২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

অবসরভোগীদের প্রত্যাশা- প্রতিকার ও বাস্তবায়ন

অবসরভোগীদের প্রত্যাশা- প্রতিকার ও বাস্তবায়ন - প্রতীকী ছবি

উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা ও কল্যাণে নীতিমালা প্রণয়ন, সংস্কার, পুনর্গঠনে অব্যাহত প্রয়াস প্রশংসনীয়। সরকার পেনশন ব্যবস্থায় পরিবর্তনসহ সংস্কার, দুস্থ মহিলা ভাতা, বৈশাখী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ইত্যাদিতে আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে এবং জনগণ সুফল ভোগ করছে। সামাজিক কল্যাণের শতভাগ নিশ্চয়তায় বৈষম্য বিলোপ, আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও অর্থতুল্য সেবা বাড়িয়ে প্রবীণ অবসরভোগী পেনশনারদের সামাজিক সুরক্ষার নীতি প্রণয়নে কিছু দফায় বিস্তারিত উপস্থাপিত হলো।

শেয়ারবাজার, ই-কমার্স কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ ঝুঁকি রয়েছে বিধায় অবসরভোগীদের নির্দিষ্ট আয়ের জন্য অর্থবিনিয়োগ কাক্সিক্ষত নয়। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক সময় মূলধন হারানোর সম্ভাবনা থাকে। সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি শেষে যারা প্রয়োজনে পেনশন সমর্পণ করে প্রাপ্ত অর্থ ও গ্র্যাচুইটির টাকায় ৫ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্র/পারিবারিক সঞ্চয়পত্র বা অন্য কোনো সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে ঝুঁকিবিহীন ত্রৈমাসিক আয়ে কায়ক্লেশে জীবিকা নির্বাহ করে, তাদের আয় হতে ১০% হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়। পেনশনার সঞ্চয়পত্র ৩০/০৬/২০১১ এর পূর্বে করমুক্ত ছিল, পরে করযুক্ত হয়। বর্তমানে আয় হতে ১০% উৎসে কর কর্তনের বিধান চালু রয়েছে, যদিও পাঁচ লাখ টাকার বিনিয়োগ পর্যন্ত আয়ের ওপর কর অব্যাহতি দেয়া হয়। বারবার সুদহার কমানো এবং উৎসে কর বৃদ্ধি করায় পারিবারিক বাজেটের ওপর আঘাত হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনায়, সুদহার বাড়িয়ে ও উৎসে কর কর্তনের বিধান রহিত করে এদের আয় বাড়ানো প্রয়োজন। উল্লেখ্য, সরকার অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও নতুন গতি সঞ্চারের জন্য করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা, সুদহার হ্রাস, ঋণ পুনঃতফসিলসহ ক্ষেত্র বিশেষে পুনর্ভরণ সুবিধা অব্যাহত রেখেছে।

অবসরভোগীদের সবাই সমভাবে আর্থিক সঙ্গতি সম্পন্ন থাকে না। তাদের চিকিৎসাসেবায় ও অন্যান্য প্রয়োজনে অর্থ প্রয়োজন হতে পারে। যাদের শুধু সঞ্চয়পত্র থাকে, তারা ঋণ পায় না। সঞ্চয়পত্র জামানত হিসেবে বিবেচিত হয় না। অথচ নাগরিক হিসেবে চিকিৎসা সেবায়, শিক্ষা, গৃহনির্মাণ বা মৌলিক প্রয়োজনে ঋণ প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে শুধু সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে পেনশনার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্য/প্রাপ্তব্য আয় হতে সমন্বয় সাপেক্ষে, ঋণ মঞ্জুরিতে ব্যাংক ঋণ নীতিমালা সংযোজন করে সেবা বৃদ্ধি করতে পারে। পেনশন করমুক্ত, সঞ্চয়পত্র করযুক্ত, এ ক্ষেত্রে প্রবীণ অবসরভোগী সরকারি কর্মচারীদের নির্ধারিত বয়সের পর লাইনে দাঁড়িয়ে যাতে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে না হয় বা রিটার্ন দেয়া হতে অব্যাহতি পেতে পারে সে বিষয়ে বিস্তারিত প্রজ্ঞাপন প্রয়োজন।

বর্তমানে চিকিৎসাভাতা মাসিক ১৫০০ টাকা, ৬৫ বছর-ঊর্ধ্ব বয়সীদের ২৫০০ টাকা দেয়া হয়। বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হেতু চিকিৎসাভাতা বাড়ানোর বিষয়টি সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনায় আনা জরুরি। অবসরভোগী যারা তাদের অনেকেই প্রবীণ, এদের মধ্যে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যয়িত অতিরিক্ত অর্থ সাহায্য প্রয়োজন। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সিএসআর তহবিল হতে ভুক্তভোগীদের জনকল্যাণে আর্থিক সাহায্যের অনুরোধ জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল; তাও কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান সরকারি সুবিধা ভোগ করলেও সিএসআর খাত হতে আর্থিক সাহায্য প্রদানে বা প্রজ্ঞাপিত ইশতেহার পরিপালনে বিরত রয়েছে।

সর্বজনীন পেনশনের ধারণা পত্র অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক উপস্থাপিত ও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক কৌশলপত্র প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশিত যা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের একান্ত প্রচেষ্টার সুফল যদিও ধারণাটি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কর্তৃক ঘোষিত হয়েছিল। পেনশন যারা সমর্পণ করেছিলেন তাদের জন্যও প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অবসরের ১৫ বছর পর পেনশনে পুনঃস্থাপনের নীতিমালা প্রণয়ন করেছিলেন যা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। ১ জুলাই ২০১৭ হতে প্রজ্ঞাপন কার্যকর হয়েছে এবং সুফল ভোগ করছেন প্রবীণ সরকারি চাকরিজীবীরা। বর্তমানে ৭৩ বছরের গড় আয়ু ও নির্ভরশীলতার বিচারে এবং মুদ্রস্ফীতির ফাঁদে পড়ে পেনশন সমর্পণকারীরা অত্যন্ত অর্থাভাবে দিন কাটাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী একান্ত অনুগ্রহে তাদের পেনশনে পুনঃস্থাপনের সময়সীমা অবসরের পর ১৫ (পনের) বছরের দীর্ঘতা বিবেচনা করে সময়সীমা যুক্তিযুক্তভাবে অর্থাৎ গড় আয়ু বিবেচনায় অবসরের ৮-১০ বছরের মধ্যে পেনশনে পুনঃস্থাপন করলে অনেকেই উপকৃত হবেন এবং উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে পারবেন যা জনকল্যাণ ও সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বাস্তবায়নের জন্য নিদের্শিত হতে পারে।
অবসরভোগীদের সংখ্যা, বয়স ও দায়িত্ব বিবেচনায় তারা সংগঠিত নয়। অবসরভোগী পেনশনাররা সমাজের অংশ।

তারা তাদের অভাব-আকাঙ্ক্ষা প্রকাশে ও পূরণে মানববন্ধন, অনশন ও আন্দোলন করে না। সরকারের উপলব্ধি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত তাদের আশান্বিত করে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে অবসরভোগী-পেনশনারদের এবং শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ, বৈষম্য দূরীকরণ, পেনশন পুনঃস্থাপনে সময় কমানো, সমগ্রেড সমপেনশন সুবিধা এবং আলোচ্য বিষয়গুলো সামাজিক সুরক্ষায় বাস্তবায়ন এবং অর্থতুল্য সেবা বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর সদয় ও মানবিক দৃষ্টি আকর্ষণ করছে প্রত্যাশীরা।
লেখক : প্রাক্তন নির্বাহী, রূপালী ব্যাংক লি:

qsstechno@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement