২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

৭ জানুয়ারির নির্বাচন: পর্যালোচনা

৭ জানুয়ারির নির্বাচন: পর্যালোচনা - প্রতীকী ছবি

নিজের চোখকে অবিশ্বাস করা যায় না। তাই স্বচক্ষে দেখা এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যনির্ভর কিছু প্রতিবেদনের আলোকে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে কিছু বলা নৈতিক দায়িত্ব মনে করছি। আমি ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে গিয়েছিলাম। তখন জনশূন্য উন্মুক্ত রাস্তায় ছেলেরা মহা আনন্দে ক্রিকেট খেলছে। আমার বাসায় ভোটের দিনসহ দু’দিন কাজের মেয়েটি আসেনি। পরিচিত অনেক বাসায়ও একই অবস্থা ছিল। কাজের মেয়েরা বলেছে, সারা দিন ভোটকেন্দ্রের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য জনপ্রতি ৫০০ টাকা আর একটি করে বিরিয়ানির প্যাকেট পেয়েছি। এটি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাথমিক চিত্র। ভোটের কোনো কেন্দ্রে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখলাম না। স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রত্যক্ষভাবে দেখার সুযোগ হয়েছিল। এর মধ্যে চারটি নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশ এবং ভোটের প্রতি মানুষের আগ্রহ-উদ্দীপনা প্রত্যক্ষ করেছি। বাকি আটটিতে সেটি দেখিনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে চারটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তা সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হিসেবে দেশের মানুষ ও বিশ্বের সব দেশের প্রশংসা অর্জন করে। দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত বাকি যে আটটি নির্বাচন যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। দেশ-বিদেশে এর গ্রহণযোগ্যতা ছিল অনেক কম। বিতর্কিত নির্বাচনগুলোর মধ্যে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪-এর ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ নির্বাচন।

এবারের নির্বাচনের আগের ও পরের দৃশ্যগুলো ছিল মর্মান্তিক। কারারুদ্ধ একাধিক মানুষের মৃত্যু এবং হত্যা, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া, প্রধান বিরোধী দলের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে জেলে আটক ও তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের, গুম, খুন এবং যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত করা, জাল ভোটের মহোৎসব, শিশুদের ভোট দেয়ার দৃশ্য ও প্রশাসনযন্ত্রের সরাসরি দলীয় বাহিনীর ভূমিকা পালন এবং নির্বাচন কেন্দ্রে সহিংসতার ব্যাপকতা এতটাই বেশি ছিল যা বর্ণনাতীত।

সরকার ও নির্বাচন কমিশন বলেছে, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে কোনো সহিংসতা হয়নি। সরকারে থেকেও সুষ্ঠু, পক্ষপাতমুক্ত এবং সহিংসতামুক্ত নির্বাচন করা যায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনই তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

কিন্তু বাস্তবে কী ঘটেছিল নির্বাচনের আগে ও পরের দিনগুলোতে? প্রধান পত্র-পত্রিকার শিরোনামগুলো ছিল এরকম : ‘বাংলাদেশের নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনায় উদ্বিগ্ন জাতিসঙ্ঘ।’ ‘গণতান্ত্রিক মূলনীতি পূরণ হয়নি, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে হতাশ কানাডা।’ ‘বাংলাদেশে সত্যিকার নির্বাচন হয়নি। গণতন্ত্রের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে’, বলেছেন অস্ট্রেলিয়ার এমপি অ্যাবিগেল সেলিনা বয়েড। বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বর্তমান রাইট টু ফ্রিডমের প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম বি মাইলাম এক বিবৃতিতে বলেছেন, ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন নিয়ে আমরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলাম তাই সত্য হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দিন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যরা বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু নয় বলে মূল্যায়ন করেছে। উইলিয়াম বি মাইলাম এই বিবৃতি দিয়েছেন ৯ জানুয়ারি ২০২৪। বিবৃতিতে তিনি বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় তা বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান করতে পারবে না। এ বিষয়টি মাথায় রেখে নির্দলীয় একটি সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানাই আমরা। ভয়েস অব আমেরিকা এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে একতরফা নির্বাচন একদলীয় শাসনের ভীতি বাড়িয়ে তুলেছে। এর শিরোনাম ‘ওয়ান-সাইডেড বাংলাদেশ ইলেকশন রাইজ অব ওয়ান পার্টি রুল।’ হিউমান রাইটস ওয়াচের ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলি সতর্ক করে বলেন, যেহেতু শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতা সুসংহত করেছেন- সমালোচনামূলক কণ্ঠের ওপর নিপীড়ন আরো বাড়াতে পারে। এটি টানা তৃতীয় নির্বাচন যেখানে বাংলাদেশীদের তাদের পছন্দনীয় নেতা নির্বাচনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

ইলিয়ন স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ডিস্টিঙ্গুইশড প্রফেসর ড. আলী রিয়াজ সম্প্রতি গ্লোবাল নিউজকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে এমন একটি বিরোধী দল বানাতে চাইছে পার্লামেন্টে যারা ক্ষমতাসীন দলকেই সমর্থন করেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একদলীয় শাসনের দিকেই অগ্রসর হবে। সম্প্রতি বিএনপিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে একাধিকবার উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে ইতোমধ্যে জল্পনাকল্পনা দেখা দিয়েছে যে, নতুন সরকার বিএনপির রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে।

ক্রাইসিস গ্রুপের এশিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক পিয়েরে প্রকাশ বলেন, এই নির্বাচনকে গণতন্ত্রের কফিনে পেরেকের মতো দেখায়। আপনি একটি স্বৈরাচারী প্রবণতা, বাকস্বাধীনতা হ্রাস, ধর্ম পালনের স্বাধীনতা হ্রাস ও গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য হ্রাস দেখতে পাবেন, আপনি ধারণা করতে পারেন যে, সরকারের কণ্ঠস্বরের সাথে ভিন্নমত পোষণকারী অন্য যেকোনো কিছুর উপর দমন-পীড়ন আরো বাড়তে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বিএনপির রাজনীতি করার অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন। ফলে এই নির্বাচনের পর রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির নিবন্ধন বাতিল হওয়ার আশঙ্কার কথা জানান।

প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ছাড়াও ৬৩টি রাজনৈতিক দল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। এই একটি দাবিতে তারাও নির্বাচন বর্জন করেছে ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’ এক প্রতিবেদনে লিখেছে, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন গণতন্ত্রের কফিনে পেরেক। বিভক্ত জাতি। দেশটির বিপদ ঘনিয়ে আসছে। বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জয় গণতন্ত্রের মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে দেশটি আরো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দিকে ধাবিত হবে।

ভয়েস অব আমেরিকাকে এক ই-মেল বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, ২০২৪ সালে ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক টিম পাঠায়নি যুক্তরাষ্ট্র সরকার। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যারা এসেছে তারা যে বক্তব্য দিয়েছে সেটি তাদের ব্যক্তিগত অভিমত। তার বা তাদের মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি নয়। পক্ষান্তরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসঙ্ঘ। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, এই নির্বাচন যে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি এ বিষয়ে অন্য পর্যবেক্ষকদের সাথে একমত পোষণ করে যুক্তরাষ্ট্র। সব দলের অংশগ্রহণে এই নির্বাচন না হওয়ায় আমরাও এর নিন্দা জানাই। ব্রিটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে বলেছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অত্যাবশকীয় হলো মানবাধিকার, আইনের শাসন ও যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো। নির্বাচনে এই মানদণ্ড মানা হয়নি। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভোলকার তুর্ক বলেছেন, নির্বাচন সামনে রেখে কয়েক মাসে বিরোধী দলীয় হাজার হাজার নেতাকর্মীকে ইচ্ছামতো ও নিজেদের খেয়ালখুশি মতো আটক করা হয়েছে এবং ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য এই কৌশল কোনোভাবেই সহায়ক নয়। তিনি বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানান সত্যিকার অর্থে সবার অংশগ্রহণমূলক একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির।

দুঃখজনক যে, যখন পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো ব্যাপকভাবে নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা করছিল, তখন চীন, রাশিয়া ও ভারতসহ কিছু দেশ দ্রুততার সাথে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। বাংলাদেশ নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত প্রথম অভিনন্দন জানিয়েছেন শেখ হাসিনাকে। তার বিজয়ের প্রশংসা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক্সে দেয়া এক পোস্টে নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবার বিজয়ী হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারকে অভিনন্দন জানিয়েছি। তাকে বলেছি, বাংলাদেশের জনগণকে নিয়ে অংশীদারত্ব ও সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমরা।
এখন প্রশ্ন, ভারত সরকার বাংলাদেশের ব্যাপারে যদি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কথা না বলে, তাহলে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব আরো বেগবান হবে।

নির্বাচন-পরবর্তী সময়েও কী পরিমাণ সন্ত্রাস দেশে ছড়িয়ে পড়ছে এবং দেশ-বিদেশে এর প্রতিক্রিয়া কেমন তা জানা দরকার। পত্র-পত্রিকায় সহিংসতার অসংখ্য রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে। সেসবের পুনরাবৃত্তি বাহূল্য হবে।

নির্বাচনে আসা বিদেশী পর্যবেক্ষকদের নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা হাইকমিশন উষ্মা প্রকাশ করেছে। আসলে ডামি নির্বাচন, ডামি নির্বাচন কমিশন, ডামি প্রার্থী, ডামি ভোটার এবং সর্বশেষ ডামি অবজারভার নিয়ে একটি নাটক সাজানো হয়েছে। এটি কোনো নির্বাচন না। কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ করে যে কয়জন ভাড়াটিয়া বিদেশী অবজারভার আনা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন নিজেই বলেছেন, এটি কোনো নির্বাচন নয়, গণমাধ্যমে তার বক্তব্য এসেছে (সূত্র : বিএনপি শীর্ষ পর্যায়ের নেতা নজরুল ইসলাম, দৈনিক ইনকিলাব ৯ জানুয়ারি ২০২৪)

কোনো পর্যবেক্ষক পাঠায়নি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডা সরকার। তারা এ ব্যাপারে সরকারিভাবে অফিসিয়াল স্টেটমেন্ট দিয়েছে, যা দেশের প্রথম শ্রেণীর জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে।

মূলত গত ৭ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচনের নামে অনুষ্ঠিত দলীয় সম্মেলনে জনগণ তো দূরের কথা, আওয়ামী লীগের সমর্থকরাও উপস্থিত হয়নি। রয়টার্স, বিবিসি, ডয়চে ভেলে বাংলা এবং বিশ্বের বহুল আলোচিত ও প্রচারিত স্বনামধন্য সংবাদমাধ্যম গত ৭ জানুয়ারির কথিত ভোটে ভোটারের উপস্থিতি সর্বোচ্চ ২ থেকে ৫ শতাংশ বলে উল্লেখ করেছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৯৭৫-এর ২৫ জানুয়ারি সংসদে যেভাবে একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছিল, ঠিক একইভাবে গত ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে বলে জনগণ মনে করে।

ডেকান হেরাল্ডের সম্পাদকীয়তে লিখেছে, শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক জয়ে গণতান্ত্রিক দীপ্তি নেই। টানা চতুর্থ মেয়াদে এই বিজয় বাংলাদেশকে আঁকড়ে ধরবে রাজনৈতিক ক্ষোভ। একসময় শেখ হাসিনাকে সারা বিশ্ব প্রগতিশীল নেত্রী হিসেবে মনে করত। কিন্তু তিনি সমালোচক ও মিডিয়াকে স্তব্ধ করে ক্ষমতাকে শক্ত দখলে রাখতে নেমে পড়েছেন একক কর্তৃত্ববাদে, যা গণতন্ত্রের একেবারেই উল্টো বা বিপরীত চিত্র। জাতির পিতার কন্যার এই দমন-পীড়নমূলক নিপীড়নপ্রবণতা দুভার্গ্যজনক। তিনি বিরোধী দলের সাথে যে আচরণ করেছেন তা একেবারেই অগণতান্ত্রিক।

গত দুই দশক ধরে শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন সমর্থক দিল্লি। প্যারাডক্স হলো দিল্লির প্রতি শেখ হাসিনার খোলামেলা আনুগত্য তাকে দেশের ভেতর আরো বেশি অজনপ্রিয় করে তুলেছে। ভয়েস অব আমেরিকার রিপোর্ট, শেখ হাসিনার ক্ষমতায় ফেরাকে ভারত কেন তড়িঘড়ি করে স্বাগত জানায়? এখানে নিশ্চয়ই কোনো রহস্য লুকায়িত আছে। দ্য গার্ডিয়ানের সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে গণতন্ত্রের জন্য খারাপ দিন বলে অভিহিত করা হয়েছে। অন্যদিকে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলেছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গণতন্ত্র প্রচারণায় সীমাবদ্ধতা আছে তা দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। উত্তর কোরিয়া, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, উগান্ডা ও সিরিয়ার পথে ধাবিত হচ্ছে বাংলাদেশ। এটি গণতন্ত্রের উল্টো পিঠ, যা গণতান্ত্রিক বিশ্ব পছন্দ করে না।


আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা, ভিত্তি ও মূলনীতি ছিল গণতন্ত্র, সেটি মুমূর্ষু রোগীর রূপ ধারণ করেছে। তাকে বাঁচিয়ে রাখা জাতির নৈতিক দায়িত্ব বলে দেশের মানুষ মনে করে।
একটি দেশে গণতন্ত্র না থাকলে যা হয়

গণতন্ত্রহীন দেশে প্রতিনিধিত্বশীল বিরোধী দল থাকে না; বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অধিকাংশ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন; নির্বাচন কমিশনার সরকারের আজ্ঞাবহ হয়; অগণিত শিশুও ভোট দেয়; নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে খুন, তার বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়; যখন তখন মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়; মানুষ গুম-খুনের শিকার হয়: বিনাবিচারে বছরের পর বছর কারাগারে থাকে; স্বাধীন মতপ্রকাশে ভয় পায়; সংসদে রাজনীতিবিদদের চেয়ে ব্যবসায়ীদের গুরুত্ব বাড়ে; সরকার সুশীল সমাজ ও সৎ মানুষের মূল্য দেয় না; সরকার মানুষকে বোকা আর নিজেকে চালাক মনে করে; সরকার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধীরে ধীরে ধ্বংস বা দুর্বল করে দেয়; সরকারি দল নির্বাচনে জেতার জন্য বিদেশী শক্তির ওপর নির্ভর করে; জবাবদিহির প্রশ্ন থাকে না।

এমতাবস্থায় একটি দেশকে কী বলা যেতে পারে, বিশেষজ্ঞ ও আর্থিক বিশ্লেষণকারীদের মতামত এবং এ ধরনের একটি দেশে গণতন্ত্র কতটুকু বিদ্যমান আছে, সুপ্রিয় পাঠকই তা বলবেন।

লেখক : গ্রন্থকার, গবেষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail:[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement