৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সঙ্কটের আবর্তে ডিগ্রি পাস কোর্স

-

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ডিগ্রি পাস কোর্স শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবার জন্য বর্তমানে দুর্বিষহ যাতনা, মনোকষ্ট ও বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দুই বছর মেয়াদি ডিগ্রি পাস কোর্সকে ২০০১-২০০২ সেশন থেকে তিন বছর মেয়াদে রূপান্তরিত করার ঘোষণা দেয়। অতঃপর সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করা হয় ডিগ্রি পাস কোর্সে। তার পূর্বে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দুই বছর মেয়াদি ডিগ্রি পাস কোর্স দীর্ঘ সময়ব্যাপী চালু ছিল। যার সর্বশেষ ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০০৩ সালে এবং ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট পরীক্ষার ফল ২২ জুলাই ২০০৪ সালে সারা দেশে প্রকাশিত হয়েছিল। ২০০৪ সালে প্রকাশিত বিএ, বিএসএস, বিএসসি, বিকম, বিএ মিউজিক এবং সার্টিফিকেট কোর্সে পাসের হার ৪১ দশমিক ৯৩ ভাগ হয়েছিল। মূলত ওই ফল প্রকাশের মাধ্যমে চিরাচরিত দুই বছর মেয়াদি ডিগ্রি পাস কোর্স দীর্ঘ সময় ধরে অব্যাহত থাকা কার্যক্রমের অবসান হয়। ২০০৩ সালের ফলের তুলনায় ২০০৪ সালের ফলের হার ১৭ দশমিক ১৬ ভাগ বেড়েছিল। তবে ২০০৪ সালে সারা দেশে ৪০টি কলেজে কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি। যা ছিল জাতির জন্য লজ্জার ও দুঃখজনক ঘটনা। তখন থেকে ডিগ্রি পাস কোর্সের গুরুত্ব কমে যায় এবং ডিগ্রি পাস কোর্স অবহেলিত হতে থাকে।

তিন বছর মেয়াদি ডিগ্রি পাস কোর্স কার্যক্রম শুরু হয়েছে প্রায় ২১ বছর। শিক্ষাবিদরা মনে করেন, আগের তুলনায় বর্তমানে ডিগ্রি পাস কোর্স সব চেয়ে বেশি অবহেলিত শিক্ষার স্তর। তার ওপর এ কোর্সের মেয়াদ চালু করা হয়েছে তিন বছর। একসময় এ স্তরে ভালো পড়াশোনার জন্য সুনাম ছিল এমন বেশির ভাগ কলেজ এখন অনার্স ও মাস্টার্স নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঢাকা মহানগরের বেশ কিছু কলেজ ইতোমধ্যে ডিগ্রি পাস কোর্স বন্ধ করে দিয়েছে। ডিগ্রি কোর্স বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এখন ডিগ্রি পাস কোর্সে শিক্ষার্থীরা সাধারণত ভর্তি হতে চায় না। সব শিক্ষার্থীর ঝোঁক বিবিএ ও অনার্স-এ ভর্তি হওয়ার।

বিগত ২০-২১ বছর আগে দেশে যেখানে ডিগ্রি পরীক্ষার্থী সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে যেত সেখানে বর্তমানে এ সংখ্যা দুই লাখের নিচে নেমে এসেছে। বেশির ভাগ ডিগ্রি কলেজে স্নাতক পাস কোর্সে শিক্ষার্থী সংখ্যা অকল্পনীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডিগ্রি পাস কোর্সে কোনো শিক্ষার্থীই নেই। ফলে ওই সব ডিগ্রি কলেজ তাদের অস্তিত্ব নিয়ে চরম সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে। ডিগ্রি পর্যায়ে মেধাবী, এমনকি মধ্যমমানের শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ায় এ কোর্সে নিম্নমানের বা অনিয়মিত ছাত্রছাত্রীদের শেষ ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে। যারা বিশ্ববিদ্যালয় বা খ্যাতনামা কলেজে অনার্স কোর্সও পায় না কিংবা অন্য কোনো কারণে ভর্তি হতে পারে না তারা সাধারণত অনন্যুপায় হয়ে শেষ পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যায়ের অধীন বিভিন্ন কলেজে ডিগ্রি পাস কোর্সে ভর্তি হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের কাছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ডিগ্রি পাস কোর্সটি আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সময়, অর্থ এবং দিনে দিনে অপরিমেয় মেধার অপচয় হচ্ছে। মানুষের আবেগ অনুভূতির সাথে জনকল্যাণের লক্ষ্য নিয়ে বা বৃহৎ জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংস্কার বা পরিবর্তন করা সহজ কাজ নয়। যথেষ্ট পরিমাণ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন ছাড়া এবং বাস্তবতাকে যথাযথভাবে উপলব্ধি না করে যখন কেউ কোনো ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন বস্তুত তারাই পড়েন বিপাকে যা সাধারণ মানুষের বিড়ম্বনা, দুর্দশা ও ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ডিগ্রি পাস কোর্সের অবস্থাও অনুরূপ হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, যে সমাজে শিক্ষার গ্রহণযোগ্যতা নেই, চাকরি মিলেনা, সামাজিক মর্যাদা মিলেনা, সেই সমাজে শিক্ষাকে পৃষ্ঠপোষকতা করা এবং এর পেছনে প্রচুর পরিমাণ টাকা খরচ করার যৌক্তিকতা কোথায়? বরং এসব শিক্ষার্থীকে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করার পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন। এমন করা সম্ভব হলে একদিকে সরকার ও পরিবারের আর্থিক অপচয় কমবে এবং শিক্ষার্থীরা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। শিক্ষাবিদরা আশা করেন, সরকার শিগগির দেশে ব্যাপকভাবে আরো বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থার প্রসার করবে। আর যদি ডিগ্রি পাস কোর্স চালু রাখতে হয়, তাহলে আরো যুগোপযোগী প্রতিযোগিতামূলক করার উদ্যোগ নেয়া একান্ত জরুরি। শিক্ষার নীতিনির্ধারক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সত্যিকার আন্তরিকতা তখনই প্রকাশ পাবে, যখন ডিগ্রি পাস কোর্স অবহেলিত শিক্ষার স্তর থেকে বেরিয়ে আসবে। মূলত চিরাচরিত দুই বছর মেয়াদি ডিগ্রি পাস কোর্স যুগের অবসান হওয়ার পর তিন বছর মেয়াদি হওয়ার সাথে সাথে ডিগ্রি পাস কোর্স আরো সঙ্কটের আবর্তে পড়েছে। এ বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের নতুন করে ভাবতে হবে কিভাবে কেমন করে ডিগ্রি পাস কোর্সের যথাযথ গুরুত্ব, মর্যাদা ও চাহিদা বৃদ্ধি করা যায়। সরকার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তিন বছর মেয়াদি ডিগ্রি পার্স কোর্সকে যুগোপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ করে সম্মানজনক ও মানসম্মতভাবে এর বিকাশ ও বিস্তারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এমন প্রত্যাশা সবার।

লেখক : সাবেক সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


আরো সংবাদ



premium cement
গাজার উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের গভীরে ইসরাইলি ট্যাংক, নিহত ৪২ রাজধানীতে আসছে শীতের প্রচুর সবজি ওপারে রাতভর বোমার বিস্ফোরণ আতঙ্কে নির্ঘুম টেকনাফবাসী সীমান্তের ওপারে ফ্যাসিস্ট বসে নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করছে : মির্জা ফখরুল আওয়ামী শাসনামলের চেয়ে সংখ্যালঘুরা নিরাপদে আছে সেন্টমার্টিনে বছরে দেড় লাখের বেশি পর্যটক ভ্রমণ করে বিজেপি নির্দিষ্ট একটি ধর্মের প্রতি প্রতিহিংসাপ্রবণ : মমতা চতুর্মুখী ষড়যন্ত্র চলছে, সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে : ডা: শফিক ৫২ সেকেন্ডের ভিডিওতে খুনে জড়িতদের চেহারা ভারতের দ্বিচারিতা নিন্দনীয় ও আপত্তিকর : আসিফ নজরুল কলকাতায় জাতীয় পতাকা পোড়ানোয় বাংলাদেশের নিন্দা

সকল