২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মুসলিম উম্মাহর লজ্জা হবে আর কবে

মুসলিম উম্মাহর লজ্জা হবে আর কবে - ফাইল ছবি

পণ্ডিত কার্ল মার্কস লিখে গেছেন, লাল পতাকা দিয়েই লাল পতাকাকে রুখতে হবে (Red flag to oppose Red flag)। তিনি ‘বিপ্লব’ দ্বারা ‘প্রতিবিপ্লব’ রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাতেই কথাটি বলেছিলেন। এই প্রকাশরীতির সাথে মিল রেখে বলতে ইচ্ছে করছে ‘সন্ত্রাস’ দ্বারাই ‘সন্ত্রাসবাদকে’ রুখে দাঁড়ানোর আজ সময় এসেছে। কথা হলো সন্ত্রাস বলতেই আমরা কী বুঝব আর সন্ত্রাসবাদ বলতেই বা আমরা কী বুঝব? জায়নবাদী ইসরাইল বলছে, ‘হামাস’ সন্ত্রাসবাদী। ইসরাইলের বায়োলজিক্যাল পার্টনার আমেরিকা বলছে, আইএস সন্ত্রাসী, হুথিরা সন্ত্রাসী, হিজবুল্লাহ সন্ত্রাসী; ইরান ও উত্তর কোরিয়া সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। এর আগে তারা বলেছিল সাদ্দাম হোসেন, গাদ্দাফি, ইদি আমিন- এরা সন্ত্রাসী। অর্থাৎ মাইক যার হাতে, জগৎ- শ্রোতা তার কথাই শুনছে। শ্রোতাবিশ্বের কথা কারো কানে পৌঁছাচ্ছে না।

সত্য তো এটিই যে, বিশ্বের প্রধান দু’টি সন্ত্রাসী দুর্গ হচ্ছে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল। আগে বিশ্ব সন্ত্রাসী ছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেন, ইংল্যান্ড- এসব ঔপনিবেশিক দেশ। সন্ত্রাসের সংজ্ঞাটা বদলিয়ে তারা নিষ্পেষিত, প্রতিবাদী, বঞ্চিত ও সুবিচারপ্রত্যাশী জনগোষ্ঠী বা রাষ্ট্রগুলোকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিচ্ছে। যে ইসরাইল রাষ্ট্র কায়েমের জন্য ফিলিস্তিনি আরবদের পৈতৃক ভিটে থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল এবং এখন যাদেরকে জাতিগত নির্মূলের জন্য নির্বিচারে গণহত্যা চালানো হচ্ছে, এর চেয়ে বেশি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আর কী হতে পারে? ওদের ভাবসাব দেখে মনে হয় সন্ত্রাস বা সন্ত্রাসবাদ শব্দকে তারা নিজেদের নামে নিজেদের স্বার্থের মতো করে পেটেন্ট (patent) রেজিস্টার করে নিয়েছে।

কখনো খাঁটি ও সঠিক নিয়ম পালনকারী ইসলামী সমাজকে তারা ডাকছে উগ্র ধর্মান্ধ সন্ত্রাসবাদী নামে, কখনো দক্ষিণ আমেরিকার মহাদেশের ল্যাতিন দেশগুলোকে ডেকেছে সন্ত্রাসী নামে; কখনো উত্তর কোরিয়া কাজাখস্তান, কিরঘিজিয়া বলছে সন্ত্রাসবাদী; কখনো সভ্যতার সূতিকাগার মহাচীনকে সন্ত্রাসের মদদদাতা বলতেও কসুর করছে না। আর আফগান স্বাধীনতাপ্রিয় বীরদেরকে তারা সবসময় বলেছে সন্ত্রাসবাদী নামে। ফিলিস্তিনি জাতীয় সংস্থাকে (Palestine Liberation Organization) তারা সংস্থাটির জন্মকাল থেকেই সন্ত্রাসী সংগঠন বলে নামকরণ করে আসছে। তাদের নামকরণের ইতিহাসও অনেক লম্বা। যুক্তরাষ্ট্র যে দেশে দেশে হস্তক্ষেপ করে শাসক বা শাসনব্যবস্থা তাদের দিকে টানার জন্য অভ্যুত্থান ঘটায়, ইসরাইল যখন হাজার মাইল উড়ে গিয়ে ভিনদেশের মধ্যে গিয়ে রাজনীতি বা সামরিক কর্মকর্তা কিংবা বিজ্ঞানীদেরকে খুন করে, এটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নয়?

পশ্চিমারা তাদের দখলদারির বিরোধিতাকারীদের একসময় নাম দিত ‘নৈরাজ্যবাদী’। পরে নাম বদলে ডাকত ‘টেরোরিস্ট’ বা ‘সন্ত্রাসী’। একসময় গোটা নিকট প্রাচ্যে ফিলিস্তিনে বসবাসকারী ইহুদিদের বলা হতো সন্ত্রাসী। কেননা, ইসরাইল রাষ্ট্র চাপিয়ে দেয়ার অনেক আগে থেকেই তারা প্রতিবেশী আরব গৃহস্থদের ফল, ফসল, গবাদিপশু ও বাণিজ্যের মাল সামান লুট করত। সে জন্যই আরব বিশ্বে ফিলিস্তিনি ইহুদি ‘সেটেলারদের’কে বলা হতো দস্যু জাতি বা সন্ত্রাসবাদী হিসেবে। পলিটিক্যাল নভেল (The Fifth Horseman) কিংবা পোলিশ বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক জামেক কনরাডের লেখা The Secret Agent-এর মতো বইগুলোতে নিপুণভাবে তুলে ধরা হয়েছে ইহুদিদের কূটকৌশল, ধূর্ততা, মিথ্যাবাদিতা, ঠগ-জোচ্চুরি এবং প্রতারণার এসব খায়-খাসলতের কথা। শেকসপিয়রের (The Marchant of Venice) নাটকের কথা আর কী বলব। প্রুশিয়ার এক তরুণ স্কুলছাত্র শেকসপিয়রের এই নাটক পড়েই ইহুদি সুদখোরদের নিষ্ঠুর পৈশাচিকতার ব্যাপারে এমনই রুষ্ট এবং বীতশ্রদ্ধ হন যে, ওই কচি বয়সেই এডলফ হিটলার ইহুদিদের পৃথিবী থেকে নির্মূল করার শপথ নেন।

১৯৮০ কী ১৯৯০ দশক থেকে পশ্চিমারা শুরু করে ইসলামী আদর্শের বৈশ্বিক চেতনাকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ’ নামে ডাকার রীতি। মূর্খ ও মিথ্যুক দার্শনিক হান্টিংটনের তথাকথিত ‘সভ্যতার দ্বন্দ্ব’ (Clash of Civilization)-এর দার্শনিক লিফলেট তাদের এসব অপচেষ্টার আগুনে নতুন করে ঘি ঢেলে দেয়। বিভ্রান্ত হয়ে কিংবা অন্তরের বিষক্রিয়া থেকেই সালমান রুশদির মতো মূর্খ ও বুদ্ধিভিত্তিক পশ্চিমা ব্যভিচারীরা এই নতুন চক্রান্তের শরিক হয়ে যায়। সে সময় ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি রুশদির প্রাণ বধের নির্দেশনা দেন। সেই সময়োপযোগী কাজটি না করলে এই ইহুদিবাদী ও স¤্রাজ্যবাদীদের ইসলামবিদ্বেষ আরো জঘন্য পর্যায়ে এবং অসহনীয় মাত্রায় উঠে যেত।

আজ ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার মতো সৎ সাহসিকতার সাথে সেদিনের ইরানের রুশদি খতমের ফতোয়ার মধ্যে অনেক মিল আছে। আমরা বেহুদা শিয়া-সুন্নি বিভেদ-ফেতনা চালিয়ে ইসলামের আন্তর্জাতিক ঐক্য-সংহতিকে দুর্বল করি, যা আজকের বাস্তব বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ক্ষমাহীন অপরাধ। অনেক গভীর বিশ্ব ভাবনা থেকেই তাই মহাচীন, ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্কের নতুন সেতুবন্ধ রচনার চেষ্টা করে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়; বরং পৃথিবীর ওই অংশে মুসলিম জাতিপুঞ্জের উচিত অভিন্ন দুশমন ‘জায়নিস্ট’ ইসরাইলের বিরুদ্ধে একাত্ব হওয়া। তা না হলে আজ ফিলিস্তিনিদের ওপর যা চলছে, কে জানে কাল পৃথক পৃথকভাবে জর্দান, সিরিয়া, কুয়েত, কাতার, আমিরাতের ক্ষেত্রেও তা ঘটবে না?

ইসরাইলিরা শিরায় শিরায় ঠগ, রগে রগে ওদের বেঈমানি, ওদের জীবকোষের অণু-পরমাণুতে শঠতা ও ধূর্ততার জিন। ওদের পূর্বপুরুষরা স্বয়ং আল্লাহর সাথে বেঈমানি করেছে! নবীদেরকে প্রাণে বধ করেছে! ওরা মানবসভ্যতার কলঙ্ক; সভ্যতার ক্যান্সার ব্যাধি। ক্যান্সারে আক্রান্ত টিউমার যেমন দেহ থেকে অপারেশন করে বের করে দেয়া হয় কিংবা রেডিওলজি প্রয়োগ করে কোষগুলো ধ্বংস করে দেয়া হয়, মানবসভ্যতার স্বাভাবিক জীবন ও সুস্থতার স্বার্থেই তাই ইসরাইল রাষ্ট্রকে পৃথিবী থেকে অপসারণ বা পুরো ধ্বংস করে ফেলা উচিত। আর তাদের মিত্রদের চিহ্নিত করা উচিত এই অপরাধে অপরাধী হিসেবে, তাদেরও গণ্য করা উচিত মানবসভ্যতার দুশমন হিসেবে।

জেগে উঠতে হবে সেই সব মুসলিম দেশের জনগণকে, বিশেষ করে তরুণ সমাজকে যারা গোটা মানবজাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে শুধু আমেরিকাকে খুশি করার জন্য ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং কূটনৈতিক রুসুমাত চালিয়ে যাচ্ছে। লজ্জিত হওয়া উচিত সেসব মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে, যাদেরকে নতুন করে লজ্জা দিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা ঠুকে।


আরো সংবাদ



premium cement
বাহাদুর শাহ পার্ক : ইতিহাসের নীরব সাক্ষী পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ভারতের ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য ফেসবুক, টিকটক নিষিদ্ধ অস্ট্রেলিয়ায় ‘হাইব্রিড মডেল’ মানবে না পাকিস্তান, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে জটিলতা বাড়ল উগান্ডায় ভূমিধসে ৪০ বাড়ি চাপা, নিহত ১৫ দেশে বিশৃঙ্খলার পেছনে রয়েছে ইন্ধনদাতারা জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জামায়াত আমিরের দুর্নীতিবাজদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে না পারলে কিসের বিপ্লব, প্রশ্ন দেবপ্রিয়ের নৈরাজ্য সৃষ্টি জাতিকে বিপর্যয়ে ঠেলে দেবে গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন উদ্যোগ নেবে যুক্তরাষ্ট্র জনগণ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা রুখে দিয়েছে

সকল