অন্যকে ভালো কাজে উৎসাহিত করুন
- মুহাম্মদ মিজানুর রহমান
- ১৬ নভেম্বর ২০২২, ১৯:৪৮
অপরকে ছোট করায় মানুষের কোনো কৃতিত্ব নেই। কৃতিত্ব মানুষের মাধুর্যপূর্ণ আচরণে; যা দিয়ে আপনি মানুষকে মুগ্ধ করতে পারবেন। মানুষ আপনার ভালো কথাগুলোকে সাদরে গ্রহণ করবে। মন্দ আচরণে আপনার হীনতা প্রকাশ পাবে। হতে পারে, এমন ধরনের আচরণ আপনার কাছের লোককেও দূরে সরিয়ে দেবে। তাই সবসময় অপরকে ভালোভাবে সম্বোধন করতে শিখুন। সাধারণত মানুষ আপনার বাহ্যিক আচরণ দিয়ে মনুষ্যত্বের বিচার করতে চাইবে। তখন যদি আপনার আচরণ এ ধরনের হয়, তারা আপনার সম্পর্কে একটি ভুল মেসেজ নিয়ে ফিরবে। চাইলেও সহজে আপনি আগের জায়গায় ফিরে যেতে পারবেন না।
আপনার অন্তরের প্রশস্ততা যদি ছোট হয়, মনুষ্যত্ব হয় দুর্বল, চিন্তাগুলো হয় সঙ্কীর্ণ, তাহলে মানুষ আপনাকে সেভাবেই মূল্যায়ন করবে। সুতরাং আপনাতে বিদ্যমান যাবতীয় হীনতাকে ঝেড়ে ফেলুন। নিজের সম্পর্কে কাউকে ভুল ধারণা দেবেন না। আপনি কখনোই নফসের অনুগত হবেন না। বরং আপনি নফসকে আপনার অনুগত বানিয়ে নিন। মনে রাখবেন, আপনি যখন নফসের অনুগত হয়ে চলবেন, তখন দুনিয়াবি জিনিসগুলো আপনার কাছে মুখ্য হয়ে দাঁড়াবে। এদের ভালোবাসা আপনাকে আষ্টেপৃষ্ঠে রাখবে। এসবের প্রতি অন্তরের লোভ তৈরি হবে। যখন স্বার্থে সামান্য ব্যাঘাত হবে নিজেকে মানিয়ে নিতে কষ্ট হবে আপনার। চার পাশে মন্দ মানুষের ভিড় জমতে থাকবে। তাই নিজের জীবনে এমন বিষয়গুলো দেখতে পেলে শুধরে নিন। কখনোই নিজেকে সংশোধনের রাস্তা থেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন না।
অপরের জন্য আত্মত্যাগ করতে শিখুন। অপরের প্রয়োজনীয়তাকে হালকা না ভেবে নিজের প্রয়োজনকে হালকা বানিয়ে নিন। তাহলে মনের জোর বেড়ে যাবে। একটু কষ্ট হলেও শান্তি অনুভব করবেন। মানুষকে কিছু দিতে পারবেন। আপনাকে শুধু পাওয়ার জন্য বানানো হয়নি। অপরকে কিছু দিতেও হবে। এমন চিন্তা মাথায় রাখুন, তাহলে নিজের কষ্টকেও হাসিমুখে মেনে নিতে পারবেন। কাজে আত্মতৃপ্তি পাবেন। কারণ এই কষ্ট আপনি অন্যের জন্য করছেন না, করছেন নিজের জন্য। এর পুরস্কার এখন হয়তো আপনার সামনে দৃশ্যমান নেই, কিন্তু আপনাকে বঞ্চিত করা হবে না।
এ পৃথিবীতে আপনি যা কিছু উপার্জন করছেন তার অধিকাংশই আপনি নিঃশেষ করে দিচ্ছেন। তাই আগামীর জন্য কিছু সঞ্চয় করুন। আত্মত্যাগের মাধ্যমে যা কিছু জমা করছেন তা কখনোই ফুরিয়ে যাওয়ার নয়। অনেক ছোটখাটো আমল আপনার জন্য অনেক বড় ফায়দা নিয়ে আসবে। তাই ভালো কাজ করুন। নিয়তকেও পরিশুদ্ধ রাখুন। মন্দ নিয়তে ভালোকে কখনোই প্রদর্শন করবেন না। হতে পারে, এটি আদৌ আপনার কোনো উপকারে আসবে না। অথচ আপনি একে মুক্তির কারণ হিসেবে মনে করছেন। তাই সবসময় বুদ্ধিমানের মতো আচরণ করুন। বাস্তবতাকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন। ক্ষণস্থায়ী জিনিসের চেয়ে চিরস্থায়ী জিনিসকে পছন্দের তালিকায় রাখুন। কাজের মধ্যে কোনো প্রভেদ সৃষ্টি করবেন না। জীবনে সব কাজই হবে কল্যাণের জন্য। ভালো কাজের জন্য আলাদা সময় খুঁজবেন না। তবে ফজিলতপূর্ণ সময়গুলোকে বেশি করে কাজে লাগান। হয়তো এরকম অনেক সময় আপনি হেলায় হারিয়ে ফেলেছেন। আর হারাবেন না। হয়তো আপনার এই সাবধানতা আপনাকে সফলতার দ্বারে নিয়ে যাবে। যে আনন্দ আপনার সব অতীত কষ্টকে ভুলিয়ে দেবে।
সময়ের ব্যাপারে অসাবধানী মানুষগুলোকে এড়িয়ে চলুন। এরা আপনার ঈমান ও আমলের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। তাই সবসময় কল্যাণকামী মানুষগুলো খুঁজুন। তারাই আপনার উত্তম আমলের জন্য সহায়ক। তাকে ভালোবাসুন যে আপনাকে ভালোবাসে। আপনার মন্দ দিকগুলো তার অন্তরে পীড়া দেয়। তারপরেও সে আপনাকে এমনভাবে আঘাত করে না, যাতে আপনার উদ্যমটা হারিয়ে যায়। বরং বন্ধুসুলভ ভালোবাসা দিয়ে ওই পথ থেকে আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এমন বন্ধুকে আপনিও ভালোবাসতে শিখুন। আপনার ভালোবাসা তাকেও মহৎ কাজে উজ্জীবিত করবে। বন্ধু ও সাথী নির্বাচনে বংশীয় আভিজাত্য বা আর্থিক প্রাচুর্যকে প্রাধান্য না দিয়ে বরং মানবীয় গুণগুলোকে অধিক গুরুত্ব দিন।
নফসের ধোঁকায় পড়ছেন, নিজেকে সতর্ক অবস্থায় রাখুন। যদি এটি আপনার চরিত্রে থাকে, তাহলে আপনি এক ধরনের সমস্যায় ভুগছেন যে সমস্যা আপনাকে বারবার পীড়া দেবে। সে যেকোনো সময় আপনার ক্ষতি করতে পারে। একে ক্ষুদ্র সমস্যা ভেবে কখনোই উড়িয়ে দেবেন না। তাহলে আপনি এক দিন বড় ক্ষতির মধ্যে পড়বেন। যদি আপনি এ ধরনের কোনো তাড়া অনুভব না করেন, তাহলে জেনে রাখবেন, অপরাধের সাথে আপনি আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে আছেন। তাই আর কালবিলম্ব না করে আপনি অপরাধের বলয়ের বাইরে চলে আসুন।
কোনো সমস্যাই শুরুতে বড় থাকে না। ব্যক্তির অবহেলায় এক দিন তা বড় আকার ধারণ করে। হতে পারে, এটি আপনার অন্তরে বসতে শুরু করেছে। আপনি তাকে কখনোই আপনার চরিত্রকে কলঙ্কিত করার সুযোগ দেবেন না। যখন এটি ‘আউট অব কন্ট্রোল’ হবে তখন আপনাকে প্রারম্ভিক সময়টির জন্য অনুশোচনা করতে হবে। কারণ ওটাকে ছেড়ে দেয়া তখন আপনার জন্য সহজ ছিল। এখনো আপনি অপরাধকে ছেড়ে দেয়া কঠিন মনে করবেন না। কারণ এখনো আপনার ওপর শাস্তি আসেনি।
আপনি কখনোই এমন পাপী খুঁজে পাবেন না, যে তার পাপের জন্য অনুশোচনা করে না। কারো হুঁশ হয় সময় পেরিয়ে। আবার কেউ যথাসময়ে ভুল বুঝতে পারে। সফলতা তার দিকেই ফিরে আসে যে সময় থাকতে নিজেকে সঠিক জায়গায় নিয়ে যায়। সুতরাং আপনি নিজেকে সফল মানুষ হিসেবে ভাবুন। অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে সঠিক জায়গায় ফিরে আসুন।
মানুষকে স্বপ্ন দেখান। তাকে কখনোই ছোট করে ভাবতে শেখাবেন না। স্বপ্নকে কখনোই অলীক ভেবে উড়িয়ে দেবেন না। যে যত সুন্দর করে স্বপ্ন দেখতে পারে, আগামীর পথচলা তার জন্য ততই সহজ হয়। হাত গুটিয়ে বসে থাকার নাম স্বপ্ন নয়। স্বপ্ন সেটাই যা অন্তরে লুক্কায়িত থাকে। আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য থাকে অবিরত প্রচেষ্টা। থাকে আল্লাহর সাহায্য কামনা। মানুষের জন্য স্বপ্ন দেখা ভুল নয়। কিন্তু আল্লাহর ওপর ভরসা না করাটাই মস্তবড় অন্যায়। কখনোই প্রচেষ্টাহীন স্বপ্ন দেখবেন না।
সহজে কোনো কিছু পেতে চাইবেন না। এরকম পাওয়ার মধ্যে কোনো আনন্দ থাকে না। তাই কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান হয়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিন। নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রাখুন। সফলতার জন্য কখনোই অন্যায়ের আশ্রয় নেবেন না। যোগ্যকে অযোগ্য করে বিতাড়িত করবেন না। এটি আপনার কাছে অপরাধ মনে না হলেও এটিও মস্তবড় অন্যায়। শক্তিকে অন্যায় কাজে লাগিয়ে মানুষের ওপর জুলুম করছেন, তাহলে এ জুলুমের শাস্তির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। সুযোগ থাকলে নিজের অপরাধের প্রতিকার করুন। যার সাথে অন্যায় করেছেন তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিন। আপনার মুক্তির পথ সহজ হবে।
মানুষ সবসময় নিজেকে বড়ত্বের জায়গায় দেখতে চায়। আপনি কখনো নিজেকে এমন জায়গায় নিয়ে যাবেন না। কাজের মাধ্যমে অপরের প্রতি দায়িত্ববান হয়ে উঠুন। সঠিকভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করুন, সম্মান আপনার দিকে ফিরে আসবে। সম্মানের আকাক্সক্ষা আপনাকে না করলেও চলবে। সম্মান আপনাকে বেছে নেবে। মেকির কদর বেশি দিন থাকে না। তাই মিথ্যের ঝলকানিতে নিজেকে বিপর্যস্ত করবেন না। মনে শক্তি রাখুন। সাহস নিয়ে পথ চলুন। বিজয় সত্যেরই হয়। সাময়িক কষ্টকে ঝেড়ে ফেলুন। সাফল্যে আনন্দ অনেক বেড়ে যাবে।
কারো প্রচেষ্টাকে কখনোই তুচ্ছ বানিয়ে দেবেন না। তুমি পারবে না, তোমার দ্বারা হবে না, এ ধরনের পরিভাষা পরিহার করুন। এ ধরনের ক্ষুদ্র সম্বোধন কাছের মানুষকেও পর করে দিতে পারে। বরং আপনার কথাকে অন্যের প্রেরণার জন্য কাজে লাগান। মনে রাখবেন, নেতিবাচক কথা দিয়ে মানুষকে পরিবর্তন করা যায় না। মানুষকে বদলাতে হলে তার প্রতি ইতিবাচক ধারণা পোষণ করতে হয়। তার ভুলগুলো লক্ষ করুন। তার মানসিকতা বুঝুন। সময়-সুযোগ বুঝে তাকে বুঝিয়ে বলুন। আপনার উপস্থাপন যদি তাকে আকৃষ্ট করতে পারে, সে আপনাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে। তখন আপনার তাকে পরামর্শ দিতে হবে না। বরং সে-ই আপনার কাছ থেকে পরামর্শ চাইবে। সুতরাং কথা বলার সময় হেকমত প্রয়োগ করুন।
কোনো কিছু শুনলেই আপনি উত্তেজিত হয়ে উঠবেন না। প্রথমে যেকোনো বিষয় ভালো করে শুনুন। সত্য-মিথ্যা নির্ণয় করুন। এরপর নিজের অবস্থান ব্যক্ত করুন। নিজেকে ভালো সাজানোর জন্য যারা বানিয়ে কথা বলে, গুজব ছড়ায়, এদের এড়িয়ে চলুন। তাদের সাথে সখ্য তৈরি করলে আপনিও যেকোনো সময় সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে পারেন। কারণ এরা মানুষের সম্মান নিয়ে ভাবে না; সমাজ ও পরিবারে বিশৃঙ্খলার জন্য তৈরি থাকে।
ভালো মানুষকে সবসময় সহযোগিতা করবেন, স্বার্থপরদের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। কেউ আপনাকে কথা দিয়ে আকৃষ্ট করতে চাইবে। আবার কেউ নিজের অক্ষমতা প্রকাশ করে আপনার সহানুভ‚তি কাজে লাগাতে চাইবে। এ ধরনের মানুষ আপনার সাথে তামাশা করতে চাইবে। স্বার্থ হাসিলের জন্য আপনাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবে। আপনি মানুষের স্বরূপ বুঝে এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। আপনার সম্পর্কে তাদের দিকে শক্ত মেসেজ ছুঁড়ে দিন। তারা আপনার থেকে দূরে থাকবে। নিজের অন্তর্দৃষ্টি কখনোই সঙ্কীর্ণ করে রাখবেন। অপরের ওপর অন্ধ বিশ্বাসও করবেন না। হতে পারে, আপনার বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে সে তার আখের গুছিয়ে নিচ্ছে। আর আপনাকে মানুষের চোখে ছোট করছে।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা