২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

অস্থির দেশ : এই মুহূর্তে করণীয়

অস্থির দেশ : এই মুহূর্তে করণীয় - নয়া দিগন্ত

বিজয়ের এই ক্রান্তিলগ্নে জাতি এক অস্থির সময় পেরুচ্ছে। দুর্যোগের ঘনঘটা স্পষ্ট। ঘাপটিমারা দুষ্টচক্র ও পলায়নপর রাজনৈতিক গোষ্ঠী বিভিন্ন স্থানে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো অপকর্মে লিপ্ত। নতুন সরকারের সামনে এখন একগুচ্ছ কঠিন চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই তাদের জনজীবনে নতুন স্বাধীনতার সুফল তুলে দিতে হবে। রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে যে দলীয়করণ ও দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে সেগুলো সাফ করে অর্থনীতিতে ও সমাজজীবনে স্বস্তি ফেরাতে হবে।

পুলিশ বাহিনী এখনো দায়িত্ব পালনে স্বচ্ছন্দ নয়। ফলে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়নি। সড়ক ব্যবস্থাপনাও নাজুক। সামরিক বাহিনী দিয়ে এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন। দ্রুত সংস্কার করে পুলিশে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে হবে। মনে রাখতে হবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে পরাজিত শক্তি দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।

গত ১৫ বছরে বেশির ভাগ আমলা স্বৈরশাসকের হাতের পুতুল হয়ে কাজ করেছে এবং সরকারের যাবতীয় অপকর্মের সহযোগী ও সুবিধাভোগী। বিভাগ, জেলা, থানা পর্যায়ের প্রশাসনের দায়িত্ববানরাও অবৈধ সরকারের সহযোগী হিসেবে দেশ লুট করেছে। দ্বিতীয় স্বাধীনতার পরপরই ছাত্র-জনতার রোষের মুখে এসব অপরাধী প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায় থেকে পদত্যাগে বাধ্য হচ্ছে। এসব দলবাজ লুটেরা প্রশাসক দেশের মানুষের চরম ঘৃণা ও বিদ্বেষের কবলে পড়ে পালিয়ে জান বাঁচানোর চেষ্টা করছে। প্রশাসনে তীব্র শূন্যতা ও স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় যেকোনো মূল্যে প্রশাসন সচল রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। আপাতত আগের আমলের সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিয়ে প্রশাসনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।

মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন, বাকস্বাধীনতা হরণ, ভয়ানক অপশাসন-দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সঙ্কট, রফতানি আয়ে ধীরগতি, রেমিট্যান্স প্রবাহে মন্থরতা, উচ্চ বেকারত্ব ইত্যাদি কারণে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি গহিন অন্ধকারে নিপতিত। সব পর্যায়ের নেতৃত্বে দলীয়করণ, অপকর্ম ও কারণে-অকারণে মানুষের ওপর জুলুম-অত্যাচার চরম আকার ধারণ করেছিল। এ নিয়ে জনমনের ক্ষোভ প্রশমনে কাজ করতে হবে নতুন সরকারকে। আশার কথা হলো, নতুন সরকারের সদিচ্ছা ও নেতৃত্বের ওপর মানুষের গভীর আস্থা রয়েছে। বিশ্বাস করি, নিকট ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই অপশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থা দেখতে পাব। চাঁদাবাজি বন্ধ করা গেলে দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানা যাবে।

সরকার ঘোষিত মূল্যস্ফীতি ৯.৭৩ শতাংশ হলেও বাস্তবে তা ১৫ শতাংশের ওপরে বলে সিপিডির পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে। এই মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিগত সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট ও অর্থ পাচারের ফলে দেশে রিজার্ভ ও ডলার সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। সাম্প্রতিক এক হিসাবে দেশের নিট রিজার্ভ ১৫ বিলিয়নের নিচে। এদিকে ডলারের দামও দীর্ঘদিন ধরে বাড়তির দিকে থাকায় আমদানি যেমন কমেছে, তেমনি দ্রব্যমূল্য হয়েছে আকাশচুম্বী। ডলারের অন্যতম উৎস প্রবাসী আয় ও রফতানি আয়। নতুন সরকারকে প্রবাসী আয় বাড়ানো এবং রফতানি বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিতে হবে। আশা করা যায়, স্বৈরাচারমুক্ত দেশে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি করবে। আর বৈশ্বিক ক্ষেত্রে সরকারের প্রতি সমর্থন থাকার ফলে রফতানি বাণিজ্যও গতি পাবে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের বিচক্ষণ পদক্ষেপ ও নীতি স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে।

বিগত সরকারের আরেকটি বড় ভুল ছিল অস্বাভাবিক উন্নয়ন এবং এ জন্য বিপুল বিদেশী ঋণ গ্রহণ। সরকারকে বড় অঙ্কের কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে। নতুন সরকার ঋণের ভয়াবহ চাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সকল বিদেশী ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারে। আমরা জানি, আর্থিক খাতের সব কাঠামো বিগত সরকার ধ্বংস করে গেছে। দুর্নীতি এবং ব্যাংকিং খাতে চরম অনিয়ম, নৈরাজ্য ও লুটপাট অর্থনীতির জন্য সর্বনাশা পরিণতি ডেকে এনেছে। সরকারকে এই খাতের মেরামতে কঠোর হতে হবে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

দীর্ঘ ১৫ বছর একটি ঘৃণ্য ও অমানবিক সরকার মানুষকে সব অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল। তাই নতুন সরকারকে সব কালাকানুন বাতিল করে জনবান্ধব নীতির প্রবর্তন করতে হবে। স্বাধীনভাবে কথা বলা, মুক্ত মনে মত প্রকাশ করা এবং পছন্দমতো ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করতে হবে। সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রচনা করতে হবে, যাতে কেউ স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পরে।

অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে অনেক কাজ। এজন্য সরকারকে সময় ও সুযোগ দিতে হবে। এসব সংস্কারের মধ্যেই ছাত্র-জনতা ও দেশের আপামর জনগণের প্রত্যাশার বীজ নিহিত। এর আগেই যদি রাজনৈতিক সরকারের উত্থান ঘটে, তাহলে দেশ আবার নিশ্চিতভাবে গভীর সঙ্কটে পড়বে। দেশের মানুষের মুক্তির এই সুযোগ হয়তো আর কখনো আসবে না। একটি রাজনৈতিক সরকারের পক্ষে প্রত্যাশিত সংস্কারগুলো সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাই তাড়াহুড়ো করে রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায় আসার অভিলাষ ত্যাগ করতে হবে। একটি গভীর সঙ্কট, অচলাবস্থা ও রাজনৈতিক নৈরাজ্যের আশঙ্কা থেকে জাতিকে বাঁচাতে সরকারকে যৌক্তিক সময় দেয়া আবশ্যক।

১৫ বছরের শাসনামলে ভয়ঙ্কর সব রাজনৈতিক নিপীড়ন, গুম, খুন, জেল-জরিমানাসহ মিথ্যা মামলায় অগণিত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিপ্লবে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে অগণিত, অসংখ্য বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও আগুনে পুড়ে ছারখার হয়েছে। এবারের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মূল দাবি ছিল এসব অপরাধ, অন্যায় ও বৈষম্যের হাত থেকে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা এবং একটি স্বস্তিকর ও শোষণমুক্ত সমাজ ও জাতি গঠন করা। তাই যারা এসব অপরাধ, দুর্নীতি, নৈরাজ্য, খুন-খারাবি ও হামলার সাথে জড়িত তাদের খুঁজে বের করে সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত শেষ করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচারের কাজ শেষ করতে হবে। আর তা হলেই আন্দোলনের সুফল পাবে জাতি।

লেখক : ব্যাংকার

 


আরো সংবাদ



premium cement
‘রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠান কোনো দল বা গোষ্ঠির নয়’ রোহিঙ্গারা এনআইডি নেয়ার অপচেষ্টা চালালে ইসিকে জানানোর আহ্বান আলিফের পরিবারকে এক কোটি টাকা দেবে শামসুল হক ফাউন্ডেশন জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যারাই যাবে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে : জামায়াত আমির এক সপ্তাহ পর বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচলের সিদ্ধান্ত সমন্বয়কদের ওপর হামলা হালকাভাবে দেখছে না সরকার কমছে ৪৭তম বিসিএসের আবেদন ফি গাজীপুরে কোরআন অবমাননার অভিযোগে কলেজছাত্র গ্রেফতার অযাচিত অস্থিরতা নয়, দায়িত্বশীল হোন সুখী : দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন বেসরকারি স্কুল-কলেজে সাত পদে এনটিএসসির অধীনে নিয়োগ

সকল