আসুন শক্তিশালী, সমৃদ্ধ অঞ্চল গড়ে তুলি
- মাসুদ পেজেশকিয়ান
- ২৪ জুলাই ২০২৪, ১৬:০৬
ইরানের জনগণের ভোটে নির্বাচিত ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার মেয়াদের সূচনালগ্নে আমি এ অঞ্চলে আমাদের ভাই ও প্রতিবেশীদের উদ্দেশে বলতে চাই, আসুন আমরা আমাদের অঞ্চলের জনগণ ও জাতিগুলোর মধ্যে গঠনমূলক সংলাপ, সহযোগিতা ও সংহতির পথে একত্রিত হই। আমাদের পথপ্রদর্শক মূলনীতি পবিত্র কুরআনের শাশ্বত শিক্ষার মধ্যে নিহিত : ‘আর তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ এবং ‘সৎকর্ম ও আল্লাহভীতিতে সহযোগিতা করো, কিন্তু পাপ ও সীমালঙ্ঘনে সহযোগিতা করো না।’ আমাদের নবী মুহাম্মদ সা:-এর শিক্ষা মনে রাখতে হবে, যিনি বলেছিলেন, ‘তোমার প্রতিবেশীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো’ এবং ইমাম আলী রা: উপদেশ দিয়েছিলেন, ‘বাড়ির আগে প্রতিবেশীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো।’ আমরা একটি অভিন্ন ভূখণ্ডের অংশীদার এবং এই আদর্শের ভিত্তিতেই আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং সহযোগিতা করতে হবে ধর্মীয়ভাবে জীবনযাপন করার ক্ষেত্রে, ইসলাম এবং সব ঐশী ধর্মের প্রধান লক্ষ্য ক্ষমতার পরিবর্তে যুক্তির শক্তির ওপর নির্ভর করে একটি স্থিতিস্থাপক অঞ্চল গড়ে তোলার ক্ষেত্রে।
এটি অর্জনের জন্য প্রয়োজন জাতীয় শক্তিকে কাজে লাগানো, জনসমর্থন একত্রিত করা এবং ইসলামী রাষ্ট্রের মধ্যে সক্রিয় শক্তিকে সংহত করা। এই অঞ্চলে কোনো বিচ্ছিন্ন পরিকল্পনা সফল হবে না, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি বাস্তবায়িত হবে না যতক্ষণ না আমরা আমাদের অঞ্চলে সম্প্রীতি অর্জন এবং একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সহযোগিতা করতে পারি। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের অঞ্চলে সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ এবং অনন্য ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর মাধ্যমে আমরা অগ্রগতি, প্রবৃদ্ধি এবং সমৃদ্ধির দিকে নিজেদের চালিত করতে পারি। সন্দেহ নেই, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গভীর, গঠনমূলক এবং উদ্দেশ্যমূলক সংলাপই বর্তমান চ্যালেঞ্জ এবং অস্থিরতা কাটিয়ে ওঠার একমাত্র পথ। এই দৃষ্টিভঙ্গি স্থায়ী স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে, যা এই অঞ্চলের জনগণকে তাদের প্রতিভা এবং সম্পদ থেকে উপকৃত করতে সক্ষম।
‘ফিলিস্তিনের খোলা ক্ষত’
আমার প্রেসিডেন্সির সূচনায় কাক্সিক্ষত এই লক্ষ্য অর্জনে আমি আমাদের সব প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক দেশগুলোর প্রতি বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি এবং তাদের সহযোগিতার দিকে সত্যিকারের ও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতিতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছি। ইরান এবং তার আরব ও মুসলিম প্রতিবেশীরা আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ইস্যুতে অনেক অভিন্ন অবস্থান ও স্বার্থের সমভাগী। আমরা সবাই সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের গ্রহণযোগ্যতা, বৈষম্য দূরীকরণ এবং আইনি ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মুসলমানদের ধর্মীয় মূল্যবোধকে সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানাই। ইসলামোফোবিয়া নির্মূলে আমাদের সবারই দায়িত্ব ও স্বার্থ দুটোই রয়েছে। ফিলিস্তিনের খোলা ক্ষত আমাদের সম্মিলিত উদ্দেশ্য এবং এর সমাধান করাও আমাদের সম্মিলিত কর্তব্য। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ইহুদিবাদী দখলদারদের বর্বর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গাজায় ফিলিস্তিনি জনগণ ও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের বীরত্বপূর্ণ স্থিতিস্থাপকতাকে অভিবাদন জানায়। আমরা আমাদের বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করছি, দখলদারিত্ব থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে ফিলিস্তিনি জনগণের সব ধরনের প্রতিরোধের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে, তাদের প্রাকৃতিক ও সহজাত অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে, বিশেষ করে স্বাধীনতা, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার এবং দখলদারিত্ব, বর্ণবৈষম্য, গণহত্যা ও ইহুদিবাদী রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের অবসানের মাধ্যমেই কেবল এ অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা অর্জিত হতে পারে।
আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে একমত পোষণ করি যে, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা সবাইকে দুঃখকষ্ট দিয়ে ভোগায়, কাউকেই রেহাই দেয় না। এখান থেকে বাঁচার জন্য আমাদের মৌলিক সমাধান খুঁজতে হলে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য সত্য, ন্যায়বিচার ও জনগণের বৈধ অধিকারের ভিত্তিতে আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে সামরিক সঙ্ঘাতের অবসান ঘটানোর পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সমাধানের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সঙ্কটের সমাধানও প্রয়োজন। এ অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ সঙ্কট ও সঙ্ঘাত অব্যাহত থাকলে কেবল ইহুদিবাদী দখলদার ও বিদেশী শক্তিই লাভবান হবে। এই অঞ্চলের জনগণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক সমৃদ্ধির ফল ভোগ করার অধিকার রাখে এবং অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য সরকারকে অবশ্যই একে অপরকে সহায়তা করতে হবে। এরই প্রেক্ষাপটে আমরা জানাতে চাই এবং ঘোষণা করছি যে, প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্প, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং পরিবহন করিডোরে অংশগ্রহণে ইরান প্রস্তুত। ইরান তার ভূখণ্ডের মধ্যে উত্তর-দক্ষিণ এবং পূর্ব-পশ্চিম করিডোরে এই দেশগুলোকে জড়িত করতেও প্রস্তুত। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান প্রতিবেশীদের শক্তিকেই নিজের শক্তি মনে করে এবং প্রতিবেশী কোনো দেশের ক্ষতিসাধন করে নিজের সক্ষমতা বাড়ানো উচিত নয় বলে বিশ্বাস করে। প্রকৃতপক্ষে, ইরানের পররাষ্ট্রনীতির সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানো। ইরানের নতুন সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদারে বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার চেষ্টা করবে এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করবে, যদি আঞ্চলিক দেশগুলো সক্রিয় ও পারস্পরিক সহযোগিতা প্রদর্শন করে।
ইহুদিবাদীদের পারমাণবিক অস্ত্র পুরো অঞ্চল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণবিধ্বংসী অস্ত্রমুক্ত মধ্যপ্রাচ্যের জন্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে টেকসই শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বিভিন্ন হুমকি মোকাবেলা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সম্মিলিত সহযোগিতা ও সুরক্ষার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। অধিকন্তু, বর্তমান আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় অস্থিরতা ও রূপান্তরের সময়কাল পরিচালনা করার জন্য আঞ্চলিক সংহতি, এই অঞ্চলে চরমপন্থা এবং আন্তর্জাতিক শক্তির অহঙ্কার কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এরই প্রেক্ষাপটে আরব ও ইসলামী দেশগুলোও তাদের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে, শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল ইসলামী শিক্ষা অনুশীলনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আন্তÍর্জাতিক সংলাপ, বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা উন্নয়নের প্রচেষ্টায় মৌলিক ভূমিকা পালন করতে পারে।
লেখক : ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট
অনুবাদ : মো: বজলুর রশীদ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা