দেশে এখন দু’টি সংসদই বহাল!
- মুহাম্মদ ওয়াছিয়ার রহমান
- ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭:১০
বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৫(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে বাংলাদেশে ‘একটি সংসদ’ থাকবে বলা আছে। ৬৫(২) অনুসারে ৩০০ সদস্য নিয়ে সংসদ গঠিত হবে বলা আছে। ৭২(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি পূর্বে সংসদ ভেঙে না দিয়ে থাকলে প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে পাঁচ বছর অতিবাহিত হলে সংসদ ভেঙে যাবে। সে অনুসারে ২৯ জানুয়ারি একাদশ সংসদের মেয়াদ বহাল আছে। ১৪৮(৫) অনুচ্ছেদ অনুসারে, সংসদ সদস্যরা সংসদ-সদস্যরূপে শপথ গ্রহণকালে ঘোষণা করেন- ‘সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ করছি যে, আমি যে কার্যভার গ্রহণ করতে যাচ্ছি, তা আইন অনুযায়ী ও বিশ^স্ততার সাথে পালন করব। অর্থাৎ শপথের সাথে সাথে কার্যভার গ্রহণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে যায়। এখানে কেউ কেউ একাদশ সংসদ সদস্য থাকাকালে দ্বাদশ সংসদ সদস্যরূপে শপথ গ্রহণ করেছেন। এর কোনো সুযোগ নেই। একই ব্যক্তি একই সময় দুটি জাতীয় সংসদের সদস্য হতে পারে না বা থাকতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের ৬৫(১), ৬৫(২), ৭৩(৩), ১৪৮(৫) লঙ্ঘন হয়েছে।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ যেহেতু ভেঙে দেয়া হয়নি, তাই বিধি অনুসারে একাদশ জাতীয় সংসদের মেয়াদ ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ আছে। একাদশ সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় দ্বাদশ সংসদের শপথ হতে পারে না। বলা হচ্ছে, দ্বাদশ সংসদ এখনো কার্যকর হয়নি। কেবল শপথ গ্রহণ করেছে। কিন্তু দ্বাদশ সংসদ সদস্যদের দ্বারা সংসদ নেতা, উপনেতা নির্বাচন, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন, চিফ হুইপ নির্বাচন ও মন্ত্রিপরিষদ গঠন করা হয়েছে। এই নতুন মন্ত্রিসভায় এমন কিছু সদস্য মন্ত্রী হয়েছেন যারা একাদশ সংসদ সদস্যরূপে বহাল আছেন এবং কয়েকজন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীও নিযুক্ত করা হয়েছে। সুতরাং এ কথা বলার সুযোগ নেই যে, দ্বাদশ সংসদ ২৯ জানুয়ারির পর কার্যকর হবে। ১০ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ সদস্যদের শপথ, ১১ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ গঠন, একাদশ সংসদ সদস্যদের মন্ত্রী নিযুক্তি ও নতুন মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী নিযুক্তি প্রমাণ করে- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ এখনো পুরোপুরি কার্যকর। সংসদ সদস্যদের শপথনামায় স্বাক্ষরের মাধ্যমে তাদের নতুন পদের কার্যভার শুরু হয়ে গেছে। সুতরাং তাদের শপথ ও মন্ত্রিসভার গঠনসংক্রান্ত গেজেট কোনোভাবেই সংবিধানসম্মত নয়।
যেহেতু রাষ্ট্রপতি একাদশ সংসদ ভেঙে দেননি তাই ২৯ জানুয়ারির আগে অথবা সংসদ ভেঙে দেয়ার আগে পরবর্তী সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ সংবিধানের লঙ্ঘন। এই শপথের মাধ্যমে একই সময় একাদশ ও দ্বাদশ দু’টি জাতীয় সংসদ কার্যকর। যার ফলে দেশে এখন ৬৪৮ জন সংসদ সদস্য। যেটি সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদের চরম লঙ্ঘন।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ১০ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী। এই শপথবাক্য পাঠ করিয়ে স্পিকার ১৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে যে শপথ তিনি গ্রহণ করেছিলেন- ‘আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করব’ তা লঙ্ঘন করেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ বর্তমান থাকা অবস্থায় দ্বাদশ জাতীয় সংস্যদের মাধ্যমে গঠিত মন্ত্রিসভার শপথ পাঠ করিয়ে রাষ্ট্রপতিও তার সাংবিধানিক শপথ ভঙ্গ করেছেন। স্পিকার, রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিপরিষদও তাদের শপথের ‘আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করব’ বিধান ভঙ্গ করেছেন। দেশ একটি চরম সাংবিধানিক সঙ্কটে পড়েছে। বর্তমান সরকার কথায় কথায় সংবিধানের দোহাই দিলেও এখানে তারা চরম সমস্যার মুখোমুখি।
এ বিষয়ে বিএনপি কথা বলেছে। দেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মুখে এখনো কোনো কথা শোনা যায়নি। তাদের কথা বলা উচিত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা