হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে
- আ: রহমান
- ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:৫৯
জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিদার ১৪ দলীয় সরকার হালে যা আওয়ামী লীগের একদলীয় সরকার, তাদের ২০০৬-২০০৭ সালের আন্দোলনের ফসল জেনারেল মইনের এক-এগারোর ‘ড. ফখরুদ্দীনের সরকারে’র অক্সিজেন মাস্ক জেনারেল মইনকে ভারতের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী পরে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের জামাইবাবু ও আওয়ামী লীগের পরম বন্ধু প্রণব মুখার্জি ম্যানেজ করায়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের নামে ২৬৫ আসন দখলকারী ১৪ দলীয় সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হয়ে গত ৩০-৬-২০১১ তারিখে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের মাধ্যমে তাদের ১৯৯৪-১৯৯৬ সালের ১৭৩ দিন হরতালের আন্দোলন ও মহিউদ্দিন খান আলমগীরের নেতৃত্বে সরকারি কর্মচারীদের বিদ্রোহের ফসল, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলপূর্বক নির্বাচনকালীন শতভাগ দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকার সাংবিধানিক ক্ষমতা অধিগ্রহণ করার পর ২০১২ সালে আইন পাসের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে সেনাবাহিনীকে বাদ দেয়ার সুফলে ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির বিনা ভোটের নির্বাচনে ৩০০ আসন অর্জন করেছিল। এভাবে তাদের সূচিত উন্নয়নের প্রবল জোয়ার বহমান রাখার জন্য ক্ষমতায় থাকার ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা করেছিল।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ইংরেজি নববর্ষের আনন্দ উৎসবের মতো রাত ১১টা ৫৯ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড থেকে প্রশাসন, পুলিশ ও পোলিং অফিসারদের সহায়তায় দলীয় পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিস্টদের অস্বচ্ছ ব্যালট কেটে স্বচ্ছ ব্যালট বক্স পূর্তির নির্বাচনের বাইপ্রডাক্ট ১৪ দলের ২৯২ আসন প্রাপ্তির বর্তমান সরকার। ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করার মজাই আলাদা হওয়ায় ১৯৯০ সালে জেনারেল এরশাদকে গণ-আন্দোলন করে হটাতে হয়েছিল। উন্নয়নের জোয়ার অব্যাহত রাখতেই এইভাবে জনগণের ভোট ছাড়া ক্ষমতায় থাকার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারায় উন্নয়নের জোয়ার অমাবস্যার প্রবল জোয়ারের মতো বৃদ্ধি পেতে থাকে, যা বিটিভিতে ২৪ ঘণ্টা ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রতি ঘণ্টার সংবাদ বুলেটিনে সচিত্র প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়া ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের কালো তালিকাভুক্ত দুই-তিনটি জাতীয় দৈনিক ব্যতীত সব জাতীয় দৈনিকে সচিত্র বিবরণে প্রকাশিত হওয়া সত্ত্বেও মন্ত্রী ও দলীয় নেতাদের সাথে সুর মিলিয়ে সরকার সমর্থক বুদ্ধিজীবী, সুশীলসমাজ এবং টেলিভিশন টকারুদের আফসোস ছিল, সরকারের পাহাড়সম উন্নয়নের ফিরিস্তি জনগণের কাছে ঠিকমতো না পৌঁছার কারণে উন্নয়ন বিরোধীদের অপপ্রচার বেশি প্রচারিত হওয়ায় জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। কিন্তু উন্নয়নের জোয়ারে দেশকে ভাসিয়ে নিবে কী, ছয় মাসের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সরকারের উন্নয়নকেই ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ১৩ বছর ধরে তিল তিল করে সঞ্চিত রিজার্ভের মনুমেন্টের চূড়া ভেঙে পড়ায় শক্তিশালী সরকারের শক্তিশালী মুদ্রা টাকার ক্রমাগত দরপতন ঘটায় ৮৫ টাকা ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ১২০ টাকায়।
ঋণ ও আমানতের সুদের হার নয়ছয়ের কারণে আমানতকারীদের ব্যাংকে জমা টাকার পরিমাণ যেমন ক্রমাগত হাস পাচ্ছে তেমনি ৮৫ টাকা দরে ডলারের মজুদ ৪৯০০ কোটি থেকে ১২০ টাকা রেটে মজুদ দাঁড়িয়েছে ৩৯০০ কোটি ডলারে। এটা থেকে রফতানি উন্নয়নের জন্য যে ৭৫০ কোটি ডলার ঋণ দেয়া হয়েছে, তা ফেরত আসার সম্ভাবনা প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতাদের খেলাপি ঋণ আদায় হওয়ার মতো। এ দিকে গত মে মাস পর্যন্ত আমদানি ব্যয়ের সাথে রফতানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের মোট পরিমাণের ফারাক দাঁড়িয়েছে ১৮০০ কোটি ডলার। চলতি হিসাবের এই দায় রিজার্ভ থেকে মেটানো হলে রিজার্ভের পরিমাণ নিচে নামতে পারে তাস রকার আঁচ করতে পেরেই কৃচ্ছ্র সাধনের মাধ্যমে আমদানি ব্যয় কমাতে কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যা জনগণের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
‘রূপকল্প ২০৩০’ বাস্তবায়নের জন্য সরকার অনেক উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
এতদ্ব্যতীত নাম কামানোর ও ইচ্ছা পূরণের লক্ষ্যে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ব্যয় জনগণের দুঃখ-কষ্টের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। গ্যাস সঙ্কটের কারণে খোদ ঢাকা শহরেই চুলা জ্বলে না। কিন্তু গ্যাসের চাপ বৃদ্ধির জন্য নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও গ্যাসকূপ খনন না করে বাসা বাড়িতে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার মাধ্যমে গ্যাস ঘাটতির সমাধান করা হয়েছিল। গ্যাসের অভাবে সার কারখানা বন্ধ করে, বিদ্যুৎকেন্দ্রে আবার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে গ্যাস সঙ্কটের সমাধানের পথ খোঁজা হয়েছিল। ফলে চলতি বছর ১০ লাখ টন ইউরিয়া সার বেশি আমদানি করতে হবে। প্রতি কেজির মূল্য ছয় টাকা বৃদ্ধি করেও কেজিতে ৭০ টাকা ভর্তুকি প্রদান করতে হবে।
নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহের ব্যবস্থা না করে এবং উৎপাদিত বিদ্যুতের গ্রিডলাইনে যুক্ত করতে প্রয়োজনীয় সঞ্চালন লাইন না করেই চাহিদার চেয়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষম প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। ভাড়ায় চালিত ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদুৎ কেনার প্রয়োজন না পড়লেও বসিয়ে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়ার জন্যই ভাড়া চুক্তি বারবার নবায়ন করা হচ্ছে। সেচ কাজে ব্যবহৃত, ডিজেল চালিত ১৩-১৪ লাখ গভীর ও অগভীর নলকূপ বিদ্যুৎ সংযোগের বাইরে রেখে ৬৮ হাজার গ্রামের শতভাগ গ্রাম বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধটার এক মাস পরেই আনন্দ উৎসব করা হয়েছে। যুদ্ধ পাঁচ মাসে পদার্পণের এক দিন পরেই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর যানবাহন চলাচলের উদ্বোধন অনুষ্ঠান স্মরণীয় করে রাখতে ৫ শতাধিক উপজেলা, ৬৪ জেলা ও ১২টি সিটি করপোরেশন বর্ণিল আলোকসজ্জায় উদ্ভাসিত করার ২৫ দিন পর গত ২০ জুলাই থেকে জ্বালানি তেলের সঙ্কটের কারণ দেখিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য দেশের শতভাগ এলাকাকে লোডশেডিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। প্রতিদিন ২ ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও তাতে কুলাতে না পেরে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনের মতো ২-এর বাম পাশে ১ বসিয়ে ওটা ১২ ঘণ্টা করা হয়েছে।
রূপকল্প ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মাত্র দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ উন্নয়নের জোয়ারের গতিতে এগিয়ে চলেছে, যাতে রাশিয়ার ঋণ এক লাখ কোটি টাকা। এ দিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন সীমিত করায় ‘রূপকল্প-২০৩০’ দিবাস্বপ্নে পরিণত হয়েছে ২০২২ সালেই।
সরকারের একটানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকার দূরদর্শিতায় যে অর্থনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে তার কোনো প্রতিষেধক সরকারের হাতে না থাকায় সরকার পরিচালন ব্যয়ের বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্যই জ্বালানি তেলের মূল্য এক লাফে ৪২% থেকে ৫১% পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। কারণ ৬৭ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি ও রিফাইন করতে সরকার ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক বাবদ ৩৪% পেয়ে থাকে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর তিন মাস আগেই সরকার একদফা জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করার কারণে জনগণ তার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই যুদ্ধ শুরুর পরে বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি ও ডলারের তুলনায় টাকার ক্রমাগত দরপতনের জন্য দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জনগণের যখন চিঁড়েচ্যাপ্টা অবস্থা তখন সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করায় নিষ্পেষিত জনগণের অর্ধাহার ও অনাহারে থাকা ব্যতীত মিতব্যয়ী হওয়ার কোনো রাস্তা খোলা না থাকায় ১৪ দলীয় সরকারের ১০ বছর ও আওয়ামী লীগ সরকারের চার বছরের উন্নয়নের সুফল জনগণ হাতে হাতে নয়, হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে এটার জন্য ‘হায় ১৪ দলীয় সরকার, হায় আওয়ামী লীগের সরকারকে, হায় বিনা ভোটের, হায় নিশি রাতের ভোটের হায় হায় গণতন্ত্র’কে দায়ী করছে।
ভোটের জন্য জনগণের দুয়ারে যেতে না হওয়ায় ইচ্ছে পূরণ ও খ্যাতি অর্জনের জন্য সকল ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে, যা রাজস্ব আয় বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় আমদানিকৃত ৬৭ লাখ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করে বর্ধিত হারে ভ্যাট ও শুল্ক আদায়ের মাধ্যমে জনগণকে পথে বসিয়ে দেয়ায় জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা যে পরামর্শই সরকারকে দিক না কেন সেটা একটানা ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড সৃষ্টিকারী প্রধানমন্ত্রী ও তার উপদেষ্টা মণ্ডলী অনুধাবন করতে পারলেও তাদের করার কিছুই নেই।
কারণ ২০১৪-১৫ সাল থেকে একটি বাজেটেও রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া দূরে থাকুক, ৩৭ হাজার কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮৫ হাজার কোটি টাকা কম হলেও প্রতি বছর ঢাউস আকারের বাজেট দেয়ার লক্ষ্যেই প্রকৃত আয়ের ভিত্তিতে বাজেট না করে পূর্ববর্তী বছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বাজেট দেয়া হতো। যেমন ২০২১-২২ অর্থবছরে তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা ব্যয় বাজেট দেয়া হয়েছিল। যদি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জিত হতো ও ব্যয় বাজেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত তাহলে সুদ খাতে ব্যয় ৬৯ হাজার কোটি টাকা ও সরকার পরিচালন ব্যয় তিন লাখ ৯ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা বাদে রাজস্ব আয়ের উদ্বৃত্ত ১০ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা দুই লাখ ২৫ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেটে সরকারের অংশ হিসেবে জোগান দেয়ার কথা ছিল।
উন্নয়ন বাজেটের বাকি দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা দেশীয় ব্যাংক থেকে ৭৬ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা ঋণ ও ১১% সুদে সঞ্চয়পত্র বিক্রয় করে ৩৭ হাজার এক কোটি টাকা এবং বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইডিবি, আইডিএ ও জাইকা থেকে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের পরেও ঘাটতি তিন হাজার ৪৯০ কোটি টাকা বিদেশী অনুদান পাওয়ার আশা করা হয়েছিল। সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হলেও ৩০-০৬-২০২২ পর্যন্ত রাজস্ব আয় হয়েছে তিন লাখ ২০০ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি ২৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা পূরণে শুধু উন্নয়ন বাজেট কাটছাঁট করতে হয়নি, রাজস্ব ব্যয় নির্বাহে উল্টো ঋণ করতে হয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরেও রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা চার লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে ছয় লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার ব্যয় বাজেট দেয়ায় ঘাটতি দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা পূরণে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করা হবে এক লাখ ছয় হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা, ১১% সুদে সঞ্চয়পত্র বিক্রয় করে সংগ্রহ করা হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা এবং বিশ্বব্যাংক আইডিবি, এডিবি, আইডিএ, আইএমএফ ও জাইকা থেকে ঋণ গ্রহণ করা হবে এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি পূরণে আইএমএফের কাছ থেকে তিন বছরে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণপ্রাপ্তির শর্ত পূরণ করতেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর উদ্দেশ্যেই জ্বালানি তেলের মূল্য প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে, যাতে ঋণের কিস্তি বাবদ ১৫০ কোটি ডলার এখনই হাতে পাওয়া যায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে তিন লাখ ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের নিরিখে ২০২২-২৩ অর্থবছরে চার লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কি সম্ভব? এই রাজস্ব আয় থেকে ঋণের সুদ পরিশোধ খাতে ব্যয় হবে ৮০ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরে যা ছিল ৬৯ হাজার কোটি টাকা।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা খাতে ব্যয় হবে ৭৭ হাজার কোটি টাকা। সুদ খাতে ও বেতন ভাতা খাতের ব্যয়সহ সরকার পরিচালন ব্যয় বাজেট চার লাখ ৩১ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও দুর্নীতিই বর্তমান সঙ্কট সৃষ্টির মূল কারণ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ওটাতে একটু হাওয়া দিয়েছে মাত্র। দুর্নীতির কারণে সরকারি পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির বাস ও ট্রাকের কিলোমিটার-প্রতি পরিচালন ব্যয় সর্বোচ্চ হওয়ায় বেসরকারি পরিবহন মালিকদের সাথে যখন ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে বিআরটিএর দরকষাকষির মিটিং চলে তখন বেসরকারি বাস মালিকরা বিআরটিসির কিলোমিটার-প্রতি পরিচালন ব্যয়ের নিরিখে ভাড়া বৃদ্ধির দাবি করলে সরকার তাই মানতে বাধ্য হন আর জনগণকে বেসরকারি বাসে উঠেও সরকারি বাসের দুর্নীতির খেসারত দিতে হয় বর্ধিত হারে ভাড়া প্রদান করে।
বিশ্ববাজারে জালানি তেল ও নিত্যপণ্যের মূল্য কমলেও ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনের কারণে ওই মূল্য কমার সুবিধা আমাদের ভাগ্যে জুটবে না। ভোজ্য তেলের দাম বিশ্ববাজারে কমলেও ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে আমদানিকারকরা লিটার-প্রতি তেলের দাম ২০ টাকা বৃদ্ধির দাবি জানালে সরকার লিটার-প্রতি সাত-আট টাকা দাম বৃদ্ধির দাবি মেনে নিয়েছে। অনুরূপভাবে জ্বালানি তেলের মূল্য বিশ্ববাজারে কমে গেলেও ১২০ টাকা দরের ডলার কিনে গাড়ির চেসিস, টায়ার টিউব ও যন্ত্রাংশ আমদানির ও গাড়ির বডি তৈরির ব্যয় বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে তারা ভাড়া কমানো তো দূরের কথা আরো বৃদ্ধির দাবি জানাবে। সরকারি অফিসের সময়সূচির পরিবর্তন ও স্কুল-কলেজের সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন করা দেখে বোঝা যাচ্ছে সঙ্কট আরো ঘনীভূত হচ্ছে। অথচ বিদেশী দূতাবাস ও হাসপাতালগুলোর এসি সচল রেখে বাকিসব সরকারি-বেসরকারি অফিস ও বাসাবাড়ির এসি তিন মাস বন্ধ রাখলেই স্কুল-কলেজের সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন করতে হতো না।
২০২০-২১ সালে স্কুল-কলেজ প্রায় দুই বছর বন্ধ রেখে ক্লাস ওয়ানে দুই মাস শিক্ষাগ্রহণকারী শিশুকে তৃতীয় শ্রেণীতে প্রমোশন দেয়ায় গ্রাম অঞ্চলের অনেক শিশুই শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের শিক্ষাদান অনুসরণ করতে না পারায় বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ১৪ বছর যাবৎ নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বিপুল ব্যয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের যে উন্নয়নের জোয়ার চলছে, একই রকম উন্নয়নের জোয়ার যদি পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে চালানো হতো তাহলে আজকের এই দিনটিতে গত ৭৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সরকারকে দেখতে হতো না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা