২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

দুর্নীতির সূচকে একধাপ এগোনোর পর আনলাকি থার্টিনে অবস্থান

- ছবি : নয়া দিগন্ত

জার্মানির রাজধানী বার্লিনভিত্তিক ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-টিআই ২০২১ সালের বার্ষিক দুর্নীতির ধারণাসূচক (সিপিআই) রিপোর্ট গত ২৫ জানুয়ারি প্রকাশ করেছে। সিপিআই তথ্যসূত্র হিসেবে অন্যান্য দেশের জন্য ১৩টি জরিপ ব্যবহার করলেও কোভিড-১৯-এর কারণে আমাদের শিক্ষা বোর্ড যেমন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সাতটি বিষয় ছাড় দিয়ে ন্যূনতম তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা নেয়ায় পাসের হার বৃদ্ধি ও জিপিএ ৫ প্রাপ্তির বন্যায় পরীক্ষার্থীরা ভেসে বেড়ালেও, টিআই বাংলাদেশের ক্ষেত্রে চারটি জরিপ ছাড় দিয়ে ৯টি জরিপ ব্যবহার করার পরও, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে আমাদের সূচকের মাত্র একধাপ অগ্রগতি সাধিত হওয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান আনলাকি থার্টিন হওয়ায় সরকারের গত ১৩ বছরের জিরো টলারেন্স পন্ড হয়ে গেছে। কারণ ২০০৮ সালে আমাদের অবস্থান ছিল দ্বাদশ স্থানে।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আওয়ামী লীগ + জাপার ঐকমত্যের সরকারের শাসনামলে শেষ বর্ষে ২০০০ সালে বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো সিপিআই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ায় ২০০১ সালে তার ফল প্রকাশিত হলে দেখা যায়, প্রথম বছরেই প্রথম স্থান দখল করে বাংলাদেশ বাজিমাত করেছে। ২০০১ সালের ১৫ জুলাই পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল ঐকমত্যের সরকার, ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল তাদের নিয়োগকৃত প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং বাকি ৭৫ দিন চারদলীয় জোট সরকার। ক্ষমতায় থাকলেও ২০০১ সালের রিপোর্ট, যা ২০০২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল, তাতেও বাংলাদেশের প্রথম স্থান অক্ষুণ্ণ থাকায় তার দায় চার দলীয় জোট সরকারের ওপর চাপানো হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরের বিরুদ্ধে ক্ষমতায় যাওয়ার পর পূর্ববর্তী সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প পরিত্যক্ত ঘোষণার অভিযোগ করলেও দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নীতি চারদলীয় জোট সরকারও অব্যাহত রাখায় ‘চ্যাম্পিয়ন ট্রফি’ ২০০২ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত পরপর তিনবার নিজেদের দখলে রাখতে চারদলীয় জোট সরকার সক্ষম হয়েছিল। অন্য দিকে ২০০৪ সালে তাদের গঠিত এলিট ফোর্স র‌্যাবের মাধ্যমে সূচিত ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভুত হত্যার কর্মসূচি ১৪ দলীয় জোট সরকার ও আওয়ামী লীগ সরকার অদ্যাবধি শুধু অব্যাহতই রাখেনি, একে বন্দুকযুদ্ধ নামে আখ্যায়িত করে র‌্যাবের পাশাপাশি পুলিশ ও বিজিবিকে ওই ক্ষমতা দেয়ায় ২০২০ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধের গতি ও নিহতের সংখ্যা খুবই বৃদ্ধি পেয়েছিল।

জেনারেল মইন-মাসুদ চৌধুরীর সহায়তায় ‘১-১১’ ঘটিয়ে দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি ও তাদের পছন্দনীয় ড. ফখরউদ্দিনের নেতৃত্বে আধা সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছরের জন্য ক্ষমতায় বসানোয় দুর্নীতির তথ্যাদি টিআইবি কম পাওয়ায় এবং উসাইন বোল্টের মতো দ্রæত গতির দুর্নীতি মানবের ট্র্যাকে আগমন ঘটায় ২০০৮ সালে আমরা দ্বাদশ স্থান দখল করেছিলাম। ভারতের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি ও প্রণব মুখার্জির পরামর্শ মোতাবেক ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ী ১৪ দল ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে এলেও ২০২০ সাল পর্যন্ত আমাদের অবস্থান দ্বাদশেই ঠায় দাঁড়িয়েছিল।

কিন্তু আমাদের মতো যুদ্ধ করে উত্তর সুদান থেকে স্বাধীনতা অর্জনকারী দক্ষিণ সুদানের ট্র্যাকে আগমন ঘটে; তারা প্রথম স্থান অধিকার করায় ১১টি দেশের অবস্থান এক ধাপ করে উন্নতি হওয়া আমাদের অবস্থান ২০২১ সালে দ্বাদশ থেকে ১ পয়েন্ট উন্নতি ঘটে। সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আমাদের অবস্থান ১২ থেকে ১৩-তে উন্নীত হয়েছে, এতে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কোনো ভ‚মিকা ছিল না। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো যেমন খেলাপি ঋণ একটি টাকা আদায় না করেও পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে খেলাপি ঋণের হার কমিয়ে এনে থাকে, তেমন। অর্থাৎ নতুন ঋণ বিতরণ করায় মোট ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এর চেয়ে খেলাপি ঋণের হার হ্রাস পায় তেমন। আমাদের ঘাড়ের ওপর অবস্থানকারী যুদ্ধপীড়িত দেশগুলো হচ্ছে- ইয়েমেন, সিরিয়া, আফগানিস্তান, লিবিয়া, তুর্কমেনিস্তান, মালি, ইকুইটোরিয়াল গিনি, বুরুন্ডি, ডি আর কঙ্গো, উত্তর কোরিয়া, ভেনিজুয়েলা ও দক্ষিণ সুদান। শত নম্বরের পরীক্ষায় বাংলাদেশ পেয়েছে ২৬ নম্বর, যা পাস নম্বর থেকে ১৮ নম্বর কম। ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৭তম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ শাখার নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। সরকার গর্বের সাথে হয়তো বলতে পারেন, আমাদের নিচেও তো ৩৩টি দেশ অবস্থান করছে- এটিই কম কিসের? দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পত্র লেখকের একমাত্র পুত্রের তৃতীয় শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল শিটে স্বাক্ষর করার সময় লক্ষ করা যায় ক্লাসের ৩৩ জন ছাত্রের মধ্যে তার অবস্থান একাদশে অর্থাৎ ১০ জন ছাত্রের অবস্থান তার ওপরে। থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হলে তার ত্বরিত জবাব ছিল, আমার নিচে যে ২২ জন ছাত্র অবস্থান করছে, তা তোমার নজরে পড়ল না।’

ছেলের জবাবে স্তম্ভিত হয়ে পড়লেও তার লেখাপড়ার প্রতি বিশেষভাবে নজর দেয়ায় বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ৮ বছর চাকরি করার পর প্রথম সন্তান জন্মগ্রহণের তিন মাস আগে চাকরি ছেড়ে বাড়ি এসে বসল শিক্ষিকা স্ত্রীর সন্তান লালন-পালন করার অজুহাত দেখিয়ে। দাদা-দাদী নাতিকে লালন-পালন করলেও তাকে আর কর্মমুখী করা সম্ভব হয়নি। কারণ শিশুকাল হতেই তার দৃষ্টি তার চেয়ে কম মেধাবী ছাত্রদের প্রতি অর্থাৎ তাদের চেয়ে সে ভালো এই ধারণার বশবর্তী হয়ে পড়েছিল। বর্তমান সরকারের হয়েছে একই দৃষ্টিভঙ্গি। দুর্নীতি যে, ২০০৫ সালের চেয়ে বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে- এটি তারা স্বীকার করতেই চান না। ১২টি দেশ আমাদের চেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ার কারণে আমাদের অবস্থান ত্রয়োদশে উন্নীত হয়েছে এটা তারা স্বীকার না করে জিরো টলারেন্সের কারণে এই উন্নতি হয়েছে বলে তারা মনে করেন।

এবার ২০০৬ সালের দুর্নীতির সাথে ২০২১ সালের দুর্নীতির তুলনামূলক পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০০৫-০৬ সালের বাজেটের আকার ছিল ৪৫ হাজার কোটি টাকা; বর্তমানে তা ১২-১৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ছয় লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। সরকার পরিচালন ব্যয় বাদে বাজেটের বেশির ভাগ টাকা ব্যয় হয় সরকারি কেনাকাটা ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে যার পরিমাণ চার লাখ কোটি টাকার কম হবে না। বাজেট ঘাটতি দুই লাখ কোটি টাকা দেশীয় ব্যাংক হতে ও বিদেশী ঋণদাতাদের কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে পূরণ করা হয়ে থাকে। গত ১৩ বছরে সরকারি কেনাকাটায় বাজার দরের চেয়ে অস্বাভাবিক বেশি দামে কেনাকাটার কিছু কিছু খবর প্রতি বছরই পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। যে প্রকল্প এক হাজার কোটি টাকা দিয়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব সেই প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় এক হাজার ২০০ কোটি টাকায়। যে দ্রব্যাদি এক হাজার কোটি টাকায় ক্রয় করা সম্ভব তা ক্রয় করা হয় এক হাজার ২০০ কোটি টাকায়। কাজেই প্রকল্প শতভাগ বাস্তবায়নে ও কেনাকাটায় স্বচ্ছতা থাকলেও চার লাখ কোটি টাকার ২০ শতাংশ বা ৮০ হাজার কোটি কালো টাকা প্রতি বছর কেনাকাটায় ও প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িতদের হাতে চলে আসে। সার, গম, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম ও সঞ্চালন লাইনের সরঞ্জাম, বৈদ্যুতিক মিটারসহ মেগা প্রকল্পের আওতাভুক্ত সেতু, মহাসড়ক ও উড়াল সড়ক বিশ্বের প্রচলিত রেট থেকে দ্বিগুণ রেটে নির্মাণ করায় বছরে প্রায় লাখ কোটি কালো টাকা দেশে উৎপাদিত হচ্ছে বিধায় ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে তা হোয়াইটওয়াশ করার ব্যবস্থা প্রতিটি বাজেটে রাখা হয়, যা অনাদিকাল চলবে বলে মনে হয়।

বিদেশ থেকে সরকারি কেনাকাটার কমিশন সরাসরি বিদেশেই উপকারভোগীদের হিসাবে জমা হয়। দেশের অভ্যন্তরে যে কালো টাকা উৎপাদিত হয় তা আমদানি রফতানি বাণিজ্যে ওভার বা আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়। আমদানিকারককে এলসি খোলার মার্জিনের টাকা কালো টাকার মালিক দিয়ে থাকেন। ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে আমদানিকৃত পণ্যের যে মূল্য বেশি দেখানো হয় বিদেশের রফতানিকারক তা বাংলাদেশের আমদানিকারকের অনুরোধ অনুযায়ী এই দেশীয় কাল টাকার মালিকের বিদেশের হিসাবে জমা করেন। অনুরূপভাবে রফতানিকারক যে পরিমাণ টাকা আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে কম মূল্য দেখিয়ে বিদেশে রফতানি করে তা দেশের কালো টাকার মালিক রফতানিকারককে নগদ প্রদান করে থাকেন। বিনিময়ে তিনি বিদেশের আমদানিকারকের কাছ থেকে ওই টাকা নিয়ে বিদেশী ব্যাংকে জমা করেন। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এভাবে প্রায় আট লাখ কোটি টাকা পাচার হলেও সরকার একটি টাকাও দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়নি।

প্রতি বছর বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করে ভোক্তাদের কাছে থেকে তা আদায় করা হচ্ছে। একইভাবে ওয়াসা ও তিতাস গ্যাসের দুর্নীতির খেসারত ভোক্তাদের ওপর চাপানো হয়- পানি ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করে। নিজের টাকায় বা ঋণ গ্রহণ করে বাড়ি করেও গণপূর্ত বিভাগের দুর্নীতির দায় জনগণের ঘাড়ে চাপে। প্রতি বর্গফুট এক হাজার টাকা ব্যয়ে যে বাড়ি করা যায় গণপূর্ত বিভাগের নির্মাণ ব্যয়ের সর্বনিম্ন রেট প্রতি বর্গফুট ১৩ শ’-১৪ শ’ টাকা হওয়ায় নিজ তত্ত্বাবধানে বাড়ি করার জন্য ১৫ শতাংশ রেয়াত পাওয়ার পরও বাকি টাকা কোথায় পাওয়া গেল, আয়কর বিভাগের কর্মকর্তাকে সেই হিসাব মেটাতে উৎকোচ দিতে হয়। কোভিড-২০১৯ এর কারণে স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতি প্রকাশিত হয়ে পড়লেও এর জন্য দায়ী করা হয়েছে গাড়িচালক, হিসাবরক্ষণ সহকারী ও ভাণ্ডাররক্ষককে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার দুর্নীতির কারণে সর্বাঙ্গে ঘা; মলম দেয়ার জায়গা নাই। এসব দুর্নীতির জবাব জনগণ যাতে ভোটের বাক্সে দিতে না পারে তজ্জন্য গত ৩০-০৬-২০১১ তারিখে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সাংবিধানিক ক্ষমতা অধিগ্রহণ করায় ২০১৪ সাল থেকে শুধু জাতীয় সংসদ নয়, ইউপি নির্বাচন পর্যন্ত দল প্রতীকের বিস্তৃতি ঘটিয়ে সব স্তরে সরকারি দলের প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিক্যালে ভর্তির ক্ষেত্রে দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। অভিভাবকদের বলা হয়, আপনার সন্তানকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ও মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ও পাঁচ বছরে লেখাপড়ার ব্যয় হবে ৩০-৩৫ লাখ টাকা। মাত্র পাঁচ লাখ টাকা আমাদের দিলে আপনার সন্তান বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যালে ভর্তি হতে পারবে। ফলে আপনি ৫০ শতাংশ কম খরচে সন্তানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে পারবেন। এটি আপনার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।’ সরকারি প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে পরাজয়ের ঝুঁঁকি থেকে যায়। নির্বাচনে জয়ের দু’টি প্যাকেজ ডিল চালু হয়েছে। প্রথমটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার প্যাকেজ ডিল অর্থাৎ নির্বাচনের মোট সম্ভাব্য খরচের সমপরিমাণ অর্থ জেলার মনোনয়ন বোর্ডের নেতাদের দিয়ে মনোনয়ন নিশ্চিত করা ও কিছু উৎকোচ প্রশাসন ও পুলিশকে দিয়ে বিরোধী ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র টেন্ডার ছিনতাইয়ের মতো ছিনতাই করে নেয়া।

বিদ্রোহী প্রার্থী যদি স্থানীয় এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের আশীর্বাদপুষ্ট হন তাহলে যিনি প্রশাসন, পুলিশ, পোলিং অফিসার ও দলীয় ক্যাডারদের পেছনে বেশি অর্থ ব্যয় করবেন তারা তার পক্ষ নিয়েই বিজয় নিশ্চিত করে থাকেন। এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হলেও টিআইবির রাডারে তা ধরা পড়েনি; কারণ কোনো পক্ষই মুখ না খোলায়। সাংবাদিকরা সব কিছু জানলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণেও তা প্রকাশ করতে পারেননি; কারণ প্রখ্যাত বন্দুকযোদ্ধা টেকনাফ থাকার সাবেক ওসি প্রদীপের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কে রিপোর্ট প্রকাশ করে ঢাকায় পালিয়ে এসেও ওই সাংবাদিক প্রদীপের হাত থেকে রেহাই পাননি।

প্রদীপ বাবু তাকে ঢাকার মিরপুর থেকে ধরে টেকনাফ থানায় নিয়ে উত্তম-মধ্যমে আপ্যায়ন করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠালেও ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন নির্বাক। অপর পোশাকি বাহিনীর মেজর (অব:) রাশেদ খান সিনহাকে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করায় প্রদীপের ভাগ্যে টলে যাওয়ায় ওই সাংবাদিকের ভাগ্য খুলে যাওয়ায় তিনি জামিনে মুক্ত হতে পেরেছেন। নৌকা প্রতীকের জোরে ২০১৫ সালে যারা মেয়র হয়েছিলেন এবং ২০২১ সালে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন তারা নিজ ছেলে ও ভাইকে বা কাউন্সিলরদের ছেলে বা ভাইকে ঠিকাদার নিয়োগ করায় ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত যে সব রাস্তা, ড্রেন, আরসিসি ঢালাই ও পিচ ঢালাই করেছিলেন, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ও কম পরিমাণ সিমেন্ট এবং রড ব্যবহার করায় ওই সব ড্রেন বৃষ্টির পানির তোড়ে ভেঙে যাওয়ায় ও ঢালাইয়ের খোয়া রিকশার চাকার ঘষায় ভেঙে যাওয়ায় ২০২১-২৫ মেয়াদে তার সবগুলোই পুনর্নির্মাণ করতে হবে।

ধর্মের চাকা ঘুরতে বায়ুশক্তির প্রয়োজন পড়লেও অধর্মের চাকা বেশি শক্তিশালী হওয়ায় তা বিনা বাতাসেই ঘোরায় যেখানে যে নেতা বা সরকারি কর্মকর্তা আপনা আপনি ধরা খাচ্ছেন একেকজনের কাছে কোটি কোটি নগদ টাকা, কেজি কেজি সোনা ও শত শত একর জমির দলিল পাওয়া যাচ্ছে।

দেশে যেহেতু নির্বাচন হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার স্টাইলে বিরোধী দল ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্তৃক নির্ধারিত হচ্ছে এবং শাসন চলছে চীনা স্টাইলে। ফলে গত ১৩ বছরে দুর্নীতি যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা নিয়ন্ত্রণে চীনা স্টাইল অনুসরণ করলে জনগণ অন্তত মনে মনে শান্তি অনুভব করত এবং সবার জন্য শিক্ষামূলকও হতো। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ, অবৈধ লেনদেন আর দুর্নীতির মাধ্যমে নানা সুবিধা নেয়ার গল্পগুলো হাসিমুখে তুলে ধরার অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং দুর্নীতিবিরোধী প্রচারণার সাফল্য এভাবেই দেশবাসীকে জানিয়েছেন। ‘জিরো টলারেন্স’ শিরোনামের প্রামাণ্য চিত্রের তথ্যানুযায়ী, ২০১২ সালের নভেম্বরে শি জিন পিং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় দেশটির প্রায় ৪৪ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী তদন্তের মুখে পড়েছেন। কমিউনিস্ট পার্টির প্রায় ৪০ লাখ সদস্যকে সংশোধনের আওতায় আনা হয়েছে।

বাংলাদেশে যেহেতু চীনের তিন বছর আগে ২০০৯ সাল থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে, তাই বাংলাদেশে যদি চীনের মতো দুর্নীতিবাজ নেতাকর্মী ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে থাকে, তাহলে তাদের দুর্নীতি নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র তৈরির সময় এসেছে বলে জনগণ মনে করে। এ ব্যাপারে হজরত মুহাম্মদ সা:-এর হাদিসের প্রথম অংশ মেনে চলায় দ্বিতীয় অংশ না মানায়, জনগণের দুঃখ-দুর্দশা বেড়েই চলেছে। হাদিসে বর্ণিত আছে ‘রোজ হাশরে আল্লাহ ওই মুসলমানের দোষ গোপন রাখবেন যিনি জীবদ্দশায় অন্য মুসলমানের দোষ গোপন রেখেছিলেন’ কিন্তু পরের লাইনে লেখা আছে ‘যদি ওই দোষগুলো সমাজের জন্য বা মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ না হয়’। আশা করি, ৭৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকার রেকর্ডধারী সরকার বিষয়টি ভেবে দেখবে। তা হলে আগামী নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো জয় সম্ভব হলেও হতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement
কেন দেশে গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে, আইনে এর শাস্তি কী? কেরানীগঞ্জে জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামসহ গ্রেফতার ২ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে জেল হাজতে প্রেরণ রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বিদেশী অস্ত্র ও গুলিসহ আরসার কমান্ডার আটক বান্দরবানে অস্ত্র, গুলি ও ড্রোন সিগন্যাল জ্যামারসহ বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার পোকায় খেলো ভর্তির সময় জমা দেয়া রাবি শিক্ষার্থীদের মার্কশিট কুষ্টিয়ায় বিলের পানিতে ডুবে ফুফু-ভাতিজির মৃত্যু জ্বালাপোড়া আর যন্ত্রণায় এখনো কাতরান রেজাউল মুন্সি চীনের নতুন ৬টি স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপণ দ্রুত উইকেট হারানোর চাপ নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে বাংলাদেশ সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগে উত্তাল দীঘিনালা : নিহত ৩

সকল