এইডস : নিয়ন্ত্রিত মহামারী
- খন রঞ্জন রায়
- ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯:৫৮
এইডস শব্দটি শুনলে মানবমনে বিষাদের ছোবল পড়ে। নিজেকে দীন-হীন-দুর্বল অশক্ত মনে হয়। মনের জোর নেমে যেতে থাকে তলানিতে। এইচআইভি একটি সুযোগসন্ধানী সংক্রামক ব্যাধি সৃষ্টিকারী ভাইরাস। তবে সর্দি-কাশি ঘটানোর ভাইরাস নয়। পেশিমানবও নয়। স্বাধীন ভাইরাস। মানবদেহের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় ভয়ঙ্কর আক্রমণকারী, প্রতিরক্ষা অভাবসৃষ্টিকারী। নিজে কোনো নির্দিষ্ট রোগ না হয়েও রোগলক্ষণসমষ্টি হিসেবে আবির্ভূত।
এইচআইভি, পূর্ণরূপে, হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস। এ ভাইরাস শরীরে ঢুকলে এইডস অনিবার্য-অবধারিত। এআইডিএস; পূর্ণরূপ : অ্যাকিউরেড ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম। মানব শরীর থেকে এই ভাইরাস পুরোপুরি দূর করা যায় না। ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা: এই ট্র্যাজেডি থেকে পরিত্রাণ পেতে অণুজীব বিজ্ঞানীরা সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সমস্যাসঙ্কুল দুঃসময় কণ্টকিত পীড়নের কাল শেষ হচ্ছে না।
এইচআইভি ভাইরাস মানবশরীরে এইডসের চেতনালোক তৈরি করতে গড়ে দশ বছর সময় নেয়। চিকিৎসার ‘অগ্রগতি’ বলতে দশ বছর সময়কে আরো কয় বছর পিছিয়ে দিতে সক্ষম হওয়া। এতটুকুতেই ‘জিন্দাবাদ’ বলা ছাড়া এই ভাইরাস আক্রান্তদের ভাগ্যের আর কোনো পরিবর্তন হয়নি। দাপুটে এ ভাইরাসগুলো অ-মানব প্রজাতির প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে স্থানান্তর হয় বলে বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন। বানরজাতীয় প্রাণীর প্রতিরক্ষা অভাবসৃষ্টিকারী ভাইরাস থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়েছে বলে মনে করা হয়। দক্ষিণ ক্যামেরুনের একটি বন্য শিম্পাঞ্জিকে সংক্রমিত করে পরে উপকূলীয় পশ্চিম আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে কঙ্গোতে মানুষের মধ্যে এইচআইভির সংক্রমণের সর্বপ্রথম ঘটনা আবিষ্কৃত হয়। অবশ্য কঙ্গোতে ১৯২০ সালে এইচআইভির কাছাকাছি এম স্ট্রেইন নামক আরেকটি ভাইরাস দ্বারা মহামারী দেখা দিয়েছিল। সেই ভাইরাসই গাঝাড়া দিয়ে দ্রুত দাঁড়িয়ে যায় এইডস আক্রান্তের এইচআইভি নামে। গভীর ক্ষত বুকে নিয়ে গলার কাঁটা হয়ে বিঁধতে থাকে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে।
মৃত্যু অবধারিত- মরণব্যাধি এই এইডস রোগে কৌণিক আলো ফেলে দুই ধরনের এইচআইভি। এইচআইভি-১ এবং এইচআইভি-২ পরস্পরের সহোদরা হলেও, ১ বেশি তীব্র ও সহজে সংক্রমিত করার ক্ষমতা রাখে। ১ ও ২ এর মধ্যে কানামাছি খেলাকে বিজ্ঞানীরা গভীর মনোযোগে পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। গিনি, গ্যাবন, কঙ্গো, ক্যামেরুন এলাকায় তীব্র সংক্রমণের অশুভ শক্তি এইচআইভি-১। সেনেগাল, সিয়েরালিওন, লাইবেরিয়া, আইভরি কোস্টে প্রাপ্ত এইচআইভি-২ ভাইরাস অপেক্ষাকৃত দুর্বল চরিত্র নিয়ে এইডসের সাথে গভীর সম্পর্ক তৈরি করে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দ্য সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুকের তথ্যানুসারে, সোয়াজিল্যান্ড, বোটসওয়ানা, লেসোথো, দক্ষিণ আফ্রিকায় এইডস আক্রান্তের সুস্পষ্ট সীমারেখা অতিক্রম করেছে। সোয়াজিল্যান্ডে মোট জনসংখ্যার ২৭.৭৩ শতাংশ, বোটসওয়ানো ২৫.১৬ শতাংশ ও লেসোথো ২৩.৩৯ শতাংশ মানুষ এইডসের অঙ্গারে পুড়ছে।
মলিকুলার পদ্ধতিতে তারিখ নির্ণয়ে জানা গেছে ১৯০৫ থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যে বন্যপশু বা নরবানরের মাধ্যমে মানুষের মাঝে এইডসের চোখ রাঙ্গানো শুরু হয়েছিল। প্রাকৃতিক বদল তত্ত্ব বা বন্যমাংস তত্ত্ব বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এইডস আক্রান্তের বহুবিধ কারণের মধ্যে সুচিবায়ুগ্রস্ত ইউরোপীয়রাও প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয়রা নিজেদের মখমলের মতো মসৃণ উষ্ণ পরশ পেতে সাহারা সংলগ্ন আফ্রিকার অধিবাসীদের জোর করে বনের দিকে ঠেলে দেয়। কুঁড়েঘরের আলাদা চাটাইয়ে বসবাসকারী গ্রাম্য আফ্রিকানরা কৃষিকাজ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে শুরু করে। বন-জঙ্গল থেকে বন্যপশুর মাংসের প্রতি আকৃষ্ট হয়। নিজেদের খাদ্যচাহিদা পূরণে কৃষিনির্ভরতার সমীকরণের সমস্তব্যাপ্তি তছনছ করে দেয়। বন্যপশুর মাংসের দিকে জীবনের সোনালি পথ নির্ধারণ করে। মুক্ত এই পরিবেশে মাংসাশী হওয়াতেই স্বচ্ছন্দবোধ করতে শুরু করে। হরেদরে বাড়তে থাকে বন্যপশু মাংসের চাহিদা। মানুষের রক্ত আর পশুর রক্ত একাকার হয়।
যথেচ্ছাচারী হওয়ার সুযোগে পশুশিকারের সময় পশু কর্তৃক কামড়, আঘাত, ব্যক্তির রক্ত বা শারীরিক তরলের সাথে সেই পশুর সংস্পর্শে আসার ফল এইচআইভি সংক্রমণ বলে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন। অনাদিকাল থেকে মানুষ সংক্রমণের চড়াই-উতরাই মাড়িয়ে জীবন চলমান রেখেছে। কিন্তু এই ভাইরাসটির বাঁকবদল বা মিউটেশন হওয়ার লুকোচুরি খেলার মোহন প্রভাবেই এইডস এর নামটি ঝিলমিলিয়ে ওঠে। একে শনাক্তের নানাধাপ অতিক্রম করতে হয়।
১৯৮৩ সালের মে মাসে ফ্রান্সের পাস্তুর ইনস্টিটিউট নতুন ধরনের ভাইরাসটি শনাক্ত করে। নাম দেয় রেট্রোভাইরাস। ১৯৮৪ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদল নতুন এই ভাইরাস নিশ্চিত হয়ে নাম দেয় হিউম্যান লিম্ফোট্রপিক ভাইরাস-টাইপ-৩। ১৯৮৪ সালের আগস্ট মাসে স্যানফ্রান্সিসকোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনভাবে এই ভাইরাসের নাম এইডস অ্যাসোসিয়েটেড রেট্রোভাইরাস বা এআরডি নামে বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশ করে। জানুয়ারি ১৯৮৫ সালে উভয় গবেষণায়প্রাপ্ত সমার্থক বাক্যবন্ধ করে সর্বসম্মত হন যে, এই ভাইরাসটিই এইডসের কারণ। ১৯৮৬ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক ভাইরাস শ্রেণিবিদ্যা কমিটি দুইয়ের সঙ্ঘাত এড়িয়ে নতুনভাবে নামকরণ করেছে এইচআইভি।
সেই থেকে এই নামের রক্তস্রোতে ভাসতে ভাসতে পুরো পৃথিবীকে আতঙ্কিত করে রেখেছে। এইচআইভি আবিষ্কারকের নামের বিপুল বিতর্ক নিয়ে ২০০৮ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার পান ফ্রান্সিকো ব্যারে সিনৌসি ও মল্টাগনিয়ের। একান্তই বিরল ভয়ঙ্কর জাতের এই ভাইরাস আবিষ্কার করতে পারলেও মুক্তির উপায় এখনো ঘূর্ণায়মান ঘোর বিপদের মধ্যেই। পাঁজরভাঙ্গা ব্যথা নিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি একেবারেই অভিনব নির্মম সামাজিক অবস্থায় পড়তে হয়।
এইডস সম্পর্কে সচেতনতার অভাবে এবং অযৌক্তিক ঘৃণার কারণে দুঃখজনক আর অমানবিক অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে জীবন কাটাতে হয়। ‘ভয় হতে তব অভয়মাঝে নূতন প্রাণ’ মোড় নেয় বহুরেখ দিশাহীন দুঃসহ কষ্টের জীবনের দিকে। বাস্তবে এইচআইভি ছোঁয়াচে নয়। নানা রকম রোগজীবাণু বহনকারী কারো সংস্পর্শে এলে আগতের শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। এইডস কিন্তু মোটেও তা নয় কারো সর্দি-হাঁচি-কাশি কিংবা স্পর্শের মাধ্যমে অন্য কোনো শরীরে স্থানান্তরিত হতে পারে না। এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি বা এই ভাইরাস বহনকারী কোনো ভান-ভণিতার প্রয়োজন নেই। অন্য সাধারণ ব্যক্তির মতোই স্বাভাবিক অনন্যতার দাবি নিয়ে চলাফেরা করতে পারে। হাতে হাত মিলানো, কোলাকুলি-গলাগলি, চোখের জল, থুথু, নাকা ঝাড়া, ঘাম, স্পর্শ বা চুমু কিংবা ইন্দ্রিয় উত্তেজনা উদ্দীপনায় এইডস ছড়ায় না। এইচআইভি বহনকারীর রান্না করা খাবার খেলে, একই থালা-বাসন, কাপ-পিরিচ, তৈজসপত্র ব্যবহার করলে পরস্পরকে স্নিগ্ধ করে; তবে ছড়ায় না। একই গোছলখানা, পায়খানা, তোয়ালে, লুঙ্গি, গামছা, চেয়ার টেবিলে বসা, ফোন-টেলিফোন-মোবাইল-আইপড, হৃদয়স্রোতের খাতবদল হয় মাত্র; কিন্তু আক্রান্ত হয় না। পোকামাকড়, মশা-মাছি, পশু-পাখির কামড় কিংবা দুঃসহ যাপন ও কালাতিপাতের অভিজ্ঞতায় এইডস এখানে নিরুত্তাপ-তাপহীন।
একই ঘরে থেকে একই বিছানা ব্যবহার করলেও পরিবেশ প্রকৃতি বায়ুমণ্ডলে বেশিক্ষণ বাঁচতে না পারা এই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের অধিকাংশ ক্ষরিত তরলেই এইচআইভি থাকে। কিন্তু মহাতঙ্কের এই ভাইরাসটির আয়ুষ্কাল অতি সংক্ষিপ্ত হওয়ায় সংক্রমণের তেমন আশঙ্কা নেই। কাটাছেঁড়া, ক্ষত বা ঘাহীন ঠোঁটে অত্যন্ত দরদি ভঙ্গিতে চুমু, চুম্বন বা ফ্রেঞ্চ কিস হলেও আশঙ্কা নেই। ভয়ে আতঙ্কে থাকার প্রয়োজন নেই। আনন্দ-উদ্বেলে নির্মল জীবন-যাপন করা সম্ভব। তবে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সান্নিধ্যে কিছু ঘটনার ঘনঘটা ঘটলে নিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত যদি কারো শরীরে প্রবেশ করে কিংবা রক্ত-রক্তের সংশ্রব ঘটায়, মিলেমিশে একাকার হয়; সুচ সিরিঞ্জ, বেøড, কাঁচি, মেডিক্যাল-ডেন্টাল যন্ত্রপাতি, ধারালো কোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহারে নিষ্ঠা দেখাতে হয়। একবার ব্যবহার পদ্ধতি হচ্ছে; না পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ব্যবহৃত হচ্ছে তা নিবিড় পর্যবেক্ষণের বিষয়। পুনঃ ব্যবহার পরিহার করা, একান্তই ব্যবহার প্রয়োজন হলে ব্যবহারের আগে জীবাণুমুক্ত করায় নিশ্চিত হওয়া উচিত।
এখানে একটি কথা ‘কবুল’ করা ভালো। বেয়াড়া অশ্লীল কামাচার এই ভাইরাস ছড়াতে সাহায্য করে। তবে বহনকারী ব্যক্তি হতে হবে। বহনকারী ব্যক্তির সাথে প্রাণের উত্তাপ নিয়ে অরক্ষিত যৌন সম্ভোগ, অবশ্য-অবধারিত আক্রান্তের ধুন্ধুমার আয়োজন হয়। মূলত এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্তের বেশ দৃঢ় ও পাকাপোক্ত অকথিত ইতিহাস এখানে। এই যৌন সঙ্গমের পূর্বে ধর্মীয় অনুশাসনহীন নানা রকম ও ধরনের মৈথুন ভাইরাসটিকে উস্কে দেয়। ‘কান টানলে যেমন মাথা আসে’ তেমনি বিশ্বস্ত স্বামী-স্ত্রীর বাইরে সম্ভোগকারী হওয়ার নানা কায়দাকানুনই এইচআইভি সংক্রমণের মূল মাধ্যম। সামাজিক অনুশাসন মেনে শারীরিক অশুভ বোধকে উৎসাহিত না করে নিবৃত্ত করতে পারলে অব্যয়-অক্ষয় উন্নত স্বর্গাদপি জীবন ভোগ করা যায়। বিবাহপূর্ব যৌন সম্পর্ক ও একাধিক যৌনসঙ্গ পরিহার করতে পারলে মরণ এই রোগের কোনো দুর্ভাগ্য কারো জন্য প্রতীক্ষা করে না।
বাংলাদেশের জনসংখ্যার বিচারে এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি না হলেও দিন দিন বাড়ছে। জাতিসঙ্ঘের এইচআইভি এইডসবিষয়ক সংস্থা ইউনিএইডসের তথ্য মতে, বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়িয়েছে; মোট জনসংখ্যার ০.১ শতাংশের কম। আক্রান্তরা সামাজিকভাবে লাঞ্ছিত-নিপীড়িত হওয়ায় চিকিৎসার আওতায় এসেছে ৮ হাজার রোগী। এর মধ্যে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১ হাজার ৬০০ জন মানুষের প্রাণ গেছে এইডসের দহনক্রিয়ায়।
সমাজব্যবস্থার তলে চাপা পড়ে অনেকে চিকিৎসা নিতে অনীহা প্রকাশ করেন। তবে এর দাসত্বশৃঙ্খল ছিন্ন করার অরিবত চেষ্টা চলছে। এখানে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জাতিসঙ্ঘের নিবিড় পর্যবেক্ষণে ব্যয়বহুল এই চিকিৎসাপদ্ধতি ও ব্যবস্থায় আক্রান্তদের অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সরকার এ কঠিন চেষ্টায় অবতীর্ণ হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ৯৫ শতাংশ আক্রান্তকে চিকিৎসার আওতায় আনার এক মহাপরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছে।
সারা দেশে এইডস শনাক্ত করতে ২৭টি কেন্দ্র এবং চিকিৎসাসেবা দেয়ার ১১টি প্রতিষ্ঠানকে সাহস জুগিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য নিতান্ত এক আন্তরিক তাগিদে কাজ করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশে এইডস আক্রান্তদের দীর্ঘ পরিক্রমায় দেখা যায় নারী-পুরুষ যৌনকর্মী, সমকামী, যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তি, প্রবাসী শ্রমিক, রোহিঙ্গা আর হাসপাতালে প্রসবসেবা নিতে আসা মায়েরাই সংখ্যায় বেশি-৭৭ শতাংশ। স্নায়ুক্ষরা সংযম জয় করে সাধারণ মানুষ মাত্র ২৩ শতাংশ। দেখা গেছে, অপ্রতিরোধী যৌনতা এ রোগের দিকে বারবার উঁকি দেয়। একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দিষ্ট করা গাইডলাইন মোতাবেক ব্যয়বহুল চিকিৎসা নিয়ে অনেকেই স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে।
এইডসের তপ্তবিষ নিয়ে ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়া প্রথম রোগী এখনো সুস্থ-সবলভাবে বেঁচে আছেন। নিয়মিতভাবে এইচআইভি চিকিৎসা কর্মসূচির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে দারুণ অভিকর্ষে অসাধ্যপটীয়সিতা দেখিয়েছে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত কষ্টসাধ্য ওষুধ নিয়মিত ব্যবহার করে সুষ্ঠুভাবে এইডসের নরক গুলজারকে আয়ত্তে এনে ৩৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার ভাগ্যবান রোগীও আছে।
বিজ্ঞানীদের আগামীর লক্ষ্য, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন নিরাপদ ওষুধ। মূলোৎপাটন চিন্তা নিয়েও কাজ করছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে পুরো বিশ্ব থেকে বিরল এই ভাইরাস নির্মূল করার গলদঘর্ম চেষ্টা চলছে। জাতিসঙ্ঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, ইউনিএইডসসহ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অনেক সংস্থা। যতটুকু হাঁকডাক, যতটুকু তর্জন-গর্জন করা যায়, সবই করছেন এবং করবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। আক্রান্তদের শতভাগ চিকিৎসার আওতায় আনা আর ঝুঁকিতে থাকাদের শনাক্ত-সচেতন কর্মসূচিও জোরেশোরে চালাচ্ছেন। জীবন-যৌবন সঁপে দিয়ে কাজ করে জনগণের মধ্যে এইডস ভীতির বোধ সৃষ্টি করতে পারলে অবাস্তব-অসম্ভব কিছু নয়। অতীতে এবং বর্তমানে অনেক সংক্রামকব্যাধির জাঁতাকল থেকে জাতিকে মুক্ত করার সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এইডস এর ভয়ঙ্কর আক্রোশে মারা গেলেও সাম্য-মৈত্রী ভালোবাসার চেতনায় বহুমাত্রিক বিভেদ বিসংবাদ ভুলে একত্রে-সমুচ্চার বিশ্ব এইডস দিবস পালন জাতিকে নতুন পথের দিশা দেখায়। ১৯৮৮ সাল থেকে ১ ডিসেম্বর দিনটিকে বেছে নেয়া হয় বিশ্ব এইডস দিবস পালনের জন্য। এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাথে একাত্মতার প্রতীক লাল ফিতা উড়িয়ে জাতিসঙ্ঘভুক্ত সব রাষ্ট্রগুলো জনস্বাস্থ্য সচেতনতার উদ্দেশ্যে পালন করে ‘এইডস দিবস’। এইডস আক্রান্তদের প্রতি প্রেমের আলো প্রজ্বলিত করে খোলামনেই সমবেদনা জানাই।
লেখক : সমাজকর্মী
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা