২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

চাই সম্মিলিত উদ্যোগ

চাই সম্মিলিত উদ্যোগ - ফাইল ছবি

জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য তামাক ক্ষতিকর। এ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ১৯৮৮ সাল থেকে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে, ‘তামাকশিল্পের হস্তক্ষেপ থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা।’

সোস্যাল মিডিয়াসহ নানা মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণার ফলে তরুণরা ক্রমবর্ধমানভাবে তামাকজাত দ্রব্যের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে, যা তাদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের জন্য গুরুতর হুমকি।

তামাকবিরোধী প্রচারণাকারীদের মতে, তরুণদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা রয়ে গেছে এবং বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে তা বাড়ছে। তামাক ব্যবহার বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর একক সবচেয়ে বড় কারণ এবং বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনে একজন প্রাপ্তবয়স্কের মৃত্যুর জন্য দায়ী। বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ তামাক উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উৎপাদিত হয় এবং বাংলাদেশ সেগুলোর অন্যতম। বিশ্বের মোট তামাকের ১.৩ শতাংশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। তামাকের কারণে প্রতি বছর আমাদের দেশে মোট জিডিপির প্রায় ৩ শতাংশ ক্ষতি হয়।

তামাক চাষের জন্য বিপুল কীটনাশক ও সারের প্রয়োজন হয়, যা ধীরে ধীরে জমির উর্বরতা কমিয়ে দেয়। ফলে তামাক চাষের জমিতে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়। এ ছাড়া তামাক পাতা শুকিয়ে বিড়ি-সিগারেট তৈরির প্রক্রিয়ায় বনজ সম্পদের ক্ষতি হয় এবং পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হয়।

তামাকের ব্যবহার স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করে এবং দেশের অর্থনীতি এবং উৎপাদনশীলতায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তামাকজনিত রোগের কারণে বার্ষিক এক লাখ ৬১ হাজারের বেশি লোক মারা যায় (টোব্যাকো অ্যাটলাস-২০১৮, ষষ্ঠতম সংস্করণ) এবং প্রায় চার লাখ মানুষ অক্ষম হয়ে পড়ে (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-২০০৪)।

বাংলাদেশে প্রায় ৩.৭৮ কোটি মানুষ সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলের মতো বিভিন্ন তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করে। এ ছাড়াও প্রায় আট কোটি মানুষ গণপরিবহন, জমায়েত এবং আবাসস্থলে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার (গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে গ্যাটস-২০১৭)।

বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির তথ্যমতে, তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় দেশে বছরে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।

বিশ্বব্যাপী তামাক নিয়ন্ত্রণ ও তামাকের ব্যবহার কমানোর লক্ষ্যে ২০০৩ সালে জেনেভায় ৫৬তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) অনুমোদন করা হয়। বাংলাদেশ এই চুক্তিতে প্রথম স্বাক্ষরকারী এবং ২০০৪ সালে এটি অনুমোদন করে।
বাংলাদেশ সরকার এফসিটিসির আলোকে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০৫ (সংশোধিত-২০১৩) প্রণয়ন করে। আইনটি ২০১৩ সালে কিছু পরিবর্তন ও সংশোধন করা হয় এবং ২০১৫ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধি কার্যকর করা হয়।
আইনে পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ধূমপান নিষিদ্ধ এবং পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ধূমপান না করার সাইনবোর্ড প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়াও তামাকজাত দ্রব্যের সব ধরনের বিজ্ঞাপন, প্রচার বা পৃষ্ঠপোষকতা নিষিদ্ধ করা হয়।

তামাকবিরোধী অধিকারকর্মীরা সিগারেটের খোলা ও খুচরা বিক্রি তরুণদের সিগারেট কেনার সুযোগ বন্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়ার পক্ষে। বর্তমানে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই জনপ্রিয়তার সুযোগ নিয়ে সরকার তামাকের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে অনলাইন প্রচারণা চালানোর পদক্ষেপ নিতে পারে।

এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তারা সন্তানদের ধূমপানে বিরত রাখার ব্যাপারে সক্রিয় হতে পারেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে স্কুলের পাঠ্যসূচিতে তামাকের কুফল তুলে ধরা যেতে পারে। কোনো দোকানি যেন ইউনিফর্ম পরা শিক্ষার্থীদের কাছে সিগারেট বিক্রি করতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ বিষয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা সহায়ক হতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে ধূমপানের অভ্যাস দেশের নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের বিষয়।

তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক নির্মূলের জাতীয় লক্ষ্য অর্জন করতে হলে এর উৎপাদন ও ব্যবহার কমাতে হবে। একই সাথে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ও এর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
তামাকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জনে সরকারের পাশাপাশি সুশীল সমাজ, পেশাজীবী সংগঠন, বেসরকারি সংস্থা ও গণমাধ্যমের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।

লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক


আরো সংবাদ



premium cement