২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আপসহীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব - ফাইল ছবি

যে মহানায়কের জন্ম না হলে আমরা আজকের বাংলাদেশ পেতাম না, পেতাম না আমাদের অধিকার, আমাদের মহান স্বাধীনতা তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাঙালি জাতির গর্ব, অহঙ্কার। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বাংলার এক ছোট্ট গৃহকোণে যে খোকার জন্ম হয়েছিল, যে রচনা করেছিল একটি ইতিহাস, যার হাত ধরে জন্ম হলো একটি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ- তিনি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা সর্বজনস্বীকৃত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জন্মশতবর্ষ পেরিয়ে ২০২৪ সালে জাতি উদযাপন করছে বঙ্গবন্ধুর ১০৪তম জন্মদিন।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভায় বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় ভাষণ। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা, সেই ঘোষণার বজ্রগর্ভ ভাষণে অবগাহন করে উঠল জনতা। ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামে অর্জিত হলো একটি মানচিত্র, একটি পতাকা, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। আর তা সম্ভব হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর আপসহীনতা, দৃঢ়তা ও দূরদর্শিতার কারণে। সে দিন বঙ্গবন্ধু ছিলেন নীতিতে অটল, আপসহীন ও দৃঢ় মনোবলে বলীয়ান।

মানবতাবাদী নেতা : বঙ্গবন্ধু ছিলেন ধর্মপ্রাণ, মানবদরদি, উদার ও সংগ্রামী। তিনি মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখেছেন। তিনি রাজনীতিতে মুসলমান, হিন্দু, খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মের মানুষকে সমানভাবে দেখেছিলেন। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী নেতা। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যখন স্বাধীনতার ডাক দেন তখনো তিনি বলেন, এ বাংলার হিন্দু-মুসলমান বাঙালি-অবাঙালি যারা আছে তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব আপনাদের ওপর। আমাদের যেন বদনাম না হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় পাকিস্তানের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। ১৯৪৬ সালের আগস্টে কলকাতায় ব্যাপকভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলছিল। বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন জায়গায় ছুটেছেন অসহায় মানুষের সাহায্য। দুই বাংলায়ই ঘুরেছেন সম্প্রীতি বজায় রাখতে।

আপসহীন বঙ্গবন্ধু : বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপসহীন নেতা। তিনি কোনো লোভ-লালসা বা ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেননি। তিনি রাজনীতি করেছেন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার, বৈষম্যের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তাই তো তিনি পাকিস্তানের ২৩ বছরে চার হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে কাটিয়েছেন। স্বাধীন দেশের জন্য তিনি দু’বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার জন্য ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করে পাকিস্তানে সরকার গঠনে যোগ্যতা অর্জন করে। তখন বাঙালি আবারো ষড়যন্ত্রের শিকার হয়। ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করা হয়। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ ভাষণে বলেছেন, ‘আমি, প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, দেশের মানুষের অধিকার চাই...’ আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। তার এ দৃঢ় মনোবল, নীতিতে অটলতা বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সহায়তা করেছে। বাঙালি মুক্তি সংগ্রামের জন্য তৈরি হয়।

বঙ্গবন্ধু কারো সাথে আপস করেননি। তিনি নিজের ক্ষমতার লোভে, প্রতিষ্ঠার লোভে, প্রধানমন্ত্রিত্বের লোভে আপস করেননি। তিনি আপস করলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। এতে আমরা স্বাধীনতা পেতাম না। তার চারিত্রিক যে দৃঢ়তা, বলিষ্ঠতা, যোগ্য নেতৃত্বেও গুণ ও বাংলার মানুষের অধিকার অর্জনের আপসহীনতা সেটিই তাকে স্বাধীনতার তথা ইতিহাসের মহানায়কে পরিণত করেছে।

দূরদর্শী নেতা : বঙ্গবন্ধু ছিলেন দূরদর্শী নেতা। তিনি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য ঐতিহাসিক ছয় দফা পেশ করেন। ছয় দফায় ছিল অর্থনৈতিক মুক্তির কথা, দু’টি আলাদা প্রায় স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ হওয়ার কথা। ছয় দফা আন্দোলনের জন্যই বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা মামলায় জড়ানো হয়, বঙ্গবন্ধু তখন করাগারে বন্দী ছিলেন। ঊনসত্তরের যে গণ-আন্দোলন হলো তার মূল কারণ ছিল শেখ মুজিবকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করা। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি মুক্তি লাভ করেন এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাকে বঙ্গবন্ধু খেতাব দেয়া হয়।

বঙ্গবন্ধু সারাটা জীবন বাঙালির দুঃখকষ্ট দূর করার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন সে জন্য তার জীবনের বিরাট অংশ জেলে কাটাতে হয়েছে। তার অনুপস্থিতিতেও তারই নামে দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধে দেশ স্বাধীন হয়। পাকিস্তানের তৎকালীন অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু তার প্রিয় জনগণের মধ্যে ফিরে এসে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সবাইকে সংগ্রামে নামতে বলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে সুখী সমৃদ্ধ ও অর্থনৈতিকভাবে মজবুত করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেন মাত্র সাড়ে তিন বছরে ধ্বংস হয়ে যাওয়া অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ, এক কোটি শরণার্থীকে পুনর্বাসন ও দেশ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলেন ও দেশকে সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার যাবতীয় উদ্যোগ আয়োজন সম্পন্ন করেন। যদিও তার সব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মতো জনবল দেশে প্রস্তুত ছিল না। বিশেষ করে দলীয় দুর্বৃত্তদের নিয়ন্ত্রণে তার সহিষ্ণুতা তার জন্য রাজনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পিতার লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা বলেই নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে দেশ এগিয়ে যেতে পারে।
আজ বঙ্গবন্ধু আমাদের মধ্যে নেই। আছে তার নীতি, আদর্শ দূরদর্শিতা ও মানবতাবোধ। এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ তারই দেখানো মহাসড়ক ধরে।

ই-মেল : [email protected]


আরো সংবাদ



premium cement