জনপ্রশাসনে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন আতঙ্ক
- আবুল কালাম মানিক
- ০২ নভেম্বর ২০২২, ২০:১৪
অতিসম্প্রতি তথ্যসচিব মকবুল হোসেনের মতো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অনুগত উচ্চ পর্যায়ের এক আমলা ও তিন পুলিশ সুপারের বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া নিয়ে দেশব্যাপী চলছে তোলপাড়। সরকারের এমন আচরণে ওয়াকিবহাল মহলের অনেকেই বিস্ময়ে বিমূঢ় ও হতবিহ্বল। গণমাধ্যমের সংবাদে আকস্মিক এ ঘটনাকে শুদ্ধি অভিযান হিসেবে অভিহিত করা হলেও অনেকেই হিসাব মেলাতে পারছেন না। তারা এমনটি ঘটার সঙ্গত কারণও খুঁজে পাচ্ছেন না। তাদের চোখের সামনে ধকধক করছে আওয়ামীপন্থী বিদ্রোহী আমলা মহিউদ্দিন খান আলমগীর ও কে এম নূরুল হুদাসহ অনেকের অবৈধ ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ড। চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে তারা ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে রাজপথে স্থাপন করেছিলেন ‘কুখ্যাত’ জনতার মঞ্চ। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে। আওয়ামী লীগের সাথে হাত মিলিয়ে পতন ত্বরান্বিত করেছিলেন সরকারের। আদায় করেছিলেন তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচনের দাবি। পরবর্তীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাদের অনেকেই শিকার হন রুদ্ররোষের।
তবে আওয়ামী সরকারের উদারতায় বিদ্রোহী আমলাদের দুর্ভোগ হয়েছিল ক্ষণস্থায়ী। জনতার মঞ্চের বিদ্রোহী আমলাদের প্রণোদনা দেয়ার জন্য ২০০৯ সালে গঠন করা হয় প্রতিকার কমিটি। এই পদক্ষেপ নেয়া হয় নিরঙ্কুশ ক্ষমতার নিমিত্তে নিরঙ্কুশ আমলা আনুগত্য তত্ত্ব অনুসরণে। শেখ হাসিনা মহিউদ্দিন খান আলমগীরকে পুরস্কৃত করে বানিয়েছিলেন মন্ত্রী আর নূরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার। রাজপথের মঞ্চ থেকে আমলারা ঘোষণা করেছিলেন, তারা হবেন প্রজাতন্ত্রের সেবক, কোনোভাবেই সরকারের কর্মচারী নয়। তা সত্ত্বেও, আওয়ামী লীগ বিগত দেড় দশক ধরে বিদ্রোহী আমলাদের প্রণোদনার মাধ্যমে জনপ্রশাসনকে নিজস্ব দলীয় ছকে গড়ে তুলেছে। এ ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে শতভাগ। সঙ্গত কারণেই আমলারা এখন পরিণত হয়েছেন, প্রজাতন্ত্রের সেবক থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের অনুগত কর্মচারীতে। এমন সুপরিকল্পিত মহাকর্মযজ্ঞের মধ্যে অনুগত কর্মকর্তাদের শাস্তিমূলক অবসরে পাঠানো নিঃসন্দেহে বড় ধরনের ব্যত্যয় ও ছন্দপতন। ঘটনার জেরে জনপ্রশাসনে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক আর রাজনৈতিক মহলে উৎকণ্ঠা। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে তা একবারেই হওয়ার কথাও নয়। কারণ বর্তমান সরকারের প্রতি আমলাদের আনুগত্য অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় প্রশ্নাতীত। আমলারা ‘জনতার মঞ্চ নীতি’ ত্যাগ করেছে বহু আগে। দলীয় সরকারের অধীন বিগত দু’টি একতরফা ও বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনে একাট্টা হয়ে কাজ করেছে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে। নূরুল হুদার অধীনেই অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালের নিশিরাতের কলঙ্কিত নির্বাচন।
আচমকা এই শুদ্ধি অভিযান সম্পর্কে নানা জল্পনা-কল্পনা ও গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ছে। বিজ্ঞজনদের কেউ কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগ জনপ্রশাসনে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের ভ‚ত দেখতে পাচ্ছে। বিপদ আসন্ন। সময় থাকতেই নেয়া হয়েছে প্রতিষেধক ব্যবস্থা। অথচ দলটি নিজেই বিদ্রোহীদের আসকারা দিয়ে তৈরি করেছে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, তথ্যসচিব মকবুল হোসেনের চাকরিচ্যুতির অন্তর্নিহিত কারণ সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। মন্ত্রীর বক্তব্য থেকে এটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, একটি অন্তর্নিহিত কারণ আছে যা প্রকাশ করা যাচ্ছে না। বিষয়টি হয়তো খুবই স্পর্শকাতর। প্রকাশ পেলে সরকারের অধিকতর ক্ষতিসহ আমলাতন্ত্রে জটিলতা ও অসন্তোষ বাড়তে পারে। অন্য দিকে, কথিত শুদ্ধি অভিযানের শিকার মকবুল হোসেন বলেছেন, তিনি ৯ বছর বয়স থেকে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ করে আসছেন। পরবর্তী সময়ে ছাত্রলীগের অনেক দায়িত্বশীল পদ অলংকৃত করেছেন। সচিবের কথাবার্তায় পেশাদারিত্বের লেশমাত্র নেই। মনে হয় তিনি যেন আওয়ামী লীগের আজীবন ক্যাডার। তারপরও চাকরি হারিয়েছেন। একই দফতরের মন্ত্রী ও সচিবের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, প্রকৃত ঘটনা প্রকাশে সমস্যা আছে। সামনের দিনগুলোতে এমন আরো অনেক কিছু সরকারের পরিকল্পনায় আছে। সত্য বেরিয়ে পড়লে জটিলতা বাড়তে পারে। এ কারণেই বর্তমানে উচ্চপদস্থ আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে আসা হয়েছে কঠোর নজরদারির মধ্যে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের ধারণা, ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে একটি গণজাগরণ আসন্ন। এর আলামত ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। হত্যা, হামলা, মামলা, জেল, জুলুম ও নির্যাতন উপেক্ষা করে চলমান বিএনপির বিভাগীয় প্রতিবাদ সমাবেশগুলোতে লাখো জনতার ঢল নামছে। সমাবেশগুলো সাক্ষ্য দিচ্ছে, মানুষ এই সরকারের পতন চায়। হৃত ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায়। এতে স্বৈরতন্ত্রের ভিতে কাঁপন ধরেছে। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে সরকারের জন্য উত্তর কোরিয়ার একদলীয় স্বৈরতান্ত্রিক মডেলের আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠান ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। বাংলাদেশের মানুষ এটি ভুলে যায়নি যে, দ্য গার্ডিয়ানসহ বিশ্বের বেশ কিছু নামকরা সংবাদমাধ্যম ২০১৮ সালের কলঙ্কিত নির্বাচন ও তার ফলাফলকে উত্তর কোরিয়া মডেল আখ্যা দিয়েছিল। অতএব আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই আমলাতন্ত্র ও জনপ্রশাসনকে শতভাগ আনুগত্যশীল ক্যাডার দিয়ে সাজাতে হবে। যাদের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ-সংশয় রয়েছে তাদের বিদায় করে দিতে হবে। অনুগতদের প্রদত্ত অবৈধ-অযাচিত পুরস্কার-প্রণোদনা দিয়ে লক্ষ্য অর্জন ব্যর্থ হওয়ায়, শুদ্ধি অভিযানই এখন একমাত্র বিকল্প।
আমলা-পুলিশের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল সরকার কেন হঠাৎ খড়গহস্ত হলো? গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পরবর্তী সংসদ নির্বাচন প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সন্দেহভাজন আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই একজন সচিব ও তিনজন পুলিশ সুপারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের অনুগত নয় এমন উচ্চপদস্থ আমলাদের একটি তালিকা করেছে সরকার। তাদের আগামী নির্বাচনের আগেই বিদায় করে দেয়া হবে। বিগত দু’টি বিতর্কিত নির্বাচনের সময় এসব আমলাকে সহ্য করা হলেও আসন্ন নির্বাচনের সময় তাদের আশেপাশে দেখতে চায় না সরকার। বিরাজমান গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কট, বিদ্যুতের লোডশেডিং ও দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতিতে জনমনে সৃষ্ট তীব্র ক্ষোভের প্রেক্ষাপটে অনেক আমলাকেই এখন সন্দেহের চোখে দেখছে সরকার। ক্রমাগত জনদুর্ভোগের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সরকারের জনবিচ্ছিন্নতা। একই সাথে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপও লক্ষ্যণীয় মাত্রায় পৌঁছেছে। সামনে ভরাডুবির আশঙ্কা। সুযোগসন্ধানী আমলারা যেকোনো সময় ভোল পাল্টে ফেলতে পারে। তাই সরকারের এই অতিসতর্ক পদক্ষেপ।
তবে, আমলাদের বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া একবারেই নতুন কোনো ব্যাপার নয়। প্রতিটি সরকারের আমলেই পেশাগত দক্ষতা ও মেধার মূল্যায়ন না করে দলীয় আনুগত্যকে গুরুত্ব দিয়ে পদোন্নতি, পদায়ন ও অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিএনপির শাসনামলও এর ব্যতিক্রম নয়। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও স্বজনপ্রীতিতে জনপ্রশাসনের শৃঙ্খলা, নিষ্ঠা, দক্ষতা, ঐক্য ও সংহতি বিনষ্ট হয়েছে বেশ আগেই। আর এই অশুভ প্রক্রিয়া অনুসরণে ‘চ্যাম্পিয়নশিপের’ কৃতিত্ব দাবি করতে পারে একমাত্র আওয়ামী লীগই। নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে অনুগত ও সুযোগসন্ধানী আমলাদের উসকানি-আসকারা দিয়ে রাজপথে নিয়ে আসে। দলীয় দাবির সমর্থনে তাদের দিয়ে স্থাপন করে ‘জনতার মঞ্চ’। এটি ছিল জনপ্রশাসন ইতিহাসের এক ন্যক্কারজনক ঘটনা। সামরিক স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ১৫ বছরের নির্বাচনী গণতান্ত্রিক সরকারের জামানায় আমলা-রাজনীতিবিদদের সম্পর্ক নতুন মোড় নেয়। বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের কলঙ্কিত নির্বাচনে আমলারা নিন্দনীয় ভূমিকা পালন করে জনগণের দুষমনে পরিণত হয়েছে। একই সাথে মারাত্মক বৈধতা সঙ্কটে নিমজ্জিত আওয়ামী লীগ তার ক্ষমতার তৃতীয় মেয়াদের শেষ প্রান্তে এসে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রত্যেকটি স্তরে দলীয় সমর্থকদের পদায়ন করেছে ২০২৪ সালের নির্বাচনে কারচুপির জন্য।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা আরো বলছেন, বাংলাদেশের সংবিধান স্বীকৃত বহুদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থায় একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়াস নেয়া হয়েছে বারবার। কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কখনো সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কখনো সৃষ্টি করা হয়েছে অনুগত বিরোধী দল। কার্যকর বিরোধী দল শূন্য জাতীয় সংসদ আওয়ামী লীগের লালিত স্বপ্ন। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় গেছে তখনই একদলীয় শাসন কায়েম হয়েছে। অনুগত আমলাতন্ত্র ছাড়া একদলীয় রাষ্ট্র পরিচালনা একবারেই অসম্ভব। এ ব্যাপারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জুড়ি মেলা ভার। তাই তারা আমলাদের যোগ্যতা-দক্ষতা, নিয়মানুবর্তিতা ও সততার বিষয়ে মোটেও চিন্তিত নন। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ছাড়াই বিশেষ ক্যাডার নিয়োগ থেকে যে অশুভ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তা আজ পূর্ণ হয়েছে ষোলকলায়।
একটি জাতীয় দৈনিকে মন্তব্য করতে গিয়ে সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, ‘আমি সব সময় বলে আসছি, লিখে আসছি- প্রশাসন হবে দলমতের ঊর্ধ্বে। সবাই পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করবেন। কেউ রাজনীতি করবেন না। রাজনীতি করবেন রাজনীতিবিদরা। কর্মচারীরা কাউকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য যেমন চেষ্টা করবেন না তেমনি কাউকে ক্ষমতায় আনার জন্য ভ‚মিকা পালন করবেন না। একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক দেশের জন্য দলমত নিরপেক্ষ প্রশাসনের কোনো বিকল্প নেই। এটি খুবই জরুরি।’ জনতার মঞ্চের বিদ্রোহী আমলা ও সাবেক সচিব আবু আলম মো: শহিদ খান বলেছেন, ‘সব কিছুই দেশে প্রচলিত আইনের মাধ্যমেই করতে হবে। কেউ অন্যায় করলে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া কোনো সমাধান নয়। তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ ওই ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ড করার সাহস না পায়। এ ছাড়া যারাই প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযানের দাবি তুলুক না কেন, কোনো লাভ হবে না। আসলে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধতে কেউ চাইবে না।’ একদা বিদ্রোহী আমলা শহিদ খান তথ্যসচিবের বাধ্যতামূলক অবসরে ব্যথা পেয়েছেন এমনটিই বোঝা যাচ্ছে। আনুগত্যের এমন করুণ পরিণতি কারো কাম্য হতে পারে না।
আমরা ভালোভাবেই জানি, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে ঘটেছিল নজিরবিহীন আমলাবিদ্রোহ। ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচন আওয়ামী লীগসহ বেশ কিছু বিরোধী দল বর্জন করে। নির্বাচন শেষে বিএনপি সরকার গঠন করলে উচ্চপদস্থ আমলারা সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে রাজপথে নেমে আসে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একটি মঞ্চ স্থাপন করে। নাম দেয়া হয় জনতার মঞ্চ। সরকার পতনের লক্ষ্যে মঞ্চ থেকে টানা বিক্ষাভ কর্মসূচি আহ্বান করা হয়। সচিব মহিউদ্দিন খান আলমগীর নেতৃত্ব দেন ওই বিদ্রোহের। তিনি ঘোষণা করেন, ‘আমলারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, সরকারের চাকর না’। বিশ্লেষকদের অনেকেই জনতার মঞ্চ আন্দোলনকে বেআইনি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বলে অভিহিত করেছেন। তাদের দৃঢ় অভিমত জনতার মঞ্চকেন্দ্রিক আমলাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড জনপ্রশাসনের ঐতিহ্যগত নিরপেক্ষতার মৃত্যু ঘটিয়ে তাকে রাজনীতিকরণ করেছে। অথচ আওয়ামী লীগ মহিউদ্দিনকে মন্ত্রী বানিয়ে সেই অশুভ তৎপরতাকে পুরস্কৃত করেছে। বর্তমানে অনুগত আমলাদের শাস্তি দিয়ে ভিন্ন এক বার্তা দিচ্ছে সরকার।
বিশ্লেষকদের অভিমত, দেশে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক স্থবিরতা বিরাজ করছে। এতে সর্বদা উচ্চকণ্ঠ ও সরব মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী সুশীল সমাজ দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাদের বেশির ভাগ সরকারের কাছ থেকে বৈষয়িক সুবিধা নিয়ে আত্মা বিক্রি করে দিয়েছেন। তাদেরকে নাগরিক অধিকার প্রশ্নে আগের মতো সোচ্চার ভ‚মিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। সরকারপন্থী সুশীলরা সমাজে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। ফলে সরকার আগের মতো তাদের ওপর নির্ভর না করে সম্পূর্ণভাবে আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কর্তৃত্ববাদী শাসন টিকিয়ে রাখতে সরকার আমলাতন্ত্রকে সম্পূর্ণভাবে করায়ত্ত করতে চায়। এ লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয়েছে বহুমাত্রিক শক্তিশালী ক্ষমতাবলয়। বেসামরিক-সামরিক আমলারা রয়েছেন এর কেন্দ্রবিন্দুতে। ক্ষমতাবলয়ের অভ্যন্তরে শতভাগ অনুগত কর্মকর্তা ছাড়া সন্দেহভাজন কারো উপস্থিতি সরকারের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। তাই কথিত শুদ্ধি অভিযান আগামী দিনগুলোতে আরো বেগবান হলে বিস্ময়ের কিছুই থাকবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা