২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

তবেই আমরা মানুষ

তবেই আমরা মানুষ - ফাইল ছবি

মানুষ হয়ে সবাই বাঁচতে চায়। কিন্তু ক’জন হতে পারে সে মানুষ? যে মানুষের জন্য এই পৃথিবী সৃষ্টি। সৃষ্টি তামাম জাহান। মানুষ হওয়া যদি এতই সহজ হতো, তাহলে মানুষকে লক্ষ করে বারবার এই মানবতার বাণী শুনানো হতো না। তাই যে মানুষের মাঝে মানবতা নেই, নেই মানুষের আত্মা, যে ভালোবাসা বোঝে না, ন্যায়-অন্যায়ের ধার-ধারে না, সৃষ্টি ও স্রষ্টার মাহাত্ম্য খুঁজতে চায় না, তার মানুষরূপী অবয়ব থাকলেও তাকে অমানুষ নাইবা বললাম, মানুষ বলা যায় না।
এরা যেমন পরিবার ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর তেমনি রাষ্ট্রের কোনো নাগরিক এদের কাছে নিরাপদ নয়। এরা এসেছে দুনিয়ার সুখ ভোগ করার জন্য। শত আল্লাহর নাফরমানি এদের অন্তরকে আঘাত করে না। এরা একের পর এক অন্যায় করতে করতে নিজেরাই অন্যায়ের একটি উদাহরণ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। সর্বত্র আজ এই মানুষের ছড়াছড়ি।

তাই তো মানবতার এত অবক্ষয়। জানোয়াররূপী এই মানুষগুলো যখনই সুযোগ পায়, স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্য মানুষের উপর মরণ থাবা বসিয়ে দেয়। একসময় এদের দৌরাত্ম্য সমাজ ও পরিবারের গণ্ডি ছাড়িয়ে সব মানুষের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায়। যতই এই নীতিভ্রষ্ট ও স্বার্থান্বেষী মানুষগুলোকে সমাজের প্রয়োজনীয় অংশ মনে করা হবে, তাদের বিকাশের পথ তৈরি করা হবে, সেই সমাজ নিঃসন্দেহে জাহেলি সমাজের দিকে এগিয়ে যাবে।
যে সমাজে দুষ্টের দমন সঙ্কুচিত হয়, সে সমাজ আর ভদ্রসমাজ থাকে না। অন্যায়কারীরা হিংস্র্র হয়ে মরণ খেলায় মেতে উঠে। যার তার সাথে যেমন খুশি তেমন আচরণ করতেও তারা কসুর করে না। যে মানুষের মর্যাদাই জানে না, সে কখনো অন্যের মর্যাদা দিতে পারে না। তাই তো আজ সমাজ থেকে গুণীরা দূরে সরে যাচ্ছে। নেতৃত্বের স্থানে বসতে পারছে জ্ঞানশূন্য গণ্ডমূর্খ। সে জ্ঞান তো দূরের কথা, আচরণেও জ্ঞানের পরিচয় বহন করে না। তবুও সমাজের মানুষকে তাদের কর্তৃত্ব স্বীকার করে নিতে হচ্ছে। চৌর্যবৃত্তির পেশাধারীরা যদি সমাজের আইকন হয়, তবে এর চেয়ে লজ্জা আর কী হতে পারে?

জ্ঞানী মানুষগুলো কথা বলার সুযোগ হারাচ্ছে। বখাটেদের ভয়ে চুপসে যাচ্ছে তারা। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহসও পাচ্ছে না। পাছে তাকে না জানি বড় কোনো বিপদে পড়তে হয়। সমাজব্যবস্থা আজ অন্যায়কারীর আশ্রয়-প্রশ্রয় দিলেও সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ মানুষের পক্ষে কখনোই কথা বলবে না। মানুষ নীরব ও নিভৃতে চাপাকষ্ট নিয়ে অন্যায় দেখে যাচ্ছে, সয়েও যাচ্ছে। মুখ গুমরে কাঁদছে। তবুও বলার হিম্মত নেই।

চিন্তা করুন, এমন একটি সময়ের, যখন আপনি অসহায়। বিবেক আপনার স্তব্ধ। জাতির এই দুর্দশার জন্য আপনি কাকে দায়ী করবেন? সমাজ, রাষ্ট্র নাকি নিজেকে? নাকি চাপা অভিমান নিয়ে সমাজ থেকে গুটিয়ে নেবেন? আর কোনো মতে সয়ে চলার নীতি অবলম্বন করবেন? তাহলে আপনার আগামী প্রজন্ম কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? সমাজব্যবস্থায় ভালো মানুষের যে শূন্যতা তৈরি হবে কীভাবে আপনি তা পুষিয়ে নেবেন?

জাস্ট চোখ বন্ধ করুন, আজ থেকে ২০ বছর আগে ফিরে যান, দেখুন, নিজের আশপাশ, পরিবার, সমাজ। তাদের চিন্তা-চেতনা ও মানসিকতা। এবার পরীক্ষা করুন, বর্তমান সময় ও সেই সময়ের মানুষের পার্থক্যের জায়গাগুলো। এগুলো আপনাকে কিসের ম্যাসেজ দেয়? জাতি হিসেবে আপনি কতটা সমৃদ্ধ হয়েছেন? উত্তরটা হয়তো খুবই হতাশাব্যঞ্জক। কিন্তু হতাশা নিয়ে মানুষ বাঁচতে পারে না। মানুষকে বাঁচতে হয় স্বপ্ন নিয়ে। তাহলে সেই বাঁচার মধ্যে সার্থকতা খুঁজে পায়। শক্তি নিয়ে একবার ঘুরে দাঁড়ান। অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন। শুধু মানুষের দাবিগুলো সঠিকভাবে আপনাকে তুলে ধরতে হবে। দেখবেন, আপনার চারপাশে অগণিত মানুষের ভিড়। যারা সত্যের ছায়াতলে আশ্রয় নেবে। মানুষের হয়ে মানুষের কথা বলবে।

ঈমান ও আমলে ক্রমেই শূন্যতা তৈরি হচ্ছে। মানুষ ভালো কাজ করছে মানুষকে প্রদর্শনের জন্য। আল্লাহর দরবারে নিজের পাওনা থেকে মাহরুম হচ্ছে। এমন লোকের আনুগত্য করছে, যে আনুগত্যে দ্বীনের কোনো ফায়দা নেই। যে ভালোবাসা নিছক দুনিয়ার হাসি-তামাশায় পূর্ণ। এমন আনুগত্য করতে গিয়ে অন্যায়কারীকেও মানুষ নিজেদের নেতা বানিয়ে নিচ্ছে। শুধু মানুষের দুনিয়াবি চেতনার কারণে এরা আজ ধর্মীয় বলয়েও শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছে। সুদ-ঘুষের সাথে বসবাস করেও দ্বীনের দাওয়াত দানকারীর ভূমিকায় নেমে পড়ছে (?) তাই মসজিদ ও মাদরাসাগুলো থেকেও হক কথা ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসেছে।

তাই অনেক বড় লেবাসধারীর মধ্যেও এখন দ্বীনের অনুশাসন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তোষামোদি আর চাটাচাটি নিয়ে ব্যস্ত সবাই। যে যেভাবে পারছে, সুবিধা পাওয়ার জন্য অন্যকে তেল সাগরে ভাসিয়ে দিচ্ছে। তোষামোদির বিনিময়ে দ্বীনের চরম শত্রুকেও জান্নাতের টিকিট ধরিয়ে দিচ্ছে। হায়রে ইলম! হায়রে আলেম!


আরো সংবাদ



premium cement