৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

তথ্য প্রকাশে হতে হবে দায়িত্বশীল

তথ্য প্রকাশে হতে হবে দায়িত্বশীল - ফাইল ছবি

এক সময় ব্লগ ছিল কেবল ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। কিন্তু বর্তমানে এর জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় এখন এটি হয়ে উঠেছে মতপ্রকাশ, জনমত তৈরি ও বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তর আলোচনা, গবেষণার উন্মুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে। বর্তমানে এ ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারীরা নিজ নিজ ভাবনা, ক্ষোভ, স্বপ্ন, বিশ্লেষণধর্মী চিন্তাচেতনা, গবেষণা, ছবি, ভিডিও, অডিও সহজেই তুলে ধরতে এবং নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছেন।

শুধু তাই নয়, সামাজিক আন্দোলন বা যেকোনো ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির লক্ষ্যেও ওই ওয়েবসাইট বিশেষ ভূমিকা পালন করছে, যা ব্লগের জনপ্রিয়তা বাড়াতে বিরল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি, আরব বসন্ত, অকুপাই ওয়ালস্ট্রিটের মতো বড় বড় আন্দোলনে জনমত সৃষ্টিতে তরুণ প্রজন্ম বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে এসব ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যমে। ব্লগের মাধ্যমে পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই আজ বিশ্বে নারী সাহসিকতার উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বিশেষ করে চিরায়ত গণমাধ্যমগুলো যে বিষয়গুলোকে সহজেই তুলে ধরতে পারে না, সেসব ব্লগে তুলে ধরা যাচ্ছে, যা জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। এসব ওয়েবসাইটের বা ব্লগের ভালো দিকগুলো গ্রহণ এবং খারাপ দিকগুলো বর্জন করতে হবে, যা জরুরি।

এ ক্ষেত্রে সবাইকে তথ্য প্রচার ও পরিবেশনের ক্ষেত্রে অধিকতর সজাগ থাকতে হবে। পালন করতে হবে দায়িত্বশীল ভূমিকা। পরিবেশিত তথ্য যেন দেশ, জাতি, সমাজ ও ব্যক্তিজীবনে কোনো ক্ষতিসাধন না করে, সে ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর সদিচ্ছার পাশাপাশি সাইবার অপরাধ বন্ধ ও সামাজিকমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধি অধিক প্রয়োজন বলে মনে করি। মূলত সুস্থ ধারার যুক্তিসম্পন্ন মতামত প্রকাশকারী ও দেশপ্রেম সচেতন ব্লগারদের সার্বিক প্রচেষ্টাই পারে অসুস্থ ব্লগিং চর্চা প্রতিহত করে এর ব্যবহারকে আরো অধিক গ্রহণযোগ্য করে তুলতে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন শুধু ব্লগারদের দেশপ্রেম ও সদিচ্ছা।

বর্তমানে তথ্যপ্রাপ্তি ও প্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের আন্তরিক প্রচেষ্টা, গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতার বাসনার পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার যে অঙ্গীকার, তাকে বিনষ্ট করতে ও সামাজিক যোগাযোগেরমাধ্যম হিসেবে পরিচিত ব্লগগুলোকে বাধাগ্রস্ত করতে এর সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি অসুস্থ ব্লগিং চর্চা করছেন যা কাম্য নয়। এ ধরনের ওয়েবসাইটে এক বা একাধিক ছদ্মনাম ও ভিন্ন পরিচয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে অথবা কৌশলে অন্যের অ্যাকাউন্টের গোপন তথ্য জেনে অবৈধ ও অনৈতিক কার্যকলাপ ও অশ্লীলতার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির অপব্যবহার করে যাচ্ছেন। ফলে এ ধরনের যোগাযোগ মাধ্যম তা ব্যবহারকারীদের কাছে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ শাস্তি কার্যকর না হওয়ায় এর মাত্রা ক্রমেই বেড়ে চলছে, যা দুঃখজনক। দ্রুত এ অবস্থার অবসান হওয়া জরুরি বলে মনে করি।

মূলত যথাযথ আইনি দুর্বলতা, সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা, যথাযথ শাস্তি বাস্তবায়ন না হওয়া, অপরাধ বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক অধিক কার্যক্রম গ্রহণ না করা, অপরাধীদের শনাক্তকরণে ব্যর্থতা, এক ব্যক্তি কর্তৃক ভিন্ন ভিন্ন নামে একাধিক অ্যাকাউন্ট করার সুবিধা পাওয়া; একদল অন্য দলকে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার সুবিধা পাওয়া, মানুষের ইমেজ নষ্ট করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি ইত্যাদি কারণে এ ধরনের অপরাধ সমাজে বেড়েই চলছে। এমন এক পরিস্থিতিতে প্রয়োজন অধিক নজরদারির মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসা। পাশাপাশি এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সার্বিক সহযোগিতাও একান্ত জরুরি বলে মনে করি। এ ধরনের অপরাধ সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের অধিক অজ্ঞতা এ ধরনের অপরাধের মাত্রা বাড়াচ্ছে বলে আমরা মনে করি। সে কারণে অপরাধীদের ভয়াবহ শাস্তির বিষয়ে সজাগ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করাও একইভাবে প্রয়োজন বলে মনে করি।

আইন করে এ ধরনের অপরাধ বন্ধ করা যাবে না; কারণ আমাদের দেশের অধিকাংশ ব্লগার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কোনো না কোনো মত, দল, গোষ্ঠী বা ব্যক্তির সঙ্গে জড়িত। তারা তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি, দলীয় লেজুড়বৃত্তি বজায় রাখতে এমন সব তথ্য পরিবেশন করে, যা দেশের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই ব্লগারদের তথ্য পরিবেশনে সেন্সরশিপের ওপর যথাযথ জ্ঞান অর্জন এবং এর যথাযথ নিয়মগুলো মেনে তথ্য ও মতামত প্রকাশ করার বিষয়ে সবারই গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা সেন্সর মেনে তথ্য পরিবেশিত হলে দেশ তথা জাতি অধিক উপকৃত হবে। পাশাপাশি বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।

অপরাধীদের শনাক্ত করতে সংশ্লিষ্টদের অধিক দক্ষ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে; অপরাধ সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্ট কম্পিউটার ও ব্যবহারকারীকে শনাক্তকরণে অধিক পারদর্শী হতে হবে; নজরদারি বাড়াতে হবে; আইনের যথাযথ প্রয়োগ বাস্তবায়ন করতে হবে; সাইবার ’ল প্রণয়ন করতে হবে; এক ব্যক্তি যেন একের অধিক ছদ্মনামে অ্যাকাউন্ট না খুলতে পারে, যে বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে; সাইবার অপরাধ ও এর শাস্তি সম্পর্কে ব্যবহারকারীকে সচেতন করতে বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। যে কোনো পরিস্থিতিতে সঠিকভাবে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে হবে। সমাজ ও দেশকে এগিয়ে যেতে হলে সঠিক তথ্যটা সবার দরকার। সে কারণে তথ্য প্রকাশে সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। একই সাথে আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, আমাদের যে কৃষ্টি তাও তুলে ধরতে সবাইকে কাজ করতে হবে। মিথ্যে বানোয়াট তথ্য প্রদান করার মতো হীন কার্যকলাপ থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। দেশ ও জাতিকে সার্বিক কল্যাণে যা জরুরি।

সর্বোপরি মনে করি সামাজিক যোগাযোগের এ মাধ্যমটি যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সবার সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে ও প্রযুক্তির অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

লেখক : কলামিস্ট


আরো সংবাদ



premium cement
ইন্দুরকানীতে মাসুদ সাঈদীর আহ্বানে তুরস্কের ইজার ক্যাপাসি সংস্থার সহায়তা এক ম্যাচ রেখেই সিরিজ জয় জ্যোতিদের আমদানি বন্ধ থাকায় রাজস্ব আয় কমেছে দর্শনায় বগুড়া বার নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্যানেল জয়ী ‘কন্টেম্পোরারি বাংলা কয়্যার’ নামে নতুন স্যাম্পল প্যাক প্রকাশ পেয়েছে স্প্লাইস-এ গাজায় ইসরাইলি গণহত্যাকে হোলোকাস্টের সাথে তুলনা করল অক্সফোর্ড ইউনিয়ন বিয়ানীবাজারে নিখোঁজের একদিন পর কিশোরের লাশ উদ্ধার সিরিজ জয়ের খুব কাছে বাংলাদেশ পাবনায় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি রেজাউল, সম্পাদক বিপ্লব আশুলিয়ায় হত্যা মামলায় গ্রেফতার ২ ‘জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে গিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা নিজেই নিষিদ্ধ হয়ে গেছেন’

সকল