সাধারণ মানুষ শান্তি চায়
- সুরঞ্জন ঘোষ
- ০৭ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯:৫৫
লেখাটি শুরুর আগে অন্য প্রসঙ্গ দিয়ে শুরু করতে চাই। কয়েক দিন আগে আমার নির্বাচনী এলাকায় গিয়েছিলাম নিজের বাড়ির সীমানা নির্ধারণের জন্য; যা ত্রিশ বছর আগে ফয়সালা হয়ে গিয়েছিল। এই প্রতিবেশী কয়েক দিন পরপর শুধু নজর পড়ে আমার বাড়ির সীমানার দিকে। তারপরও আমার কিছু জায়গা ছাড়তে হয়েছে। এই সালিসির মধ্যে যে ভদ্রলোকটি সভাপতিত্ব করেন তার নাম লিখে খাটো করতে চাই না। তিনি সবসময় আত্মীয়তার পক্ষপাতিত্বের অবলম্বন করেন। তার অনেক উপকার আমি করেছি। এ প্রসঙ্গে আর লিখতে চাই না। ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়ন বাজারে আমার অত্যন্ত প্রিয় ভাজন মনু মিয়ার জায়গাটি এখনো ফেরত পাননি। আমি জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি; একজন সৎ নিষ্ঠাবান ধার্মিক মনু মিয়ার জায়গাটা যাতে সঠিকভাবে ফেরত পান।
এখন মূল আলোচনায় আসি বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বিভাগীয় সমাবেশ করছে আর সরকারি দল পরিবহন ধর্মঘটের ডাক পালন করেছে যাতে করে সমাবেশের লোক কম হয়। এখন সরকারি দল বিভিন্ন জেলায় জনসভা করছে এখন তো পরিবহন ধর্মঘট নেই। এটাই কি গণতন্ত্রের নমুনা? সরকারকে বুঝতে হবে, দেশের মানুষ দাঙ্গা হাঙ্গামা চায় না, শান্তি চায়। ভোটারবিহীন নির্বাচনের সরকার দেশ চালাক মানুষ তা চায় না। ডিসেম্বর মাস আমাদের স্বাধীনতার মাস। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের তরুণরাই নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেন। হাজার বছরের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম অধ্যায় বিজয় দিবস রচনা করেন। ১৯৭১ ছাড়াও ১৯৯০ সালে এ মাসে পথভোলা গণতন্ত্রকে আবার যথাস্থানে স্থাপন করার সাফল্য। ১৯৯১ থেকে নতুনভাবে গণতন্ত্রের জয়যাত্রা শুরু হয়।
আমাদের দুর্ভাগ্য, এ জাতির দুর্ভাগ্য এত সব অর্জনের পরও কেন যেন ব্যর্থতার অন্ধকার থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারছি না। স্বাধীনতার পাঁচ দশকের মধ্যেও শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর করার কৌশলটা এখনো শিখতে পারলাম না। দুই হাজার তেরো সালের শেষ মুহূর্তে এ সময়টার দিকে যদি আমরা দৃষ্টি দিই, সব দিক থেকে একটা রায় এ মুহূর্তের এবং তা হলো, হিংসা-বিদ্বেষ পরিত্যাগ করে মনকে উদারতায় সমৃদ্ধ রেখে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশের দুই বৃহৎ জোটের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে অথবা ভুল করলে সামনের দিনগুলো আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক হয়ে উঠতে পারে। যে বাংলাদেশ প্রথমে কোনো বিদেশী পর্যালোচকের চোখে একেবারেই ছিল সম্ভাবনাহীন, হেনরি কিসিঞ্জারের কথায়, তলাবিহীন ভিক্ষাপাত্রের মতো, বাংলাদেশের তরুণরা এ বাংলাদেশকে অমিত সম্ভাবনার বাংলাদেশে রূপান্তরিত করেছেন। আগামী চার দশকের মধ্যে তরুণদের পথে যে প্রতিবন্ধকতা আমাদের রাজনীতিকরা স্থাপন করেছেন, তা সরিয়ে ফেললে ইউরোপের যেকোনো দেশ থেকে উন্নততর অবস্থায় পৌঁছবে। এতে করে এ জন্য রাজনীতিকদের কোনো কিছু করতে হবে না। শুধু পথের কাঁটাগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। বাইরের কোনো শক্তির কোনোরূপ সহায়তা না নিয়ে শুধু বিবেকের তাড়নায় যে গণতন্ত্রের দোহাই দুই জোটই দিয়ে যাচ্ছে, সেই গণতন্ত্রের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পারস্পরিক সমঝোতায় একবার যদি উপনীত হন, তাহলেই হবে।
যারা সংবিধানের দোহাই দিয়ে আজকের বিভিন্ন পর্যায়ের সহিংসতার পরিবেশ এবং ভোটারবিহীন নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছেন, যেভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা, অবিশ্বাস ও অনাস্থা সৃষ্টি করেছেন তা দূর করাও প্রয়োজন এবং আমাদের রাজনীতিকরা ইচ্ছা করলে অতি সহজে তা করতে সক্ষম। অতীতেও তারা এ ক্ষেত্রে এ ধরনের মহতী উদ্যোগ সফলভাবে গ্রহণ করেছেন। ব্যক্তি থেকে দল বড় ও দল থেকে আরো বড় যে দেশ, এ কথা তো তারাই বারবার উচ্চারণ করেছেন। এ কথাটা আবার নিজেরা স্মরণ করুন এবং অমিত সম্ভাবনার বাংলাদেশে অগ্রগতির শত বাতায়ন উন্মুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করুন। সঙ্গে সঙ্গে এটাও বিশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করা দরকার যে, রাষ্ট্রক্ষমতা জনকল্যাণের জন্যই শুধু ব্যবহৃত হতে পারে, জনগণের নির্যাতনের জন্য নয়। এই রাষ্ট্রক্ষমতাকে কোনো ক্রমে প্রভাব এবং বৈভব অর্জনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেয়া সঠিক নয়।
জনপ্রতিনিধি হিসেবে আপনারা কাচের ঘরে বসবাস করেন, যা করেন বা করছেন তা ১৭ কোটি জনগণের দৃষ্টিতে আছে। অন্তত এ মুহূর্তের যেটা আশু কর্তব্য তা পালন করুন। এ বক্তব্য কিন্তু বাংলাদেশের আকাশে-বাতাসে অনুরণিত হচ্ছে এবং কান পাতলেই শুনতে পাবেন। নিজেরা এক সঙ্গে বসে নিজেদের সমস্যা মিটমাট করে সমঝোতার আবহ তৈরি করতে সক্ষম হবেন না, এটা কেউ বিশ্বাস করেন না। লগি-বৈঠা অথবা দা-কুড়ালের দ্বারা কোনো মহৎ কর্ম কোনো দিন এ সমাজে সম্পন্ন হয়নি। সম্পন্ন হয়েছে ত্যাগের মাহাত্ম্যে, ধৈর্যের সোনালি প্রভা এবং সহিষ্ণুতার আলোকে। আজ দেশময় যে শঙ্কা-আতঙ্ক, এটি একবার অনুভব করলে বোঝা যায়, জনসাধারণের পক্ষে যখন কথা বলবেন তখন কী কাজ আপনাদের করা উচিত। বিরোধী দলেরও দেখা উচিত জনসাধারণের কষ্ট বাড়িয়ে নিজেদের পথটাকে সহজ-সরল করা যায় না। উভয়পক্ষের যতটুকু ছাড় দেয়া প্রয়োজন, ছাড় দিয়ে জাতীয় স্বার্থে ও জনস্বার্থে এক কাতারে দাঁড়ান। বাংলাদেশের স্বার্থ আমাদের সবার স্বার্থের সাথে সম্মিলিত হোক।
যদি আগামী নির্বাচন ১৮ সালের মতো হয় তা হলে বিশ্বময় বাংলাদেশের পরিচিতি ভিন্ন রকম হবে।
গণতন্ত্রের ক্যাটাগরিতে তখন আর বাংলাদেশ থাকবে না। তখন নিজেদের মুখে গণতন্ত্র উচ্চারণটাও শোভা পাবে না। বিজয়ের মাসের এ সঙ্কটময় মুহূর্তে তাই আবেদন, দুই জোটের নেতানেত্রীর কাছে আহ্বান, বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের স্বার্থে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের স্বার্থে অন্য কারো ইশারা-ইঙ্গিতে নয় বরং নিজেদের বিবেকের তাড়নায় সমঝোতায় পৌঁছান। নতুন সৃজনশীল কর্মপন্থা উদ্ভাবন করে দেশের জনসাধারণের কাছে আহ্বান জানান, আসুন সবাই মিলে শত সম্ভাবনার বাংলাদেশটাকে আমরা আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশে রূপান্তরিত করি।
যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন ১৮৬৫ সালের ১১ এপ্রিলে জনসাধারণের জন্য তার শেষ বক্তৃতায় বলেন, ‘যদি একবার জনসাধারণের আস্থা হারিয়ে ফেলেন, তাহলে তাদের শ্রদ্ধা এবং আস্থা আর কখনো ফিরে পাবেন না। এটি সত্য যে, আপনি কিছু দিনের জন্য সবাইকে বোকা বানাতে পারেন। আপনি কিছু লোককে সব সময়ের জন্য ধোঁকা দিয়ে বোকা বানাতে পারেন, কিন্তু আপনি কখনো সবাইকে সব সময়ের জন্য বোকা বানাতে পারবেন না। আব্রাহাম লিঙ্কনের এ বক্তব্য উদ্ধৃত করছি গত ১৮ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব কতটুকু তা পর্যালোচনার জন্য।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী (অনুচ্ছেদ ৬৪ (২) একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাগুলো হইতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচিত তিনশত সদস্য লইয়া এবং এই অনুচ্ছেদের (৩) দফার কার্যকরকালে উক্ত দফায় বর্ণিত সদস্যদিগকে লইয়া সংসদ গঠিত হইবে। অন্য কথায়, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত ৩০০ জন সংসদ সদস্যই পরোক্ষভাবে নির্বাচন করবেন সংরক্ষিত আসনে ৫০ জন মহিলা সদস্যকে। ফলে সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদ আসলেই হলো ‘একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের’ মাধ্যমে নির্বাচিত ৩০০ সদস্য। এই ৩০০ জন সদস্যের ১৫৩ জন (শতকরা ৫২ ভাগ) ‘ভোটারবিহীন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে’ প্রার্থীবিহীনভাবে বাছাই করা হয়। এ ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের কোনো নর্ম মানা হয়নি। সংবিধানের বিধান প্রয়োগ করা হয়নি। দেশের সর্বমোট ৯ কোটি ১৯ লাখ ভোটারের মধ্যে চার কোটি ৮৩ লাখ ভোটারের অধিকার হরণ করা হয়। বাংলাদেশের সংবিধানকে অমান্য করা হয়েছে। প্রত্যক্ষ ভোটে তারা নির্বাচিত নন। সমগ্র প্রক্রিয়াটি আইনসিদ্ধ নয়, ফলে অগ্রহণযোগ্য। এ জাতির দুর্ভাগ্য, সমগ্র প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট ছিল সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে উচ্চকণ্ঠ ক্ষমতাসীন সরকার এবং ‘স্বাধীন’ ও ‘সার্বভৌম’ নির্বাচন। অন্তত এ ক্ষেত্রে দুই জোটের মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টি হোক। সমগ্র জাতি আপনাদের অভিনন্দন জানাবে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে অনুভব করি, বিগত তিন দশকের মধ্যে আমাদের রাজনীতিকদের কোনো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয়ে একমত হতে দেখিনি। অন্তত আগামী জাতীয় সংসদ সংগঠনের লক্ষ্যে সাধারণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে জাতি সগর্বে দেখুক, দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরিণত হয়েছে। জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে একমত হতে পেরেছে। আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলে বা জোর করে সম্পন্ন করলে জনগণের যে ম্যান্ডেট ক্ষমতাসীনদের পরম পরাক্রমশালী ও আনুগত্যে সমৃদ্ধ করে অগ্রসরমান এবং উদ্যোগী করে তোলে তা অনুপস্থিত থাকবে। তা না হলে বৈধতার প্রশ্নে বারবার হোঁচট খেতে হবে। অন্যথায় অমিত সম্ভাবনার এই বাংলাদেশ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর উঠতি অর্থনীতির গতি রুদ্ধ হবে। শিক্ষাক্ষেত্রটি ঊষর মরুভূমিতুল্য হয়ে পড়বে। সামাজিক শৃঙ্খলা ভয়ঙ্করভাবে ব্যাহত হবে। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিদেশে কালিমালিপ্ত হবে। দেশের অভ্যন্তরে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের গতি হবে স্তিমিত। কেননা জাতীয় পর্যায়ে সরকারের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো রাষ্ট্র স্বীকৃতি নাও দিতে পারে এই অবস্থা, জাতির জন্য কোনো কিছু কাম্য হতে পারে না। এরই মধ্যে বলা শুরু হয়েছে, আগামী নির্বাচনে যাতে সব দল অংশগ্রহণ করতে পারে, অগ্রসরমান বাংলাদেশ এই অনাকাক্সিক্ষত ব্যবস্থার ভার বইতে পারবে না কিছুসংখ্যক রাজনীতিকের ক্ষমতার প্রতি সীমাহীন লোভ ও ক্ষুধা দেশের অগ্রগতিকে স্তব্ধ করুক, তা হতে পারে না।
দেশের রাজনীতি আর কতদিন অসুস্থ থাকবে? আর কতদিন দেশের সরকার অসুস্থ থাকবে? ‘গীতা সরকারের প্রশ্নের উত্তর’ একদিন রাজনীতিকদেরই দিতে হবে। রাজনীতিকদের প্রতি আমি ব্যক্তিগতভাবে আস্থাশীল। দেশের জনগণও রাজনীতিকদের প্রতি আস্থা হারায়নি। এখন পর্যন্ত আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের গণতন্ত্রের প্রতি কমিটমেন্ট যদি তেমন হতো, তাহলে বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারত তীর্থক্ষেত্র। তাই বলব, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অব্যাহত গতির স্বার্থে, বিশেষ করে জনস্বার্থ ও জাতীয় স্বার্থে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য বিরোধী দলের সাথে আন্তরিকভাবে আলোচনায় বসুন। ‘তত্ত্বাবধায়ক’ বা ‘অন্তর্বর্তীকালীন’ শব্দগুলোর প্রতি কোনো অ্যালার্জি থাকলে, তা বাদ দিয়ে নিরপেক্ষ এবং নির্দলীয় নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করুন ২৪ সালের নির্বাচনে দুই জোট থেকে পাঁচজন করে সদস্য নিয়ে। ওই ১০ জন তাদের একজন সভাপতি নির্বাচন করবেন। এ পর্ষদই আগামী সংসদের নির্বাচন পরিচালনা করবে। নির্বাচনও তখন হবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় কোনো ষড়যন্ত্র কার্যকর হবে না। কাজে আসবে না হিংসা-প্রতিহিংসাপ্রসূত কোনো উদ্যোগ। সাধারণ মানুষ তা চায় না। তারা শান্তি চায়; শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতার হস্তান্তর চায়।
লেখক : ৯০-এর সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের
কেন্দ্রীয় সাবেক ছাত্র নেতা
সভাপতি, সাংবিধানিক অধিকার ফোরাম
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা