নামাজ মুসলমান হওয়ার দলিল ও প্রমাণ
- প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী
- ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:৪৯, আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৫:৫৮
জুমার দিন আমাদের ঈদের দিন। আজকের দিনের প্রধান কাজ জুমার সালাত আদায়। তাই আমাদের সবারই সে জন্য প্রস্তুতি থাকা দরকার। জুমার দিনে খুতবা শ্রবণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খুতবা মনোযোগের সাথে শুনতে হয়। খুতবা শোনার জন্য আজানের সাথে সাথে মসজিদে উপস্থিত হওয়া একান্ত প্রয়োজন। মসজিদে সকাল সকাল আসার জন্য রাসূলুল্লাহ সা: নানাভাবে তাগিদ দিয়েছেন। বলুন দেখি, আমাদের পক্ষে একটি উট কোরবানি করা কি আদৌ সম্ভব? অথচ রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, মসজিদে প্রথম আগমনকারী ব্যক্তি একটি উট কোরবানির সওয়াব লাভ করে। এরপর পর্যায়ক্রমে গরু, ছাগল কোরবানির সুসংবাদ শুনিয়েছেন। আবার প্রথম কাতারে আসন গ্রহণের ফজিলত প্রসঙ্গে বলেছেন, মানুষ যদি বুঝত প্রথম কাতারে বসায় কত সওয়াব তাহলে লটারি করার প্রয়োজন হতো। সামনের কাতার ফাঁকা রেখে পেছনে বসলে মানুষকে ডিঙিয়ে যেতে হয়, যেটা আদবের খেলাপ এবং হাদিসে নিষেধ রয়েছে। ফেরেশতারা মুসল্লিদের আগমনের ভিত্তিতে সওয়াব লিখতে থাকেন। খতিব খুতবা দান শুরু করলে ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুতবা শোনা শুরু করুন। বিলম্বে এলে আপনি জুমার নামাজের ফায়দা থেকে বঞ্চিত হবেন।
জুমার নামাজ যেমন আমাদের ওপর ফরজ তেমনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করাও ফরজ। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, আজান শুনে কেউ মসজিদে না এলে আমার ইচ্ছা হয় আমার স্থলে কেউ ইমামতি করুক আর আমি গিয়ে তাদের ঘরগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিই। দিই না এ কারণে যে, সেখানে নারী ও শিশু রয়েছে। রাসূল সা: আগুন দিয়ে বাড়িঘর জ্বালাতে চান, তাহলে বুঝতে হবে মসজিদে না যাওয়া কত ভয়াবহ গুনাহ। উম্মে মাকতুম রা: একজন অন্ধ সাহাবি। রাসূলুল্লাহ সা: তাঁকেও একাকী নামাজ পড়ার অনুমতি দেননি। বলেছেন, তুমি কি আজান শুনতে পাও? বলেছেন, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সা: তখন বলেছেন, আজান শুনতে পেলে তোমাকে মসজিদে আসতে হবে। আলী রা: বলেছেন, মসজিদের যারা প্রতিবেশী তাদের মসজিদে গিয়েই নামাজ আদায় করতে হবে। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, মসজিদের প্রতিবেশী কারা? তিনি বলেছেন, যারা আজান শুনতে পায়।
রাসূলুল্লাহ সা: ওই মুসল্লিদের সুসংবাদ শুনিয়েছেন- যারা এশা ও ফজর জামাতের সাথে আদায় করে তাদের সমগ্র রাত ইবাদতের মধ্যে অতিবাহিত হয়। তিনি আরো বলেছেন, আমাদের ও মুনাফিকদের মাঝে পার্থক্য হলো এশা ও ফজরের সালাতে শরিক হওয়া। মুনাফিকরা ফজর ও এশার সালাতে শরিক হতে পারে না। এসব হাদিসের বর্ণনা থেকে আমরা সহজেই নামাজের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারি। রাসূলুল্লাহ সা: স্পষ্ট বলেছেন, নামাজ হলো ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য। যে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দিলো সে কুফরি করল। তাই আমরা যে মুসলমান তার দলিল ও প্রমাণ হলো নামাজ। নামাজ বেহেশতের চাবি। নামাজ ছাড়া আখিরাতে নিজেকে মুসলমান দাবি করার কোনো প্রমাণ থাকবে না। কাফেরদের সাথেই অবস্থান হবে। নিজেকে মুসলমান প্রমাণ করার জন্য মুনাফিকদের মসজিদে হাজির হতে হতো। কুরআনে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, তারা বড় শৈথিল্যসহকারে ও লোক দেখানো নামাজ পড়ে।
শিশু-কিশোরদের সন্তোষজনক উপস্থিতি মসজিদের একটি খুবই ভালো দিক। আপনারা শিশু-কিশোরদের পেছনে ঠেলে দেবেন না। ওরা যদি একটু ঠেলাঠেলি করে বা হাসাহাসি করে তাহলে নামাজের কোনো ক্ষতি হয় না। আপনারা তো জানেন, রাসূলুল্লাহ সা: সেজদায় গেলে তাঁর নাতিরা ঘোড়া বানিয়ে ঘাড়ে চড়ত। ফলে আপনারা শিশুদের প্রতি সদয় হবেন এবং বাড়ি থেকে শিশুদের সাথে করে আনবেন। আপনারা শুধু নিজেরা নামাজ পড়লে হবে না, আপনাদের বাড়িতে যারা রয়েছে তাদের এবং আশপাশের লোকজনকেও দাওয়াত দিতে হবে। সূরা আসরে আল্লাহ পাক কসম খেয়ে বলেছেন, চারটি গুণ না থাকলে মানুষ নিশ্চিতভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে। সেই গুণগুলো হলো- ঈমান ও নেক আমল এবং মানুষকে হকের দাওয়াত দান ও ধৈর্য ধারণের জন্য উৎসাহ জোগানো। মানুষকে সবসময় ভালোর দিকে ডাকতে হবে।
নামাজ আদায়ের পাশাপাশি আল্লাহ পাক তাঁর পথে খরচের জন্য জোর তাগিদ দিয়েছেন। আল্লাহর পথে খরচ অত্যন্ত বিস্তৃত। নিজের পরিবারের জন্য এবং আত্মীয়-স্বজন, গরিব-দুঃখী ও মসজিদ-মাদরাসার জন্য ব্যয় সবই আল্লাহর পথে ব্যয়। সূরা বাকারার শুরুতেই মুত্তাকিদের পরিচয় প্রসঙ্গে সালাত আদায়ের সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আমরা যা রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে’। তাই আল্লাহর পথে খরচের ব্যাপারে উদার হতে হবে। হাদিসে বলা হয়েছে, দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর নিকটে, লোকদের নিকটে ও জান্নাতের নিকটে, পক্ষান্তরে কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহ থেকে দূরে, মানুষ থেকে দূরে ও জাহান্নামের নিকটে। আমাদের মসজিদগুলো পরিচালিত হয় আপনাদের দানে। একটু উদার হাতে দিতে না পারলে মসজিদের সাথে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের সম্মানী প্রদান সম্ভব হয়ে ওঠে না। গ্রাম এলাকায় মসজিদগুলোয় কালেকশন খুবই নগণ্য। ঢাকা শহরের একটি মসজিদ সম্পর্কে জানি, এক জুমায় তাদের কালেকশন এক লাখ ৯৭ হাজার পাঁচ টাকা।
আমাদের সমাজে আর নবী-রাসূল আসবেন না। কিন্তু তাদের ওয়ারিস বা উত্তরাধিকার হলেন আলেমসমাজ। তাদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা পোষণ মূলত নবী-রাসূলদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ। মসজিদে যারা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন তাদের আলাদা আয়-উপার্জনের সুযোগ প্রায়ই হয় না। তাদের যথোপযুক্ত সম্মানী দানের চেষ্টা করা দরকার। আল্লাহর বাণী, ‘এটি প্রাপ্য সেসব অভাবগ্রস্ত লোকদের, যারা আল্লাহর কাজে নিয়োজিত থাকায় জীবিকার জন্য জমিনে পদচারণা করতে পারে না এবং (আত্মসম্ভ্রমের কারণে) কারো কাছে হাত পাতে না বলে অজ্ঞ লোকেরা তাদের অভাবমুক্ত মনে করে। তোমরা তাদের (দারিদ্র্যের) লক্ষণ দেখে চিনতে পারবে। তারা মানুষের কাছে মিনতি করে যাচনা করে না। আর যে কল্যাণকর কিছু তোমরা ব্যয় করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত।’ (সূরা বাকারা-২৭৩) তাদের মাঝে মধ্যে উপঢৌকন প্রদান করবেন।
আমি শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে কিছু কথা বলতে চাই। এই বয়সে মসজিদে আসা তোমাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার রহমত। লেখাপড়া ও খেলাধুলার মাঝে ব্যস্ত থাকলেও আজান শুনে তাৎক্ষণিক মসজিদে চলে আসবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে অজু তোমাদেরকে পবিত্র করবে ও সজীব করবে এবং নামাজ তোমাদের জীবনে শৃঙ্খলা নিয়ে আসবে। আরেকটি বিষয়ে আমি তোমাদের অনুরোধ করব, তোমরা অপ্রয়োজনে মোবাইল ব্যবহার করবে না। মাদকের মতো এটিও একটি নেশা এবং এই নেশায় পড়ে অনেকে তাদের জীবনটাই ধ্বংস করে ফেলেছে। মোবাইল ছেড়ে বিকল্প শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন খেলাধুলা করবে।
সন্তানের জন্য জান্নাতে যাওয়ার জন্য সহজ মাধ্যম তাদের পিতা-মাতা। পিতা-মাতার সাথে সর্বদা বিনয়সূচক আচরণ করবে। আল্লাহ পাক তাঁর ইবাদত করার পাশাপাশি পিতা-মাতার আনুগত্য করার কথা বলেছেন। পিতা-মাতা উভয়ে বা কোনো একজন যদি বার্ধক্যে উপনীত হন তাহলে কখনোই কোনো কাজে বা আচরণে ‘উহ্’ শব্দটি উচ্চারণ করবে না। আর যাদের বাবা-মা মারা গেছেন তারা তাদের পিতা-মাতার জন্য সর্বদা দোয়া করবেন। দোয়া করার ভাষাটিও আল্লাহ শিখিয়ে দিয়েছেন (রাব্বির হামহুমা কামা রব্বা ইয়ানি ছগিরা)। পিতা-মাতার জন্য সন্তানের দোয়া কখনোই ব্যর্থ হতে পারে না। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকেই দ্বীনের ওপর অবিচল থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন। (জুমার জামাতে প্রদত্ত আলোচনা। ঈষৎ পরিমার্জিত)।
লেখক : সাবেক উপাধ্যক্ষ, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা