৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ব্রিটেনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা

ব্রিটেনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা - ছবি : সংগৃহীত

আধুনিক গণত্রান্ত্রিক বিশ্বের রাষ্ট্রব্যবস্থায় ক্ষমতার তিনটি ভাগ রয়েছে- যথাক্রমে পার্লামেন্ট, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ। সেজন্য দেশে ও বিদেশে অনেকের পছন্দ আইন বিষয়ে পড়া এবং অনেকের পছন্দ ব্রিটেনে আইন পড়া। কেননা ব্রিটেনে প্রায় ৯০০ বছর ধরে আইন পড়ানো হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। দক্ষিণ আফ্রিকার শান্তির অগ্রদূত নোবেলজয়ী নেলসন মেন্ডেলা, ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী, পাকিস্তানের জাতির পিতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহসহ অনেক বিশ্ব বিখ্যাত ব্যক্তিরা ব্রিটেনে আইন পড়েছেন। বর্তমানেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বহু সংখ্যক নতুন নতুন শিক্ষার্থী ব্রিটেনে আইন পড়তে আসে। ব্রিটেনের আইন ডিগ্রি বিশ্ব মানের হওয়ার কারণে ব্রিটিশ ল গ্রাজুয়েটদের রয়েছে দেশ ও বিদেশে কাজের সুযোগ।

ব্রিটেনের আইন বিষয়ে পড়ালেখা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির যোগ্যতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন হয়ে থাকে। তা অনেকটা নির্ভর করে শিক্ষার্থীর অতীত শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতার ওপর। ব্রিটেনে কেউ যদি আন্ডারগ্রাজুয়েট লেভেলে ভর্তির জন্য আবেদন করতে চায়, তাহলে দরকার হচ্ছে এ লেভেল বা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এইচএসসি ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার প্রমাণ অর্থাৎ আইইএলটিএস অথবা সমমানের পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত নম্বর পেতে হয়। যদি কেউ পোস্ট গ্রাজুয়েশন অর্থাৎ মাস্টার্স অফ ল’তে পড়ালেখা করতে চায় তাহলে আন্ডারগ্রাজুয়েট ল ডিগ্রি ইংরেজি ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণ, পার্সোনাল স্টেটমেন্ট জমা দিতে হয়। যখন একজন শিক্ষার্থীর সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি থাকে তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্যে আবেদন জমা দিতে হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় আবেদনপত্র যাচাইবাছাই করে অফার লেটার ইসু করে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা আবেদনের সাথে অর্থনৈতিক আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ হিসেবে ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হয়।

ব্রিটেনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি'র পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে, অনেকটা নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রেপুটেশন এবং ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিং, গুণগত মান ইত্যাদির ওপর। এছাড়াও যুক্তরাজ্যের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ইউনিভার্সিটি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। তবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কোর্স ফি তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। আন্ডারগ্রাজুয়েট কোর্সগুলোতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বার্ষিক ফি ১২,০০০ থেকে ২০,০০০ পাউন্ডের মতো হয়ে থাকে এবং মাস্টার্স ডিগ্রির টিউশন ফি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ১৪,০০০ থেকে ৩০,০০০ পাউন্ডের মতো হয়ে থাকে। এছাড়া থাকা খাওয়ার খরচ ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর ভেদে কম বেশি হয়ে থাকে, তবে লন্ডনের খরচ লন্ডনের বাইরের শহরের তুলনায় তুলনামূলক বেশি।

আইন পড়া শেষে গ্রাজুয়েটরা বিভিন্ন পেশায় যাওয়ার সুযোগ রয়েছে, যেমন : ব্যারিস্টার, সলিসিটর, ল জার্নালিস্ট, প্রফেশনাল কাউন্সিলর, একাডেমিক ইত্যাদি হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

ব্রিটেনে আইন পেশা চর্চার জন্য কয়েকটি উপায় রয়েছে, যেমন : ব্যারিস্টার, সলিসিটর, লিগেল এক্সিকিউটিভ ইত্যাদি। ব্যারিস্টাররা বেশিরভাগ সময় ক্লায়েন্টের কোর্টে রিপ্রেজেন্ট করে থাকেন, মামলার শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন মামলার মেরিটে এক্সপার্ট হিসাবে পরামর্শ দেন। সলিসিটররা কোর্টে রিপ্রেসেন্ট ছাড়াও প্রপার্টি বেচাকেনা, কোম্পানি গঠন, মালিকানা পরিবর্তন, ব্যবসা বেচাকেনার চুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আইনি সেবা দিয়ে থাকেন। ২০০৬ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইংল্যান্ডে প্রায় ৩৫৫টি প্রাক্টিসিং ব্যারিস্টার চেম্বার রয়েছে। সলিসিটর রেগুলেশন অথরিটির জুলাই ২০২২-এর তথ্য অনুযায়ী, ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে ৯,৭৩১টি সলিসিটর্স ফার্ম রয়েছে।
যদি কেউ ব্যারিস্টার হতে চায় তাহলে এলএলবি ডিগ্রি শেষ করে ব্যারিস্টার ট্রেনিং কোর্স (বিটিসি) করতে হয়। বিটিসি কোর্সের পাশাপাশি ইংল্যান্ডের চারটি ইনের যথাক্রমে লিংকন্স ইন, গ্রেস গ্রিন, ইনার টেম্পল, মিডল টেম্পলে মধ্যে যেকোনো একটিতে এনরোল হতে হয়। বিটিসি কোর্স কেউ সফলতার সাথে সম্পন্ন করলে এবং ইন কর্তিক নির্ধারিত ডিনারগুলোতে অংশগ্রহণ শেষে ইন থেকে ব্যারিস্টার হিসেবে সনদ দেওয়া হয়।

যদি কেউ ইংল্যান্ডে ব্যারিস্টার হিসেবে আইন প্র্যাকটিস করতে চান, তবে যেকোনো ব্যারিস্টার চেম্বারে একজন পিপল মাস্টারের অধীনে অর্থাৎ প্রাক্টিসিং ব্যারিস্টারের অধীনে এক বছর ট্রেনিং করতে হয়, যা খুবই প্রতিযোগিতামূলক। সফলতার সাথে ট্রেনিং শেষ করলেই বার কাউন্সিল থেকে ব্যারিস্টার হিসেবে প্র্যাকটিস করার সনদ দেয়া হয়, বার কাউন্সিলের সনদ ছাড়া কেউ ইংল্যান্ডে ব্যারিস্টার হিসেবে প্র্যাক্টিস করতে পারেন না, প্রাক্টিসিং সার্টিফিকেট না থাকলে, আইনি সেবা দেয়ার সময় নিজেকে ব্যারিস্টার হিসেবে পরিচয় দেয়া যায় না এবং কোর্টে (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) মামলার শুনানিতে আইনজীবী হিসেবে অংশগ্রহণ করা যায় না। তবে বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী একাডেমিক সনদ পাওয়ার পর নিজ নিজ দেশে ফিরে গিয়ে দেশীয় আইনের অধীনে আইন প্র্যাকটিস করে থাকেন।

সলিসিটর হওয়ার জন্য এলএলবি ডিগ্রির পর লিগাল প্রাক্টিস কোর্স (এলপিসি) সম্পন্ন করতে হয়। অবশ্য বর্তমান নিয়মে এসকিউই পরীক্ষা দিতে হয়। এলপিসি পাশ করার পর সলিসিটর ফার্মে একজন ট্রেনিং প্রিন্সিপালের (সিনিয়র সলিসিটর) অধীনে দুই বছর ট্রেনিং সম্পন্ন করতে হয়, প্রফেশনালস স্কিলস কোর্স সম্পন্ন করতে হয়, পরে সলিসিটর রেগুলেশন অথরিটি (এসআরএ) আবেদন করতে হয় সিনিয়র কোর্ট অফ ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলসে সলিসিটর হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য এবং সলিসিটর প্রাক্টিসিং লাইসেন্স পাওয়ার পর হিসেবে আইনি সেবা দেয়া যায়. সলিসিটার হিসেবে কেউ তালিকাভুক্ত হওয়া ছাড়া কেউ নিজেকে সলিসিটর হিসেবে পরিচয় দিতে পারেন না।
সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করলে, দেশ ও মানুষের কল্যাণে মহৎ আইনি পেশার মাধ্যমে ভূমিকা রাখা সম্ভব।

লেখক : সলিসিটর, সিনিয়র কোর্টস অফ ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস


আরো সংবাদ



premium cement
সাবেক আইনমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৭ জনকে হত্যার অভিযোগ জাতীয় স্বার্থে আমরা ইস্পাত কঠিন ঐক্য চাই : ডা. শফিকুর রহমান ১৫ বছরের অনিয়ম-দুর্নীতি ৩-৪ মাসে স্বাভাবিক করা সম্ভব নয় : অর্থ উপদেষ্টা ক্যাম্পাস সংস্কারে ১১০ দফা দাবি ইবি শিবিরের ন্যাটোর সদস্যপদ লাভের বিনিময়ে সংঘাত অবসানে প্রস্তুত ইউক্রেন বিদ্যুৎ-জ্বালানির বিশেষ বিধান আইন বাতিল ‘মাদকমুক্ত সুস্থ জীবন গঠনে খেলাধুলার বিকল্প নেই’ খাদ্য নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়াল রাশিয়া কলকাতায় ড. ইউনূস ও বাংলাদেশের পতাকা অবমাননায় জামায়াতের উদ্বেগ ইসলামপুরে সাবেক ইউপি সদস্য ও বিএনপি নেতার লাশ উদ্ধার ‘মানুষকে ভালোবাসা দিয়ে ভোট আদায় করতে হবে’

সকল