২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কুষ্ঠরোগের প্রতি গুরুত্ব কেন প্রয়োজন

কুষ্ঠরোগের প্রতি গুরুত্ব কেন প্রয়োজন - ফাইল ছবি

(লেখাটি দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রিন্ট সংস্করণে ২১ জুলাই, ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত হয়েছে।)

কুষ্ঠ অন্যতম একটি জাতীয় স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও এর কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিরা শারীরিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানসিক সমস্যারও মুখোমুখি হন। তাই কুষ্ঠ নির্মূলের বিষয়টি আমাদের জাতীয় স্বার্থে জাতীয় বাজেটে যথাযথ বিবেচনার দাবি রাখে।

কুষ্ঠরোগের প্রভাব উল্লেখযোগ্য। কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা প্রতিবন্ধকতা, কুষ্ঠরোগ সম্পর্কিত কুসংস্কার এবং কুষ্ঠরোগের উচ্চ ব্যয়ের কারণে আয় হ্রাস এবং বেকারত্বের মুখোমুখি হন। কুষ্ঠ রোগীরা সামাজিক কুসংস্কারের সম্মুখীন হন, যা তাদের প্রতিবেশী এবং এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে রোগ লুকিয়ে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করেন, ফলে তারা চিকিৎসা খরচ বহন করা এবং আয়মূলক কাজে সক্ষমতা হারানোর মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন হন।

সময় মতো চিকিৎসা না করা হলে কুষ্ঠরোগে প্রায়ই হাত-পা, চোখ এবং মুখের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতি কুষ্ঠ-সম্পর্কিত কুসংস্কারের সংমিশ্রণে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং আয়মূলক কাজগুলো সম্পাদন করার শারীরিক ক্ষমতাকে সীমিত করে। অতএব, কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হন এবং তাদের শিক্ষার সুযোগ হ্রাস পায়। এভাবে, কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলে।
সরকারের ২০৩০ সালের মধ্যে কুষ্ঠমুক্ত দেশ গড়ার ঘোষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এ লক্ষ্যে দেশে ব্যাপক কুষ্ঠরোগবিরোধী কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এ সংক্রান্ত কর্মসূচি সফল করার জন্য জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত আর্থিক বরাদ্দ থাকা জরুরি।
দেশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় তিন হাজার নতুন কুষ্ঠরোগী শনাক্ত হচ্ছে। এর অর্থ হলো রোগের সংক্রমণ আছে, তাই এটি প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতে কুষ্ঠরোগের চিকিৎসাসেবায় ঘাটতি রয়েছে। সরকারের উচিত হাসপাতালগুলোর সমতা জোরদার করা যাতে এ ধরনের জটিলতার প্রয়োজনীয় সেবা সেখানে পাওয়া যায়।

এ রোগ ঘিরে সমাজে এখনো কুসংস্কার প্রচলন রয়েছে, যা শুধু এর চিকিৎসা ব্যাহত করছে না, কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকারও ব্যাহত করছে। তাই সারা দেশে কুষ্ঠ নিয়ে ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো উচিত।

কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ কমপক্ষে তিনটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে অবদান রাখে : এসডিজি-৩ (মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্য এবং মঙ্গল, যার মধ্যে রয়েছে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বা ‘কাউকে পিছিয়ে না রাখা’), এসডিজি-১০ (বৈষম্য হ্রাসকরণ) এবং এসডিজি-১৭ (লক্ষ্যের জন্য অংশীদারিত্ব)।

বাংলাদেশ এখন এসডিজি অর্জনে কাজ করছে। আমরা যদি কুষ্ঠ নির্মূল করতে ব্যর্থ হই, তাহলে এই এসডিজি অর্জন করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ তার জাতীয় কুষ্ঠ কৌশল (২০২৩-৩০) প্রণয়ন করেছে, যা একটি শক্তিশালী জাতীয় কুষ্ঠ কর্মসূচি, সমন্বিত কেস ব্যবস্থাপনা এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিমূলক বাস্তবায়নে এর ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
কুষ্ঠবিরোধী কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমাদের বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে, যেমন- প্রাথমিক অবস্থায় রোগী শনাক্তকরণ, কুষ্ঠবিষয়ক সচেতনতা তৈরি, কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তিদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, কুষ্ঠ ও এর জটিলতা ব্যবস্থাপনার সুবিধা নিশ্চিত করা এবং প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ, কুসংস্কার দূর করা এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করা।

কুষ্ঠ নির্মূল কর্মসূচি গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, কিন্তু এ বিষয়ে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। যেমন- কুষ্ঠ কর্মসূচিকে কম গুরুত্ব দেয়া হয়, কর্মসূচির জন্য অর্থের ঘাটতি এবং কর্মীদের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণে নতুন কুষ্ঠ কেস শনাক্ত করার উদ্যোগের অভাব, সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রমের অভাব এবং কর্মচারী ও অন্যান্য সেবাপ্রদানকারীদের প্রশিক্ষণের সুযোগ কম থাকা।

কুষ্ঠমুক্ত দেশ গঠনে অপারেশন প্ল্যান প্রণয়ন করা প্রয়োজন। তাই বাজেটে পর্যাপ্ত আর্থিক বরাদ্দ রাখা অপরিহার্য। যদি বাজেটে কুষ্ঠ বিষয়টির প্রতি যথাযথ মনোযোগ না দেয়া হয়, তাহলে দেশে কুষ্ঠসংক্রান্ত যাবতীয় দুর্ভোগ চলতে থাকবে, যা কি না মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ আমাদের জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক


আরো সংবাদ



premium cement