মিয়ানমার সীমান্তে প্রাণ বাঁচানোর আবেদন
- প্রফেসর ইউসুফ হারুন
- ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:৩৫
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মি ও মিয়ানমারের জান্তাবাহিনীর মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলছে। মিয়ানমার বাহিনী কপ্টার ও জঙ্গিবিমান থেকে বোমাবর্ষণ করে চলেছে। মিয়ানমারের চলমান সংঘর্ষে গোলাগুলি ও ভারী অস্ত্রের ব্যবহারে কেঁপে উঠছে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকাও। কিছু রোহিঙ্গা সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান করছে। কিছু রোহিঙ্গা ডিঙি নৌকায় নাফ নদীতে অবস্থান করে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করছে। জাতিসঙ্ঘ থেকে বলা হয়েছে, তুমুল সংঘর্ষের মধ্যে প্রাণ বাঁচাতে পালাচ্ছেন হাজারো মানুষ। প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ের অনিশ্চিত গন্তব্যে উত্তাল, অতল, অসীম সাগরে অনুপযোগী নৌকানির্ভর করে অকূল সাগরে ঝাঁপ দিয়ে ডুবে মরার জন্য ঢল নেমেছে রোহিঙ্গাদের।
এরকম অব্যবস্থাপনাপ্রসূত সাগরপথের জলযাত্রা নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে নিজেদেরকে ঠেলে দেয়ার নামান্তর। পরিস্থিতি কতটা দুঃসহ ও ভয়াবহ হলে এমনটি ঘটে তা শুধু ভুক্তভোগী বেশি অনুধাবন করতে পারবে। এভাবে সুসভ্য, উন্নত ও আধুনিক বিশ্বসমাজের সামনে মানবকুল শুধু প্রাণরক্ষা করার জন্য ডাঙ্গা ও পানিতে নাকানি-চুবানি খাচ্ছে। জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয় ইউএনডিপি, ইউএনএফপিএ ও ইউএনওপিএসের অধিবেশন। সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকা অসহায় মানুষের জন্য সহায়তা জোরদারে প্রদত্ত অঙ্গীকার বাস্তবায়িত করার সঙ্কল্প অধিবেশনে উচ্চারিত হয়েছে।
জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সম্মুখে মানবতা ভূলুণ্ঠিত হোক তা কেউ চায় না। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের জন্মও মানবতার সেবার লক্ষ্যে। এতসব প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আড়ম্বরপূর্ণ অফিসাদি, লোভাতুর পদ-পদবি, বিরাট জনবল, আকর্ষণীয় বেতনাদি-সুযোগ সুবিধা, বাড়ি-গাড়ি আর বিশাল প্রকল্প-বাজেট কেবলই সেই হাড্ডিসার, ক্ষুধায়-কাতর, প্রাণ বাঁচানোতে ধাবমান ধুলা-বালুতে ছেয়ে থাকা দেহের প্রাণ ওষ্ঠাগত মানুষগুলোর জন্য। কর্তৃপক্ষীয় ব্যক্তিরা শান-শওকতের অধিকারী, পদ-পদবিধারী মান্যবরদের মতো ওরাও রক্ত-মাংস গঠিত মানুষ বটে। অথচ ঝড়-তুফানে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া খড়-কুটার মতো এ হতভাগ্য মানুষগুলো জান-প্রাণ হাতে নিয়ে ছেলে-মেয়ে বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে কোলে কাঁধে নিয়ে এবং ছেঁড়া-বস্তা ভর্তি ভাঙা তৈজসপত্র ও ছেঁড়া-ফাটা কাঁথা-কাপড় মাথায় নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পাহাড়, জঙ্গল নদী খাল বিলে দৌড়ঝাঁপ দিয়ে কঙ্কালসার দেহে জানে আর কুলায় না। আর তখন বিড় বিড় করে আপন মনে অসহায়ত্বের বুলি আওড়ায়- কেউ কি নেই আমাদের বাঁচানোর।
এমন দুরবস্থায় যদি এ চরম সঙ্কটের লোকগুলোকে উদ্ধারের ত্রাণের চেষ্টা করা না হয় তাহলে নিজের মনের কাছে, বিবেকের কাছে ধরা পড়তে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে একদিন। আজ নয় কাল এমন দুরবস্থা আমরা-আপনারা-সুখীজনদের জন্য অপেক্ষা করছে না এটি ভাবার উপায় নেই। বিশ্ব-প্রকৃত-নিয়তি কারো হাতে নেই। অশুভ থেকে মুক্তি পেতে শুভ কিছু করতেই হবে।
অতএব দেশী-বিদেশী, আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক পরিচালক, কর্ণধার ক্ষমতাধর সবার কাছে নিবেদন- কালবিলম্ব না করে মিয়ানমারের এ যুদ্ধবিধ্বস্ত জরাজীর্ণ লোকগুলোর উদ্ধার, সহায়তা প্রাণ বাঁচানোর জন্য আপনাদের প্রভাব, প্রতিপত্তি, ক্ষমতা নিয়োজিত করে দ্রুত একটা কিছু করুন। দয়া করে এ নিবেদনকে একটা জরুরি ‘এসওএস’ বার্তা হিসেবে গ্রহণ করবেন।
লেখক : আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বিশ্লেষক, মিরপুর-১১, পল্লবী, ঢাকা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা