চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রাসূল সা:-এর আদর্শ-১
- মো: নূরুন্নবী হাওলাদার
- ২২ ডিসেম্বর ২০২২, ২০:৩০
আধুনিক বিশ্ব ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সামনে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে যা অতিক্রম করে মুহাম্মদ সা: মানব জাতির মুক্তির জন্য যে আদর্শ উপস্থাপন করে গেছেন তা প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত কঠিন। বিশেষ করে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, ইহুদি, খ্রিষ্টান ও পৌত্তলিকরা একজোট হয়ে মুসলিম উম্মাহকে দ্বীন থেকে সরিয়ে তাদেরকে বস্তুবাদী সভ্যতা গেলানোর জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। মুসলিম উম্মাহকে তার সোনালি অতীত থেকে বিচ্ছিন্ন করে ইসলামের ইতিহাসের একটি বিকৃত ছবি তাদের সামনে পেশ করেছে। পশ্চিমারা তথ্যগত ছলচাতুরি ও বিচ্যুতি ঘটিয়ে নিজেদের আসল ইতিহাসের ওপর পর্দা ফেলে দেয় যাতে তারা তাদের মূর্খতা, জুলুম, বর্বরতা ও ধ্বংষযজ্ঞের কাহিনী গোপন করে নিজেদের দুনিয়ার সবচেয়ে সভ্য, বিজ্ঞানমনষ্ক ও উন্নত জাতি হিসেবে উপস্থাপন করে এবং মানব সভ্যতার ওপর নিজেদের সফলতার মিথ্যা ঢোল বাজায়। নতুন প্রজন্মকে পশ্চিমাদের ইতিহাস, বিশ্বাস, চিন্তাধারা, মতাদর্শ ও ভবিষ্যতের ব্যাপারে এমন সব অবাস্তব বুলি মুখস্ত করিয়ে দেয়া হয়; যাতে পশ্চিমা সংস্কৃতি ও দৃষ্টিভঙ্গিকে সমালোচনার ঊর্ধ্বে, অনুকরণীয় মনে করতে থাকে।
মুসলিমদের ঘরে আজ এমন প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে যারা দ্বীনের মৌলিক বিষয়গুলোর ব্যাপারেও অজ্ঞ রয়ে যাচ্ছে। তাদের সামনে রয়েছে ইসলামের বিকৃত চেহারা। তারা মনে করে ইসলাম অর্থ সন্ত্রাস, ইসলাম মানে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, আলকায়দা নেটওয়ার্ক ইত্যাদি। ইসলামের বিরুদ্ধে এ সবই হলো আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ। তাই উম্মাহর সামনে আধুনিক বিশ্বের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে যাতে মুহাম্মদ সা:-এর প্রকৃত আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ওই চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবেলা করা যায় এবং বিশ্ব মানবতা মুক্ত ও স্বাধীনভাবে আল্লাহর পৃথিবীতে আল্লাহর খেলাফতের স্বাদ গ্রহণ করতে পারে। পবিত্র কুরআন বলছে- ‘রাসূলের জীবনের মধ্যেই রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ’ (সূরা আহজাব-২১)। সুতরাং আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রাসূল সা:-এর আদর্শের কোনো বিকল্প নেই।
আধুনিক বিশ্ব
আধুনিক বিশ্ব বলতে বুঝি হজরত ঈসা আ:-এর নবুওয়াতের সময় শেষ হওয়ার পর আখেরি নবী মুহাম্মদ সা:-এর নবুওয়াতের সূচনা থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সময়কাল। যেমন বলা হয়, মুহাম্মদ সা: শেষ নবী, শেষ যুগের তথা আধুনিক বিশ্বের নবী। মুহাম্মদ সা: বলেন, আমার ও কিয়ামতের অবস্থান ঠিক যেমন এই আমার হাতের তর্জনী ও অনামিকার অবস্থান। এই আঙুল দু’টির মধ্যকার ব্যবধান অতি সীমিত। এটি একটি একক সময়কাল নির্দেশক। তাই আমরা এই পুরো সময়টিকে আধুনিক যুগ বা আধুনিক বিশ্ব বলতে পারি।
আধুনিক বিশ্ব মানব ইতিহাসের একটি সময়কাল বিংশ শতাব্দী থেকে শুরু করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর ও ডিজিটাল বিপ্লবের অবির্ভাবের সাথে শেষ হয়।
আধুনিক বিশ্বের আরো একটি প্রচলিত সময়সীমা আছে। ঘটনার ধারাবাহিকতার সাথে এর সম্পর্ক। ঘটনার ভিত্তিতে একে তিন ভাগে ভাগ করা হয়- প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক। এর আধুনিক অংশটি সাধারণত বর্তমানকেই নির্দেশ করে। আর বর্তমানের অংশটি নিকট অতীতসহ গঠিত। এ অংশটি ঘটমান বর্তমান থেকে পেছনে কয়েক শ’ বছর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করলে আধুনিক বিশ্ব বলতে বর্তমান বিশ্বকেই বোঝানো হয় যা বিগত কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত। যখন থেকে মুসলিম জাতি তাদের চাল-চলন, ধ্যান-ধারণা, আইন-কানুন ও মূল্যবোধ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আসল পরিচয় হারিয়ে ফেলেছে। মুসলমানদের দেখলে বিশ্বাসই হয় না যে, তাদের নিকট অতীতের পূর্বপুরুষরা ইসলামের একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। মানব জাতির নেতৃত্বের আসন থেকে মুসলিম উম্মাহ ছিটকে পড়েছে। এর ফলে আল্লাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ সার্বভৌমত্ব মানুষের কাছে স্থানান্তরিত হয়েছে ও কিছুসংখ্যক মানুষ সমাজের ওপর প্রভুত্ব বিস্তার করেছে। এই সময়কালকেই আমরা আধুনিক বিশ্ব হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। এই যুগ ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য যে সঙ্কট সৃষ্টি করে দিয়েছে আমাদের সামনে রয়েছে তারই চিত্র। মূলত এ সঙ্কট আমাদের জীবনকে ঘিরে, আমাদের মূল্যবোধকে ঘিরে। এ সঙ্কটগুলোই আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ।
আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ সাম্রাজ্যবাদ
প্রাথমিক পর্যায়ে সাম্রাজ্যবাদের অর্থ ছিল সামরিক কর্তৃত্ব। পরবর্তীকালে সাম্রাজ্যবাদের পরিভাষাগত কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। একটি দেশ নিজের স্বার্থে অন্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিনাশ বা সঙ্কুচিত করে সেই দেশ ও জাতির ওপর প্রভুত্ব বা কর্তৃত্ব স্থাপনের যে চেষ্টা করে তাকে বলে সাম্রাজ্যবাদ। ঠাণ্ডা যুদ্ধের (Cold War) অবসানের পর বিশ্বে আমেরিকা এখন অনেকটা একক নেতার ভূমিকায়। বিশ্ববাসীকে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে তার মধ্যে সাম্রাজ্যবাদই বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার প্রধান চ্যালেঞ্জ। পৃথিবীটা অসম কতগুলো জাতিরাষ্ট্রে বিভক্ত। কিছু রাষ্ট্র বড় ও নানাদিক থেকে শক্তিশালী। কিছু রাষ্ট্র ক্ষুদ্র ও দুর্বল। আন্তর্জাতিক রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিছু দিন আগেও শক্তির ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করত। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর অর্থ-সম্পদ, অস্ত্র, আয়তন ও লোকসংখ্যা ইত্যাদি বিবেচনায় প্রধান রাষ্ট্রগুলোর সাম্রাজ্যবাদী ভূমিকা আজো অব্যাহত রয়েছে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল পৃথিবীর স্থলভাগের ১৪.৮ শতাংশ। সোভিয়েত ভেঙে যাওয়ার পর আয়তনের দিক থেকে বড় রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে- কানাডা ৬.৬, চীন ৬.৪, যুক্তরাষ্ট্র ৬.২, ব্রাজিল ৫.৬, অস্ট্রেলিয়া ৫.২ ও ভারত ২.৫ শতাংশ। জনসংখ্যার দিক থেকে প্রধান দেশগুলো- চীন ২৩, ভারত ১৬, যুক্তরাষ্ট্র ৫ ও ইন্দোনেশিয়া ৩ শতাংশ। প্রধান উৎপাদনশীল দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একাই বিশ্বের GNP-এর ২২ শতাংশ অবদান রাখে। অন্যান্যের মধ্যে জাপান ১০, জার্মানি ৭ শতাংশ। এখানে লক্ষ্যণীয়, উল্লিখিত কয়েকটি রাষ্ট্রই বিশ্বের প্রায় ৫০ শতাংশ জমির মালিক, ৫০ শতাংশ জনসম্পদের মালিক এবং ৫০ শতাংশ উৎপাদন তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং বিশ্ব রাজনীতিতে এদের ভূমিকাই প্রধান। তাই জাতি রাষ্ট্রগুলোর সাম্রাজ্যবাদী ভূমিকা শান্তির পথে বড় চ্যালেঞ্জ।
মারণাস্ত্রের অসম প্রতিযোগিতা
যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন, ভারত ও পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তির অধিকারী। ইসরাইল, ইরান অঘোষিত পারমাণবিক শক্তি। জাপান, জার্মানি, ইতালিসহ আরো ২০টি দেশ এমন আছে যাদের পারমাণবিক প্রকল্প ও সম্ভাবনা রয়েছে। এ সবের মধ্যে মাত্র আটটি মুসলিম দেশ রয়েছে। বিশ্বে যে পরিমাণ পারমাণবিক বোমা মজুদ আছে তা দিয়ে অসংখ্যবার পৃথিবীকে ধ্বংস করে দেয়া যেতে পারে। বর্তমান পৃথিবীটা মোটামুটিভাবে পারমাণবিক অস্ত্রের একটি গুদাম। এই গুদামে বসবাস করে পৃথিবীর মানুষ কিভাবে নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারে? ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে দরিদ্র বা অপেক্ষাকৃত কম ধনী দেশগুলোই অস্ত্র খরিদ করে। অস্ত্র ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ আগে আমেরিকা, রাশিয়া- এ দুই পারমাণবিক পরাশক্তির হাতেই ছিল। ২০২১ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পুরো বিশ্বের অস্ত্র রফতানির ৩৯ শতাংশ আমেরিকা, ১৯ শতাংশ রাশিয়া, ১১ শতাংশ ফ্রান্স, ৪.৬ শতাংশ চীন, ৪.৫ শতাংশ জার্মানি, ৩.১ শতাংশ ইতালি এবং ২.৯ শতাংশ বিটেনের হাতে। আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরব ১১ শতাংশ, ভারত ১১ শতাংশ, মিসর ৫.৭ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়া ৫.৪ শতাংশ, চীন ৪.৮ শতাংশ ও কাতার ৪.৬ শতাংশ অস্ত্র আমদানি করেছে। মিত্রশক্তিকে সমৃদ্ধ করা, প্রভাব বিস্তার ও আর্থিক লাভের জন্যই অস্ত্রব্যবসায় করা হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে যারা অস্ত্র ক্রয় করে তারা বাধ্য হয়ে করলেও কারণ একই। বিশ্বে যে পরিমাণ অস্ত্র ও অস্ত্র কারখানা আছে, মানবতা বিপর্যয়ের এটি উদ্বেগের কারণ।
মানবাধিকার ও গণতন্ত্র অর্জন
বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র অর্জনকে আধুনিক বিশ্বের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে গণ্য করা হয়। জনগণ যাতে নির্ভুল নির্বাচনের যোগ্য হতে না পারে সে জন্য স্বৈরশাসকরা নানা ধরনের Mechanism করে দীর্ঘকাল ক্ষমতা দখল করে রাখে। তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও বাস্তবে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করে।
অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা
বিশ্ব রাজনীতিতে অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির পাশাপাশি গোয়েন্দাবৃত্তির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতিও মানবসভ্যতা যতটা পুরনো গোয়েন্দাবৃত্তিও ততটা পুরনো। আমেরিকা, ব্রিটেনসহ পাশ্চাত্য দেশগুলো গোয়োন্দাবৃত্তিতে বিপুল অর্থ ব্যয় করে থাকে। সিআইএ, কেজিবি’র, মোসাদ ইত্যাদি গোয়েন্দা সংস্থা বিশ্বময় গোয়েন্দাবৃত্তির মাধ্যমে অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার পতন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্টের মতো কাজেও ভূমিকা রাখে। মিসরের গণতান্ত্রিক সরকার ড. মুহাম্মদ মুরসিকে অপসারণ, ইরানের দক্ষ সেনা অফিসার কাশেম সোলেইমানি ও বিশিষ্ট পরমাণুবিজ্ঞানী ফখরে জাদেহ হত্যাকাণ্ড সিআইএ ও মোসাদের অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতারই অংশ।
হলুদ মিডিয়া
বিশ্বের বেশির ভাগ প্রচারমাধ্যম, সংবাদ সংস্থা, শক্তিশালী ইলেকট্রনিক মাধ্যম সব কিছুই বলতে গেলে ইহুদি, আমেরিকা বা আমেরিকাপন্থীদের হাতে। অন্য কথায় পাশ্চাত্যের হাতে। পারমাণবিক শক্তি, যুদ্ধাস্ত্র, প্রচারমাধ্যম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শক্তিকে পাশ্চাত্য আগামী দিনের বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্যবহার করছে। মিডিয়া সন্ত্রাস আধুনিক বিশ্বের একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
ইসলামোফোবিয়া
অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় চলমান শতাব্দীতে পশ্চিমা বিশ্ব অতিমাত্রায় ইসলাম আতঙ্কে ভুগছে। অত্যন্ত সুকৌশলে সে আতঙ্ক বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ইংরেজিতে যাকে ইসলামোফোবিয়া বলা হয়।
বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, মুসলিম অধ্যুষিত বহু দেশও ইসলামভীতির ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসে জড়িয়ে ফেলার মাধ্যমে পৃথিবীব্যাপী ইসলামোফোবিয়া উসকে দেয়া হচ্ছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আমেরিকা স্বপ্ন দেখছে, তথাকথিত উদার গণতন্ত্র, মানবাধিকার, অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্লোগান দিয়ে জাতিসঙ্ঘ, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের মাধ্যমে বিশ্বে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করবে। বিশ্বব্যাপী ইসলামের জাগরণ ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে তারা আখ্যায়িত করছে Islamic Conspiracy theory I Islamic Fundamentalism বলে। এতদিন ওয়াশিংটন বলত- Soviet Sponsored Terrorism আর এখন বলছে Islamic Fundamentalism এবং মার্কিনবিরোধী দেশগুলোকে তালিকাভুক্ত করছে সন্ত্রাসী দেশ হিসেবে। আমেরিকার সাথে শরিক হয়েছে মিসর, সৌদি আরব, ইসরাইল, ভারত ও মধ্য এশিয়ার পুরনো কমিউনিস্ট শাসকরা। ইউরোপের কেন্দ্রে ইসলামের বিস্তার প্রতিহত করার জন্যই এথনিক ক্লিন্সিং নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ৪২৫ জন ফিলিস্তিনি অ্যাক্টিভিস্টের বহিষ্কার জাস্টিফাই করতে বলেছেন, The jewish State Stands first today in the line of fire against extremist Islam.
বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর ডাবল স্টান্ডার্ড
কমিউনিউজম ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে মোকাবেলা করার জন্য আমেরিকা ক্ষেত্রবিশেষ মুসলিম দেশ বা ইসলামী কোনো সংস্থার সাথে নমনীয় ব্যবহার করলেও প্রকৃতপক্ষে তার ভূমিকা ইসলামের বিরুদ্ধেই ছিল। সোভিয়েতের পতনের পর আমেরিকার ইসলামবিরোধী ভূমিকা প্রকাশ হয়ে পড়েছে বেশি। অবশ্য সোভিয়েত পতনের আগেই মুসলিম বিশ্বের নেতাদেরকে সত্যিকার ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে ব্যবহারে কৌশল গ্রহণ করেছিল আমেরিকা। আমেরিকা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া সত্ত্বেও যেসব শাসক গণতন্ত্র বা মানবাধিকারে বিশ্বাস করে না তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা করেছে শুধু পাশ্চাত্যপন্থী হওয়ার কারণে। রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে প্রকৃত ইসলামপন্থীরা লাভবান হবে অথবা বিকল্প শক্তি হিসেবে সামনে চলে আসবে এ কারণে আমেরিকান প্রশাসন পৃথিবীর অনেক মুসলিম দেশের গণবিচ্ছিন্ন স্বৈরশাসককে মদদ দিয়েছে। সুদানের জাফর আল নিমেরিকে সমাজতান্ত্রিক বলয় থেকে বের হয়ে আসার ব্যাপারে প্রাথমিক উৎসাহ দিয়ে আমেরিকা যখন দেখতে পেলো, সুদানের ভবিষৎ ইসলামপন্থীদের হাতে চলে যাচ্ছে, তখনই ঘটানো হলো সামরিক অভ্যুত্থান। মিসরের গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট ড. মুহাম্মদ মুরসিকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পরাজিত করে আবুল ফাত্তাহ আল সিসিকে ক্ষমতা গ্রহণে মদদ জোগালো আমেরিকা।
সম্প্রতি পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার জন্য ইমরান খানের বিরুদ্ধে সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের পেছনে আমেরিকার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ রয়েছে। শেহবাজ শরিফকে ক্ষমতায় রাখার জন্য পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে পেছন থেকে ন্যক্কারজনকভাবে ব্যবহার করে যাচ্ছে বিশ্ব মোড়ল আমেরিকা। ইরান-ইরাক যুদ্ধ চলাকালে আমেরিকা ইরাককে সাহায্য করেছে। আমেরিকার ইচ্ছায় সৌদি আরবও ইরাককে সাহায্য করেছে কিন্তু ইরাক যখন একটি শক্তিশালী সেনাবহিনীর অধিকারী হয়ে ইসরাইলের জন্য এক চরম হুমকি সৃষ্টি করে তখন আমেরিকা ইরাকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, ইরাককে কুয়েত দখলের জন্য পরোক্ষভাবে প্রলোভন দিয়েছে এই আমেরিকাই। কুয়েত দখল ও সৌদি আরবের সীমান্তে হুমকির মাধ্যমে আমেরিকা পরিকল্পিতভাবে উপসাগরীয় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। মূল লক্ষ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান গ্রহণ, সে ক্ষেত্রে সামরিক উপস্থিতি ও ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ জন্যই জাতিসঙ্ঘের ছত্রছায়ায় বহুজাতিক বাহিনী নিয়ে আমেরিকা ইরাকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বসংস্থাকে নির্লজ্জভাবে পাশ্চাত্যের স্বার্থে ব্যবহার করল। আমেরিকা শিয়া-সুন্নি বিরোধ বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতেও প্রয়াস পেয়েছে। এভাবে পাশ্চাত্য সর্বদাই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নীতি বজায় রেখে চলছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা