০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

আন্তর্জাতিক বিশ্বও কি ইসরাইলের মতোই অমানবিক?

আন্তর্জাতিক বিশ্বও কি ইসরাইলের মতোই অমানবিক? - ফাইল ছবি

গণহত্যা এবং একঘেয়েমি পরস্পর সহাবস্থান করতে পারে এমনটি সম্ভবত কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি= যতক্ষণ না বিশ্বের ৯৭২টির বেশি ম্যাগাজিন ও পত্রপত্রিকার সংগৃহীত সাক্ষ্যগুলো তুলে ধরতে সক্ষম হয়; কিভাবে ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরাইলের ভাষ্য এমনকি গণহত্যার একটি নতুন অর্থ পর্যন্ত তৈরি করেছে অথবা গণহত্যা নামের বিষয়টি পুরোপুরি গায়েব করে দিতে পেরেছে।

যুদ্ধের কোনো নিয়ম-কানুন বা আইন-বিধির তোয়াক্কার প্রয়োজন না থাকায়, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী পাশবিকতার এক নতুন নজির সৃষ্টি করেছে। দ্য ল্যানসেটের হিসাবে, গাজায় নিহতের সংখ্যা যখন সম্ভবত এক লাখ ৮৬ হাজারে পৌঁছেছে- তখন ইসরাইলি সেনারা গাজায় যে হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, নিজেরা তার সাক্ষ্য দিয়েছে। একজন ইসরাইলি রিজার্ভ সেনা বলেন, আমি নিজে একেবারে বিনাকারণে সাগরের দিকে, ফুটপাথে অথবা পরিত্যক্ত ভবনের দিকে কিছু গুলি ছুড়েছি। এসব সেনা এটিকে স্বাভাবিক গুলিবর্ষণ হিসেবে বর্ণনা করে, যার একটি সাঙ্কেতিক নাম আছে। একজন বেনামি ইসরাইলি রিজার্ভ সেনা বলেন, সেটি হলো, আমি একঘেয়েমিতে বিরক্ত, তাই গুলি করি। এটি হলো এ গণহত্যার পেছনে আসল যে কারণ তার সামান্য এক টুকরো মাত্র, যে জন্য ইসরাইলি নেতারা কোনোরকম রাজনৈতিক ও অপরাধমূলক কাজের দায়ে জবাবদিহির মুখোমুখি হচ্ছেন না।

বেনামি সেনাদের সাক্ষ্য অনুযায়ী, নারী ও শিশুসহ সব ফিলিস্তিনি হামলার লক্ষ্য। নিরবচ্ছিন্ন গুলিবর্ষণের ঘটনাকে ন্যায্যতা দিতে কিছু পদ্ধতি তৈরি করা হয়েছে- যেমন একটি বয়ান হলো, ‘উপস্থিতি দেখানো’ যেটি বলা হয়ে থাকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর সেনাদের পরিত্যক্ত বা ফাঁকা জায়গায় গুলি চালানোর পক্ষে যুক্তি হিসেবে। এমনকি কোনো কারণ ছাড়াই অথবা কোথাও কোনো পরিত্যক্ত ভবনে নিরাপদ আশ্রয় ভেবে কোনো ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়ে থাকলে তাদের সেখান থেকে বের করে দিতে গুলি চালানো হয়। সে ক্ষেত্রে এ বয়ান দেয়া হয়। ইউভাল গ্রিন, রাফাহ আক্রমণে অংশ নিতে অস্বীকারকারী রিজার্ভ সেনাদের একজন। তিনি বেনামি সাক্ষ্যগুলো সমর্থন করে বলেছেন, সেনারা কেবল একঘেয়েমি কাটাতে গুলি করেছিল।

একঘেয়েমির সাথে গণহত্যাকে এক করে ফেলতে দু’টি বিষয় পরিপূর্ণভাবে পৃথক করার দরকার হয়। মানুষ একঘেয়েমি থেকে হত্যা করে না- গাজায় গণহত্যার পেছনে একটি ঠাণ্ডা মাথায় ষড়যন্ত্র আছে, সেটি হলো- গাজাকে পুরোপুরি ফিলিস্তিনিশূন্য করা। কিন্তু এ পৃথকীকরণ আরো বেশি উদ্ভট বা অনাসৃষ্টি হয়ে ওঠে যখন ইউভাল গ্রিন বর্ণনা করেন যে, কিভাবে গাজার একটি ইসরাইলি ব্যাটালিয়ন হানুক্কা নামে ইহুদিদের আলোর উৎসবের আমেজে আতশবাজি পোড়ানোর মতো করে একসাথে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। বাজির মতো গুলি ছুড়তে ছুড়তে তারা বলে, হানুক্কা উৎসবের বিবেচনায় এটি প্রতীকী হয়ে ওঠে। ফিলিস্তিনিদের জন্য এ গুলিবর্ষণ এখন গণহত্যার শামিল। গণহত্যার অস্ত্র একটি রঙিন কল্পনায় রোমান্টিক করা যেকোনো সুস্থ স্বাভাবিক যুক্তিবাদী মানুষের কল্পনারও বাইরে।

ম্যাগাজিন ও পত্রপত্রিকার নিবন্ধগুলোতে অন্যান্য সাক্ষ্যের সাথে গাজায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভবন ধ্বংসের পর উচ্ছ্বাস প্রকাশের সাক্ষ্যও তুলে ধরা হয়েছে। একজন বেনামি কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, কিছুক্ষণ পরপর একেকটি ভবন ধসিয়ে দেয়া হয়... আর এমন অনুভূতি হয় যে, বাহ, কী দারুণ, কী মজা। এই ক্রেজি বা উন্মত্ততা শব্দটি যদি সঠিক প্রেক্ষাপটে ব্যবহার করা হয়, তাহলে এটি বসতিগাড়া উপনিবেশবাদীদের গণহত্যায় মদমত্ত সেনাবাহিনীর মনোভাব ভালোভাবে প্রকাশ করতে পারে।

একঘেয়েমি থেকে গুলি করা, হত্যা করতে গুলি করা, মাটিতে গুঁড়িয়ে দেয়া ভবন এবং ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর হাতে নিহত ফিলিস্তিনিদের প্রতি আর কী কী করা হয়েছে; তার ফুটেজ প্রদর্শন করা হয়েছে। সেনারা এমন বেসামরিক লোকদের হত্যার সাক্ষ্য দিয়েছে; যারা শুধু খাবারের ফেলে দেয়া অবশিষ্টাংশ খুঁজছিল। কখনো কখনো, মানবিক ত্রাণ সাহায্যের গাড়ির বহর আসার আগে বুলডোজার দিয়ে ফিলিস্তিনিদের লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এলাকাগুলো পরিষ্কার করে ফেলা হয়। এসব বিষয়, আবারো, দ্য ল্যানসেটের তথ্য প্রমাণ করে, একজন বেনামি ইসরাইলি রিজার্ভ সেনা বলেন, গণমাধ্যমে যতটা এসেছে- প্রাণহানির সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। নিহতদের বেশির ভাগ ছিল নিরস্ত্র, তাদের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না।

বিভীষিকাময় ঘটনাবলির বিশদ বর্ণনা দিয়ে এই রিজার্ভ সেনা সাক্ষ্য দেয়, কিভাবে ফিলিস্তিনিদের অনেক লাশ পচে গলে যায় এবং বোমা হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া কুকুর-বিড়ালের মতো প্রাণীর খাবারে পরিণত হয়। একজন রিজার্ভ সেনা ব্যাখ্যা করে বলেন, যখন তারা পথে থাকে তখন প্রাণীগুলো পাশে সরে যায়। লাশ দাফনের কোনো বিষয় নেই। সেনারা ভুল করে লাশের ওপর পা ফেলেছিল।
এটি হলো গণহত্যার প্রকৃত চিত্রের এক চিলতে অংশমাত্র, যা পাওয়া যাচ্ছে খোদ অপরাধীদের কাছ থেকে। ইসরাইলি সেনারা কী আসলে একঘেয়েমি থেকে গুলি করছে, আর আন্তর্জাতিক বিশ্ব কোনো রকম ব্যবস্থা নিতে একইরকম বিরক্ত? ইসরাইল নিজেকে যতটা মানবতাবিবর্জিত বলে প্রমাণ করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও কি তেমনি মানবিক বোধশূন্য হয়ে গেছে?

(রামোনা ওয়াদি ওয়ালজারসেন্ট একজন স্বাধীন গবেষক ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। লেখাটি মিডল ইস্ট মনিটর থেকে অনূদিত)

অনুবাদ : মুজতাহিদ ফারুকী


আরো সংবাদ



premium cement
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন : তাজুল ইসলাম চিফ প্রসিকিউটর আবুধাবির কারাগার থেকে দেশে ফিরেছেন ১৪ বীর কোনাবাড়ীতে কলেজছাত্রকে গুলি করে হত্যা : কনস্টেবল গ্রেফতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্তগুলো যৌক্তিক : ফখরুল ‘একটি চক্র জামায়াত আমিরের বক্তব্য নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে’ অস্ত্র জমা দেয়নি শামীম ওসমান ও গাজী পরিবার এবি পার্টির উপদেষ্টার পদ ছাড়লেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক কর্মকর্তাদের তালিকা চাওয়া নিয়ে বিতর্কে মন্ত্রণালয়ের দুঃখ প্রকাশ আশুলিয়ায় শ্রমিক দলের সমাবেশে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৫ রূপগঞ্জে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা না দেয়া ডাক্তারদের সনদ বাতিলের দাবি ড্যাবের

সকল