দ্রব্য মূল্যের লাগাম টানা সম্ভব?
- শায়রুল কবির খান
- ১৯ অক্টোবর ২০২২, ১৪:১১
বর্তমান সরকারের আমলে অস্বাভাবিক পণ্য মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে। সরকার নৈতিকভাবে পরাজিত হওয়ায় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা দেখানো সম্ভব হয়নি। তারা সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারেনি, বাজার ব্যবস্থাপনায় ছিল দুর্বল।
সরকার উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে জোরদার করার বিষয়ে নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষায় শুরু থেকেই জোরাল প্রচেষ্টার অভাব ছিল। জনগণের স্বার্থ রক্ষায় জনবান্ধব সরকার কী ধরনের প্রচেষ্টা নিতে হয়, তা এই দেশের জনগণ প্রত্যক্ষ করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে।
১৯৮০ সালে সারাদেশে ১০ মাস বৃষ্টি হয়নি। তখন বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাসহ বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন যে খরায় কৃষকের উৎপাদন বন্ধ থাকায় দুর্ভিক্ষ হবে। ওই সময়ে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান উদ্যোগ গ্রহণ করলেন সারাদেশে খাদ্য গোডাউনের। বিশ্ব ব্যাংকসহ দাতা সংস্থার কাছে ঋণ সহায়তা চাইলেন।
প্রথমেই তারা অবাক হয়েছেন যেখানে খাদ্য উৎপাদন নেই- সেখানে আবার খাদ্য গোডাউন তৈরী! বিশ্বব্যাংক প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। প্রেসিডেন্ট সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে খাদ্য গোডাউন তৈরীর পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণ শুরু করলেন।
শুরুতে দাতা সংস্থার অসহযোগিতার মধ্যেও তিনি সারা দেশে প্রান্তিক পর্যায়ে খাদ্য গোডাউন তৈরি করেছেন, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করেছেন, খাদ্য সংরক্ষণ করেছেন এবং ১৯৮১ সালে ২ লাখ টন চাল রফতানি করেছেন।
একেই বলে জনবান্ধন সরকারের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার লক্ষ্য।
আধুনিক বিশ্বে প্রতিযোগিতা মূলক বাজার ব্যবস্থাপনায় পণ্যের দাম নির্ধারিত হয়ে থাকে পণ্যের মোট সরবরাহ ও মোট চাহিদার ভিত্তিতে।
চাহিদার চেয়ে পণ্য সরবরাহ কম হলে মূল্য বৃদ্ধি ঘটে, যতক্ষণ না চাহিদা ও সরবরাহে একটা সমতা না আসে।
বর্তমানে সরকারের সময়ে অস্বাভাবিক পণ্য মূল্য বৃদ্ধির কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো উৎপাদনের উপকরণ- যেমন সার, বীজ, তেল, বিদ্যুৎ, পানি, কীটনাশক ইত্যাদির প্রাপ্তি সহজিকরণ না করে বরং দফায় দফায় মূল্য বৃদ্ধি। অন্যদিকে সংরক্ষণ করা যায় এমন সব পণ্য বাজারে অস্থিতিশীল হয়ে উঠার কারণও অনেকাংশে দায়ী।
সংরক্ষণ পণ্যের গুদামে আকস্মিক তল্লাশি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সিলগালা করা কিংবা বাজারে বিক্রির জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। কালোবাজারির সাথে ব্যবসায়ী পণ্য সংরক্ষণকারীকে সমানভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে।
পণ্য সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিপণন কার্যক্রম। এখানে উদাহরণ হিসেবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিচক্ষণতার বিষয়টি উল্লেখ করা যায়। তিনি কতটা দূরদৃষ্টি দিয়ে বিবেচনা করে ছিলেন স্বাধীন-সার্বভৌম ৫৫ হাজার বর্গমাইলের নজিরবিহীন জনসংখ্যার ঘনবসতি একটি দেশে পণ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা।
তার সময়ে কৃষি খাতে কৃষি উপকরণ সহজিকরণ করা হয়, স্বল্প মূল্য কৃষি উপকরণ, সেচ পাম্পসহ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
নিত্য পণ্য যেকোনো পণ্য উৎপাদনের পর সংরক্ষণ করেই চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহের মধ্যে দিয়ে সম্পূর্ণ হয় বাজার ব্যবস্থাপনা। মৌসুমভিত্তিক উৎপাদিত পণ্যের ক্ষেত্রে তা আরো গুরুত্বপূর্ণ। সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকলে অ-মৌসুমে আমরা চাল, ডাল, পেঁয়াজ রসুনসহ সারা বছরব্যাপী পাওয়া সম্ভব হতো না এবং পানির দরে বিক্রি করতে হতো। সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত কার্যক্রমের ফলেই কৃষি পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল থাকে। যথেষ্ট প্রতিযোগিতা থাকলে সংরক্ষণকারী পণ্য অতিরিক্ত সময়ের বেশি এক দিনও ধরে রাখবে না।
অথচ পণ্য মূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী সরবরাহ ও চাহিদার অবস্থাপনা। সেখানে মনযোগ না দিয়ে প্রথমেই আঘাতটা করা হয় সংরক্ষণকারীর ওপর। অবশ্য সপ্তাহ কয়েক পরেই বাজারে আরো বিরূপ প্রতিক্রিয়া কর্তৃপক্ষকে পিছুটান নিতে হয়। ততদিনে সরবরাহ ব্যবস্থা সঙ্কটে আরো দাম বৃদ্ধি পায়।
পণ্য আমদানি কারক সিন্ডিকেট কিংবা বাজার ব্যবস্থাপনায় যেকোনো পর্যায়ে সিন্ডিকেটে পণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণের সুযোগ তৈরি হলে ভোক্তাদের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়।
সেক্ষেত্রে ধরপাকড় হুমকি বরং বাজারে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ভীতি তৈরি করে। পণ্য সরবরাহে আরো বাধা-বিপত্তি তৈরি হয়। সিন্ডিকেট কিংবা কয়েকজনের আঁতাত ব্যবসা তৈরি হতে না দেয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি করার দায়িত্ব সরকারের।
আমদানিকারক কিংবা বাজারে যেকোনো পর্যায়ে ব্যবসায়ীকদের সিন্ডিকেট তৈরি হয় রাজনীতিকদের (ক্ষমতাসীন) পরোক্ষ অথবা প্রত্যক্ষ ব্যবসার সাথে যুক্ত থাকার সুযোগে।
বাজার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে জনবান্ধব সরকারের প্রধান ও জরুরি কাজ হলো যেকোনো পর্যায়ে ন্যায়সঙ্গত প্রতিযোগিতা নিশ্চিত রাখা। যেখানে পূজা-পার্বণ, ঈদ ছাড়া বাংলাদেশে সাধারণত পণ্য চাহিদা আকস্মিক বৃদ্ধি ঘটে না, সেখানে সাধারণ সময়ে চাহিদার সাথে সরবরাহের ঘাটতির কারণ কী বা অস্বাভাবিক পণ্য মূল্য বৃদ্ধি ঘটছে কেন?
সহজ উত্তর সরকার নৈতিকভাবে পরাজিত এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বল। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তন ব্যবস্থা হলো সুষ্ঠু নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। কিন্তু বর্তমান সরকার গত ২০১৮ সাল ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন অনৈতিক ভাবে জোরজবরদস্তির মাধ্যমে প্রশাসন দিয়ে ২৯ ডিসেম্বর মধ্য রাতেই ভোট চুরি করে দখল নিয়ে নেয়। সরকার প্রশাসনের উপর নির্ভরতায় নৈতিকভাবে পরাজিত থেকে জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে না। এরকম জবাবদিহিবিহীন সরকার ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা ও প্রশাসনিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করে থাকে। এই সরকার এরকম একটা ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে টিকে আছে। সরকার অতিরিক্ত ব্যায় মিটানোর জন্য ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিচ্ছে, অন্য দিকে ব্যাংক পরিচালকরা সুবিধা মতো লুটপাট করে অর্থ পাচার করছে।
কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের চুক্তি দফায় দফায় বৃদ্ধি করে জনগণের টাকা সরকার ভুর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে।
পরিবহন সেক্টরের কথা আর নাই বললাম। তারা কথায় কথায় ধর্মঘটের ডাক দিয়ে থাকে কাউকে তোয়াক্কা না করেই।
এই অব্যবস্থাপনায় 'দ্রব্য মূল্য উর্দ্ধগতি লাগাম টেনে ধরা সম্ভব?'
কখনো সম্ভব নয়, আজ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে সেখানে ও পুলিশ দিয়ে দমন-পীড়ন এবং গুলি চালাবে, রাজনৈতিক কর্মী পুলিশের গুলিতে শহীদ হবে, তাতে কী দাঁড়াল? একদিকে সরকার শক্তিশালী গোষ্ঠীর কাছে অসহায়, অন্যদিকে সাধারণ জনগণ সরকারের কাছে মূল্যহীন।
এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে, একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে। তা না হলে দিনে দিনে সবকিছুর মূল্য বাড়বে, সাধারণ জনগণের জীবনের মূল্য কমবে।
লেখক পরিচিতি : সদস্য, বিএনপি চেয়ারপার্সন প্রেস উইং ও বিএনপি মিডিয়া সেল
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা