‘সারে জাঁহা সে আচ্ছা’ হিন্দুস্তান আজ কিসকা?
- মো: ইখতিয়ার উদ্দিন রিবা
- ০৪ অক্টোবর ২০২২, ২০:১২
ইসলামের আবির্ভাবের আগে সমাজে নারীরা ছিলেন অস্থাবর সম্পত্তি। ভারতীয় সমাজেও এর ব্যতিক্রম না থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় এর বিধানে আট প্রকার বিয়ে অনুমোদনে; যা হলো- ১. কন্যাদানকে ব্রহ্ম বিয়ে ২. পুরোহিতকে কন্যাদানে দৈব বিয়ে ৩. একটি গাভী বা ষাঁড়ের বিনিময়ে পাত্রী খরিদকে আরসা বিয়ে ৪. সমশর্তের বিয়েকে প্রজাপতি; ৫. সম্মত মূল্যে পাত্রী খরিদকে অসুর বিয়ে ৬. পাত্রী অপহরণে রাক্ষসা বিয়ে ৭. ঘুমন্ত পাত্রী হরণকে পৈশাচা এবং ৮. স্বেচ্ছায় মিলনকে গন্ধর্ব বিয়ে বলা হয়। এ ছাড়াও স্ত্রীকে রাজি রেখে পাশা খেলার প্রচলন ছিল প্রাচীন ভারতে।
Encyclopaedia Britannica, vol-12, p-609-এ বলা হয়েছে, “The background of Muhammad’s Marital arrangements is the prevalence in Arabia of a matrilineal kinship system.... ... Muhammad was apparently attacking the pagan system of relationships. In this sphere, then, Muhammad was not satisfying his lusts but acting as a reformer.... and then developed into the Arab, of Islamic empire.” আরবে প্রচলিত মাতৃতান্ত্রিক বংশধারার (যাতে মায়ের দিক থেকে বংশ, মর্যাদা এবং উত্তরাধিকারের প্রমাণ খোঁজা হয়), যা পিতৃত্বকে উপেক্ষা করে এবং একই স্ত্রীলোকের একই সময় বহুপতি গ্রহণ মেনে নেয়ায় অনেক সময়ই যৌন আচরণ বিষয়ে বাছ-বিচারহীনতায় ঝুঁকে পড়ার পটভ‚মিকায় মোহাম্মদ সা:-এর বিয়ে সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা করা হয়। একজন মুসলমানকে চারজন স্ত্রীর অনুমতি দেয়া হলেও পবিত্র কুরআনে বহু বিয়ের কোনো সীমাবদ্ধতা না করলেও পিতৃতান্ত্রিক গোষ্ঠীসংক্রান্ত একটি নতুন প্রথার প্রবর্তনে দৃশ্যত এতে অনেক আরবই ঝুঁকে পড়ে। একজন স্ত্রীকে একসাথে মাত্র একজন স্বামীই গ্রহণ কিংবা তালাকপ্রাপ্ত হলে তার সম্ভাব্য কোনো সন্তানের পিতৃত্বের পরিচয়ের সন্দেহ দূরীকরণে তাকে পুনর্বিবাহের জন্য তিন মাস অপেক্ষা করার বিধান করা হয়। মোহাম্মদ সা: নিজেই ৯ জন স্ত্রী ও একজন খ্রিষ্টান উপপত্নী রেখে গেছেন। তার প্রতিটি বিয়ে স্ত্রীর পিতা ও আত্মীয়স্বজনের সাথে ঘনিষ্ঠতা স্থাপনের করণীয় বিষয়টি ছিল রাজনৈতিক।
সমকালীন অনেকে তার পোষ্যপুত্র জায়েদ ইবনে হারিসার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী জয়নবকে বিয়ে করাকে কলঙ্কজনক বলেছেন। অবশ্য পৌত্তলিক প্রথায় এটি ছিল অত্যন্ত নিকটাত্মীয়ের সাথে যৌনাচার। কিন্তু, মোহাম্মদ সা:-এর এই আত্মীয়তা ছিল অলীক। তাই পৌত্তলিক আত্মীয়তার প্রথাকেই দৃশ্যত তিনি আক্রমণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে মোহাম্মদ সা: তখন কামলালসা পরিতৃপ্তির জন্য নয়, বরং একজন সংস্কারকের কাজ করেছেন। তাঁর সবচেয়ে বড় তাৎপর্যপূর্ণ কৃতিত্ব হলো- একটি রাষ্ট্র ও একটি ধর্ম প্রতিষ্ঠা। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় গঠন করেছেন আরব গোষ্ঠীগুলোর জোট, যা তাঁর মৃত্যুর পরবর্তী ২০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে বাইজানটাইন (পূর্ব রোমান খ্রিষ্টান) ও পারস্য সাম্রাজ্যকে পরাজিত করে লিবিয়া থেকে পারস্য পর্যন্ত বিশাল ভূখণ্ড দখলপূর্বক আরব বা ইসলামী সাম্রাজ্যে বিকশিত করেছে।
Micropaedia, vol-1, p-167তে বলা হয়েছে
“Aishah bint abu Bakr, the third and most favoured wife of Prophet Muhammad..... she led an army against his successor, Ali, but was defeated in the Battle of the Camel. She was allowed to live quietly in Medina.” (হজরত আবু বকর রা:-এর কন্যা, মোহাম্মদ সা:-এর সবচেয়ে অনুগ্রহভাজন তৃতীয় স্ত্রী হজরত আয়শা রা: মোহাম্মদ সা:-এর মৃত্যুর পরে গুরুত্বপূর্ণ কিছু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। মোহাম্মদ সা:-এর সব বিয়েই ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ক্ষেত্রের উদ্দেশ্যটি ছিল সম্পর্ককে দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ করা আয়েশা রা:-এর পিতা হজরত আবু বকর রা:-এর সাথে, যিনি ছিলেন মোহাম্মদ সা:-এর সবচেয়ে বড় সমর্থক।
মোহাম্মদ সা: ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণের সময় হজরত আয়েশা রা: হন ১৮ বছরের সন্তানহীন বিধবা। তিনি রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় ছিলেন ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমান রা:-এর খেলাফতের (৬৪৪-৬৫৬ খ্রি.) আগ পর্যন্ত। হজরত আলী রা:-এর বিরুদ্ধেও তিনি এক সেনাবাহিনী উটের যুদ্ধে পরিচালনা করলেও পরাজিত হলে মদিনায় তার শান্ত জীবনযাপন মেনে নেয়া হয়)। উল্লেখ্য, ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে বদরের যুদ্ধের আগে ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দে বিয়ে হয় আয়শা রা:-এর, যার জন্ম ৬১৪ এবং মৃত্যু ৬৪ বছর বয়সে ৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায়। ১৯৩৭ সালে প্রথম ও এ পর্যন্ত বহুল প্রকাশিত আরবি ভাষাভাষী লেবাননের খ্রিষ্টানধর্মীয় ফিলিপ কে হিত্তির History of the Arabs বই-এর ১৭৯ পৃষ্ঠার ৩নং ফুটনোটে হাদিসকারক ইবনে হিশামের বইয়ের উদ্ধৃতিতে বিয়ের সময় হজরত আয়শা রা:-এর বয়স ৯-১০ বছর বলা হয়েছে, যা অনেক তথ্যে সমর্থিত। ইসলামেরও আনুমানিক প্রায় ৫০০ বছর আগে ভারতীয় বিশ্বাসের ব্রহ্মার মানসপুত্রের রচিত মনুসংহিতা বা মানর ধর্মশাস্ত্রেও ৮ থেকে ১২ বয়সের মধ্যে কন্যা বিয়ে দেওয়ার বিধিবদ্ধ বিধান করা হয়। এতে আরো বলা হয়েছে, গ্রাম্য কুক্কুট (মোরগ-মুরগি), হাঁস, চড়ুই, সারস, ডাহুক, পলাণ্ড (পেঁয়াজ) ও লসুন ভোজন করলে পতিত, অর্থাৎ জাতি যাওয়ার কথা। (তারাপদ লাহিড়ীর ‘ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, পৃষ্ঠা-৪৩ হতে’ তথ্যাটি উদ্ধৃত)।
এসব মানা না মানার বালাই আধুনিক ভারতে না থাকলেও প্রায় তিন হাজার বছরের ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় অনেকেই আজ স্বদেশীয় বিধর্মীয়দের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার গাত্রদাহে ভুগছেন।
Encyclopaedia Britannica, vol-9, P-928-তে বলা হয়েছে, “Therefore, two of Muhammad’s father-in law, highly respected early converts and trusted lieutenants, .... All of this occured before the prophet’s burial (under the floor of Aishah’s hut, alongside the courtyard of the mosque)” (অতএব, মোহাম্মদ সা-এর মৃত্যুর পরে তার দুই শ্বশুর, অতি সম্মানিত, শুরুতে ধর্মান্তরিত ও বিশ্বস্ত ঊর্ধ্বতন সহকর্মীর মধ্যে একজনকে নেতা মনোনয়নে মদিনাবাসীর উপরে অর্পিত দায়িত্বে স্থির করা হয় হজরত আয়শা রা:-এর পিতা হজরত আবু বকর রা:-কে। এসবই ঘটে মসজিদের উঠানের পাশে আয়শা রা:-এর কুঁড়েঘরের মেঝেতে মোহাম্মদ সা:-কে সমাধিস্থ করার আগে)।
পরিশেষে উল্লেখ্য, সাবালিকা হবার আগে বিয়ে দেয়ার বা বিয়ে বাজারে নিয়ে দরিদ্রদের কন্যা বিক্রয়ের আদৌ কোনো নজির প্রাক ইসলামিক যুগে সভ্যতার শিথিল যৌনাচারেও পাওয়া যায় না। এ ছাড়া উদ্ধৃত তথ্যের নিরিখে হজরত আয়শা রা:-এর বিয়েটি অস্বাভাবিক, অনৈতিক ও সমকালীন আরব্য সমাজ ব্যবস্থায় বেমানান হলে মোহাম্মদ সা:-এর প্রতি তার অগাধ পতিভক্তি থাকাটা কি ছিল সম্ভব? তাই ছয় বছরের নাবালিকা কন্যার বিয়েতে পিতা হজরত আবু বকর রা:-এর সম্মতির কল্পনা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপবাদ বৈকি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা