২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বিশ্বজুড়ে বাড়ছে করোনা : চাই সচেতনতা

বিশ্বজুড়ে বাড়ছে করোনা : চাই সচেতনতা - নয়া দিগন্ত

করোনাভাইরাস সামাল দেয়ার পর এখন ভারতের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনার জেএন-১ ধরনের সংক্রমণ। ভারতের গোয়া, কেরালাসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে অন্তত ২১ জনের শরীরে এ ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এ অবস্থায় নতুন ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে সবাইকে আগে থেকেই সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরন নিয়ে শঙ্কিত, যা আগের সব ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় সবচেয়ে বেশি সংক্রামক হয়ে উঠতে পারে।

কোভিড-১৯-এর নতুন এই ধরন জেএন-১ সম্প্রতি ভারত ছাড়াও চীনসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হয়েছে। গত ১৫ ডিসেম্বর কোভিড-১৯-এর নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয় চীনে, যার নাম জেএন-১। এটি কোভিড-১৯-এর ভয়াবহ ধরন ওমিক্রনের নতুন উপধরন। ইতোমধ্যে সে দেশের অন্তত সাতজন রোগীর শরীরে ভাইরাসের নতুন এই ধরনটি শনাক্ত হয়েছে। এতে করে ফের ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে এই ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। চলতি ডিসেম্বরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে যে ক’জন কোভিড রোগী এই মুহূর্তে আছেন, তাদের ১৫-২৯ শতাংশের শরীরে রয়েছে জেএন-১ উপধরনটি।

তথ্য অনুযায়ী, এই ভাইরাস ধ্বংস ও অকার্যকর করতে পারে এমন ক্ষমতাসম্পন্ন টিকা ইতোমধ্যে দেয়া শুরু হয়েছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে রোগীদের মধ্যে যেসব উপসর্গ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলো- জ্বর, সর্দি, গলাব্যথা, মাথাব্যথা, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল (পাতলা পায়খানাসহ বমি) সমস্যা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বেশির ভাগ রোগী হালকা শ্বাসযন্ত্রের উপসর্গগুলো অনুভব করেন, যা সাধারণত চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে সেরে যায়। এর আগে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম সার্স-কোভি-২ বা করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।

ভারত, চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে অনেক দেশে করোনার নতুন ধরনটি পাওয়া গেছে। দ্রুত ছড়ানোর কারণে ডব্লিউএইচও এটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে অভিহিত করেছে। সংস্থার পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, শীতকালে কোভিড ও অন্য সংক্রমণগুলোর প্রকোপ বাড়তে পারে। উত্তর গোলার্ধে ইতোমধ্যে আরএসভির মতো বিভিন্ন শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস ও শিশুদের নিউমোনিয়ার হার বাড়তে দেখা গেছে।

ডব্লিউএইচও বলেছে, কোভিডের জন্য দায়ী ভাইরাসটি শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে রূপ পাল্টেছে। এর কয়েকটি ধরনও তৈরি হয়েছে। মধ্যে কিছুদিন বিশ্বজুড়ে ওমিক্রন ধরনের আধিপত্য দেখা গিয়েছিল। তবে সংস্থাটি বলেছে, বর্তমানে এ করোনার ধরনটির সংক্রমণজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি কম এবং বিদ্যমান টিকাগুলোই এ ধরন থেকে মানুষকে সুরক্ষা দেবে। যুক্তরাজ্যের হেলথ সার্ভিস বলেছে, বর্তমানে একটি পরীক্ষাগারে যতগুলো করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসছে, তার প্রায় ৭ শতাংশের জন্য জেএন-১ দায়ী।

শীতে প্রকোপ বাড়ার ঝুঁকি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঝুঁকিসংক্রান্ত এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বিশেষ করে যে সব দেশে শীত মৌসুম শুরু হচ্ছে, সেখানে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত অন্য সংক্রমণগুলোর পাশাপাশি এ ধরনের কারণে সার্স-কোভি-২ (করোনাভাইরাস)-এর প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে।

ডব্লিউএইচও বলছে, টিকার কারণে যে ইমিউনিটি তৈরি হয়, তা দিয়ে জেএন-১ থেকে কতটুকু সুরক্ষা মিলবে, সে ব্যাপারে খুব বেশি প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। তবে আগের ধরনগুলোর চেয়ে এ ধরনে সংক্রমণের কারণে মানুষ অপেক্ষাকৃত বেশি অসুস্থ হচ্ছে বলে খবর জানা যায়নি। এই ধরনটির প্রভাব নির্ণয়ের জন্য আরো বেশি গবেষণা প্রয়োজন।

সংক্রমণ ও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিছু পরামর্শ দিয়েছে। সেগুলো হলো- জনাকীর্ণ ও বদ্ধ জায়গায় মাস্ক পরতে হবে, কাশি বা হাঁচির সময় নাক ও মুখ ঢেকে রাখতে হবে, কোভিড ও টিকার নতুন নতুন তথ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে। যারা সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছেন তারা অসুস্থ হলে বাড়িতে থাকুন। লক্ষণ দেখা দিলে রোগ শনাক্তের পরীক্ষা করান।

উল্লেখ্য, তিন বছর ৯ মাস ১০ দিনে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ২০ লাখ ৪৬ হাজার ১৭০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। দেশে এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাবে করোনার সংক্রমণে মোট মারা গেছে ২৯ হাজার ৪৭৭ জন। আর সারা বিশ্বে করোনায় এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৬৯ লাখ ৫৭ হাজার ৬০১ জন। সুস্থ হয়েছেন ৬৬ কোটি ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ২৮৮ জন। ভাইরাসে মোট সংক্রমিত হয়েছেন ৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ৩৯ হাজার ৩৭৪ জন।
বেশ কিছুদিন ধরে করোনা সংক্রমণের হার নিম্নমুখী থাকলেও হঠাৎ করে তা বাড়তে শুরু করেছে। বর্তমান পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতা সবচেয়ে মহাসঙ্কটের নাম জেএন-১-এর সংক্রমণ।

আমাদের বাংলাদেশে যেহেতু পরিবেশ দূষিত, তাই সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজের সুরক্ষা নিজেকেই নিতে হবে। ধুলোবালি থেকে বাঁচতে মাস্ক পরতে হবে। হাত স্যানিটাইজ করতে হবে। একটি ভাইরাস দেহে থাকতে আরেকটি প্রবেশ করলে তখন ওই ব্যক্তির সঙ্কটাপন্ন অবস্থা তৈরি হয়। এ জন্য ঘরেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। জনবহুল এলাকা, ভিড় থেকে শিশুকে যতটা সম্ভব দূরে রাখুন। কোভিডকালের মতোই মুখে মাস্ক ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উপর আবারো জোর দেয়া উচিত। এই রোগ ছোঁয়াচে। সুতরাং, সাবধানতা অবলম্বন না করলে বিপদ বাড়বেই। শীতের এই মৌসুমে ঘোরাঘুরি, উৎসব, অনুষ্ঠান বেড়ে যায়। কিন্তু যেকোনো রকম জনসমাগম, উৎসব, অনুষ্ঠান, ভিড় এড়িয়ে চলুন। উৎসব অনুষ্ঠান করতে হলে সীমিত পরিসরে অল্পসংখ্যক মানুষকে নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করতে হবে।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাপদ্ধতিও এ ক্ষেত্রে সফল প্রমাণিত। ইতালি, স্পেন, কিউবা ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে হোমিও চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুততার সাথে বহু করোনা রোগী সম্পূর্ণ আরোগ্য হয়েছেন। হোমিও ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে রোগীর জীবন রক্ষা করার পাশাপাশি রোগীর পুনর্বাসনে সহায়তারও সুযোগ আছে।

লেখক : কলামিস্ট, চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
ইমেল : [email protected]


আরো সংবাদ



premium cement