০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫
`

ভারতের মনিপুর ফের উত্তপ্ত

ভারতের মনিপুর ফের উত্তপ্ত - ফাইল ছবি

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মনিপুরে জাতিগত দাঙ্গা চলছে এক বছরের বেশি সময় ধরে। গত বছর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু হয় দাঙ্গা। এ পর্যন্ত কয়েক শত মানুষ নিহত হয়েছে। স্বল্প জনসংখ্যার রাজ্যে এই মৃত্যু বড় ঘটনা। সহিংসতা এখনো চলছে। সম্প্রতি আবারো উত্তপ্ত মনিপুর। এবার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর ওপরই হামলার চেষ্টা হয়েছে। মনিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বিরেন সিংয়ের কনভয়ে হামলা চালায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। হামলায় মুখ্যমন্ত্রীর এক নিরাপত্তারক্ষী আহত হয়েছেন। কলকাতার এই সময় পত্রিকা জানাচ্ছে : এ দিন সকালে মনিপুরের কাঙ্গপোকপি জেলায় মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ে হামলা চালায় সশস্ত্র সন্ত্রাসবাদীরা। গোটা ঘটনা ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায়। গত ২২ জুন মুখ্যমন্ত্রী বিরেন সিং বলেছেন, আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে মনিপুরে শান্তি ফিরে আসবে। ঠিক তখনই দু’টি স্থানে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে বলে জানাচ্ছে কলকাতার দৈনিক পুবের কলম। পত্রিকাটি বলছে, কুকিদের জোট আইটিএলএফ মনিপুরে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছে। কুকি অধ্যুষিত এলাকায় তাদের কেন্দ্রীয় শাসনের দাবি দিন দিন জোরদার হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শান্তি ফিরে আসবে কি-না এ প্রশ্নে বিশ্লেষকরা দ্বিধাগ্রস্ত। তারা বলছেন, সঙ্কটের সমাধান সূত্র খুঁজতে অনেক দূর যেতে হবে।

গত বছরের মে মাসে হিংসার আগুন জ্বলে ওঠার পর মনিপুরে মাসের পর মাস কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। ঘটেছে ধর্ষণ, খুনের মতো নৃশংস অপরাধের নানা ঘটনা। বছর কাটতে না কাটতেই ফের উত্তপ্ত মনিপুর। জুনের প্রথম সপ্তাহেই মনিপুরের জিরিবামে সহিংসতা ছড়ানোর অভিযোগ আসে। গত ৬ জুন এক ব্যক্তির মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার হয়। ওই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। ঘটনার জেরে ৭০টিরও বেশি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। একাধিক সরকারি দফতরেও আগুন দেয়া হয়। শতাধিক মানুষ প্রাণ বাঁচাতে এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হন।

উত্তর-পূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টার্স বলা হয় যে সাত রাজ্যকে তার একটি মনিপুর। রাজধানী ইম্ফল। জনসংখ্যা ৩৬ লাখের মতো। রাজ্যে বিধানসভার আসনসংখ্যা ৬০। বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। এ রাজ্যের উত্তরে নাগাল্যান্ড, দক্ষিণে মিজোরাম, পশ্চিমে আসাম ও পূর্বদিকে মিয়ানমার। আয়তন ২২ হাজার ৩২৭ বর্গকিলোমিটার। মেইতেই উপজাতি এ রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী (জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ)। মনিপুরী বা মেইতেইরা পাঁচটি সামাজিক গোষ্ঠীতে বিভক্ত। এদের মধ্যে হিন্দুই বেশি। তবে কিছু খ্রিষ্টান ও মুসলমানও আছেন। মারুপ (মেইতেই সংস্কৃতি ও ধর্মে বিশ্বাসী), মেইতেই খ্রিষ্টান, মেইতেই গৌর চৈতন্য (মেইতেই ও হিন্দুধর্ম উভয়েই বিশ্বাসী), মেইতেই ব্রাহ্মণ (স্থানীয় নাম বামোন) ও মনিপুরী মুসলমান (স্থানীয় নাম মিয়া মেইতেই বা পাঙাল)। মনিপুরী ভাষা তাদের মাতৃভাষা এবং রাজ্যের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা। এখানে রাজতন্ত্র ছিল।

পিতাম্বর চারাইরঙবা প্রথম রাজা। ১৮২৪ সালে বার্মার আসাম আক্রমণ থেকে নিষ্কৃতি পেতে মনিপুর রাজ গম্ভীর সিং ব্রিটিশ সাহায্য চাইলে তৎকালীন ভারতের গভর্নর জেনারেল উইলিয়াম আমহার্স্টের নেতৃত্বে প্রথম অ্যাংলো-বার্মা যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের পর মনিপুর ভারতের একটি দেশীয় রাজ্য হিসেবে ব্রিটিশ রাজ্যের অঙ্গীভূত হয়। ১৮৯১ সালে রাজা কুলচন্দ্র সিংয়ের সময়কালে লর্ড ল্যান্সডাউনের সময়কালে ব্রিটিশদের সাথে বিরোধ বাধে। এক বছরের মধ্যে তিনি অপসারিত হন। তার নাবালক পুত্র চুড়াচন্দ্র সিং ক্ষমতায় আসেন। বোধচন্দ্র সিং শেষ রাজা। ১৯৪৭ সালে মনিপুর স্বাধীন রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশের ইচ্ছা প্রকাশ করে। বার্মার (বর্তমান মিয়ানমার) আগ্রাসী মনোভাবে ১৯৪৯ সালে রাজা বোধচন্দ্র সিং ভারত অন্তর্ভুক্তির সম্মতিপত্রে সই করেন। ১৯৫৬ সালে এটি ভারতের কেন্দ্রশাসিত রাজ্য হয়, ১৯৭২ এ পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পায়।

বর্তমান জাতিগত সহিংসতা বিষয়ে যা জানা যাচ্ছে তা হলো, বিজেপি সরকারই সঙ্কটের মূলে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি করা হলেও মনিপুরে অস্থিতিশীলতার বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি জটিলই রয়ে গেছে। প্রান্তিক এই জনপদে দশকের পর দশক ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, সহিংসতা ও প্রান্তিকীকরণের রাজনীতি সেখানকার মূল সঙ্কট হয়েই থেকে গেছে।

যেভাবে সঙ্ঘাতের সূচনা : গত বছর ৩ মে মনিপুরের চন্দ্রচুড় জেলায় হাইকোর্টের একটি আদেশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয় রাজ্যের আদিবাসী ছাত্রদের ইউনিয়ন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’ (এটিএসইউএম)। ওই মিছিলে স্থানীয় নাগা ও কুকি সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের সাথে রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় মেইতেই বা মনিপুরীদের সংঘর্ষ বাধে এবং তা দাঙ্গায় রূপ নেয়। মনিপুরের ৩৬ লাখ জনগোষ্ঠীর ৫৩ শতাংশ মেইতেই জাতিগোষ্ঠীর সদস্য। মনিপুরে মেইতেইরা ‘শিডিউলড ট্রাইব’ (তফসিলি জাতিগোষ্ঠী) হিসেবে গণ্য হয় না। যে কারণে সরকারি চাকরি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থায় সংরক্ষণ সুবিধার সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত। ভারতে সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে সে দেশের সংবিধানে এই ‘শিডিউলড ট্রাইব’ স্বীকৃতির বিধান রাখা হয়েছে।

সংবিধানে ‘শিডিউলড কাস্ট’ (ভারতে যারা মূলত দলিত বা হরিজন সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে পরিচিত) ও ‘শিডিউলড ট্রাইব’ ভারতের রাজনীতিতে দীর্ঘ দিনের আলোচনার বিষয়বস্তু। ভারতে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী হিসেবে পরিগণিত হলেও মনিপুরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় মেইতেইদের ‘শিডিউলড ট্রাইব’ হিসেবে স্বীকৃতি দিলে অন্য সংখ্যালঘু আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর জন্য ওই রাজ্যে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে- এই আশঙ্কা থেকে মেইতেইদের ‘শিডিউলড ট্রাইব’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার বিরোধিতা করছে রাজ্যের অন্য আদিবাসী সংখ্যালঘুরা, যাদের একটি বড় অংশ ধর্মীয়ভাবে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপিও মেইতেইদের দাবির পক্ষে সহানুভূতিশীল। তাদের দাবি সমর্থন করেই ২০২২ সালে মনিপুরে বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে বিজেপি। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম হওয়ার মধ্যেই গত বছর এপ্রিল মাসে মনিপুর হাইকোর্ট রাজ্যসরকারকে মেইতেইদের দাবি বিবেচনার নির্দেশ দেয়। কিন্তু রাজ্যের অন্য আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে এতে উদ্বেগ সৃষ্টি হয় এবং হাইকোর্টের ওই আদেশের প্রতিক্রিয়ায় মনিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়নের ডাকা মিছিল শুরু হলে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে।

কেন সহিংসতা মাথাচাড়া দিচ্ছে : নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইম্ফলের এক আদিবাসী যুবনেতার বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, তাদের বাড়ি লুটপাট করে ভাঙচুর করা হয়েছে এবং পরিবারকে সামরিক আশ্রয়শিবিরে শরণার্থী হতে বাধ্য করা হয়েছে। ওই নেতা বলেন, ‘আমরা এখানে যা দেখছি, দুর্ভাগ্যজনক হলেও মনে হচ্ছে, খুবই পরিকল্পনামাফিক এই দাঙ্গা বাধানো হয়েছে এবং বিরোধীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। তারা স্পষ্টভাবে জানে কোন বাড়িগুলোতে সংখ্যালঘু আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন বাস করে এবং সেখানেই হামলা ও অভিযান চালানো হচ্ছে।’

দ্বন্দ্ব কোথায় : মনিপুরে মেইতেই এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদটি রাজনৈতিক ও ভৌগোলিকভাবে স্পষ্ট। দাঙ্গায় এই বিভেদের চিত্রটি সামনে এলেও দুই পক্ষের মধ্যকার উত্তেজনা দীর্ঘ দিনের এবং ভূমি অধিকার, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এই দূরত্ব ও বিভেদ চলছে। রাজ্য সরকার এবং প্রশাসনের বিভিন্ন পদে মেইতেইদের আধিপত্য চোখে পড়ার মতো এবং সেখানে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নতির সুবিধা অন্য আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর তুলনায় তারাই বেশি ভোগ করে। মনিপুরের সংখ্যাগুরু মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া যায় কি-না, তা খতিয়ে দেখতে হাইকোর্ট একটি সুপারিশ করার পর থেকে সহিংসতা চলছে। এরপর বিজেপিরই এক বিধায়ক মেইতেই সম্প্রদায়ের জন্য তফসিলি উপজাতির মর্যাদা সম্পর্কিত মনিপুর হাইকোর্টের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন পেশ করেছেন। মনিপুর বিধানসভার পার্বত্য অঞ্চল কমিটির (এইচএসি) চেয়ারম্যান, ডিঙ্গাংলুং গ্যাংমেই, যিনি রাজ্য বিধানসভায় ক্ষমতাসীন বিজেপির একজন এমএলএও বটে, তার আবেদনে বলেছেন, তফসিলি উপজাতির তালিকায় কোন সম্প্রদায় অন্তর্ভুক্ত হবে বা হবে না, তা দেখার এবং বাস্তবায়নের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের, হাইকোর্টের নয়।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, সঙ্কটের বীজ যেখানে লুক্কায়িত সে বিষয়টি সামনে এনে সুরাহা করতে চাইলে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ভালো করবে। পাশে চীন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। চীনের সাথে ভারতের সম্পর্ক ভালো নয়। মনিপুরের ঘটনায় চীনের জড়িত তাকার অভিযোগও আছে। সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডে মিয়ানমারের সাথে সম্পর্কেরও অবনতির শঙ্কা আছে। তা ছাড়া দেশটিতে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজমান। বাংলাদেশের কোনো স্বার্থহানির আপাতত শঙ্কা না থাকলেও, ভৌগোলিক সন্নিহিতির কারণেই সেভেন সিস্টার্সের ঘটনাবলিতে বাংলাদেশের শঙ্কামুক্ত থাকার সুযোগ নেই।

এক বছর যাবৎ অশান্ত মনিপুর। হিংসাত্মক ঘটনা, নারী নির্যাতনের বীভৎসতায় আঁতকে উঠেছে পুরো দেশ। প্রতিবাদে সরব হয়েছে একযোগে বিরোধী সব রাজনৈতিক দলও। এই সংঘর্ষে গৃহহীন হয়েছে প্রায় এক লাখ মানুষ। নিহত প্রায় ৩০০। তবে সংঘর্ষের পর থেকে একবারের জন্যও মনিপুরমুখো হননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সরকার হোক বা পুলিশ, সেনা বা আধাসেনা, কেউ জানে না, সঙ্ঘাতের শেষ কোথায়! এরই মধ্যে রাজ্যে অনুষ্ঠিত হয় লোকসভা ভোট। ফল প্রকাশিত হতেই দেখা যায় মনিপুরের দুই আসনেই জয়ী কংগ্রেস। অষ্টাদশ লোকসভার সাংসদদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে স্লোগান ওঠে, মনিপুরকে ন্যায়বিচার দিন, ভারতকে বাঁচান। পূর্বতন লোকসভায় বিরোধী সাংসদদের মনিপুর নিয়ে কথা বলতে দেয়া হয়নি। এবার যেন জনতার সেই কণ্ঠস্বর পার্লামেন্টের অভ্যন্তরে পৌঁছে গেল। গত মঙ্গলবার মনিপুরের দুই সাংসদ শপথবাক্য পাঠ করতে উঠলে মনিপুর মনিপুর স্লোগান দিতে থাকে বিরোধী বেঞ্চ। নিজের আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে তাদের সম্মান প্রদর্শন করেন রাহুল গান্ধী। শপথ গ্রহণের জন্য আউটার মনিপুরের সাংসদ অ্যালফ্রেড কান্নগাম আর্থারের নাম ঘোষণা হতেই বিরোধী বেঞ্চ থেকে মনিপুর মনিপুর স্লোগান দেয়া হয়। তিনি শপথ নেয়ার পর বলেন, ‘মনিপুরে সুবিচার করুন, দেশ বাঁচান।’ ইনার মনিপুরের সাংসদ আনগোমচা বিমল আকোইজাম শপথ নিতে উঠলে স্লোগান ওঠে, মনিপুরে ন্যায়বিচার চাই।

দেখা যাচ্ছে, এক বছরেও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। বিরেন সিং কিভাবে দু-তিন মাসের মধ্যে সঙ্ঘাতের অবসান ঘটাবেন সেটিই এখন দেখার বিষয়।


আরো সংবাদ



premium cement