৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বিশ্ব মুসলিম অশান্তির দাবানলে

- ছবি : সংগৃহীত

বিশ্ব শান্তি আজ হুমকির মুখে। সামাজিক ন্যায়বিচার নেই। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ এই নীতিই যেন সারা বিশ্বে বিরাজমান। ব্যক্তিজীবন, সামাজিক জীবন, রাজনৈতিক জীবনে সারা বিশ্বে ন্যায়বিচার নেই। অপরাধীরা ক্ষমতার বলে শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। আবার দুর্বল হওয়ার কারণে লঘু অপরাধে অনেকে গুরুতর শাস্তি ভোগ করছে। নিরপরাধ ব্যক্তিও পেয়ে যাচ্ছে মারাত্মক শাস্তি। শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো অপেক্ষাকৃত দুর্বল রাষ্ট্রের ওপর অন্যায় হস্তক্ষেপ করছে। তাদের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধ্য করছে। সহজে তা মেনে না নিলে শক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে। এমনকি কখনো কখনো অন্যায়ভাবে তাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। মিথ্যা অজুহাতে গোটা দেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মুসলিমদের ও মুসলিম দেশগুলোর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। মুসলিম ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ওপর নানামুখী নির্যাতন চালাচ্ছে। কোথাও তারা সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে, কোথাও আবার পরোক্ষভাবে মদদ দিচ্ছে। কোথাও আবার প্ররোচনা দিয়ে মুসলিমদের বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত করছে। এর মধ্যে কোনো এক দলকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে অন্য দলের ওপর লেলিয়ে দিচ্ছে। অবশ্য মুসলিম সম্প্রদায়ও এ ক্ষেত্রে কম দোষী নয়। তারা আজ ইসলামের শিক্ষা থেকে বহু দূরে অবস্থান করছে। সঠিক ইসলাম থেকে তারা বিচ্যুত। তারা নিজেরাও মারামারি, হানাহানিতে লিপ্ত।

মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ সম্প্রদায় সংখালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের নামে গত পঞ্চাশ বছর ধরে অমানবিক জুলুম-নির্যাতন পরিচালনা করছে। মুসলিমদের ব্যাপারে তারা যেন গৌতম বুদ্ধের বাণী ‘প্রাণী হত্যা মহাপাপ’ এবং ‘জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক’ ভুলে গেছে। তারা সেখানে মুসলিম নারী, পুরুষ, শিশু, যুবক, বৃদ্ধসহ সব মুসলিমকে নির্বিচারে হত্যা করছে। ধ্বংস করছে তাদের ঘরবাড়ি। অন্যায়ভাবে তাদের সম্পদ দখল করে নিচ্ছে। সামাজিক ন্যায়বিচার বলতে তেমন কিছু যেন অবশিষ্ট নেই। ক্ষমতা থাকলে সব কিছু করা বৈধ মনে করা হচ্ছে। জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্ব নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠীগুলো সেখানে কার্যকর ভ‚মিকা রাখাতে ব্যর্থ হচ্ছে।

ফিলিস্তিনের অবস্থা আরো খারাপ। ১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণা ‘ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব আর্থার জেম্স বেলফোর তার দেশের ইহুদি নেতা ব্যারন রথচাইন্ডকে নিখিত এক পত্রের মাধ্যমে প্যালেস্টাইনের আরব ভ‚মিতে একটি ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের প্রতিশ্রুতি দেন; যাকে ঐতিহাসিক বেলফোর ঘোষণা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিজয়ী ইঙ্গ-মার্কিন অন্যায়ভাবে অসহায় ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূখণ্ড থেকে উৎখাত করে সেখানে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। এরপর ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে আরবদের পরাজিত হওয়ার পর ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। একের পর এক ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড জোরপূর্বক দখলের মাধ্যমে বহু ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়। এরপর প্রায় সাত দশক পেরিয়ে গেলেও উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনিরা আজো তাদের নিজ আবাসে ফিরতে পারেনি; বরং ইসরাইলের নির্যাতনে প্রতিনিয়ত নারী, পুরুষ, শিশু নিহত হচ্ছে। নির্বিচারে বর্ষিত বোমার আঘাতে তাদের ঘরবাড়ি চূর্ণ-বিচূর্ণ হচ্ছে। ইসরাইলি দখলদার বাহিনী নানা অজুহাতে ফিলিস্তিনিদের তাদের আবাস থেকে উচ্ছেদ করছে। তাদের জমাজমি দখল করছে। জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপীয়সহ বহু পশ্চিমা দেশ নীরবে তাদের এসব অন্যায় কর্মকাণ্ডের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার মিথ্যা অজুহাতে ইরাককে ধ্বংস হয়েছে। সেখানে নির্বিচারে হাজার হাজার নিরীহ ও নিরপরাধ নারী-পুরুষ, শিশু, যুবক ও বৃদ্ধকে হত্যা করা হয়েছে। আফগানিস্তানও একই পরিণতি ভোগ করেছে। একজনকে শাস্তি দিতে গিয়ে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে বহু জনপদ। বন্দী করা হয়েছে বহু মানুষকে। বন্দীদের ওপর চালানো হয়েছে অমানবিক নির্যাতন। ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন ও লিবিয়ার মতো সিরিয়া, মিসর ও ইয়েমেনেও যুদ্ধবিগ্রহ চলছে। অন্যায়-অত্যাচার ও জুলুম-নির্যাতনে সেখানের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। সেখানে অমুসলিমদের চেয়ে মুসলিমদের দ্বারাই অন্য মুসলিম নির্যাতিত হচ্ছে। কিন্তু পৃথিবীর মুসলিমরা এসব বন্ধে সেখানে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। তারা পাশ্চাত্যের বৃহৎ শক্তিগুলো দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছে। মুসলিম নামধারী কিছু অত্যাচারী শাসক দ্বারা তারা নির্যাতিত ও নিপীড়িত হচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে সাহায্য-সহযোগিতা করছে অমুসলিমরা।

পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার ইনসাফপূর্ণ কোনো কর্মসূচি নেই। এ কারণে আমরা দেখতে পাই, পাশ্চাত্যের পারিবারিক জীবন আজ হুমকির মুখে। সেখানে বাবা তার সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালন করছে না। একইভাবে সন্তানও পিতামাতার প্রতি যথাযথ কর্তব্য পালন করছে না। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের হক আদায় করছে না। ফলে সেখানে এক অশান্তিকর পরিবেশ বিরাজ করছে।

নবী মুহাম্মদ সা: মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রতি যেমন শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, তেমনি সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্যও সংগ্রাম করেছেন। আর এটি সম্ভব করেছিলেন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে এক সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে। শরিয়তের বিধান পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নে কানো রকম পক্ষপাতিত্ব করেননি। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা, সম্পদের সুষম বণ্টনব্যবস্থা, জীবন, সম্পদ ও সম্মানের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, সবার স্বাভাবিক স্বাধীনতা ও মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে তিনি সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা আনয়ন করেন। সবাইকে পরকালীন চেতনায় জাগ্রত করেন। আখিরাতের কঠিন আজাবের ব্যাপারে সতর্ক করেন এবং চিরস্থায়ী জান্নাতের দিকে ধাবিত হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা দেন। বিশ্বে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য সবাইকে অবশ্যই কুরআনের দিকে ফিরতে হবে।

লেখক : কলামিস্ট ও গবেষক।

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
সাবেক আইনমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৭ জনকে হত্যার অভিযোগ জাতীয় স্বার্থে আমরা ইস্পাত কঠিন ঐক্য চাই : ডা. শফিকুর রহমান ১৫ বছরের অনিয়ম-দুর্নীতি ৩-৪ মাসে স্বাভাবিক করা সম্ভব নয় : অর্থ উপদেষ্টা ক্যাম্পাস সংস্কারে ১১০ দফা দাবি ইবি শিবিরের ন্যাটোর সদস্যপদ লাভের বিনিময়ে সংঘাত অবসানে প্রস্তুত ইউক্রেন বিদ্যুৎ-জ্বালানির বিশেষ বিধান আইন বাতিল ‘মাদকমুক্ত সুস্থ জীবন গঠনে খেলাধুলার বিকল্প নেই’ খাদ্য নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়াল রাশিয়া কলকাতায় ড. ইউনূস ও বাংলাদেশের পতাকা অবমাননায় জামায়াতের উদ্বেগ ইসলামপুরে সাবেক ইউপি সদস্য ও বিএনপি নেতার লাশ উদ্ধার ‘মানুষকে ভালোবাসা দিয়ে ভোট আদায় করতে হবে’

সকল