৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ডিভোর্স বা বিচ্ছেদ সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার না আলোকিত করে?

ডিভোর্স বা বিচ্ছেদ সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার না আলোকিত করে? - ছবি : প্রতীকী

বিয়ের মাধ্যমে মানবজাতির নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। পারিবারিক বন্ধন মজবুত করে, একাকিত্ব দূর করে। আগামী প্রজন্মের আগমন ঘটে। মানব সভ্যতার বিকাশ ঘটে। পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে ওঠে। একটি দেশ ও জাতির বিকাশ ঘটেছে বিয়ে ও প্রজন্মের যুবকের মাধ্যমে। মহাধুমধাম করে বিয়ে দেয়া হয়ে থাকে উচ্চশিক্ষিত ধনী-গরিব জাতি গোত্রের মধ্যে, আবার ডিভোর্স কার্যকর করার মাধ্যমে বিয়ের আনন্দের কবর রচনা করে থাকে দুঃখ বেদনা ও শোকের প্রতীক হিসেবে!

ডিভোর্স একটি মারাত্মক সামাজিক সমস্যা। ডিভোর্স কার্যকর করার জন্য আইন আছে, আইনজীবী আছেন ও বিচারক আছেন। ডিভোর্সের পর মোহরানা আদায়ের জন্য আইন-আদালত আছে, খোরপোষের টাকার জন্য বিচার ও সালিশ আছে। ডিভোর্স বন্ধের জন্য সামাজিক শাসন নেই বললেই চলে। ডিভোর্সের কারণ ও প্রতিকার নিয়ে কোনো প্রোগ্রাম নেই। বাংলাদেশে নারী উন্নয়ন ও কিশোরী উন্নয়ন প্রোগ্রাম আছে কিন্তু বিয়ে বিচ্ছেদ বন্ধের জন্য কোনো উদ্যোগ নেই। উচ্চবিত্ত পরিবারে ও চাকরিজীবী নারীদের মধ্যে ডিভোর্সের হার অত্যধিক পরিমাণে বেড়েই চলেছে।

ডিভোর্সের কারণ :
১. যৌথ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা; ২. যৌতুকের ছড়াছড়ি; ৩. উচ্চবিত্ত পরিবারের নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশা; ৪. স্বামী ও স্ত্রী মাদকাসক্ত; ৫. পরকীয়া প্রেম; ৬. শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে সুসম্পর্কের অভাব; ৭. সামাজিক রীতিনীতি ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকা; ৮. টিভি চ্যানেলে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন; ৯. স্বাবলম্বী নারীর একক পরিবারে বসবাস; ১০ সোশ্যাল মিডিয়ার আগ্রাসন; ১১. নারী নির্যাতন; ১২. নারীর প্রতি পারিবারিক সাপোর্ট ও কাউন্সেলিংয়ের অভাব; ১৩. পারিবারিক বন্ধনের অভাব; ১৪. ‘টিনএজার’দের অবাধ মেলামেশা; ১৫. উচ্চ শিক্ষিত নাগরিকদের বেহায়াপনার ছোবল; ১৬. কবি, লেখক ও সাহিত্যিকদের লেখনীতে অশ্লীলতার ছোবল; ১৭. ধর্মবিরোধী আগ্রাসন; ১৮. লুটপাট ও দুর্নীতির টাকার প্রভাব ইত্যাদি। নারীদের কাছে শ্বশুরবাড়ি জেলখানা মনে করার প্রবণতা ডিভোর্সের অন্যতম কারণ।

একজন নারীর গল্প :
১৯ বছর বয়সী একজন নারী। বিয়ে হয়েছিল উভয়ের পছন্দে। সংসারও টিকে ছিল দেড় বছর। একটি ছেলেও আছে, ওর বয়স এখন এক বছর। স্বামীর স্বভাব-চরিত্র সবই বেশ ভালোই ছিল, শুধু একটু জেদি ছিল। কিন্তু ঝগড়া বাধলেই আমি তল্পিতল্পা গুছিয়ে বাপের বাড়ির দিকে হাঁটা দিতাম। বাপের বাড়িতে বোনরাও আসত, আর ভাইয়েরা তো ছিলই। ওদের কাছে কেঁদেকেটে সব বলতাম। তখন সবাই ওকে ফোন করে কথা শোনাত। আমার ছোট বোন তো রীতিমত অপমান করত! আমার কাছেও মনে হতো, ঠিকই আছে। কত বড় সাহস, আমার সাথে লাগতে আসে। আমাকে নিজের মতো চালাতে চায়। আমার মধ্যে কেমন একটি জেদ কাজ করত। ওর কাছে ছোট হবো, ওর কাছে নিজের ভুল স্বীকার করব, মাফ চাইব, এটি ভাবতেই পারতাম না। উল্টো বড় গলা করে বলতাম, ‘ডিভোর্স দাও! তোমার মতো লোকের সাথে কে সংসার করে?’

এক দিনের কথা এখনো মনে পড়ে। সেদিন ছোট একটি ব্যাপার নিয়ে তর্ক করতে করতে দু’জনেই খুব উত্তেজিত হয়ে পড়েছি। রাগে আমার শরীর কাঁপছে। যা মুখে আসছে তাই বলছি। তুই-তোকারি, গালিগালাজ, অপমান কিচ্ছু বাদ যায়নি। এক পর্যায়ে সহ্যের বাঁধ ভেঙে ও আমার গায়ে হাত তুলল! এর আগে কিংবা পরে কখনোই ও আমার গায়ে হাত তোলেনি। কিন্তু ওই একটি থাপ্পড়, ওটিই যথেষ্ট ছিল। পরিবারের সবাই বলল, এমন ছেলের সাথে সংসার করার কোনো দরকার নেই। মামলা ঠুকে দাও। আমি সবার পরামর্শে মামলা করলাম। ওর নামে নারী নির্যাতনের মামলা করা হলো। খুব দ্রুতই ওকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। ওর পরিবার থেকে মুরব্বিরা এসে বারবার অনুরোধ করল, আমি যেন এই মামলা তুলে নিই। ভেতরে ভেতরে আমিও চিন্তা করতাম, আচ্ছা, আমার স্বামী কি আসলেই জালেম? ও কি কোনোদিন নিজে থেকে আমার গায়ে হাত তুলেছে? আমি যদি ওকে এত কথা না শোনাতাম, তাহলে কি ও আমার গায়ে সেদিন হাত তুলত?

আমার বাবা-মা আমাকে বুঝিয়েছিলেন, আমি যদি এত কিছুর পর ফিরে যাই, তাহলে ও ভাববে, আমি বুঝি অসহায়। আমাকে আরো পেয়ে বসবে। আমার ওপর ইচ্ছামতো ছড়ি ঘোরাবে। একবার গায়ে হাত তুলেছে মানে, বারবার একই কাজ করবে। কাজেই নিজে থেকে ফিরে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।

কিন্তু আমার মনের ভেতর কে যেন চিৎকার করে বলত, ও তো এমন লোক না। ও যেদিন আমার গায়ে হাত তুলেছিল, সেদিনই হাঁটু জোড় হয়ে আমার কাছে মাফ চেয়েছে। এসব ভেবে ভেবে আমি মামলা তুলে নিলাম। তবে ওর কাছে ফেরত গেলাম না। কিছু দিন পর দুই পরিবার থেকে বিচার-সালিশ হলো। সবার কাছে ও দোষী প্রমাণিত হলো। সবাই ওকে নানা কথা বোঝাল, উপদেশ দিলো। তারপর আবার সংসার শুরু করলাম। এর পরের কয়েক মাস ভালোই চলছিল, কিন্তু হুট করে আবার কী একটা নিয়ে আমাদের ঝগড়া বেধে গেল। ব্যস, কাপড়চোপড় গুছিয়ে আবার আমি বাপের বাড়ি গিয়ে উঠলাম। এর মধ্যে শুনলাম ও নাকি খুব অসুস্থ। আমি বাসায় ফিরতে চাইলে আমার পরিবার বলল, এভাবে ঝগড়ার পর একা একা ফিরলে সেটি ভালো দেখায় না। আর আমার বোনদের কথা ছিল, ওসব অসুস্থ-টসুস্থ কিছু না, সব বাহানা!

আমরা চাচ্ছিলাম ওই পক্ষ থেকে কিছু আত্মীয়-স্বজন এসে ওর ভুল স্বীকার করে আমাকে হাতেপায়ে ধরে নিয়ে যাক। কিন্তু এবার কেউই এলো না। এরও কিছু দিন পর ও আমাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিলো। ডিভোর্স লেটার দেখে আমাদের পরিবারের সবাই খুব খেপে গেল। কত বড় সাহস, মেয়েকে এত কষ্টে রেখেছে, তার ওপর ডিভোর্স লেটার পাঠায়। সবার কথায় আমার কাছেও মনে হলো, ঠিকই তো, কত বড় সাহস! আমাকে ডিভোর্স দিতে চায়? ওর সব ভুল কাজ চোখের উপর ভাসতে লাগল। মা-বাবা মনে করিয়ে দিলো, ও হলো সেই ছেলে যে কি না আমার গায়েও হাত তুলেছে।

প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে জ্বলতে আমিও ঠিক করলাম, এবার ডিভোর্সই দেবো। কে চায় এমন ফালতু লোকের সংসার করতে? কোর্টে গিয়েও ওকে হেনস্তা করার চেষ্টা করলাম। আমার মাসিক খরচ বাড়িয়ে একটি আকাশছোঁয়া অঙ্কের অর্থ দাবি করলাম! আমি চাচ্ছিলাম, ওর যেন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। যেন নিজে থেকে আমার কাছে এসে আবার সংসার করতে চায়। আসলে ডিভোর্স হোক, আমি কখনোই চাইনি। কিন্তু জেদ আমাকে খেয়ে নিচ্ছিল। আগ বাড়িয়ে ওকে ডিভোর্স তুলে নিতে বলা আমার পক্ষে অসম্ভব! ওর কাছে ছোট হওয়া আমি মানতেই পারিনি।

কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার, ও আমার আকাশছোঁয়া সব দাবি মেনে নিলো। আমাদের ছেলেকে আমি পেয়ে গেলাম। ভরণপোষণ, মাসিক খরচ, ওর সম্পত্তি সব! বিনিময়ে ও পেলো শুধু ডিভোর্স!” ডিভোর্সের পরিণাম খুব ভালো নয়। মহানবী সা: তালাককে সমাজের মধ্যে নিচু কাজ বলেছেন। চাকরিজীবী নারীদের মধ্যে ডিভোর্সের সংখ্যা খুবই বেশি। স্কুল ও কলেজ শিক্ষিত ছেলে-মেয়ের মধ্যে ডিভোর্সের পরিমাণ বেশি। উচ্চবিত্তের সন্তানদের ডিভোর্স বিয়ে ডিভোর্স কালচার গড়ে উঠেছে। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডিভোর্সের হার শূন্যের কোঠায়। পিতা-মাতার অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতার অধিকার দেয়ার হার শতভাগ। প্রবীণ নিবাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সচিব ও আমলাদের সংখ্যা বেশি। মাদরাসার কোনো প্রিন্সিপালকে প্রবীণ নিবাসে যেতে হয়নি। শিল্পীদের ডিভোর্স বিয়ে ডিভোর্স কালচার আগামী প্রজন্মের জন্য অশনিসঙ্কেত। ডিভোর্সের কারণে নারীর অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে। অনেক নারী টকশো বিশেষজ্ঞ আছে যারা স্বামীকে তালাক দিয়ে মুক্ত নিরিবিলি প্রাকৃতিক জীবন বেছে নিয়েছে। ডিভোর্স বন্ধের জন্য উন্নয়ন সংস্থার কোনো প্রোগ্রাম নেই। ডিভোর্সের কুফল থেকে বাঁচতে হলে ছেলে-মেয়েকে পারিবারিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত করে গড়ে তুলতে হবে। আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীর সাথে মেলামেশার অভ্যাসটা বাড়াতে হবে। নারী ও পুরুষকে পরস্পরের প্রতি আন্তরিক ও সহনশীল হতে হবে। দুটো পরিবার থেকে আত্মীয়তা টিকিয়ে রাখার জন্য উদ্যোগী হতে হবে। ছেলে-মেয়ে ও পরিবারের লোকজন একই গোত্র ও সম্প্রদায়ের মানুষ কি না দেখতে হবে। দুটো পরিবার যৌতুকের টাকা দাবি করে কি না, ডিভোর্সের ঘটনা আছে কি না, যাচাই করে আত্মীয়তা করতে হবে। প্রতিটি মা-ই ছেলের বউকে আপন মেয়ের মতো অধিকার দিতে হবে। প্রতিটি ছেলের বউই শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের পিতা-মাতার মতো শ্রদ্ধা করে ভালোবাসতে হবে। ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী, পিতা-মাতা, শ্বশুর-শাশুড়ি সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে শ্রদ্ধা ও অধিকার নিশ্চিত করলে ডিভোর্সের হার কমে যাবে। শ্বশুরবাড়িকে নিজের বাড়ি মনে না করার প্রবণতা; ডিভোর্সের মাধ্যমে নারীর সুখ খুঁজে বেড়ানো পরিহার করতে হবে। শাশুড়ির কুমন্ত্রণার ফলে অনেক নারী ডিভোর্সের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ডিভোর্স নারী ও পুরুষের জীবন যাপনে কখনো সুখ দেয় না!

বিয়ে বিচ্ছেদ নিয়ে ড. ইউসুফ খানের অভিমত
যেকোনো বিচ্ছেদ আমাকে ভাবায়, বিচলিত করে। আর সেই বিচ্ছেদ যদি হয় কোনো পরিচিত মুখ ও গুণী ব্যক্তির তাহলে তো কথাই নেই। সর্বক্ষণ পীড়া দিতে থাকে। মনের ভেতরটা খচখচ করে। মেনে নেয়াটাই যেন অস্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়। আসলে ভালোবাসা বা ভালো লাগা কোনোটাই চিরন্তন নয়। সময়ের বৈরী স্রোতে অনেক অনুভ‚তি আর ইচ্ছা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে জীবনের বাঁকে বাঁকে। ভালোবাসায় মোড়ানো সুন্দর জীবন উপভোগ করতে করতে এক সময় ছন্দপতন ঘটে। কোনো কিছুই তখন ঠিক থাকে না। সব সম্পর্ক যেন বেসুরো ঠেকে। সব কিছুতেই তাল কেটে যায়। ভালোবাসা হলো সৃষ্টিকর্তার দান। মানুষ ভালোবাসা পেতে ব্যাকুল। ভালোবাসা-বাসিতে যখন বোঝাপড়া ভালো হয়, তখন পৃথিবীতে পাওয়া যায় স্বর্গের সুখ। কিন্তু সেই ভালোবাসায় যখন দূরত্বের সৃষ্টি হয় তখন সেই সুন্দর পৃথিবীটাই হয়ে উঠে এক নরক।

২. পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক শোয়েব মালিক ও ভারতের সেরা টেনিস তারকা সানিয়া মির্জাকে ভারত পাকিস্তানের সবচেয়ে শক্তিশালী সেলিব্রিটি দম্পতি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। হাল সময়ের সবচেয়ে চর্চিত বিষয় হলো- তাদের সংসার নাকি এবার ভাঙতে বসছে। প্রতি মুহূর্তে তাদের নিয়ে কৌত‚হল আর জল্পনা কল্পনার ডানা মেলছে। কয়েক দিন ধরেই আলোচনায় রয়েছে তাদের বিয়ে বিচ্ছেদের খবর। তাদের বিবাহিত জীবনের বয়স এক যুগেরও বেশি। একমাত্র ছেলে ইজহানকে নিয়ে ছিল সুখের সংসার। হঠাৎ করেই যেন আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। অথচ ভালোবাসার টানে এক সময় দেশ ছেড়েছিল সানিয়া মির্জা। শোয়েব মালিকের হাত ধরে বাসা বেঁধেছিলেন দুবাইয়ে। তবু আগলে রাখতে পারলেন না সংসার। শোয়েব মালিকের বিয়েবহিভর্‚ত সম্পর্কই যেন কাল হয়ে দাঁড়াল। জানা গেছে, আয়েশা ওমর নামে এক পাকিস্তানি মডেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছেন তিনি। সাধারণত বিয়ে ভাঙার জন্য বিয়েবহিভর্‚ত সম্পর্কই বহুলাংশে দায়ী হয়। কোনো এক সময় ভারতে খেলতে গিয়ে প্রথম সানিয়া-শোয়েবের দেখা হয়। সেখান থেকেই আলাপের সূত্র ধরে ঘনিষ্ঠতা ও পরে বিয়ে। তাদের এ বিয়ে নিয়েও কিন্তু কম বিতর্ক হয়নি। তবে দু’জনেই ছিলেন নাছোড়বান্দা।

৩. ভারত-পাকিস্তানের পারস্পরিক সম্পর্কে বরাবরই তিক্ততার ছোঁয়া লেগে থাকে। আর খেলার মাঠে তো তারা চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী। সেই পাকিস্তানের ক্রিকেটারের গলাতেই মালা দিয়েছিলেন ভারতের সেরা টেনিস তারকা। নিন্দুকের কথায় কেউ কান দেননি। রূপকথার গল্পের চেয়েও কোনো অংশে কম ছিল না তাদের প্রেম থেকে বিয়ে। সেই সম্পর্কেও চিড় ধরেছে। অথচ এক সময় ভারত-পাকিস্তানের শীতল সম্পর্কের মধ্যে স্বস্তির পরশ বুলিয়ে দিয়েছিল শোয়েব-সানিয়ার মিলন। তাদের এ বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে দুই দেশ অনেকটাই কাছে চলে এসেছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা বুঝি আর হলো না।

৪. একইভাবে দীর্ঘ ১২ বছর এক সাথে থাকার পরে বিচ্ছেদের পথে হাঁটলেন স্প্যানিশ ফুটবলার জেরার্ড পিকে ও বিশ্বখ্যাত কলম্বিয়ান পপগায়িকা শাকিরা। এখানেও পিকের বিয়েবহিভর্‚ত সম্পর্কই বিচ্ছেদের মূল কারণ। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসেছিল ফুটবল বিশ্বকাপের আসর। ওই বিশ্বকাপে ওয়াকা ওয়াকা গানটি গেয়েই বিখ্যাত হয়ে উঠেন এই কলম্বিয়ান পপগায়িকা শাকিরা। আমার প্রিয় গানগুলোর অন্যতম একটি গান। আর তখন থেকেই এই গুণী মানুষটির গানের ভক্ত হয়ে উঠি আমি। বিশ্বকাপের ওই আসর থেকেই শুরু হয়েছিল পিকে-শাকিরার প্রেমকাহিনী। শাকিরা ছিল পিকের চেয়ে ১০ বছরের বড়। কিন্তু প্রেম তো আর বয়স মানে না। সেটি এসে থামল প্রায় এক যুগ পরে। বিয়ে না হলেও মিলান ও শাশা নামে রয়েছে তাদের দুই সন্তান। মজার ব্যাপার হলো- সন্তানদের ভালো থাকার কথা বিবেচনা করেই নাকি তারা সম্পর্কের ইতি টানেন।

৫. একটি গল্পের উপমা টেনে লেখাটি শেষ করছি। ছোটবেলায় মায়ের মুখে কতই না রূপকথার গল্প শুনেছি। রাজা-রানী গল্পের শেষ লাইনটি কি মনে আছে? অনেক সংগ্রাম, ত্যাগ তিতিক্ষা, বিপদ-আপদ, ষড়যন্ত্র পার করে গল্পের শেষে রাজা-রানী সুখে শান্তিতে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেন। কিন্তু বাস্তবের গল্প বড়ই নির্মম ও কঠিন। মানুষের বাস্তব জীবনটা কখনোই সিনেমার মতো নয়। এমনকি গল্প উপন্যাসের মতো গোছানোও নয়। রূপকথা, সাহিত্য বা গানে বিচ্ছেদের বেদনা যতই মধুর হোক না কেন, বাস্তবের বিচ্ছেদ বয়ে আনে নানা তিক্ততা আর জটিলতা। এ ছাড়া দুজনের জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা অন্য জীবনগুলোও হয়ে পড়ে অসহায়। সন্তানের জীবনে শুরু হয় নানা টানাপড়েন। বাবা না মা, শিশু কার কাছে থাকবে, কার কাছে ছুটি কাটাবে, এ নিয়ে শুরু হয় কত জটিলতা। বাংলাদেশের মিথিলা-তাহসান ১১ বছর সংসার ভেঙে ফেলে মিথিলা ভারতে গিয়ে সুজিতের কাছে বিয়ে বসেছে। ওদের সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার কি আলোকিত, সময় বলে দেবে।

লেখক : গবেষক ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ


আরো সংবাদ



premium cement