৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

খোলাফায়ে রাশেদার নির্বাচন পদ্ধতি

খোলাফায়ে রাশেদার নির্বাচন পদ্ধতি - প্রতীকী ছবি

মহানবী সা: মদিনা রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে বরিত হয়েছিলেন। মূলত তিনি ছিলেন গোটা মানবজাতির পথপ্রদর্শক ও অভিভাবক। কালামে পাকে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের রহমত বা মুক্তির দূত হিসেবে প্রেরণ করেছি।’ মহানবী সা: জীবনের শুরুতেই মানবতার সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ‘হিলফুল ফুজুল’ নামক সেবা সংস্থা গঠন করেন, যার মাধমে সর্বস্তরের মানুষের সেবা দিতেন। অত্যাচারীকে বাধা দান, অত্যাচারিতকে সহায়তা করতেন। তার প্রচেষ্টায় কাবাঘর পুনর্নির্মাণের সময় পবিত্র ‘হাজরে আসওয়াদ’ পুনঃস্থাপন নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কার নিরসন হয়। মানবসেবার মাধ্যমে তিনি নবুয়তপ্রাপ্তির আগেই অবিশ্বাসীদের কাছে আল-আমিন উপাধি পেয়েছিলেন।

চল্লিশ বছর বয়সে মহানবীর ওপর রিসালাতের দায়িত্ব অর্পিত হয়। এসময় একত্ববাদের প্রচার শুরু করলে জনগণ তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয়। বিক্ষুব্ধ জনমণ্ডলী একত্ববাদের দাওয়াত থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে মহানবীর কাছে লোভনীয় তিনটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন: ক. তাঁকে মক্কার রাজা বা শাসক বানিয়ে দেবে। খ. আরবের একাধিক সেরা সুন্দরী রমণীকে অর্পণ করবে। গ. তাঁকে আরবের সেরা ধনসম্পদের মালিক বানিয়ে দেবে।

মহানবী সব প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, তার এক হাতে সূর্য ও আরেক হাতে চন্দ্র এনে দিলেও তিনি রিসালাতের দায়িত্ব বা সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হবেন না। তাঁর এ দৃঢ় উত্তরের প্রতিক্রিয়ায় মক্কার অবিশ্বাসীরা তাঁর ও তাঁর সহচরদের প্রতি অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এসব অত্যাচার নিপীড়নের মাঝেও তিনি মানবতার সেবাকর্ম অব্যাহত রাখেন। অবশেষে মক্কার অবিশ্বাসীরা তাঁকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। অবস্থার চরম অবনতি ঘটলে আল্লাহ্ পাকের নির্দেশে তিনি মদিনায় হিজরত করেন। তাঁর সহচরদেরও মদিনায় হিজরত করার নির্দেশ দেন। তাঁর সেবাকর্ম হিজরতের পর মদিনায়ও অব্যাহত ছিল। সে কারণে মদিনার মুসলিম ও অমুসলিম নির্বিশেষে সবাই সম্মিলিতভাবে মহানবীকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বরণ করে নেন।

মহানবীর ইন্তেকালের পর ইসলামের প্রথম খলিফা নির্বাচনে সাহাবিদের মাঝে মতপার্থক্য দেখা দেয়। আনসার সাহাবিরা তাদের মধ্য থেকে একজন খলিফা নির্বাচনের জন্য মতামত প্রকাশ করেন। ‘সাকীফায়ে বানু সায়িদা’ নামক স্থানে আলোচনার মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে হজরত আবু বকর রা: প্রথম খলিফা হিসাবে নির্বাচিত হন। হজরত আবু বকর রা: ইন্তেকালের সময় তিনি বিশিষ্ট সাহাবিদের মতামতের ভিত্তিতে হজরত ওমর রা:কে তার স্থলাভিষিক্ত মনোনীত করেন। দেশের আপামর জনসাধারণ এ নির্বাচন পদ্ধতিকে স্বাগত জানায়। হজরত ওমর রা: ছিলেন সুমহান শাসকের মূর্তপ্রতীক। তিনি ন্যায়ের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত কোমল ও অন্যায়ের প্রতি বজ্রকঠোর।

হজরত ওমর রা: দীর্ঘ শাসনের পর তার মৃত্যুকালীন সময় উপস্থিত হলে তিনি পরবর্তী খলিফা নির্বাচনের জন্য ছয় সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচনী বোর্ড গঠন করে যান। তিনি ওসিয়ত করেন যে, তার মৃত্যুর পর এই সদস্যমণ্ডলীর মধ্য থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে খলিফা নির্বাচিত হবেন। নির্বাচনী বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে হজরত উসমান, হজরত আলী, হজরত তালহা, হজরত যুবায়ির, হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ, হজরত সা’দ রা: অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সদস্যমণ্ডলী দীর্ঘ আলোচনার ভিত্তিতে হজরত উসমান রা:কে ইসলামের তৃতীয় খলিফা হিসেবে নির্বাচিত করেন। এ পদ্ধতি ছিল সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার।

হজরত উসমান রা: দীর্ঘদিন খিলাফত পরিচালনার পর দুঃখজনকভাবে বিদ্রোহীদের হাতে শাহাদৎ বরণ করেন। যে কারণে তিনি মৃত্যুকালীন সময়ে খিলাফতের উত্তরাধিকারী নির্বাচনে কোনো মতামত বা পদ্ধতি রেখে যেতে সমর্থ হননি। হজরত উসমান রা: শাহাদৎকে কেন্দ্র করে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য মদিনায় উপস্থিত সর্বস্তরের জনগণ সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হজরত আলী রা:কে ইসলামের চতুর্থ খলিফা হিসেবে নির্বাচিত করেন। সমগ্র মুসলিম বিশ্বে হজরত আলী রা: খিলাফত স্বীকৃতি লাভ করে। হজরত আলী রা: আততায়ীর হাতে শাহাদৎ বরণ করেন।

তিনিও কাউকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যেতে পারেননি। হজরত আলী রা:-এর মৃত্যুর পর উপস্থিত জনসাধারণ হজরত হাসান রা:কে খলিফা হিসেবে মনোনীত করেন। হজরত হাসান রা: ছয় মাস খিলাফতের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত ছিলেন। মহানবী সা: ভবিষ্যদ্বাণী ছিল আমার মৃত্যুর পর ত্রিশ বছর খিলাফতের শাসন কায়েম থাকবে। অতপর রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। বাস্তবেও তাই হয়েছিল। হজরত আবু বকর রা:-এর শাসন আমল থেকে শুরু করে হজরত হাসান রা: স্বল্পকালীন শাসনের মধ্য দিয়ে খিলাফতের ত্রিশ বছরের শাসনের পূর্তি হয়।

বর্তমানের এক শ্রেণীর আলেম ইসলামে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হারাম বলে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। খোলাফায়ে রাশেদার নির্বাচন পদ্ধতির আলোকে তাদের মতামত পর্যালোচনা করা উচিত। কেবল আবেগের বশবর্তী হয়ে তথ্য প্রমাণের বাইরে নীতিনির্ধারণী বক্তব্য ইসলামী আদর্শের পরিপন্থী। বর্তমান এই ফেতনা ফাসাদের যুগে কেবল ব্যক্তি প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী জীবন দর্শনের বিকৃতি করা কাম্য নয়।

লেখক : গবেষক, কলামিস্ট


আরো সংবাদ



premium cement
ইন্দুরকানীতে মাসুদ সাঈদীর আহ্বানে তুরস্কের ইজার ক্যাপাসি সংস্থার সহায়তা এক ম্যাচ রেখেই সিরিজ জয় জ্যোতিদের আমদানি বন্ধ থাকায় রাজস্ব আয় কমেছে দর্শনায় বগুড়া বার নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্যানেল জয়ী ‘কন্টেম্পোরারি বাংলা কয়্যার’ নামে নতুন স্যাম্পল প্যাক প্রকাশ পেয়েছে স্প্লাইস-এ গাজায় ইসরাইলি গণহত্যাকে হোলোকাস্টের সাথে তুলনা করল অক্সফোর্ড ইউনিয়ন বিয়ানীবাজারে নিখোঁজের একদিন পর কিশোরের লাশ উদ্ধার সিরিজ জয়ের খুব কাছে বাংলাদেশ পাবনায় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি রেজাউল, সম্পাদক বিপ্লব আশুলিয়ায় হত্যা মামলায় গ্রেফতার ২ ‘জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে গিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা নিজেই নিষিদ্ধ হয়ে গেছেন’

সকল