিনার অনুষ্ঠিত জাতির উন্নয়নে সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে : শিশির মনির ডুবেছে তাজমহল, ছাদ থেকেও চুঁইয়ে পড়ছে পানি ছাত্র আন্দোলনে নিহত আউয়ালের পরিবারের সাথে লেবার পার্টির সাক্ষাৎ গাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ সংবিধান : সংশোধন না পুনর্লিখন

সকল