৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

রাজনীতির মাঠে উত্তাপ, কী হতে পারে

ওবায়দুল কাদের ও মির্জা ফখরুল - ছবি : সংগৃহীত

২০১৩ সালের পর আবারো আন্দোলন সংগ্রামে জোর দিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। মাঝে মধ্যে ঝিমিয়ে কর্মসূচি পালিত হলেও এবার বেশ জোরেশোরেই মাঠে নেমেছে তারা। তৃণমূল পর্যায় থেকে দলটির চেয়ারপারসন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বিভিন্ন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন শেষে সম্প্রতি বিভাগীয় গণসমাবেশ আশাতীত সফলভাবে সম্পন্ন করেছে দলটি।

বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক প্রাণসঞ্চার হয়েছে। সড়কপথে পরিবহন ধর্মঘট থাকলেও সমাবেশের দুই-তিন দিন আগে থেকেই হেঁটে, সাইকেলে, রিকশাভ্যানে, নৌকায় এমনকি কোথাও বা কলার ভেলায় বিশাল নদী পাড়ি দিয়ে সভাস্থলে ভিড় জমাতে শুরু করে নেতাকর্মী ও জনগণ। সাথে শুকনো খাবার নিয়ে আসেন অনেকে। এসব ঘটনা রাজনৈতিক মাঠে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে।

বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বিগত কয়েক দিনের বক্তব্যে একটি বিষয় স্পষ্ট, তারা তাদের দাবি আদায়ে অটল। যেন তারা আঁটঘাঁট বেঁধেই এবার রাজপথে নেমেছে। মামলা-হামলা, গ্রেফতারে ভয় না পেয়ে মাঠের আন্দোলনেই তারা স্বাচ্ছন্দ্য পাচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাণ্ডা মেজাজের রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত হলেও তিনিও উত্তপ্ত বক্তব্য অব্যাহত রেখেছেন।
নেতাকর্মীদের সাহস সঞ্চার করতে কেন্দ্রীয় নেতারা বেশ জোর দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রথম দিকে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, দ্রব্যমূল্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলন শুরু হলেও বর্তমানে আন্দোলন ভিন্নপথে যাচ্ছে- যা সহজেই অনুমেয়। বর্তমান সময়ে আন্দোলনে বেশ ক’জন নেতাকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, যা আন্দোলনকে আরো গতিশীল করেছে। নেতাকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় সারা দেশ তৎক্ষণাৎ বিক্ষোভ মিছিলের মতো কর্মসূচি নিমিষেই বাস্তবায়িত হচ্ছে, যা বিগত দুই বছর আগেও সেভাবে সম্ভব ছিল না।

ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও রাজপথে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। সম্প্রতি যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আগমন ঘটিয়ে তাদের শক্তির প্রমাণ দিচ্ছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে জনসমাগম লক্ষ করা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো নেতারা বিভিন্ন সময়ে বক্তব্যে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে সাবধানতার কথাও বলছে। সব মিলিয়ে তারাও বিএনপির আন্দোলন রুখে দিতে প্রস্তুত, তা স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছে।

হঠাৎই বিএনপি ঘুরে দাঁড়ানোয় অনেকে বিস্মিত। মাঠপর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের নেতাদের মধ্যে কোন্দল থাকলেও বর্তমানে সব কিছু ছাপিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচিই যেন মুখ্য। নেতাকর্মীদের চোখেমুখে আত্মপ্রত্যয়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে। জনবান্ধব বিষয়গুলোর ওপর কর্মসূচির মাধ্যমে দলটি জনসমর্থন পাচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা নিয়ে কর্মসূচি থাকায় সাধারণ মানুষের যথেষ্ট সম্পৃক্ততা দেখা যাচ্ছে।

সম্প্রতি জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকির ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে হাস্যরসের সুরে কটাক্ষমূলক বক্তব্যে আওয়ামী লীগকে বেশ অস্বস্তি পোহাতে হয়েছে। ঠিক সেই মুহূর্তে বিএনপি নেতারা তাদের বক্তব্যে জাপানি রাষ্ট্রদূতের উদ্ধৃতি টেনে বিভিন্ন মুখরোচক কথা বলায় ঘটনাটি বেশ আলোচিত হয়েছে। যার বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরালও হয়েছিল।

সাম্প্রতিক সময়ে রিজার্ভের বিষয়টি জনমনে বেশ প্রভাব ফেলেছে। অতীতে এমন আলোচনা না হলেও প্রায়ই রিজার্ভ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের বক্তব্যে বলছেন, রিজার্ভের অর্থ ব্যবহারে সরকার অনেক সাশ্রয়ী ও বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছে, এর মাধ্যমে দেশের মুদ্রা সাশ্রয় করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে যে রিজার্ভ, তা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনন্য উচ্চতায় রয়েছে। অন্য দিকে বিএনপি নেতারা সমাবেশ ও গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে বলছেন, চুরি, অপব্যবহার ও লুটপাটের কারণে রিজার্ভের অর্থ কমে বর্তমানে দেশ ঝুঁঁকিতে রয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে সাধারণ জনগণের কপালে চিন্তার ভাঁজ। এ বিষয়গুলো বিএনপির কর্মসূচিগুলোতে বিশেষভাবে স্থান পাচ্ছে, যা প্রতিনিয়তই সরকারকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলছে।

আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে পরস্পরবিরোধী কথা শোনা যাচ্ছে। একদিকে বিএনপি নেতাদের হুঁশিয়ারি অন্য দিকে, আওয়ামী লীগের কঠোর বার্তা। বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতারা বিভিন্ন সময়ে বলছেন- আগামী ১০ ডিসেম্বরের পরে খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে। এতদিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবিতে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচি থাকলেও ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে বর্তমান সরকার পতনের একদফা দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা আসবে বলে মনে ধারণা করা যাচ্ছে। বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে স্পষ্টত ধরে নেয়া যায়, সে দিন বিএনপির পক্ষ থেকে চলমান আন্দোলনের একটি চূড়ান্ত রূপরেখা আসবে। তবে বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তব্যে বলছেন, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির আন্দোলনের পতন ঘণ্টা বাজবে। সব কিছু মিলিয়ে ধারণা করা যায়, ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হতে যাচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement