টেকসই উন্নয়নে ইসলামী ব্যাংক
- মো: মাঈন উদ্দীন
- ০৯ জুলাই ২০২৪, ০৫:৫৩
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি দেশের একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক। ব্যাংকটি বেশির ভাগ সূচকে অনেক আগেই দেশের সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংককে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রায় ইসলামী ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।
জুন ২০২৪ শেষে ইসলামী ব্যাংক এক লাখ ৫৯ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকার আমানত নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে। প্রবাসী আয় আহরণেও সর্বোচ্চ অবস্থানে প্রতিষ্ঠানটি। এ বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংক ৩ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয় সংগ্রহ করেছে, যা বাংলাদেশী টাকায় ৪০ হাজার কোটি টাকার সমান। মোট প্রবাসী আয়ের ২৬ শতাংশ এসেছে এই ব্যাংকের মাধ্যমে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ইসলামী ব্যাংকের আমানত ছিল এক লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। আমানতকারীদের হিসাব সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৩০ লাখ। ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ এ ব্যাংকের আমানত ছিল এক লাখ ৪১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ৩০ জুন ২০২৩-এ ছিল এক কোটি ৪৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের ৩০ জুন যা প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি পায়। ২০২১ সাল শেষে আমানতের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মনিরুল মওলা এক সাক্ষাৎকার বলেছেন, ইসলামী ব্যাংকের আমানতের বেশির ভাগ ব্যক্তিশ্রেণীর। দেশের সব অঞ্চলের সব শ্রেণিপেশার মানুষ আমাদের গ্রাহক। গ্রাহকই ইসলামী ব্যাংকের সবচেয়ে বড় সম্পদ। আমরা আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছতে বিশেষ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছিলাম। এর প্রত্যক্ষ ফলও পেয়েছি। ২০২৩ সালে ইসলামী ব্যাংকের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। প্রায় আট কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইসলামী ব্যাংক পরিবারের সদস্য। সারা দেশে বিস্তৃত রয়েছে এ ব্যাংকের ৩৯৪টি শাখা। রয়েছে ২৪৯টি উপশাখা ও দুই হাজার ৭৭১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট। দেশের এমন কোনো বড় বাজার নেই, যেখানে এ ব্যাংকের উপস্থিতি পাওয়া যাবে না। মানুষের সীমাহীন ভালোবাসার কারণেই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে।
জানা যায়, বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৮৮ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে এই ব্যাংক। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ইসলামী ব্যাংকের অবদানের মূল্যায়ন করছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক দ্য এশিয়ান ব্যাংকার্স ম্যাগাজিন ইসলামী ব্যাংককে ‘স্ট্রংগেস্ট ব্যাংক ইন বাংলাদেশ’ অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে। এ দেশের ব্যাংকিং ও অর্থনীতির জন্য একটি বড় স্বীকৃতি।
এ ছাড়া বিগত ১০ বছর ধরে বিশ্ব সেরা এক হাজার ব্যাংকের তালিকায় ইসলামী ব্যাংক দেশের শক্তিশালী ব্যাংক হিসেবে অবস্থান করছে। ইসলামী ব্যাংকিংয়ের ৪১ বছরে ইসলামী ব্যাংক দেশের আরো ৯টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকের পথচলা সুগম করেছে। এই ব্যাংকের কর্মচারীদের সাথে গ্রাহকের আন্তরিকতা ও আস্থা বিরাট শক্তি। তারা তাদের আমানত এই ব্যাংকেই রেখে যাচ্ছেন। ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ কাঠামো পণ্য বেচাকেনার সাথে সম্পৃক্ত থাকায় এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণও কম। দেশের ব্যবসাবাণিজ্যে অবদান রাখাসহ সামাজিক কর্মকাণ্ডে যেমন গরিব মেধাবীদের বৃত্তি প্রদান, দরিদ্রদের মধ্যে বিভিন্ন সময় নানা সাহায্য প্রদান, হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেও কল্যাণমুখী ব্যাংকিং ধারা প্রবর্তন, ভারসাম্য ও শোষণমুক্ত সমাজ এবং সম্পদের সুষম বণ্টনের কাজ করার ক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ইসলামী ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে।
বর্তমানে দেশে ইসলামী ব্যাংকগুলোর মোট আমানত প্রায় চার লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা ব্যাংকের মোট আমানতের ২৭ শতাংশ। ইসলামী ব্যাংকগুলোর মোট বিনিয়োগ প্রায় তিন লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকারও বেশি, যা ব্যাংক খাতে মোট বিনিয়োগের ২৯ শতাংশ। রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংকগুলো অনেক অবদান রেখে চলেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা মোট রেমিট্যান্সের ৫২ শতাংশ আসছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আমানত, মুনাফা ও অপারেটিং বিনিয়োগে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। দেশের মোট বিনিয়োগের প্রায় ১২ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ ইসলামী ব্যাংকের। বৈদেশিক মুদ্রার শীর্ষে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। সারা বিশ্ব থেকে যে বৈদেশিক মুদ্রা আসে তার ২৯ শতাংশ আসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। পল্লী উন্নয়নেও ইসলামী ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে। দেশের কৃষি-শিল্প কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন, বীজ, সার সরবরাহ, গার্মেন্ট খাতে ইসলামী ব্যাংক অনন্য অবদান রেখে চলেছে। কৃষি আমাদের জীবনের সাথে মিশে আছে। শিল্পের অনেক কাঁচামাল কৃষি থেকে আসে। আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় অনেক পণ্য কৃষি থেকে আসে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ইসলামী ব্যাংক ৬৬১ কোটি টাকা দরিদ্র কৃষকের মধ্যে বিতরণ করে। কৃষি খাতের উন্নয়নে বিশেষায়িত ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এক হাজার ৫২৭ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে। ইসলামী ব্যাংক কৃষি খাতে বিনিয়োগে দ্বিতীয় অবস্থানে।
কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, গ্রামের দরিদ্র শ্রেণীর মধ্যে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ বিতরণ ও নানা আর্থিক সাহায্যে ইসলামী ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি ও উন্নতির অন্যতম কারণ হলো- মানুষের আস্থা ও ব্যাংক-কর্মীদের এক ঘনিষ্ঠ কর্মতৎপরতা। ইসলামী ব্যাংক দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে প্রবাসী আয়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে। ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে নিজস্ব আমদানি ব্যয় পরিশোধের পর এ পর্যন্ত সরকারি রিজার্ভে ১২ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি যোগ করে অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রেখেছে। সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ ও প্রবাসী সেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় দেশী-বিদেশী নানা পুরস্কার ও স্বীকৃতি পেয়ে আসছে। বিশ্বের ৬৪টি দেশের ৫৯৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে ইসলামী ব্যাংকের। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত আয়কে বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে আনার জন্য ২১টি দেশের ১৫৫টি ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউজের সাথে ইসলামী ব্যাংকের চুক্তি রয়েছে, যার মাধ্যমে দুই শতাধিক দেশ থেকে রেমিট্যান্স বেনিফিশিয়ারির হিসাবে অর্থ জমা হয়।
কিছু দিন পরপরই ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে নানা ধরনের নেতিবাচক কথা শোনা যায়। অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে এ খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। উৎপাদনমুখী খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তবেই ইসলামী ব্যাংকের উন্নতি ও সফলতা দেশের আর্থিক খাতের ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে। দেশ সমৃদ্ধি লাভ করবে।
লেখক : অর্থনীতি বিশ্লেষক
ই-মেল : [email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা