৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সৎ দক্ষ ও দায়িত্বশীল পুলিশিং জাতি গঠনের অন্যতম নিয়ামক : বিশ্লেষণ

সৎ দক্ষ ও দায়িত্বশীল পুলিশিং জাতি গঠনের অন্যতম নিয়ামক : বিশ্লেষণ - প্রতীকী ছবি

মধ্যযুগ থেকে শুরু করে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত পুলিশিং কার্যক্রম কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া পরিবর্তিত, পরিবর্ধিত হয়ে আসছে, যেমন মহান সুলতানদের আমলে, মুহতাসিবের পদে অধিষ্ঠিত একজন কর্মকর্তা পুলিশিংয়ের দায়িত্ব পালন করতেন। ওই ব্যক্তি ছিলেন পুলিশ প্রধান, পাবলিক ওয়ার্কস এবং একই সাথে পাবলিক নৈতিকতার একজন পরিদর্শক। এ ছাড়াও শহরাঞ্চলগুলোতে কোতোয়ালরা পুলিশের দায়িত্ব পালন করতেন। শেরশাহ সুরি প্রবর্তিত পুলিশিং ব্যবস্থা সম্রাট আকবরের আমলে আরো সংগঠিত হয়েছিল। সম্রাট ফৌজদারি (সম্রাটের প্রধান প্রতিনিধি), মীর আদল এবং কাজী (বিচার বিভাগীয় প্রধান) এবং কোতোয়াল (বিচার বিভাগের প্রধান) প্রবর্তন করে প্রশাসনিক কাঠামোকে সংগঠিত করেছিলেন। এ ব্যবস্থা শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যকর ছিল এবং ঢাকায়ও তা প্রয়োগ করা হয়েছিল। অনেক জেলা সদর থানাকে এখনো কোতোয়ালি থানা বলা হয়। মুঘল আমলে কোতোয়াল একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবির্ভূত হন।

সরকারের প্রতিটি প্রশাসনিক ইউনিটে (জেলা) একজন ফৌজদার নিয়োগ করা হয়েছিল, যাদের অধীনে কিছু কামান এবং অশ্বারোহী বাহিনী ছিল। মুঘল আমলে একটি সুশুঙ্খল পুলিশ ব্যবস্থা ছিল, যদিও ব্রিটিশ আমলে সেরকম পেশাদার কোনো পুলিশ বাহিনী ছিল না। ব্রিটিশ আমলে (১৮৫৭-১৯৪৭) শিল্প বিপ্লবের প্রাথমিক পর্যায়ে, আর্থসামাজিক পরিবর্তনের কারণে ইংল্যান্ড যখন গুরুতর সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছিল, তখন একটি কার্যকর সংগঠিত পুলিশ পরিষেবার প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভব হয়েছিল। স্যার রবার্ট পিল, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, ১৮২৯ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একটি বিল উত্থাপন করেছিলেন যা লন্ডনে একটি সংগঠিত সিভিক পুলিশ তৈরি করেছিল। সামাজিক ব্যাধি এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে লন্ডন পুলিশের সাফল্য শুধু ইংল্যান্ডের জনগণই নয়, ইউরোপীয় ও আমেরিকার দেশগুলোর দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিল। ১৮৩৩ সালে প্রথম মিউনিসিপ্যাল পুলিশ ফোর্স সংগঠিত করার সময় নিউইয়র্ক শহর কিছু পরিবর্তনের সাথে লন্ডন মডেলটি অনুলিপি করেছিল। ১৮৫৮ সালে, ব্রিটিশ সরকার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। ১৮২৯ সালে পিলস অ্যাক্টের অধীনে সংগঠিত লন্ডন পুলিশের সাফল্য ব্রিটিশ সরকার ব্রিটিশ কনস্ট্যাবিউলারির মতো উপমহাদেশে পুলিশ ব্যবস্থা সংস্কার করতে উদ্বুদ্ধ করে।

উন্নত দেশের উপযোগী পুলিশ ব্যবস্থা গড়ে তোলার বাসনা এ দেশে কখনোই কার্যকর হবে না, যদি না রাজনৈতিকভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও পুলিশের আধুনিকায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। জনবান্ধব ও পেশাদার বাহিনী হিসেবে পুলিশকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শুধু আইনের কিছু ধারা-উপধারাকে সংযোজন বা বিয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের আধুনিকায়ন অর্জিত হবে না। প্রথমত, দেশের চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে পুলিশের আধুনিকায়নে সেবা সেক্টরকে ঢেলে সাজাতে হবে। প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা ওয়ার্ডে বিট পুলিশিং কার্যালয় স্থাপন, সাইবার অপরাধ দমনে স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট প্রতিষ্ঠা, দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিবেদিত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার সুবিধার্থে আলাদা মেডিক্যাল সার্ভিস গঠন, অনলাইন জিডি নেয়াকে আরো সহজতর ও বিস্তৃত করা, জনগণের আইনি সহায়তাকে আরো সুগম করার লক্ষ্যে সার্কেল অফিসের কার্যক্রমগুলো বেগবান করা, পুলিশ সদস্যদের আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, শক্তিশালী মনিটরিং ও জবাবদিহিতা ব্যবস্থা চালু করা, হাইওয়ে পুলিশকে সমৃদ্ধিশালী করে গড়ে তোলা, অতীব জরুরি। এতে দীর্ঘসূত্রতা বা সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই। ঔপনিবেশিক প্রভাব কাটিয়ে পুলিশকে যদি জনগণের হতে হয় এবং জনগণের সেবার মধ্য দিয়েই সরকারের দায়িত্ব পালন করতে হয়, তবে পুলিশি ব্যবস্থার চেয়েও সরকার ব্যবস্থার দুষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন অধিক জরুরি। সম্মতিভিত্তিক পুলিশিং পুলিশের একার কাজ নয়। পুলিশকে জনগণের হতে হলে পূর্বতন উপনিবেশগুলোর জন্য বিউপনিবেশায়নের রাজনীতির বিকল্প নেই।

আবহমান কাল থেকে পুলিশ বাহিনী ঐতিহাসিকভাবে সেবামূলক বাহিনী হিসেবে ব্রিটিশ সরকারের শাসনামল থেকে শুরু করে পাকিস্তান শাসনামলে ও বর্তমানে বাংলাদেশে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে আসছে। অতীতকাল থেকে কিছু পুলিশ সদস্যের বিরূপ কর্মকাণ্ডের কারণে সাধারণ মানুষ পুলিশকে সেবক নয়; শাসক কিংবা নির্যাতনকারী বাহিনী হিসেবে মনে করে থাকে। জনগণের আস্থা অর্জন করতে হলে প্রথমেই পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে বিশেষ করে থানা প্রশাসনে কর্মরত থানার ওসি থেকে শুরু করে পুলিশ কনস্টেবল পর্যন্ত সবাইকে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করতে হবে। কারণ জনগণ বিপদে পড়ে অসহায় অবস্থায় প্রথমেই থানার শরণাপন্ন হন। পুলিশ শত পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরও অপরাধ কমছে না।

প্রতিনিয়ত পুলিশ প্রশাসন জনগণের কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। এটি অনস্বীকার্য, এসব অপরাধ কঠোর হাতে দমন করতে হলে থানাকে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করে লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবমুক্ত করতে হবে।

পুলিশের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের নেতিবাচক মনোভাব আজকের নয়, অনেক পুরোনো। নিম্নপদের অফিসাররা সৎ থাকতে চাইলেও পারিপার্শ্বিক অবস্থা তাকে সৎ থাকতে দেয় না। কাজেই এই নেতিবাচক ধারণা সহসা বদলাবে না। তবে পুলিশ প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যরা যদি সদিচ্ছার পরিচয় দেন, তাহলে পরিস্থিতির অবশ্যই উন্নতি হবে। তবে দলীয়করণ, নিয়োগ বাণিজ্য, ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে পুলিশকে ব্যবহার ইত্যাদি অসৎ কার্যক্রম পুলিশ বিভাগকে সবসময় কলুষিত করছে। পুলিশ বিভাগকে অবশ্যই এসব অযৌক্তিক, অনৈতিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে হবে। আইন এমন একটি বিষয় যা জাতিকে শৃঙ্খলাবদ্ধ নিরাপদ রাখতে অপরিহার্য। এ আইন যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়েছে, কিন্তু প্রকৃত অর্থে প্রয়োগ হয়নি। পুলিশে যথেষ্টসংখ্যক নিষ্ঠাবান, কর্তব্যপরায়ণ, সৎ, দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। থানাকে জনকল্যাণে আনতে হলে থানা সংশ্লিষ্টদের আয় জীবন উপযোগী কি না সে বিষয়েও পদক্ষেপ নিতে হবে।

বেঁচে থাকার জন্য তাদের যেন অবৈধ পথ বেছে নিতে না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সারা বিশ্বেই যেসব পেশার মানুষ সমাজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সম্পৃক্ত তারা সন্তোষজনক বেতন পেয়ে থাকেন। এতে তাদের কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, জবাবদিহিতাও তৈরি হয়। পাশাপাশি, তারা উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পেশাদারিত্বের সাথে সফল ও সুচারুভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

আধুনিক বিশ্বে গণতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোতে পুলিশের কাছে নাগরিকদের প্রত্যাশা ব্যাপক। তাই সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা এবং পেশাদারিত্বের মাধ্যমে পুলিশি সেবা দ্রুত জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। পুলিশও তাদের কাজকর্মের মাধ্যমে জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করে জনগণের বন্ধুতে পরিণত হয়ে সমাজে আইনের শাসন সমুন্নত রাখবেন। সাথে সাথে পুলিশ সম্পর্কে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি বদলিয়ে বন্ধু হিসেবে ভাবতে হবে। হ্যাক্সলির মতে, পারস্পরিক সেবার মনোভাব জীবনকে মহিমান্বিত করে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে পুলিশের সব সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দেবেন। যেকোনো সমাজ ব্যবস্থাতেই পুলিশিং করা একটি দুরূহ কাজ; বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে। তবে এ ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীকে দক্ষ ও যোগ্য করে তোলার পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে সরকার এ বাহিনীকে একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের সেবামূলক বাহিনী হিসেবে জনগণের কাছে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এর পরও অতীতকাল থেকে কিছু পুলিশ সদস্যের বিরূপ কর্মকাণ্ডের কারণে সাধারণ মানুষ পুলিশকে সেবক নয়, শাসক কিংবা নির্যাতনকারী বাহিনী হিসেবে মনে করে আসছে। দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করাই একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক স্থিতিশীলতার পূর্বশর্ত। মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশকে জনবান্ধব হয়ে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। দেশের জনসাধারণ বাংলাদেশ পুলিশকে সেভাবেই দেখতে চায়।

পাকিস্তান আমলে ঔপনিবেশিক পুলিশ কাঠামোর কোনো কিছুই পরিবর্তিত হয়নি। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ পুলিশে নিয়োগ পদ্ধতি, কিছু কর্মপদ্ধতি, পুলিশের পোশাকে ও অন্য কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন হলেও মূল ঔপনিবেশিক কাঠামো বা মনোভঙ্গির কতখানি পরিবর্তন হয়েছে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। স্বাধীনতা-উত্তরকালে এই ঔপনিবেশিক কাঠামো থেকে পুলিশের অবশ্যই বেশ কিছু উন্নয়ন হয়েছে।

সেবার পরিধি ও মান বেড়েছে। লোকবল বেড়েছে। দক্ষতা বেড়েছে। কিন্তু মূল কাঠামো ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রায় নেই বললেই চলে। ঔপনিবেশিক কাঠামোর মতো যে সমাজে বা রাষ্ট্রে পুলিশিং সম্মতিভিত্তিক না হয়ে জোরভিত্তিক পদ্ধতিতে চলে, সে সমাজ বা রাষ্ট্রে কম কেইসফাইল হওয়া বাজে বা দুর্বল পুলিশিংয়ের লক্ষণ। কম কেইস মানে পুলিশকেই মানুষ ভয় করে এবং ছোটখাটো সমস্যা এড়িয়ে যায়, পুলিশও কম অপরাধ আবিষ্কার করে। বাংলাদেশ পুলিশের জনগণের কাছে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো উদ্যোগ সম্ভবত ‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’ চালুকরণ। কিন্তু সরকার ও পুলিশি ব্যবস্থার দৃষ্টিভঙ্গি বা দর্শনগত পরিবর্তন না করে এমন উদ্যোগেরও কাক্সিক্ষত ফল লাভের সম্ভাবনা কম। বাংলাদেশ পুলিশ চলে ঔপনিবেশিক টপ-ডাউন ভিত্তিতে, যেখানে উপর থেকে আদেশ আসে এবং তা নিচে প্রতিফলিত হয়। কিন্তু জনগণের পুলিশ হতে হলে তার চলার কথা বটম আপ ভিত্তিতে, যেখানে নিচের প্রয়োজনের ভিত্তিতে সাড়া দেবে উপর। বটম-আপ পদ্ধতির পুলিশিং এর মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।

একবিংশ শতাব্দীর দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে ইউরোপ ও আমেরিকার মতো পূর্ণ বিকশিত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর খণ্ডিত পুলিশ ব্যবস্থা যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ, সেখানে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল ও অনুশীলনরত গণতান্ত্রিক দেশের প্রচলিত কেন্দ্রীয় পুলিশ ব্যবস্থাকে নতুন করে খণ্ডবিখণ্ড করে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, কার্যকরী তদন্ত ও অন্যান্য পুলিশি সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। স্থানীয় সরকারের অধীন পুলিশ ব্যবস্থা যদি এতই কার্যকর হতো, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে এ ব্যবস্থা নিয়ে এত বিতর্ক উঠত না। যে ব্রিটেনের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সারা বিশ্বে অনুসরণীয় সেই ব্রিটেনের পুলিশ বাহিনীগুলোর ঐতিহাসিক ও ধারাবাহিক একীভূতকরণের প্রক্রিয়া আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় যে, খণ্ডিত পুলিশ জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম নয়। বলা আছে, গণসহযোগিতা পেলে বলপ্রয়োগের প্রয়োজন হয় না, গণসমর্থন আদায়ের জন্য প্রয়োজন আইন প্রয়োগে নিরঙ্কুশ নিরপেক্ষতা প্রদর্শন, প্রতিটি মানুষের প্রতি বন্ধুত্ব এবং সেবামূলক প্রবৃত্তি প্রদর্শন, ভদ্র আচরণ। অপরিহার্য না হলে বলপ্রয়োগ না করার এবং করলেও ঠিক যতটুকু প্রয়োজন তার বেশি নয়, অর্থাৎ ন্যূনতম। সবসময় জনগণের সঙ্গে এমন সম্পর্ক রাখা যাতে জনগণ মনে করেন, তারাই পুলিশ এবং পুলিশই জনগণ; নিজেদের কাঁধে বিচারিক দায়িত্ব তুলে না নেয়া। আর তাহলেই পুলিশ ও জনগণের দূরত্ব কমে আসবে এবং আস্থার সঙ্কট দূরীভূত হবে।

পরিশেষে বলা যায়, আগামী দিনে বাংলাদেশের সুশাসন কতটা সুদৃঢ় হবে তা নির্ভর করবে একটি জনবান্ধবমুখী পুলিশ প্রশাসনের ওপর। আজকে একটি বিতর্কিত প্রশ্ন পুলিশকে জনবান্ধব নীতি থেকে দূরে রেখে সরকারের সুবিধাভোগী শ্রেণীতে পরিণত করা হয়েছে তথা দলীয়করণ বিতর্কে বিতর্কিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের এ যাবৎকালের কোনো সরকারকেই এ বিতর্কের ঊর্ধ্বে বলা যায় না। তবে মোটা দাগে পুলিশের সঠিক নেতৃত্ব ও চেইন অব কমান্ডের মাধ্যমে একটি নির্ভরযোগ্য পুলিশ প্রশাসন গঠিত হতে পারে। একটি রাষ্ট্রের যাবতীয় দায়িত্ব এককভাবে পুলিশের ওপর ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয়। এতে পুলিশ বাহিনীর ক্ষমতায়নের মধ্যে একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তারা তাদেরকে চরম ও পরম ক্ষমতার অধিকারী মনে করে এবং প্রকারান্তরে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সব কাজে তাদের প্রভুত্ব রক্ষা করার চেষ্টা করে থাকে। এমতাবস্থায় পুলিশিংকে পুলিশিং করার কোনো বিকল্প নেই। অতএব নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, সেবামুখী পুলিশ প্রশাসনে জাতির ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি। অধিকন্তু কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থাও শক্তিশালী স্থানীয় সরকারের প্রধান চাবিকাঠি। সর্বোপরি সৎ, দক্ষ ও দায়িত্বশীল পুলিশিং ছাড়া সমাজ ও রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না। সুতরাং এ কথা বলা যায় যে, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক পুলিশিংয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রকৃত কল্যাণ সম্ভব হবে।

লেখক : কলামিস্ট ও গবেষক, সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি


আরো সংবাদ



premium cement